মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা
রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার ভাবার্থ হলো এই যে, আত্মীয়স্বজন বা পরিবারপরিজনের সাথে সৎকাজে অংশগ্রহণ করা, তাদের উপকার করা, তাদের প্রতি দয়া করা, তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা, তাদের সাথে ভদ্রতা, সুশীলতা এবং বিনম্রতা বজায় রাখা, তাদের সাথে দেখা করা, তাদের অবস্থা পরিদর্শন করা এবং তাদের অভাবীদেরকে দান প্রদান করা।
পবিত্র কুরআন এবং নির্ভরযোগ্য হাদীসের মধ্যে কতকগুলি উপদেশ এসেছে রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট ও মজবুত রাখার প্রতি এবং তা ছিন্ন না করার প্রতি উৎসাহিত করার জন্য। সুতরাং মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে অমুসলিমদের বিবরণ এই ভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং বলেছেন: (الَّذِينَ يَنْقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ أُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُون)، سورة البقرة، الآية 27. ভাবার্থের অনুবাদ: “যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকার করার পরেও তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যে রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার আদেশ প্রদান করেছেন তা ছিন্ন করে আর দুনিয়ায় তারা পাপের কাজে লিপ্ত হয়ে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, নিঃসন্দেহে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জাহান্নামবাসী হবে”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ২৭)। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন: (فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُم)، سورة محمد، الآية 22. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে মানব সমাজ! অবশ্যই তোমরা যদি প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক আল্লাহর আনুগত্য ত্যাগ করে অন্য কোনো শিক্ষা ও ধ্যানধারণা গ্রহণ করো, তাহলে তোমরা দুনিয়ার বুকে পাপের কাজে এবং রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার কাজে লিপ্ত হয়ে অন্যায় ও অশান্তির মধ্যে নিমজ্জিত হবে”। (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত নং ২২)।
এবং আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস রাখবে, সে যেন তার রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট ও মজবুত রাখে”। (বুখারি ৬১৩৮)। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আরো বলেছেন: “আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টিকে সৃষ্টি করলেন। তারপর যখন তিনি সৃষ্টি করার সমস্ত কাজ শেষ করলেন তখন “রাহিম” অর্থাৎ রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন বললো: আমাকে ছিন্নকারী থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার স্থল হলো এটি। তাই আল্লাহ বললেন: “হ্যাঁ! তুমি এতে সন্তুষ্ট নও কি? যে, যে ব্যাক্তি তোমার সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে তোমার সংরক্ষণ করবে আমিও তার সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে তার সংরক্ষণ করবো এবং যে ব্যাক্তি তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবো”। সে বললো: আমি এতে সন্তুষ্ট! হে আমার প্রতিপালক! আল্লাহ বললেন: “হ্যাঁ! আমি এটাই করবো তোমার জন্য”। তারপর আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন: “ইচ্ছা করলে তোমরা এই আয়াতটি পাঠ করতে পারো: (فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُم)، سورة محمد، الآية 22. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে মানব সমাজ! অবশ্যই তোমরা যদি প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক আল্লাহর আনুগত্য ত্যাগ করে অন্য কোনো শিক্ষা ও ধ্যানধারণা গ্রহণ করো, তাহলে তোমরা দুনিয়ার বুকে পাপের কাজে এবং রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার কাজে লিপ্ত হয়ে অন্যায় ও অশান্তির মধ্যে নিমজ্জিত হবে”। (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত নং ২২)। (বুখারি 5987 এবং মুসলিম 2554)।
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা রক্তের সম্পর্ক ও সংযোগ হিসেবে আত্মীয়তার বন্ধন অটুট ও মজবুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
যে রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা ওয়জিব বা অপরিহার্য
সেটি হলো মাহরাম আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা। যেমন:- পিতামাতা, ছেলেমেয়ে, ভাইবোন, চাচা, মামা, পিসি বা ফুফু এবং খালা বা মাসি।
যে রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা মোস্তাহাব বা একটি পছন্দনীয় কাজ।
সেটি হলো মাহরাম ছাড়া অন্য আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা। যেমন:- চাচাতো ভাই, মামাতো ভাই ইত্যাদি।
রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট ও মজবুত রাখার পদ্ধতি
রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট ও মজবুত রাখা যায় বিভিন্ন প্রকারের মঙ্গলদায়ক কর্ম ও হিতকর আচরণের মাধ্যমে। এবং বিভিন্ন প্রকারের অহিতকর কার্য ও অনিষ্টকর আচরণ থেকে সাধ্যমতো রক্ষা করার মাধ্যমে। আর রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট ও মজবুত রাখার আরো অনেক মাধ্যম রয়েছে। সেই মাধ্যমগুলির মধ্যে পড়ছে সালাম প্রদান করা, আনন্দের সহিত কথাবার্তা ও কুশল জিজ্ঞাসা করা, প্রয়োজনে আর্থিক সহযোগিতা বা সহায়তা করা, বিপদাপদ থেকে রক্ষা করা, হাসিমুখে মিষ্টি ভাষায় কথা বলা ও সাক্ষাৎ করা আর দোয়া করা বা মঙ্গল কামনা করা ইত্যাদি।
রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট ও মজবুত রাখার কতকগুলি উদাহরণ।
রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট ও মজবুত রাখার মর্যাদার মধ্যে রয়েছে:
১। এর দ্বারা আত্মীয়দের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি হয় এবং পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী হয়।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমরা তোমাদের বংশের বা কুলের পরিচয় লাভ করো। যাতে তোমরা তোমাদের আত্মীয়দের সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে। কেননা রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখার মাধ্যমে বংশের বা কুলের লোকজনের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়, সম্পদ বৃদ্ধি হয় এবং আয়ু বাড়ে”। (তিরমিযী 1979)
২। এতে জীবিকা সুপ্রশস্ত হয় এবং আয়ু বৃদ্ধি হয়।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার জীবিকা বৃদ্ধি করা হোক অথবা তার আয়ু বাড়িয়ে দেওয়া হোক, সে যেন নিজের আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ বা সম্পর্ক ভালো রাখে”। (বুখারি 2067, এবং মুসলিম 2557)।
৩। যে ব্যক্তি নিজের আত্মীয়দের প্রতি সদয় হবে এবং তাদের সাথে যোগাযোগ বা সম্পর্ক ভালো রাখবে। তার প্রতি মহান আল্লাহ সদয় হবেন এবং তার সাথে তিনি সম্পর্ক ভালো রাখবেন।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টিকে সৃষ্টি করলেন। তারপর যখন তিনি সৃষ্টি করার সমস্ত কাজ শেষ করলেন তখন “রাহিম” অর্থাৎ রক্তের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন বললো: আমাকে ছিন্নকারী থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার স্থল হলো এটি। তাই আল্লাহ বললেন: “হ্যাঁ! তুমি এতে সন্তুষ্ট নও কি? যে, যে ব্যাক্তি তোমার সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে তোমার সংরক্ষণ করবে আমিও তার সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে তার সংরক্ষণ করবো এবং যে ব্যাক্তি তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবো”। সে বললো: আমি এতে সন্তুষ্ট! হে আমার প্রতিপালক! আল্লাহ বললেন: “হ্যাঁ! আমি এটাই করবো তোমার জন্য”। (বুখারি 5987 এবং মুসলিম 2554)।
৪। এর দ্বারা জান্নাত লাভ হয়।
এক ব্যক্তি আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে এমন একটি কাজের কথা জিজ্ঞাসা করেছিলো, যে কাজটি তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তাই আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাকে বলেছিলেন: “তুমি আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা করবে, তাঁর অংশীদার স্থাপন করবে না, নামাজ প্রতিষ্ঠিত করবে, জাকাত প্রদান করবে এবং আত্মীয়দের প্রতি সদয় হবে ও তাদের সাথে যোগাযোগ বা সম্পর্ক ভালো রাখবে”। (বুখারী 1396 এবং মুসলিম 13)।