শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় ‎ বিবাহের আদবকায়দা

এই অনুচ্ছেদে আমরা বিবাহের কতকগুলি আদবকায়দার জ্ঞানলাভ করবো। ‎

  • নবদম্পতির জন্য বিবাহের আদবকায়দা মেনে চলার গুরুত্ব উপস্থাপন করা।
  • প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ আদবকায়দার পরিচয় প্রদান করা।

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

বিবাহ বন্ধন বিষয়ে প্রকৃত ইসলামের কতকগুলি বিধিবিধান নির্দিষ্ট রয়েছে। আর সেই ‎বিধিবিধানগুলির মধ্যে এমন কতকগুলি বিধিবিধান রয়েছে, যেগুলির যোগাযোগ রয়েছে ‎বিবাহ বন্ধনের পূর্বের অবস্থার সাথে এবং কতকগুলি বিধিবিধানের যোগাযোগ রয়েছে ‎বিবাহ বন্ধনের কার্য সম্পন্ন হওয়ার সময়ের সাথে আর কতকগুলি বিধিবিধানের ‎যোগাযোগ রয়েছে বিবাহ বন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পরবর্তী সময়ের সাথে। সুতরাং জেনে ‎রাখা দরকার যে, প্রকৃত ইসলাম ধর্মে বিবাহ বন্ধনের কতকগুলি আদবকায়দা নির্ধারিত ‎রয়েছে। সেই নির্ধারিত আদবকায়দাগুলি স্বামী ও স্ত্রীর জন্য মেনে চলা উচিত। যাতে ‎তারা মহান আল্লার সন্তুষ্টি ও পুণ্য বা পুরস্কার লাভ করতে পারে এবং তাদের দাম্পত্য ‎জীবন কল্যাণময় হয় এবং সুদৃঢ় ও মজবুত হয়। ‎

১। নিয়ত বা সংকল্প

প্রকৃত ইসলাম ধর্মে নিয়ত বা সংকল্পের মহা মর্যাদা ও মহা গুরুত্ব রয়েছে। এর দলিল ‎হলো বিখ্যাত হাদীস: ‎ ‏"إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ،‎ ‎وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى".‏ ‏(صحيح البخاري، رقم الحديث1، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 155- (1907)، ).‏ অর্থ: “যাবতীয় কর্ম সঠিক বলে বিবেচিত হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে পবিত্র মনের দৃঢ় ‎সংকল্প বা খাঁটি নিয়তের উপর। আর প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের মনের দৃঢ় সংকল্প বা খাঁটি ‎নিয়ত মোতাবেক নিজের পাপ ও পুণ্যের ফল ভোগ করবে”। ‎[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 155 -‎‏ ‏‎(1907), তবে ‎হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]। তাই স্বামীস্ত্রীর জন্য তাদের বিবাহের সময় নিয়ত বা সংকল্প ভালো রাখা দরকার। বরং ‎তাদের বুদ্ধি ও জ্ঞানের পরিচয় হলো এই যে, তারা যেন, তাদের ভালো নিয়ত বা ‎ভালো সংকল্প বারবার স্মরণ ও উপস্থাপন করতে থাকে। যাতে তারা পুণ্য ও ভালো ‎ফল লাভ করতে পারে। আর বিবাহের সময় ভালো নিয়ত বা ভালো সংকল্পের মধ্যে ‎রয়েছে: মহান আল্লাহর নিদর্শন প্রকাশ করা এবং বিবাহের ক্ষেত্রে প্রকৃত ইসলাম ‎ধর্মের শিক্ষা মেনে চলা; যাতে স্বামীস্ত্রীর মাধ্যমে এমন গুণবান শিশুদের জন্ম হয় যে, ‎তারা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর তাওহীদ বা ‎একত্বের উপরে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তাঁর উপাসনা করবে আর স্বামীস্ত্রীর মধ্যে পবিত্রতা ‎বিরাজ করবে এবং তারা দুনিয়ার সমস্ত অমঙ্গল ইত্যাদি হতে সুরক্ষিত থাকবে। ‎

২। বিয়ের সময় বাসর রাতে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মেনে চলা উচিত।

١
বাসর রাতে স্বামী তার স্ত্রীর সমাদর করবে এবং তার সাথে মধুর সম্পর্ক গভীরভাবে ‎স্থাপন করবে।
٢
স্বামী তার স্ত্রীর‏ ‏কপালে বা মাথার সামনের অংশে হাত রেখে সেই দোয়াটি পাঠ করবে, ‎যে দোয়াটি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন। আর সেই দোয়াটি হলো:‎ ‏"اللَّهمَّ إنِّي أسألُك مِن خيرِها وخيرِ ما جُبِلَتْ عليهِ وأعوذُ بِك من شرِّها وشرِّ ما ‏جُبِلَتْ عليهِ" (ابن ماجه 1918).‏ অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর কল্যাণ এবং একে যে আনন্দদায়ক ‎সচ্চরিত্র বা সৎ স্বভাব প্রদান করেছেন তার কল্যাণ প্রার্থনা করি। আর আমি আপনার ‎কাছে এর অনিষ্ট এবং একে যে খারাপ স্বভাব প্রদান করেছেন তার অনিষ্ট হতে আশ্রয় ‎প্রার্থনা করি”। (ইবনে মাজাহ 1918)।
٣
স্বামী তার স্ত্রীর সাথে দুই রাকাআত নামাজ পড়বে, যেহেতু এই বিষয়ে কতকগুলি ‎সাহাবীর পরামর্শ রয়েছে।
٤
স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সহবাসের পূর্বে এই দোয়াটি পাঠ করবে। ‎ ‏« بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا» (البخاري 3271، ‏ومسلم 1434)،‏ অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে শয়তানের অমঙ্গল থেকে দূরে রাখুন এবং যে ‎সন্তান আমাদেরকে দান করবেন তাকেও শয়তানের অমঙ্গল থেকে দূরে রাখুন”। ‎(বুখারি 3271 এবং মুসলিম 1434)‎ এই দোয়াটি স্ত্রীও পাঠ করবে।
٥
স্বামীস্ত্রীর আলিঙ্গনের সময় যে সমস্ত কর্ম মহান আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন, সেই ‎সমস্ত কর্ম বর্জন করা জরুরি। সুতরাং স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর‏ ‏মলদ্বারে সহবাস করা ‎হারাম, সেই রূপ স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর‏ ‏ঋতুস্রাবের সময় তার সাথে সহবাস করা ‎হারাম।
٦
যখন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে একবার সহবাস করবে অতঃপর তার সাথে ‎আবার সহবাস করার ইচ্ছা করবে, তখন তার জন্য ওজু করা সুন্নাত। যেহেতু হাদীসের ‎মধ্যে এসেছে: “তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীর সাথে সহবাস ‎করবে অতঃপর তার সাথে আবার সহবাস করার ইচ্ছা করবে, তখন সে যেন ওজু ‎করে”। ( মুসলিম 308)।
٧
স্বামীস্ত্রীর মধুর সম্পর্ক এবং তাদের মধ্যে সহবাসের গোপনীয়তা প্রকাশ না করা। ‎আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: ‎‎“কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি হবে সেই ব্যক্তি, ‎যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে এবং তার স্ত্রী তার সাথে সহবাস করে। ‎অতঃপর সে তার গোপনীয়তা রক্ষা না করে সব প্রকাশ করে দেয়”। (মুসলিম 1437)। ‎

৩। বিবাহের পর অলিমা অনুষ্ঠান করা

বিবাহের পর অলিমা অনুষ্ঠান করা হলো গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। অর্থাৎ বিবাহ উপলক্ষে ‎বরপক্ষের আয়োজিত ভোজের অনুষ্ঠান করা প্রকৃত ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ‎বিধান। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] একজন সাহাবী আবদুর রহমান বিন আউফ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] কে তার ‎বিবাহের সময়ে বলেছিলেন: “অলিমার আয়োজন করো যদিও তা একটি ছাগল দিয়ে ‎হয়”। (বুখারী 2048 এবং মুসলিম 1427)।

বিবাহের পর অলিমার অনুষ্ঠানে যে সব দিক বিবেচনা করতে হয়, তা হলো: ‎

١
বিবাহের পর অলিমার অনুষ্ঠানে যেন কেবলমাত্র ধনীদেরকেই আমন্ত্রিত না করা হয়। ‎যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎বলেছেন: ‎ ‎“নিকৃষ্টতম খাদ্য দ্রব্য বা খাবার হলো ওই অলিমার খাদ্য দ্রব্য বা খাবার যে অলিমায় ‎কেবলমাত্র ধনীদেরকেই আমন্ত্রিত করা হয় এবং দরিদ্রদেরকে বা গরিবদেরকে ছেড়ে ‎দেওয়া হয়”। (বুখারি 5177 এবং মুসলিম 1432)।
٢
বরপক্ষ যদি ধনবান বা ধনী হয়, তাহলে অলিমার আয়োজন একটি বা একাধিক ছাগল ‎দিয়েও হবে। তবে তাতে যেন অপচয় না হয়। ‎
٣
অলিমার আয়োজন মাংস ছাড়া যে কোনো খাদ্য দ্রব্য বা খাবার দিয়েও বৈধ বা জায়েজ।

৪। বিবাহ অনুষ্ঠানে মহিলাদের গান গাওয়া

পুরুষদের অনুপস্থিতিতে এবং বিভিন্ন ধরণের ঝংকার ও বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ছাড়া বিশেষ ‎করে শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য পবিত্র ভাষায় ও উত্তম পন্থায় গান গাওয়া এবং দফ বা ‎তবলা একদিকে চর্মাবৃত এক প্রকার বাদ্যযন্ত্রবিশেষ বাজানো জায়েজ বা বৈধ। সুতরাং ‎এই শুভ উপলক্ষে প্রফুল্লতা ও হাসিখুশিভাব বা আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করা প্রকৃত ‎ইসলাম ধর্মে জায়েজ বা বৈধ। ‎

৫। স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে ও সদয়ভাবে প্রীতির সহিত জীবনযাপন করা

বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ আদবকায়দার মধ্যে রয়েছে: স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সদ্ভাব ও ‎সদয়ভাব বজায় রেখে প্রীতির সহিত জীবনযাপন করবে। যাতে তাদের মধ্যে প্রফুল্লতা ‎ও মধুর সম্পর্ক সুপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাদের দাম্পত্য জীবন মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ‎সুখশান্তিতে পরিপূর্ণ হয় এবং মঙ্গলময় হয়। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে ‎বলেছেন:‎ ‏(وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ)، سورة النساء، جزء من الآية 19. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আর তোমরা তোমাদের স্ত্রীরদের সাথে সদ্ভাব, সদয়ভাব ও প্রীতি ‎বজায় রেখে অতি উত্তম পন্থায় জীবনযাপন করবে”। ‎ ‎(সূরা আন্নিসা, আয়াত নং 19 এর অংশবিশেষ)।

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন