মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় বিবাহের আদবকায়দা
বিবাহ বন্ধন বিষয়ে প্রকৃত ইসলামের কতকগুলি বিধিবিধান নির্দিষ্ট রয়েছে। আর সেই বিধিবিধানগুলির মধ্যে এমন কতকগুলি বিধিবিধান রয়েছে, যেগুলির যোগাযোগ রয়েছে বিবাহ বন্ধনের পূর্বের অবস্থার সাথে এবং কতকগুলি বিধিবিধানের যোগাযোগ রয়েছে বিবাহ বন্ধনের কার্য সম্পন্ন হওয়ার সময়ের সাথে আর কতকগুলি বিধিবিধানের যোগাযোগ রয়েছে বিবাহ বন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পরবর্তী সময়ের সাথে। সুতরাং জেনে রাখা দরকার যে, প্রকৃত ইসলাম ধর্মে বিবাহ বন্ধনের কতকগুলি আদবকায়দা নির্ধারিত রয়েছে। সেই নির্ধারিত আদবকায়দাগুলি স্বামী ও স্ত্রীর জন্য মেনে চলা উচিত। যাতে তারা মহান আল্লার সন্তুষ্টি ও পুণ্য বা পুরস্কার লাভ করতে পারে এবং তাদের দাম্পত্য জীবন কল্যাণময় হয় এবং সুদৃঢ় ও মজবুত হয়।
১। নিয়ত বা সংকল্প
প্রকৃত ইসলাম ধর্মে নিয়ত বা সংকল্পের মহা মর্যাদা ও মহা গুরুত্ব রয়েছে। এর দলিল হলো বিখ্যাত হাদীস: "إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى". (صحيح البخاري، رقم الحديث1، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 155- (1907)، ). অর্থ: “যাবতীয় কর্ম সঠিক বলে বিবেচিত হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে পবিত্র মনের দৃঢ় সংকল্প বা খাঁটি নিয়তের উপর। আর প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের মনের দৃঢ় সংকল্প বা খাঁটি নিয়ত মোতাবেক নিজের পাপ ও পুণ্যের ফল ভোগ করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 155 - (1907), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]। তাই স্বামীস্ত্রীর জন্য তাদের বিবাহের সময় নিয়ত বা সংকল্প ভালো রাখা দরকার। বরং তাদের বুদ্ধি ও জ্ঞানের পরিচয় হলো এই যে, তারা যেন, তাদের ভালো নিয়ত বা ভালো সংকল্প বারবার স্মরণ ও উপস্থাপন করতে থাকে। যাতে তারা পুণ্য ও ভালো ফল লাভ করতে পারে। আর বিবাহের সময় ভালো নিয়ত বা ভালো সংকল্পের মধ্যে রয়েছে: মহান আল্লাহর নিদর্শন প্রকাশ করা এবং বিবাহের ক্ষেত্রে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মেনে চলা; যাতে স্বামীস্ত্রীর মাধ্যমে এমন গুণবান শিশুদের জন্ম হয় যে, তারা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর তাওহীদ বা একত্বের উপরে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তাঁর উপাসনা করবে আর স্বামীস্ত্রীর মধ্যে পবিত্রতা বিরাজ করবে এবং তারা দুনিয়ার সমস্ত অমঙ্গল ইত্যাদি হতে সুরক্ষিত থাকবে।
২। বিয়ের সময় বাসর রাতে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মেনে চলা উচিত।
বিবাহের পর অলিমা অনুষ্ঠান করা হলো গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। অর্থাৎ বিবাহ উপলক্ষে বরপক্ষের আয়োজিত ভোজের অনুষ্ঠান করা প্রকৃত ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] একজন সাহাবী আবদুর রহমান বিন আউফ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] কে তার বিবাহের সময়ে বলেছিলেন: “অলিমার আয়োজন করো যদিও তা একটি ছাগল দিয়ে হয়”। (বুখারী 2048 এবং মুসলিম 1427)।
বিবাহের পর অলিমার অনুষ্ঠানে যে সব দিক বিবেচনা করতে হয়, তা হলো:
৪। বিবাহ অনুষ্ঠানে মহিলাদের গান গাওয়া
পুরুষদের অনুপস্থিতিতে এবং বিভিন্ন ধরণের ঝংকার ও বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ছাড়া বিশেষ করে শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য পবিত্র ভাষায় ও উত্তম পন্থায় গান গাওয়া এবং দফ বা তবলা একদিকে চর্মাবৃত এক প্রকার বাদ্যযন্ত্রবিশেষ বাজানো জায়েজ বা বৈধ। সুতরাং এই শুভ উপলক্ষে প্রফুল্লতা ও হাসিখুশিভাব বা আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করা প্রকৃত ইসলাম ধর্মে জায়েজ বা বৈধ।
৫। স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে ও সদয়ভাবে প্রীতির সহিত জীবনযাপন করা
বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ আদবকায়দার মধ্যে রয়েছে: স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সদ্ভাব ও সদয়ভাব বজায় রেখে প্রীতির সহিত জীবনযাপন করবে। যাতে তাদের মধ্যে প্রফুল্লতা ও মধুর সম্পর্ক সুপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাদের দাম্পত্য জীবন মহান আল্লাহর ইচ্ছায় সুখশান্তিতে পরিপূর্ণ হয় এবং মঙ্গলময় হয়। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ)، سورة النساء، جزء من الآية 19. ভাবার্থের অনুবাদ: “আর তোমরা তোমাদের স্ত্রীরদের সাথে সদ্ভাব, সদয়ভাব ও প্রীতি বজায় রেখে অতি উত্তম পন্থায় জীবনযাপন করবে”। (সূরা আন্নিসা, আয়াত নং 19 এর অংশবিশেষ)।