মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় সুপ্রিয় নাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর দৈহিক রূপরেখা ও আচার আচরণের বিবরণ।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর শামায়েল বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বশ্রেষ্ঠ গুণাবলিতে গুণান্বিত ছিলেন। এবং সর্বোচ্চ, সর্বোত্তম ও সবচেয়ে ভালো চরিত্রের প্রতি সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলির বিষয়ে সঠিকভাবে গবেষণা করবে, সে ব্যক্তি তাঁকে মানবজাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ পাবে।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মানব জগতের মধ্যে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর নিকটে সবচয়ে বেশি প্রিয় ব্যক্তি এবং তাঁর কাছে সবচয়ে বেশি পছন্দনীয় মানুষ ও মনোনীত পরম বন্ধু। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর উপাসনার দিক দিয়ে মানব জগতের মধ্যে সবচয়ে বেশি পরিপূর্ণ, চারিত্রিক দিক দিয়ে সবচয়ে বেশি পবিত্র ও উত্তম, সৎ কর্মের দ্বারা আত্মা পবিত্র করার দিক দিয়েও সবচয়ে বেশি উৎকৃষ্ট, আচার ব্যবহার বা চালচলনের দিক দিয়েও সবচয়ে বেশি উন্নত ও শ্রেষ্ঠ এবং তিনি মহান আল্লাহকে জানার বিষয়ে ও তাঁকে মেনে চলার বিষয়ে আর তাঁর বশ্যতা স্বীকার করার বিষয়ে সব চয়ে বেশি জ্ঞানের অধিকারী। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য বার্তাবহ রাসূল ও নাবী বা দূত হিসেবে প্ররেণ করছেনে। অতএব তিনি সকল জাতির মানব সমাজের মধ্যে এবং প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর মধ্যে একটি নির্ধারিত মাধ্যম ও বার্তাবহ রাসূল বা দূত সকল প্রকারের কল্যাণের পথ প্রদর্শন করার জন্য এবং প্রকৃত ইসলামের প্রতি সকলকে আহ্বান করার জন্য।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে অতিসম্ভ্রান্ত বংশ থেকে মনোনীত করেছিলেন। এবং তাঁকে মানব জগতের মধ্যে শারীরিক গঠনের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি সুন্দর করেছিলেন। আর তাঁকে চারিত্রিক দিক দিয়েও সবচেয়ে বেশি সুন্দর করেছিলেন। সুতরাং তাঁকে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ অতি সুন্দর দেহ, অতি উজ্জ্বল জাঁকজমকপূর্ণ গুণাবলি এবং অতি চমৎকার ও চিত্তাকর্ষক আকৃতি বা চেহারা প্রদান করেছিলেন। তাঁর প্রতি সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর অতিশয় সম্মান ও শান্তি অবতীর্ণ হোক। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর শামায়েল বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলির মধ্যে রয়েছে:
১। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর দেহের গঠন ও বৈশিষ্ট্য:
আনাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মধ্যমাকৃতির মানুষ ছিলেন। সুতরাং তিনি খুব লম্বাও ছিলেন না এবং খুব খাটোও ছিলেন না। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৫৪৭]।
২। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর পবিত্র চেহারার বিবরণ ও বৈশিষ্ট্য:
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর চেহারা ছিলো মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর। তাঁর পবিত্র চেহারা ছিলো গোলাকারের মতো। তবে তার চেহারা খুব বেশি গোল ছিলো না বরং সামান্য লম্বাও ছিলো এবং খুব সুন্দর, ঝকঝকে ও উজ্জ্বল ছিলো। আর সৌন্দর্যের দিক দিয়ে তাঁর চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো জ্বলজ্বল করতো। যে ব্যাক্তি তাঁকে দেখতো, সে ব্যক্তি তাঁর প্রতি আকর্ষিত ও মুগ্ধ হয়ে যেতো। যখন তিনি আনন্দিত হতেন, তখন তাঁর চেহারা বা কপোল খুব টকটকে ও অতি উজ্জ্বল হয়ে উঠতো। এবং তাঁর মুখের সৌন্দর্যের বিশেষ রেখা তাঁর কপালে উদ্ভাসিত হতো।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর চেহারার বৈশিষ্ট্য
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর দাড়ি ছিলো অত্যন্ত ঘন, কালো ও গোলাকার। তাঁর চিবুক বা থুতনি ও তার নিম্ন ঠোঁটের মাঝখান ছিলো উচ্চ ও উত্থিত। তাঁর নিম্ন ঠোঁটের নীচে লোম ছিলো। এই লোম তাঁর দাড়ির লোমের সাথে এমনভাবে মিলে ছিলো যে, মনে হতো সেই লোম তাঁর দাড়ির অংশ।
৩। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর দেহের রঙের বিবরণ
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর শরীরের রঙের দিক দিয়ে মানুষের মধ্যে ছিলেন সর্বোত্তম। তাঁর শরীরের রঙ ছিলো সাদা মিশ্রিত লাল। তাঁর মুখমণ্ডল ছিলো চকচকে সাদা ও লাবণ্যময় উজ্জ্বল । জুবাইর বিন মুতয়িমের সূত্রে, আলী বিন আবি তালিব হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মাথা ছিলো বড়ো, শরীরের রঙ ছিলো সাদা মিশ্রিত লাল এবং দাড়ি ছিলো অত্যন্ত ঘন। (মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং 944)।
৪। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর চুল বা কেশের বিবরণ
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর চুল বা কেশ ছিলো প্রচুর। যখন তিনি তাঁর চুল ছোট করতেন, তখন তাঁর চুল কানের মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকতো। আর তাঁর চুল যখন লম্বা হতো, তখন তিনি তাঁর কাঁধ পর্যন্ত তাঁর চুল ঝুলিয়ে রাখতেন। তাঁর চুল একদম সোজাও ছিলো না আর একেবারে কোঁকড়ানোও ছিলো না। বরং এই দুই অবস্থার মাঝামাঝি ছিলো। কোনো কোনো সময় তাঁর চুল তিনি তাঁর কপালে ঝুলিয়ে রাখতেন। আবার কোনো কোনো সময় তাঁর চুল তিনি তাঁর মাথার মাঝখানে ছড়িয়ে দিতেন। আর আলাদা করে কিছু চুল তাঁর কপালে রাখতেন না।
عَنْ قَتَادَةَ، قَالَ قُلْتُ لأَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: كَيْفَ كَانَ شَعَرُ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: كَانَ شَعَرًا رَجِلاً، لَيْسَ بِالْجَعْدِ وَلاَ السَّبِطِ، بَيْنَ أُذُنَيْهِ وَعَاتِقِهِ. (صحيح مسلم, من رقم الحديث 94 - (2338), واللفظ له، وصحيح البخاري، رقم الحديث 5905). অর্থ: কাতাদা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আনাস বিন মালিক [রাদিয়াল্লাহু আনহু] কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর চুল বা কেশ কেমন ছিলো? তিনি বললেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর চুল বা কেশ ছিলো মধ্যম ধরণের। সুতরাং তাঁর চুল একেবারে কোঁকড়ানো ছিলো না এবং একদম সোজাও ছিলো না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪ - (২৩৩৮) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯০৫, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মাথার পাকা চুল এবং দাড়ির পাকা চুল বিশটিও ছিলো না, আর যে সমস্ত চুল তাঁর পাকা ছিলো সে সমস্ত চুলের বেশির ভাগই ছিলো তাঁর চিবুক এবং নীচের ঠোঁটের মাঝখানে। তবে তাঁর মাথার পাকা চুলগুলি ছিলো তাঁর মাথার সিঁথিতে বা মাথার চুল দুইভাবে বিন্যস্ত করলে যে সরু রেখা সৃষ্ট হয় সেই রেখায়।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিজের চুল সুবিন্যস্ত করতেন, পরিষ্কার করতেন এবং সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতেন। তবে তিনি বিলাসিতায় ও আরাম- আয়েশে লিপ্ত হতেন না। আর এই সব কাজ তিনি তাঁর ডান দিক থেকে শুরু করতেন।
৫। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাঁধ এবং তাঁর বাহু ও হাতের বিবরণ
আনাস [রাদিয়াল্লাহ আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: আমি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর পবিত্র হাতের তালুর চেয়ে মোলায়েম কোনো নরম খাঁটি সিল্কের কাপড় স্পর্শ করিনি। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং 3561 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 82 - (2330) এর অংশবিশেষ]।
৬। নবুওতের বা নাবী হওয়ার মোহরের বৈশিষ্ট্য
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বাম কাঁধে নবুওতের বা নাবী হওয়ার মোহর সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলো। আর সেটি ছিলো আসলে মাংসের একটি উত্থাপিত টুকরো, সেটির রঙ ছিলো আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর শরীরের রঙের মতোই। সেটির আকার ছিলো কবুতরের একটি ডিমের মতো, সেটির চারপাশে ছিলো কতকগুলি চিহ্ন এবং সেটির উপরে ছিলো একত্রিত হয়ে কতকগুলি চুল।
অর্থ: জাবের ইবনু সামুরা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আর আমি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাঁধের কাছে কবুতরের ডিমের মতো নবুওতের বা নাবী হওয়ার মোহর দেখেছি। সেটির রঙ ছিলো তাঁর শরীরের রঙের মতোই।
৭। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বুক ও পেটের বিবরণ।
৮। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর পা ও পায়ের গোছার বিবরণ
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ঘর্ম ছিলো সর্বোৎকৃষ্ট কস্তুরী বা আতরের চেয়েও উত্তম। কেউ যখন তার সাথে মুসাফা বা সাক্ষাৎ কালে করমর্দন করতো, তখন সে তার হাতে সারা দিন সর্বোৎকৃষ্ট কস্তুরী বা আতরের চেয়েও উত্তম সুগন্ধি অনুভব করতো। আর তিনি বেশিরভাগ সময়ে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন।
আনাস [রাদিয়াল্লাহ আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: আমি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর শরীরের সুগদ্ধি অপেক্ষা কোনো কস্তুরী বা আতরের অধিক সুগদ্ধি আমি আর কখনো পাইনি। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 82 - (2330)]।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মহৎ চরিত্রের বর্ণনায় ব্যাপক ও বহু বিষয়ের উপর প্রভাব বিস্তার করে এমন কতকগুলি শব্দ।
মহান আল্লাহ তাঁর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيْمٍ)، سورة القلم، الآية 4. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! নিশ্চয় তুমি সত্য ধর্ম ইসলামের শ্রেষ্ঠতম ও সর্বোৎকৃষ্ট এবং মহত্তম চরিত্রের সর্বগুণে গুণান্বিত”। ( সূরা আল কালাম, আয়াত নং ৪)। আর সর্বপ্রথমে যখন জিবরিল [আলাইহিস সালাম] আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছে এসেছিলেন; তখন তাঁর সাথে যা ঘটেছিলো, তাতে তিনি ভয় পেয়েছিলেন। অতএব তিনি উম্মুলমুমেনীন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ [রাদয়িাল্লাহু আনহা] কে বলেছিলেন: “আমি আমার জীবনের বিষয়ে আশঙ্কিত হয়ে পড়েছি”। তাই উম্মুলমুমেনীন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ সেই বিষয়টিকে সহজ করে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন: আল্লাহর কসম! কখনই নয়। আল্লাহ আপনাকে কখনও লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং ন্যায় পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। (বুখারী 4953, মুসলিম 160)।
১। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বিশ্বস্ততা ও আমানত রক্ষা করার বিবরণ
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমানত রক্ষা করার দিক দিয়ে সব চেয়ে বেশি ন্যায়পরায়ণ ও সুপ্রসিদ্ধ এবং বিখ্যাত ছিলেন। তাই তাঁর সম্প্রদায়ের সমস্ত মানুষ তাঁকে আস্সাদিক বা সত্যবাদী এবং আলআমীন বা বিশ্বাসভাজন আমানতদার হিসেবে উপাধি প্রদান করেছিলো। অতএব আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নাবী হওয়ার পরে তাঁর সম্প্রদায়ের শত্রুতা তাঁর সাথে থাকা সত্ত্বেও তারা তাঁর কাছে তাদের আমানত রাখতো।
২। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কৃপা ও করুণার বিবরণ।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিজের উম্মত বা জাতির প্রতি অত্যন্ত সদয় ও কৃপাবান ছিলেন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيْصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَءُوفٌ رَحِيْمٌ)، سورة التوبة، الآية 128. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে মানব জাতি! তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের কাছে বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ এসেছে। তোমাদের কষ্টদায়ক বিষয়গুলি তার জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক বিষয়। সে তোমাদের কল্যাণকামী। প্রকৃত ইমানদার মুসলিম জাতির প্রতি সে অত্যন্ত সদয় ও কৃপাবান”। (সূরা আত্তাওবা, আয়াত নং ১২৮)। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন: (فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ)، سورة آل عمران، الآية 159. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! আল্লাহর অনুগ্রহেই তুমি তোমার অনুসারীদের প্রতি সদয় আচরণ আচরণ করেছ। যদি তুমি তাদের প্রতি নিষ্ঠুর ও কঠোর হতে, তাহলে তারা তোমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতো”। (সূরা আল ইমরান, আয়াত নং ১৫৯)।
৩। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ক্ষমা ও মার্জনার বিবরণ।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন জয়ী হিসেবে মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন, তখন মক্কার মহান ব্যক্তিবর্গ ও নেতাগণ এবং অধিনায়কগণ তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে তাঁর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, তারা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে ইতিপূর্বে শত্রুতা করেছিলেন আর তাঁকে এবং তাঁর সঙ্গীদেরকে অনেক আঘাত করেছিলেন ও কষ্ট দিয়েছিলেন একটি লম্বা সময় ধরে। কিন্তু তিনি কেবল তাদেরকে বলেছিলেন: আজ তোমাদের জন্য কোনো প্রকারের তিরস্কার নেই! যাও তোমরা সবাই স্বাধীন।
৪। মানুষকে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়ার প্রতি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর আগ্রহ।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মানুষকে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়ার জন্য উৎসাহিত করার প্রতি এতটাই আগ্রহী ছিলেন যে, তারা প্রকৃত ইসলাম ধর্ম থেকে বিমুখ হয়ে চলার কারণে তিনি দুঃখ করতে করতে আত্মবিনাশী হওয়ার মতো আচরণ করছিলেন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَفْسَكَ عَلَى آثَارِهِمْ إِنْ لَمْ يُؤْمِنُوا بِهَذَا الْحَدِيثِ أَسَفًا)، سورة الكهف، الآية 6. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! ওরা যদি আল্লাহর বাণী পবিত্র কুরআনের শিক্ষার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে ইচ্ছুক না হয়, তাহলে কি এই কারণে তুমি দুঃখ করতে করতে আত্মবিনাশী হবে? (সূরা আল কাহফ, আয়াত, নং ৬)।
৫। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সাহস এবং শক্তি।
আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] একজন বড়ো সাহসী সাহাবী ছিলেন। তিনি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাহসের কথা এইভাবে বলেছেন: যুদ্ধ যখন অত্যন্ত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতো এবং এক দল আরেক দলের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াতো, তখন আমরা আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছে আত্মরক্ষা করতাম। আর আমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তিই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর চেয়ে শত্রুর অধিক নিকটবর্তী হতো পারতো না। (মুসনাদ আহমাদ 1347)।