শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় শিরোনাম: স্বামীস্ত্রীর অধিকার

বিবরণ: এই পরিচ্ছেদে আমরা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অধিকার এবং স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকারের বিষয়টি জানতে পারবো।

উদ্দেশ্য:

  • স্বামীস্ত্রীর অধিকার ওকর্তব্যের নিয়মনীতির জ্ঞান লাভ করা।
  • স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কতকগুলি অধিকারের বিবরণ।
  • স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কতকগুলি অধিকারের বিবরণ।

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

বিবাহিত জীবনের কতকগুলি অধিকার ও কর্তব্য

প্রকৃত ইসলাম ধর্ম স্বামীস্ত্রীকে তাদের অপরিহার্য কর্তব্যের উপযোগী কতকগুলি অধিকার ‎অর্পণ করেছে। তাই স্বামীস্ত্রীর সেই অপরিহার্য কর্তব্যগুলি পালন করার মাধ্যমে এবং ‎সেই অপরিহার্য কর্তব্যগুলি প্রত্যাখ্যান না করার মাধ্যমে তাদের দুই জনের বিবাহিত ‎জীবন হবে সুশৃঙ্খলিত সুনিয়ন্ত্রিত ও সম্মানিত এবং আনন্দিত। আর যে উদ্দেশ্যে প্রকৃত ‎সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ সমস্ত মানব জাতির প্রথম পিতা আদিম মানব ‎আদমকে ও তার সমস্ত সন্তানদেরকে তথা সমস্ত মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, সেই ‎উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রশান্তিময় সফল পরিবার প্রতিষ্ঠিত হবে। ‎ ‎

স্ত্রীর উপরে তার স্বামীর অধিকার হলো: ‎

١
পরিবারের উপর স্বামীর কর্তৃত্ব আধিপত্য অধিনায়কত্ব ও মালিকানার স্বীকৃতি প্রদান ‎করবে তার স্ত্রী। ‎
٢
স্ত্রী তার স্বামীর অর্থ ও ধনসম্পদের সংরক্ষণ করবে। ‎
٣
স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্ত্রী তার নিজের দেহের ও তার বিবাহিত জীবনের ও তার ‎পরিবারের সংরক্ষণ করবে। ‎
٤
স্ত্রী তার স্বামীর সন্তানদের দেখাশুনা করবে এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে।‎
٥
স্ত্রী তার স্বামীকে মঙ্গলদায়ক কর্মে এবং সৎকাজে সাহায্য করবে।
٦
স্ত্রী তার নিজের সমস্ত আত্মীয়-স্বজনের উপরে এবং তার পিতামাতার উপরে ‎তার ‎স্বামীকে সর্বদা প্রাধান্য দিবে।
٧
স্ত্রী তার স্বামীর বাড়ির সমস্ত বিষয়ে এবং তার ছোটো সন্তানদের সমস্ত বিষয়ে ‎ভালোভাবে ‎তত্ত্বাবধান করবে।

পরিবারের উপর স্বামীর কর্তৃত্ব আধিপত্য অধিনায়কত্ব ও মালিকানার স্বীকৃতি প্রদান‏ ‏করবে তার স্ত্রী।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏(الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ)، سورة النساء، جزء من الآية 34. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “প্রকৃত ইসলাম ধর্মে নারীদেরকে আদর, যত্ন, সম্মান, প্রতিপালন, ‎সংরক্ষণ করা এবং তাদেরকে আদবকায়দা শিক্ষা দেওয়ার সম্পূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে ‎পুরুষদের প্রতি। যেহেতু প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ কতকগুলি ‎মানুষকে অন্য কতকগুলি মানুষের উপর কিছু বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা প্রদান করেছেন। আর ‎যেহেতু তারা সেই নারীদের জন্য অর্থ ব্যয় করার কর্তব্য ও দায়িত্ব বহন করেছে, যদিও ‎আসল সৃষ্টির নিয়ম মোতাবেক মৌলিক অধিকার ও সম্মানের দিক দিয়ে সমস্ত মানুষ ‎সমান”। (সূরা আন্নিসা, আয়াত নং 34 এর অংশবিশেষ)। ‎ সুতরাং স্বামীর প্রতি এই কর্তব্য ও দায়িত্ব ন্যায়পরায়ণতার সহিত সঠিকভাবে পালন ‎‎করা অপরিহার্য। তাই তার জন্য অন্যায় অবিচার ও পক্ষপাতিত্ব করা বৈধ নয় এবং ‎‎স্বেচ্ছাচারী উদ্ধত স্বৈরাচারী ও একগুঁয়ে হওয়াও উচিত নয়। আর স্ত্রীর উপরে এটা ‎অপরিহার্য যে, সে তার স্বামীকে ‎সৎ কাজে মেনে চলবে। তাই স্ত্রীর জন্য স্বামীর ‎অধিকার ও তার সেই স্থান দখল করা উচিত নয়, যে স্থান তাকে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য ‎উপাস্য মহান আল্লাহ ন্যায্য পন্থায় ও ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রদান করেছেন। ‎

স্ত্রী তার স্বামীর অর্থ ও ধনসম্পদের সংরক্ষণ করবে।

স্বামীর স্পষ্ট অনুমতি বা ইঙ্গিতপূর্ণ অনুমতি ছাড়া তার অর্থ ও ধনসম্পদ থেকে স্ত্রী ‎কিছুই ব্যয় করতে পারে না। তবে হ্যাঁ! স্বামী যদি তার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সে ‎পরিবারের জন্য‏ ‏খরচ না করে, তাহলে এই ক্ষেত্রে তার অনুমতি ছাড়া স্ত্রী স্বামীর অর্থ ‎ও ধনসম্পদ প্রয়োজন মোতাবেক নিজের জন্য এবং সন্তানদের জন্য ন্যায়পরায়ণতার ‎সহিত অপব্যয় বা অপচয় ও বৃথা খরচ ব্যতীত নেওয়ার অধিকার রাখে। ‎‏ ‏

স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্ত্রী তার নিজের দেহের ও তার বিবাহিত জীবনের ও তার ‎পরিবারের সংরক্ষণ করবে।

স্ত্রী তার স্বামীর অনুপস্থিত থাকার সময় মাহরাম ছাড়া কোনো পুরুষ ব্যাক্তিকে তার ‎কাছে প্রবেশ করার অনুমতি কোনো সময় প্রদান করবে না। সে পুরুষ ব্যাক্তি তার ‎নিজের আত্মীয়স্বজনের মানুষ হোক অথবা তার স্বামীর আত্মীয়স্বজনের মানুষ হোক ‎কিংবা অন্য কোনো পুরুষ ব্যাক্তি হোক। ‎

স্ত্রী তার স্বামীর সন্তানদের দেখাশুনা করবে এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। ‎

স্ত্রী তার স্বামীর‏ ‏সাথে সাথে ‎‏ ‏তাদের সন্তানদেরকে ভালভাবে প্রতিপালিত করবে বিশেষ ‎করে তাদের‏ ‏জীবনের‏ ‏প্রথম‏ ‏দিকে। যেহেতু তারা এই বয়সে তাদের পিতার চেয়ে ‎তাদের মাতার সাথে বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করে। তাই তারা তাদের মাতার কাছ ‎থেকে প্রকৃত ইসলামের আদবকায়দা ও সচ্চরিত্রের শিক্ষা সহজে লাভ করতে পারবে।‎ ‎

স্ত্রী তার স্বামীর বাড়ির সমস্ত বিষয়ে এবং তার ছোটো সন্তানদের সমস্ত ‎বিষয়ে ‎ভালোভাবে ‎তত্ত্বাবধান করবে।‎

স্ত্রী তার স্বামীর বাড়ির সমস্ত বিষয়ের প্রতি নিজের সাধ্যমতো দৃষ্টি রাখবে এবং বাড়ির ‎সমস্ত কাজ সঠিকভাবে পরিচালিত ও সম্পন্ন করবে এবং শৃঙ্খলার সাথে সব সাজিয়ে ‎গুছিয়ে রাখবে। ‎

স্বামীর উপরে তার স্ত্রীর অধিকার হলো: ‎

١
বিবাহের দেনমোহর বা মোহর স্ত্রীকে প্রদান করতে হবে। ‎
٢
স্ত্রীকে তার প্রয়োজন মোতাবেক প্রকৃত ইসলামের আদবকায়দা শিক্ষা দিবে।‎
٣
স্ত্রীর এবং বাড়ির লোকজন ও সন্তানদের ভরণপোষণের ব্যয় বহন এবং বাড়ির সমস্ত ‎বিষয়ের খরচ বহন করতে হবে স্বামীকে। ‎
٤
স্বামী তার স্ত্রীর সাথে ব্যবহার ও আচরণ ভালো রাখবে।
٥
স্বামী তার স্ত্রীকে আদর, যত্ন ও সম্মান করবে এবং তাকে তার মর্যাদা প্রদান করবে। ‎আর তার দুর্বলতার খেয়াল রেখে তাকে স্নেহ, প্রীতি ও মমতা প্রদর্শন করবে। ‎
٦
একাধিক‏ ‏স্ত্রী থাকলে স্বামী তাদের মধ্যে সব দিক দিয়ে ন্যায়বিচার সুপ্রতিষ্ঠিত করবে।

বিবাহের মোহর স্ত্রীকে প্রদান করতে হবে। ‎

মোহর হলো স্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট ন্যায্য অধিকার। তাই স্বামী তার স্ত্রীকে এই ‎অত্যাবশ্যক ও অত্যন্ত দরকারি উপহার মোহর হিসেবে প্রদান করবে; তার হৃদয়কে ‎প্রফুল্লিত ও আনন্দিত করার জন্য এবং তার অন্তরকে পবিত্র ভালোবাসায় আবদ্ধ রাখার ‎জন্য আর তাকে প্রকৃত প্রীতি প্রদর্শন করার জন্য। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র ‎কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏(وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً)، سورة النساء، جزء من الآية 4. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজ! তোমরা আনন্দচিত্তে তোমাদের ‎স্ত্রীদেরকে অপরিহার্য অধিকার মোহর প্রদান করো”। (সূরা আন্নিসা, আয়াত নং ৪ এর ‎অংশবিশেষ)।

নিজের স্ত্রীর এবং বাড়ির লোকজনের ও সন্তানদের ভরণপোষণের ব্যয় বহন করবে ‎এবং বাড়ির সমস্ত বিষয়ের খরচ বহন করবে স্বয়ং স্বামী।

অতএব স্ত্রীর এবং বাড়ির লোকজনের ও সন্তানদের ভরণপোষণের ব্যয় বহন করতে ‎হবে স্বামীকে। তাই স্বামী নিজের সাধ্যমত ন্যায়পরায়ণতার সহিত অপব্যয় বা অপচয় ও ‎বৃথা খরচ ব্যতীত তাদের জন্য খাদ্যদ্রব্য, পানীয় দ্রব্য, বস্ত্র সরবরাহ করবে এবং তাদের ‎উপযোগী বাসস্থানেরও ব্যবস্থা করবে। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে ‎বলেছেন: ‎ ‏(لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آتَاهَا سَيَجْعَلُ اللَّهُ بَعْدَ ‏عُسْرٍ يُّسْرًا)، سورة الطلاق، الآية 7. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “সচ্ছল ব্যক্তি নিজের সাধ্যমত স্ত্রীর জন্য এবং ছোটো সন্তানদের জন্য ‎ব্যয় করবে। আর যে ব্যক্তি দরিদ্র হবে, সেও আল্লাহ যা তাকে প্রদান করেছেন তা ‎থেকে তার ক্ষমতানুযায়ী ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যা সামর্থ্য দিয়েছেন, তার চেয়ে ‎বেশি কিছু তাকে দায়িত্ব পালন করতে বলেন না। আর অভাবের পর আল্লাহই সচ্ছলতা ‎প্রদান করবেন”। (সূরা তালাক, আয়াত নং ৭)।

স্বামী তার স্ত্রীর সাথে ব্যবহার ও আচরণ ভালো রাখবে।

অর্থাৎ, স্বামী তার স্ত্রীর সাথে কথায়, কর্মে ও চালচলনে সচ্চরিত্রতা, আন্তরিকতা, ভদ্রতা, ‎শালীনতা, সুশীলতা, বিনম্রতা, বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতা বজায় রাখবে। এবং তার সাথে ‎কঠোরতা, উগ্রতা ও অভদ্রতার সাথে চলাফেরা করবে না। আর স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি ‎ধৈর্যধারণ করবে এবং সহ্য করবে আর বিরক্ত হবে না, অপ্রীতিকর আচরণ করবে না ‎এবং ঘৃণিত ভাব প্রকাশ করবে না। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে ‎বলেছেন: ‎ ‏(وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا)، سورة النساء، جزء من ‏الآية 19. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে স্বামীগণ‏!‏‎ তোমরা তোমাদের স্ত্রীগণের সাথে সদয় ব্যবহার ‎করবে এবং তাদের সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে জীবনযাপন করবে। আর তোমরা যদি ‎তাদেরকে কোনো বিষয়ে অপছন্দ করো, তাহলে জেনে রাখো যে, এমনও হতে পারে ‎যে, তাদের কোনো আচরণ তোমাদের নিকটে অপছন্দনীয় বিষয় হলেও তাদের সাথে ‎ধৈর্যের সহিত জীবনযাপন করলে আল্লাহ তোমাদের জন্য সেই অপছন্দনীয় বিষয়ে ‎অনেক কল্যাণ প্রদান করবেন”। (সূরা আন্নিসা, আয়াত নং ১৯ এর অংশবিশেষ)। এই বিষয়ে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎বলেছেন:‎ ‏"لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً، إنْ كَرِهَ منها خُلُقًا رَضِيَ منها آخَرَ". ‏ ‏(صحيح مسلم، رقم الحديث 61 - (1469)، ).‏ অর্থ: “কোনো ইমানদার মুসলিম স্বামী‏ ‏কোনো ইমানদার মুসলিম স্ত্রীকে ঘৃণা, অবমাননা, ‎অবজ্ঞা অথবা অসম্মান করবে না; যেহেতু সে তার কোনো একটি আচরণ বা অভ্যাস ‎অথবা বিষয়কে অপছন্দ বা অমনোনীত অথবা ঘৃণা করলে, তার অন্য কোনো আচরণ ‎বা অভ্যাস অথবা বিষয়কে সে অবশ্যই পছন্দ করবে”। ‎ ‎[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬১- (1469)]। ‎

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন