মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় শিরোনাম: বড়ো অপবিত্রতা ও গোসলের বিবরণ
গোসল অপরিহার্য হওয়ার কতকগুলি কারণ
মুসলিম ব্যক্তির দ্বারা কতকগুলি নির্দিষ্ট কর্ম সংঘটিত হলে, নামাজ পড়ার পূর্বে এবং তওয়াফ করার আগে তার জন্য গোসল করা অপরিহার্য হয়ে যায়। আর তার গোসল করার পূর্বের অবস্থাকে বড়ো অপবিত্রতার অবস্থা বলা হয়।
১। বীর্য স্খলন হওয়ার বিধান
কামভাবের সহিত চরম উত্তেজনার মুহূর্তে যে কোনো পদ্ধতিতে জাগ্রত অবস্থায় অথবা নিদ্রিত অবস্থায় বীর্য স্খলন হয়। আর বীর্য: হলো সাদা, গাঢ় ও তরল পদার্থ, এটি কামভাবের সহিত চরম উত্তেজনার মুহূর্তে স্খলন হয়।
২। স্ত্রী-পুরুষের যৌন সংসর্গ বা সহবাস
স্ত্রী-পুরুষের যৌন সংসর্গ বা সহবাস আর এর অর্থ হলো নারীর যোনিতে পুরুষের পুরুষাঙ্গ বা লিঙ্গ প্রবেশ করানো, যদিও তাতে বীর্যপাত না হয়। এবং শুধুমাত্র পুরুষাঙ্গের বা লিঙ্গের মাথার অগ্রভাগ সুপারির দানার পরিমাণের মতো নারীর যোনিতে প্রবেশ করলেই গোসল অপরিহার্য হয়ে যাবে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا)، سورة المائدة، جزء من الآية 6. ভাবার্থের অনুবাদ: “আর তোমরা যদি জুনুবি আবস্থায় থাকো, তাহলে তোমরা গোসল করে পবিত্র হও”। (সূরা আল মায়েদা, আয়াত নং ৬ এর অংশবিশেষ)। বিশেষ জ্ঞাতব্য বিষয়: যার বীর্যপাত হয়েছে বা স্ত্রী-পুরুষের যৌন সহবাস হয়েছে এবং তাতে বীর্যপাত হয়েছে অথবা হয়নি। এই অবস্থায় যে ব্যক্তি উপনীত হবে, সেই ব্যক্তিকে জুনুবি বলা হবে।
৩। মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব এবং নিফাস বা সন্তান প্রসবের পরের রক্তস্রাব
মহিলাদের প্রতিমাসে যোনিপথ দিয়ে যে রক্তস্রাব হয়, তাকে ঋতুস্রাব বা মাসিক অথবা হাইজ বলা হয়। এই রক্তস্রাব তাদের প্রতিমাসেই সাত দিন পর্যন্ত কিংবা তার চেয়ে বেশি অথবা কম হয়ে থাকে। মহিলাদের সন্তান প্রসবের পর যোনিপথ দিয়ে যে রক্তস্রাব হয়, তাকে নিফাস বলা হয়। আর এই রক্তস্রাব তাদের কিছু দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে।
যে সব মহিলার মাসিক ঋতুস্রাব এবং নিফাস বা সন্তান প্রসবের পর রক্তস্রাব চলতে থাকে, তাদেরকে নামাজ ও রোজা রাখার বিষয়ে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের পক্ষ থেকে অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যে সব মহিলার মাসিক ঋতুস্রাব এবং নিফাস বা সন্তান প্রসবের পর রক্তস্রাব হবে, তারা নামাজ পড়বে না এবং রোজাও রাখবে না। তবে তারা যখন মাসিক ঋতুস্রাব অথবা সন্তান প্রসবজনিত স্রাব হতে পবিত্র হবে, তখন তারা রোজা রাখবে। আর তারা তাদের রমাজান মাসের ছুটে যাওয়া রোজা রমাজান মাসের পর অন্যান্য দিবসে কাজা করবে।
যখন কোনো মহিলার মাসিক ঋতুস্রাব চলতে থাকবে, তখন তার স্বামী তার সাথে যৌনসঙ্গম করতে পারবে কি না?
যখন কোনো স্ত্রীর মাসিক ঋতুস্রাব চলতে থাকবে, তখন তার সাথে তার স্বামীর জন্য যৌনসঙ্গম করা না জায়েজ হয়ে যাবে। কিন্তু সে তার স্ত্রীর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ দ্বারা সুখভোগ করতে পারবে যদিও তা যৌনসঙ্গম করার মতো খুবই তৃপ্তিদায়ক হবে না। আর যখন কোনো স্ত্রীর মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাবে, তখন তাকে গোসল করতে হবে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيْضِ وَلَا تَقْرَبُوْهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللهُ)، سورة البقرة، جزء من الآية 222. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে ইমানদার মুসলিম সমাজ! তোমরা মাসিক ঋতুস্রাব চলতে থাকা অবস্থায় তোমাদের স্ত্রীদের সাথে যৌনসঙ্গম বর্জন করবে। তারা পরিষ্কৃত ও বিশোধিত এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের সাথে যৌনসঙ্গম হতে বিরত থাকবে। অতঃপর তাদের মাসিক ঋতুস্রাব যখন বন্ধ হয়ে যাবে এবং তারা গোসল করে পরিষ্কৃত ও বিশোধিত এবং পবিত্র হয়ে যাবে, তখন তোমরা তাদের সাথে তাদের যোনিতে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বিধান মোতাবেক যৌনসঙ্গম করতে পারবে”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ২২২ এর অংশবিশেষ)।
প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি জুনুবি হলে বা বড়ো অপবিত্রতায় উপনীত হলে পবিত্রতা অর্জনের ইচ্ছায় সে তার সারা শরীর পবিত্র পানি দিয়ে ধৌত করবে। আর এটিাই তার জন্য যথেষ্ট হবে।
তবে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির জন্য আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর গোসল করার পদ্ধতি মোতাবেক গোসল করাই হলো সর্বোত্তম গোসল। সুতরাং প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি যখন জুনুবি অবস্থা হতে বা বড়ো অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য গোসল করবে, তখন সে সর্বপ্রথমে কব্জি পর্যন্ত দুই হাত ধৌত করবে। তারপর সে তার লজ্জাস্থান ও তার আশেপাশের বা চারিদিকের ময়লা দূরীভূত করবে। অতঃপর সে সম্পূর্ণরূপে নামাজের জন্য ওজু করার মতো ওজু করবে। তারপর পবিত্র পানি দিয়ে সে নিজের মাথা তিনবার ধৌত করবে এবং সারা শরীর ধৌত করবে।
আর প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি যখন জুনুবি বা বড়ো অপবিত্রতা থেকে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করবে, তখন তার জন্য ফরজ গোসলই যথেষ্ট হবে। সুতরাং তার জন্য ফরজ গোসলের সাথে ওজু করা জরুরি নয়। তবে জেনে রাখতে হবে যে, সর্বোত্তম ফরজ গোসল হলো সেই গোসল, যে গোসলে ওজু থাকে। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর গোসল করার পদ্ধতি মোতাবেক গোসল করাই হলো সর্বোত্তম গোসল। আর তাঁর ফরজ গোসলের অন্তর্ভুক্ত হতো ওজু।