মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় পবিত্রতার বিধিবিধান
স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক পরিচ্ছন্নতা ও তার বিধিবিধান
স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক পরিচ্ছন্নতা ও তার বিধিবিধান বলতে সেই সব গুণাবলিকে বুঝানো হয়, যে সব গুণাবলির প্রতি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ মানব সমাজকে সৃষ্টি করেছেন। তাই মুসলিম ব্যক্তি সেই সব গুণাবলিকে নিজের জীবনে বাস্তবায়িত করে নিজেকে সমাজের সামনে অতি সুশৃঙ্খলভাবে ও সুন্দররূপে প্রকাশ করতে পারবে। যেহেতু প্রকৃত ইসলাম হলো সৌন্দর্যের ধর্ম। তাই প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মুসলিম ব্যক্তিকে বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য অবলম্বন করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছে।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক পরিচ্ছন্নতা ও তার বিধিবিধান হলো পাঁচটি: "الخِتَانُ، وَالِاسْتِحْدَادُ، وَنَتْفُ الإبْطِ، وَقَصُّ الشَّارِبِ، وَتَقْلِيمُ الأظْفَارِ". (صحيح البخاري، رقم الحديث 6297، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 50 - (257)، ). অর্থ: ১। খাতনা করা। ২। লজ্জাস্থানের লোম পরিষ্কার করা। ৩। বগলের লোম উপড়ে ফেলা। ৪। মোচ খাটো করা। ৫। নখ কাটা। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৯৭ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫০ - (২৫৭), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
খতনার বিবরণ
পুরুষাঙ্গের সামনের বা মাথার দিকে যে অতিরিক্ত চামড়া পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীল মাথাকে ঢেকে রাখে, সেই চামড়াকে কেটে ফেলা বা ছেদন করার নাম হলো খতনা বা মুসলমানি অথবা সারকামসিশন বলা হয়। আর এই কাজটি সাধারণভাবে বেটাছেলে অথবা পুরুষ ছেলের প্রসবের প্রথম দিনগুলিতে হয়ে থাকে। প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক এই কাজটি হলো গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত ও মস্তাহাব বা পছন্দনীয় কাজ। এই নিয়মটি পুরুষের জন্য স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক পরিচ্ছন্নতা ও তার বিধিবিধানের অন্তর্ভুক্ত নাবী পয়গম্বর বা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূলগণের কর্ম ও আচরণ বিধি। আর এই খতনার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যগত অনেক উপকারিতা।
লজ্জাস্থানের লোম পরিষ্কার করার বিধান
যৌনাঙ্গের লোম পরিষ্কার করার বিষয়টি হলো এই যে, ক্ষৌরকর্মের মাধ্যমে অথবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে লজ্জাস্থানের ও তার আশেপাশের বা চারিদিকের চুল অপসারিত ও পরিষ্কৃত করা।
মোচ খাটো করার বিধান
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক স্বাভাবিকভাবে গোঁফ বা মোচ রাখা বা না রাখা নিষিদ্ধ নয়। তবে হ্যাঁ প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক গোঁফ বা মোচ রাখা একটি পছন্দনীয় কাজ বা উত্তম কাজ নয়। তাই প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি যখন তার গোঁফ বা মোচ রাখবে, তখন তার সদাসর্বদা যত্ন করবে এবং তাকে খুব খাটো করে এবং ছোটো করে রাখবে।
দাড়ি ছেড়ে দেওয়ার বিধান
প্রকৃত ইসলাম ধর্ম দাড়ি ছেড়ে দেওয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। দাড়ির অর্থ হলো থুতনিসহ মুখের দুই পাশের সেই হাড়, যে হাড়ের উপরে লোম বা কেশ গজায়, আর সেই লোম বা কেশকে দাড়ি বলা হয়। আর দাড়ি ছেড়ে দেওয়ার তাৎপর্য হলো এই যে, দাড়ি রেখে দিতে হবে এবং চেঁছেমুছে পরিষ্কার করতে হবে না; যাতে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর শিক্ষা ও বিধিবিধানের অনুকরণ হয়।
দাঁতন করার বিবরণ
দাঁতন বলা হয় দাঁত মাজবার জন্য ব্যবহৃত আরাক গাছের ডাল বা শিকড় অথবা অন্য কোনো গাছের ডাল। দাঁতন করা হলো একটি মোস্তাহাব ও পছন্দনীয় র্কম।
নখ কাটার বিধান
সুতরাং মুসলিম ব্যক্তির একটি কর্তব্য হলো এই যে, সে যেন তার নখ ছোটো রাখার প্রতি যত্নবান হয়। যাতে তার নখের মধ্যে ময়লা এবং নোংরা বস্তু জমা না হয় বা আটকে না থাকে।
বগলের লোম উপড়ে ফেলার বিধান
প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির অন্যতম একটি কর্তব্য হলো এই যে, সে যেন তার বগলের লোম উপড়ে ফেলার জন্য অথবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে বগলের লোম পরিষ্কার করার জন্য তৎপর থাকে; যাতে তার বগলের দ্বারা দুর্গন্ধ বা খারাপ গন্ধ সৃষ্টি না হয়।
আঙ্গুলের গিরা পরিষ্কার করার বিধান
আঙ্গুলের গিরা হলো: আসলে আঙ্গুলের গিঁট বা গ্রন্থি। এতে কোনো কোনো সময় ময়লা জমে থাকার আশঙ্কা করা হয়। তাই সমস্ত আঙ্গুলের গিঁট বা গ্রন্থি ধৌত করা হলো মোস্তাহাব ও পছন্দনীয় কাজ।
মলমূত্র ত্যাগের পর শুদ্ধির জন্য পানি ব্যবহার করা, কুলি করা এবং নাকে পানি দিয়ে নাকের পানি ঝেড়ে ফেলার নিয়ম
মলমূত্র ত্যাগের পর শুদ্ধির জন্য পানি ব্যবহার করাকে ইস্তিঞ্জা বলা হয় আর এই ইস্তিঞ্জা করা, কুলি করা এবং নাকে পানি দিয়ে নাকের পানি ঝেড়ে ফেলা। এই তিনটি বিষয় মলমূত্র ত্যাগের পর শুদ্ধি ও তার আদবকায়দা এবং ওজুর বিবরণের অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে।