মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় আল্লাহর বার্তাবহ রাসূলগণের প্রতি ঈমান
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূলগণের প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করার অর্থ:
মহান আল্লাহর বার্তাবহ রাসূলগণের প্রতি এইভাবে দৃঢ় ঈমান বা দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে, মহান আল্লাহ প্রত্যেক জাতির মানব সমাজের কল্যাণার্থে যুগে যুগে তাদের মধ্যে থেকে তাদের প্রতি বার্তাবহ রাসূল প্রেরণ করেছেন, তাদেরকে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য শরিকহীন এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর উপাসনা করার জন্য। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ)، سورة النحل، جزء من الآية 36. ভাবার্থের অনুবাদ: “আর আমি যুগে যুগে প্রত্যেক জাতির প্রতি বার্তাবহ রাসূল প্রেরণ করেছি; একটি বার্তা প্রচার করার জন্য, আর সেই বার্তাটি হলো: হে মানব সমাজ! তোমরা কেবলমাত্র তোমাদের প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর উপাসনা করো এবং তাঁর উপাসনা ছাড়া অন্য সমস্ত প্রতিমা, মূর্তি, বস্তু বা ব্যক্তি অথবা অপশক্তির উপাসনা পরিত্যাগ করো”। [সূরা আন নাহাল, আয়াত নং ৩৬ এর অংশবিশেষ)।
আমরা ঈমান রাখি বা বিশ্বাস করি যে, সমস্ত বার্তাবহ রাসূল সত্যবাদী, বিশ্বাসভাজন, সৎকর্মী, ন্যায়পরায়ণ, সুপথের পথিক এবং শান্তির পথপ্রদর্শক। আর মহান আল্লাহ তাঁদেরকে যে সমস্ত বার্ত প্রচারের দিয়ে দায়িত্ব অর্পন করে বার্তাবহ রাসূল হিসেবে মানব সমাজের কাছে প্রেরণ করেছিলেন, সে সমস্ত বার্ত তাঁরা সঠিকভাবে প্রচার করেছেন এবং তা থেকে তাঁরা কিছু নিজেদের পক্ষ গোপন রাখেননি, পরিবর্তন করেননি এবং একটি অক্ষর কম বা বেশি করেননি। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (فَهَلْ عَلَى الرُّسُلِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِين)، سورة النحل، جزء من الآية 35. ভাবার্থের অনুবাদ: “আল্লাহর সমস্ত বার্তাবহ রাসূলের কর্তব্য হলো মহান আল্লাহর সমস্ত বার্ত সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া ও প্রচার করা”। [সূরা আন নাহাল, আয়াত নং ৩৫ এর অংশবিশেষ)।
সকল জাতির মানব সমাজের সুখময় জীবন লাভের উদ্দেশ্যে অবশ্যই একটি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তা থাকা দরকার। আর সেই বার্তা তাদের জীবন পরিচালিত করার বিধিবিধানের ব্যাখ্যা প্রদান করবে এবং তাদেরকে শান্তির পথ ও সত্যের পথ প্রদর্শন করবে আর সেই বার্তাটি হলো আসলে বিশ্বের আত্মা, আলো এবং জীবন। বিশ্বের আত্মা, জীবন ও আলো না থাকলে বিশ্বে কোনো কল্যাণ থাকবে না।
এই জন্য প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ নিজের বার্তার নাম রেখেছেন আত্মা। আত্মা ব্যতীত জীবন থাকেনা। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ رُوحًا مِنْ أَمْرِنَا مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلَا الْإِيْمَانُ وَلَكِنْ جَعَلْنَاهُ نُوْرًا نَهْدِيْ بِهِ مَنْ نَشَاءُ مِنْ عِبَادِنَا)، سورة الشورى، جزء من الآية 52. ভাবার্থের অনুবাদ: হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! আমি এইভাবেই তোমার প্রতি ফেরেশতা জিবরীলের মাধ্যমে আমার বার্তা পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছি। এর পূর্বে তুমি জানতে না ঐশীবাণীর গ্রন্থ পবিত্র কুরআন কী জিনিস? ইমান বা বিশ্বাস কী জিনিস? কিন্তু এখন আমার বার্তা পবিত্র কুরআনকে মঙ্গলময় জীবন লাভের পথ আলোকিত করার জন্য জ্যোতি বানিয়ে দিয়েছি, যার দ্বারা আমি আমার মানব সমাজের মধ্যে যে চায়বে তাকে আমি সেই পথ প্রদর্শন করবো”। (সূরা আশ্শুরা, আয়াত নং ৫২ এর অংশবিশেষ)। এর কারণ হলো এই যে, বুদ্ধির দ্বারা যদিও সাধারণভাবে ভালোমন্দ বা মঙ্গল-অমঙ্গল জানা যায় কিন্তু প্রকৃত ইসলাম ধর্মের বিস্তারিত বিবরণ এবং ছোটো বড়ো খুঁটিনাটি সব কিছুই জানা যায় না। সুতরাং উপাসনার বিস্তারিত নিয়ম পদ্ধতি ইত্যাদি ঐশীবাণীর গ্রন্থ ও প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তা ছাড়া জানা যায় না। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পয়গম্বর বা নাবী এবং বার্তাবহ রসূলগণ (আলাইহিমুস সালাম) এর অনুসরণের মাধ্যমেই কেবলমাত্র ইহকাল ও পরকালের পূর্ণ সুখশান্তি ও পূর্ণ সফলতা লাভ করা যাবে। এবং তাঁদের অনুসরণের মাধ্যম ছাড়া ইহকাল ও পরকালের পূর্ণ সুখশান্তি ও পূর্ণ সফলতা লাভ করার কোনো পথ নেই। আর তাঁদের মাধ্যম ছাড়া ভালোমন্দ, পবিত্র অপবিত্র, বৈধ ও অবৈধ জানার কোনো পথ নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তা থেকে বিমুখ হয়ে যাবে, সে ব্যক্তি তার বিমুখ হওয়ার পরিণাম মোতাবেক দুঃখময় ও দুঃখ-দুর্দশাপূর্ণ জীবন লাভ করবে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (قُلْنَا اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعًا فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ * وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ )، سورة البقرة، الآيتان 38،39. ভাবার্থের অনুবাদ: “আমি বলেছিলাম: তোমরা সবাই এই আকাশ থেকে নীচে পৃথিবীতে যাও। তারপর তোমাদের মঙ্গলের জন্য অবশ্যই আমার পক্ষ থেকে যুগে যুগে সুখময় জীবন লাভের সত্য সঠিক বার্তা তোমাদের নিকটে আসবে। সুতরাং সেই সত্য সঠিক বার্তা যারা মেনে চলবে, তাদের কোনো ভয় বা দুঃখ থাকবে না। আর যারা সেই সত্য সঠিক বার্তা ও আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করবে, তারাই জাহান্নাম বা নরকের আগুনে জীবনযাপন করবে, সেখানেই তারা চিরকাল থাকবে”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ৩৮-৩৯)।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা হলো ইমানের ছয়টি মূল রুকন বা ভিত্তির অন্তর্ভক্ত একটি রুকন বা ভিত্তি।
আল্লাহর প্রেরিত রাসূলগণের প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা হলো ইমানের ছয়টি মূল রুকন বা ভিত্তির অন্তর্ভক্ত একটি রুকন বা ভিত্তি। (آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لاَ نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ)، سورة البقرة, جزء من الآية 285. ভাবার্থের অনুবাদ: “আল্লাহর রাসূল তদীয় প্রতিপালকের পক্ষ হতে তৎপ্রতি যা কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে, তাতে সে বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম জাতি। তারা সবাই সঠিক পন্থায় ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করেছে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। তারা সবাই বলে: আমরা মুসলিম জাতি আল্লাহর রাসূলগণের মধ্যে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করি না”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ২৮৫ এর অংশবিশেষ)। এই আয়াতের দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর সমস্ত বার্তাবহ রাসূলের প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য। এবং তাঁদের মধ্যে কোনো প্রকারের পার্থক্য সৃষ্টি করা বৈধ নয়। তাই আমরা কতকগুলি বার্তাবহ রাসূলের প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করবো এবং কতকগুলি বার্তাবহ রাসূলকে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের মতো প্রত্যাখ্যান করবো তা নয়। বরং আমরা আল্লাহর সমস্ত বার্তাবহ রাসূলের প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করি।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মহাফেরেশতা জিবরীল [আলাইহিস সালাম] কে তাঁর প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন: “ঈমান হলো এই যে, আপনি আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর বার্তাবহ রাসূলগণের প্রতি এবং মৃত্যুবরণের পর পরকালের শেষ দিবসে পুনরুত্থিত হওয়ার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেন আর ভাগ্যের মঙ্গল ও অমঙ্গলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১ - (৮) এর অংশবিশেষ] ।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূলগণের নিদর্শন এবং তঁদের মোজেজা বা অলৌকিক ঘটনা
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তাঁর পয়গম্বর বা নাবী এবং বার্তাবহ রসূলগণ (আলাইহিমুস সালাম) এর সততা ও তাঁদের নবুওয়াত সাব্যস্ত করার জন্য তাঁদেরকে সাহায্য করেছেন বিভিন্ন প্রকারের যুক্তি প্রমাণের দ্বারা। এর মধ্যেই রয়েছে কতকগুলি এমন প্রকাশ্য মোজেজার অলৌকিক ঘটনা এবং নিদর্শন যে, সেই সমস্ত মোজেজার অলৌকিক ঘটনা এবং নিদর্শন মানুষের ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তাঁদের সততা ও তাঁদের নবুওয়াত সত্য বলে প্রমাণিত করার জন্য তাঁদেরকে মোজেজার অলৌকিক ঘটনা এবং নিদর্শন প্রদান করেছেন। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তাঁর পয়গম্বর বা নাবী এবং বার্তাবহ রসূলগণের মাধ্যমে এমন কতকগুলি অসাধারণ ও অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ করেন যে, সেই সমস্ত অসাধারণ ও অলৌকিক ঘটনা মানুষ সাধারণভাবে প্রকাশ করতে পারে না।
নাবীগণ (আলাইহিমুস সালাম) এর মোজেজার অলৌকিক ঘটনা ঘটার নিদর্শন
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তাবহ রসূলগণের প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করার মধ্যে কী কী বিষয় সংশ্লিষ্ট আছে?
১। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তাবহ রসূলগণের বার্তার প্রতি এইভাবে ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা যে, তারা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বার্তা পেয়েছেন, সে বার্তা হলো সত্য। আর তাঁদের সমস্ত বার্তা সর্বসম্মতিক্রমে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর উপাসনা করার প্রতি আহ্বান জানায়।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ)، سورة النحل، جزء من الآية 36. ভাবার্থের অনুবাদ: “আর আমি যুগে যুগে প্রত্যেক জাতির প্রতি বার্তাবহ রাসূল প্রেরণ করেছি; একটি বার্তা প্রচার করার জন্য, আর সেই বার্তাটি হলো: হে মানব সমাজ! তোমরা কেবলমাত্র তোমাদের প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর উপাসনা করো এবং তাঁর উপাসনা ছাড়া অন্য সমস্ত প্রতিমা, মূর্তি, বস্তু বা ব্যক্তি অথবা অপশক্তির উপাসনা পরিত্যাগ করো”। [সূরা আন নাহাল, আয়াত নং ৩৬ এর অংশবিশেষ)।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পয়গম্বর বা নাবী এবং বার্তাবহ রসূলগণ (আলাইহিমুস সালাম) এর সম্প্রদায়ের উপযোগী কতকগুলি গৌণ বা অপ্রধান বিষয়ের বিধিবিধানের মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنكُمْ شِرْعَةً وَّمِنْهَاجًا)، سورة المائدة، جزء من الآية 48. ভাবার্থের অনুবাদ: “আমি তোমাদের প্রত্যেক সম্প্রদায়কে আলাদা আলাদা আইন ও স্পষ্ট জীবন পদ্ধতি প্রদান করেছি”। (সূরা আল মায়িদা, আয়াত নং ৪৮ এর অংশবিশেষ)।
২। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর সমস্ত পয়গম্বর বা নাবী এবং সমস্ত বার্তাবহ রাসূলের বিশ্বাস স্থাপন করা।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর সকল নাবী ও সকল বার্তাবহ রাসূলের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য। তাই মহান আল্লাহ যে সমস্ত নাবী বা বার্তাবহ রাসূলের নাম উল্লেখ করেছেন, সে সমস্ত সমস্ত নাবী বা বার্তাবহ রাসূলের প্রতি আমরা ইমান বা বিশ্বাস বিস্তারিতভাবে স্থাপন করবো, যেমন: মুহাম্মাদ, ইবরাহিম, মুসা, ঈসা বা যিশু এবং নুহ [আলাইহিমুস সালাম]। তবে যে সব নাবী বা বার্তাবহ রাসূলের নাম আমরা জানতে পারিনি, তাঁদের প্রতি আমরা সাধারণভাবে সংক্ষেপে ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করবো। আর যে ব্যক্তি কোনো একজন নাবী বা বার্তাবহ রাসূলের বার্তাকে প্রত্যাখ্যান করবে, সে ব্যক্তি সকল নাবী ও সকল বার্তাবহ রাসূলের বার্তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে বিবেচিত হবে।
৩। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তাবহ রাসূলগণের সঠিক সংবাদ ও তাঁদের মোজেজার অলৌকিক ঘটনা সত্য বলে বিশ্বাস করা।
পবিত্র কুরআন ও নির্ভরযোগ্য হাদীসের দ্বারা যে সকল বার্তাবহ রাসূলের সংবাদ এবং তাঁদের মোজেজা বা অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হওয়া সত্য বলে সাব্যস্ত হয়েছে, যে সকল বার্তাবহ রাসূলের সংবাদ এবং তাঁদের মোজেজা বা অলৌকিক ঘটনা সত্য বলে বিশ্বাস করা ও তার প্রতি ইমান রাখা অপরিহার্য। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে মুসা [আলাইহিস সালাম] এর একটি মোজেজা হলো সমুদ্রের পানি প্রাচীর মতো দাঁড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা।
৪। আমাদের কাছে প্রেরিত বার্তাবহ রাসূলের বিধিবিধান মোতাবেক কাজ করা অপরিহার্য আর তিনি হলেন সমস্ত নাবী বা বার্তাবহ রাসূলের মধ্যে সর্বোত্তম এবং সর্বশেষ: এবং তিনি হলেন মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর সকল বার্তাবহ রাসূলের বৈশিষ্ট্য:
১। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূলগণ হলেন মানব জাতির অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূলগণের মধ্যে এবং অন্যান্য মানুষের মধ্যে পার্থক্য হলো এই যে, মহান আল্লাহ তাঁদেরকে অহী বা প্রত্যাদেশ এবং নিজের বার্তা প্রদান করেছেন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ)، سورة الأنبياء، جزء من الآية 7. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! আমি তোমার পূর্বে আমার অহী বা প্রত্যাদেশসহ কতকগুলি পুরুষ মানুষকেই বার্তাবহ রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছি”। (সূরা আল আম্বিয়া, আয়াত নং ৭ এর অংশবিশেষ)। অতএব তাঁদের মধ্যে প্রকৃত প্রতিপালক ও সত্য উপাস্য হওয়ার কোনো বৈশিষ্ট্য ছিলো না। কিন্তু তাঁরা এমন মানুষ ছিলেন যে, তাঁরা বাহ্যিক আকৃতির দিক দিয়ে পূর্ণতা সর্বোৎকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন এবং চারিত্রিক দিক দিয়েও পূর্ণতার শিখরে পৌঁছেছিলেন। সেই রূপ তাঁরা বংশের দিক দিয়েও ছিলেন সবর্বোত্তম মানুষ। আর তাঁরা বুদ্ধির দিক দিয়েও ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ এবং ভাষার দিক দিয়েও ছিলেন সর্বোচ্চ স্থানে। তাই তাঁরা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তা বহনে এবং নবুয়তের দায়িত্ব পালনের উপযোগী মানুষ ছিলেন। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ মানবজাতির মধ্যে থেকে তাঁর বার্তাবহ রাসূলগণকে নির্বাচিত করেছিলেন; যাতে তাঁরা মানব জাতির জন্য উত্তম আদর্শ হিসেবে জীবনযাপন করেন। এবং মানব সমাজের জন্য তাঁদের অনুসরণ করা এবং তাঁদেরকে উত্তম আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা অতি সহজ হয়।
২। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তাঁর বার্তাবহ রাসূলগণকে মানব জাতির মধ্যে থেকে বেছে নেন।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ বার্তাবহ রাসূলগণকে সমস্ত মানুষের মধ্যে থেকে বেছে নিয়েছেন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (اللَّهُ يَصْطَفِي مِنَ الْمَلَائِكَةِ رُسُلًا وَمِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ)، سورة الحج، الآية 75. ভাবার্থের অনুবাদ: “প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ বার্তাবহ ফেরেশতাদের মধ্যে থেকে এবং মানব জাতির মধ্যে থেকে তাঁর বার্তাবহ রাসূলগণকে মনোনীত করেন”। (সূরা আল হাজ্জ, আয়াত নং ৭৫)। সুতরাং প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পয়গম্বর বা নাবী এবং বার্তাবহ রাসূল হওয়া যায় না আধ্যাত্মিক পবিত্রতা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, গভীর বিচক্ষণতা এবং যৌক্তিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। বরং মহান আল্লাহ সমস্ত মানুষের মধ্যে থেকে তাঁর বার্তাবহ রাসূলগণকে নির্বাচন করে নেন। অতএব মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (اللهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَه) سورة الأنعام، جزء من الآية 124. ভাবার্থের অনুবাদ: প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ ভালোভাবে জানেন: কার উপরে তিনি তাঁর বার্তা বহনের দায়িত্ব অর্পণ করবেন”। (সূরা আল আন্আম, আয়াত নং ১২৪ এর অংশবিশেষ)।
৩। বার্তাবহ রাসূলগণ প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তা বহনের কাজে এবং সেই বার্তা প্রচারের কাজে সমস্ত ভুলভ্রান্তি হতে সদাসর্বদা সংরক্ষিত।
অতএব তাঁরা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তা প্রচারের বিষয়ে সমস্ত ভুলভ্রান্তির ঊর্ধ্বে। এবং মহান আল্লাহ তাঁদের প্রতি যে অহী বা প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ করেছেন তার বাস্তবায়নেও তাঁরা সমস্ত ভুলচুক হতে মুক্ত।
৪। সততা
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তাবহ রাসূলগণ [আলাইহিমুস সালাম] তাঁদের কথায় ও কাজে তাঁরা সর্বদা সত্যবাদী। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (هَذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمَنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُون)، سورة يس، الآية 52. ভাবার্থের অনুবাদ: “অনন্ত করুণাময় প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তো এই দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আর তাঁর বার্তাবহ রাসূলগণ সত্য কথাই বলেছিল। (সূরা ইয়াসিন, আয়াত নং ৫২ এর অংশবিশেষ)।
৫। ধৈর্যধারণ করা
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তাবহ রাসূলগণ [আলাইহিমুস সালাম] মহান আল্লাহর সত্য ধর্ম প্রকৃত ইসলামের প্রতি মানব সমাজকে আহ্বান করেছেন সুসংবাদ দিয়েছেন এবং সতর্ক করেছেন। এই কারণে তাঁদেরকে অনেক প্রকারের কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে এবং ধৈর্যধারণ করতে হয়েছে মহান আল্লাহর বাণী উচ্চ করা ও প্রচার করার খাতিরে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُل)، سورة الأحقاف، جزء من الآية 35. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তুমি ধৈর্যধারণ করো যেমন ধৈর্যধারণ করেছিলো তোমার পূর্বের দৃঢ় সংকল্পের বার্তাবহ রাসূলগণ”। (সূরা আল আহকাফ, আয়াত নং ৩৫ এর অংশবিশেষ)।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তাবহ রাসূলগণের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপনের মধ্যে কতকগুলি উত্তম ফল রয়েছে, সেইগুলির মধ্যে রয়েছে:
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَى• وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا) سورة طه، جزء من الآية 123،124. ভাবার্থের অনুবাদ: “আমার শিক্ষা মোতাবেক যে ব্যক্তি নিজের জীবন পরিচালিত করবে, সে ব্যক্তি বিপথগামী হবেনা এবং অমঙ্গল তাকে গ্রাস করবে না। আর যে ব্যক্তি আমার শিক্ষা মোতাবেক নিজের জীবন পরিচালিত করবে না, সে ব্যক্তি বেদনাদায়ক দুঃখময় জীবন লঅভ করবে। (সূরা সূরা তাহা, আয়াত নং ১২৩, ১২৪ এর অংশবিশেষ)।