মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় শিরোনাম: প্রকৃত ইসলাম ধর্মে নারীর অধিকার
প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মহান আল্লাহর প্রদত্ত শিক্ষা এবং তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ উপদেশ মোতাবেক মুসলিম নারীর যত্ন নিয়েছে, তার মর্যাদা রক্ষা করেছে, তার সম্মান ও সুখের বিষয়টিকে নিশ্চিতভাবে সাব্যস্ত করেছে। এবং তাকে সন্দেহজনক কাজ থেকে, অমঙ্গলজনক আচরণ থেকে, দুর্ব্যবহারের বিষয় থেকে এবং ব্যভিচারের পথ থেকে রক্ষা করেছে। আর তাকে সুখময় ও শান্তিময় জীবনযাপনের পথ প্রদর্শন করেছে এবং তার সঠিক উপাদান তাকে প্রদান করেছে। এই সমস্ত বিষয় হলো নারীদের প্রতি এবং মানব সমাজের প্রতি মহান আল্লাহর অসীম করুণা। আর এর কতকগুলি নিদর্শন রয়েছে।
নারীর সম্মান ও উচ্চ মর্যাদা
প্রকৃত ইসলাম ধর্ম নারীর সম্মান ও মানবতা রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছে ও নিশ্চয়তা দিয়েছে। আর সদাসর্বদা ও সর্বস্থানে তাকে তার উপযোগী মর্যাদা প্রদান করেছে। সুতরাং তাকে মা, স্ত্রী, কন্যা এবং আরও অন্যান্য সম্পর্কের হিসেবেও মহা সম্মান দিয়েছে এবং তার সাথে ন্যায়পরায়ণতা ও মঙ্গলদায়ক আচারণ এবং তার গুরুত্ব রক্ষা করার প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান করেছে। আর নারীর সম্মান ও মর্যাদার ওই সমস্ত হানিকর প্রথা ও ক্ষতিকর চিন্তাধারা এবং অবমাননাকর সামাজিক চালচলন ও আচার-আচরণের বিরুদ্ধেও প্রকৃত ইসলাম ধর্ম লড়াই করেছে ও করছে, যে সমস্ত চালচলন ও আচার-আচরণের দ্বারা নারীর সম্মান নষ্ট করা হয় এবং তার মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করা হয়।
ওমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “আল্লাহর কসম করে বলছি: জাহিলিয়াতের যুগে এবং ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে আমরা নারীদেরকে কোনো বিষয়ে কোনো সম্মান দিতাম না এবং তাদের প্রতি আমাদের কোনো কেয়ার ছিলো না। তবে তাদের বিষয়ে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে যখন কতকগুলি বিধিবিধান অবতীর্ণ করলেন এবং তাদের জন্য তাদের ভাগ মিরাসে বা ওয়ারিসি সম্পত্তিতে নির্দিষ্ট করলেন, তখন আমরা তাদের সম্মান ও গুরুত্ব জানতে পারলাম”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং 4913 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং - (1479)]। প্রকৃত ইসলাম ধর্মের আলো 1400 বছরেরও অনেক আগে উদ্ভাসিত হয়েছে এবং নারীর সম্মান ও মর্যাদাকে অতি উচ্চ স্থানে স্থাপিত করেছে। আর জাহিলিয়াতের যুগে বা প্রকৃত ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে বিভিন্ন জাতি ও বিভিন্ন সমাজের পক্ষ থেকে নারীর প্রতি যে সমস্ত অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, জুলুম ও নির্যাতন করা হতো, সে সমস্ত অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, জুলুম ও নির্যাতনকে প্রকৃত ইসলাম ধর্ম অপসারিত করেছে। আর সেই যুগে নারীর প্রতি যে সমস্ত অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, জুলুম ও নির্যাতন করা হতো, সে সমস্ত অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, জুলুম ও নির্যাতনের মধ্যে ছিলো: কোনো নারী কোনো মালের বা মিরাসের অথবা ওয়ারিসি সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকার রাখতো না। আর কোনো নারীর স্বামী মারা গেলে তাকে তার স্বামীর সাথে জীবন্ত অবস্থায় জ্বালিয়ে দেওয়া হতো অথবা তাকে মিরাসের মাল হিসেব অথবা ওয়ারিসি সম্পত্তির মাল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তদ্রূপ সেই যুগে সাধারণভাবে নারীকে ব্যবসার জিনিস বা পণ্যদ্রব্যের মতো ক্রয়বিক্রয় করা হতো। এই প্রথাটি - উদাহরণস্বরূপ ইংল্যান্ডে- বিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত প্রচলিত ছিলো।
নারী ও পুরুষের মধ্যে ন্যায়বিচার
প্রকৃত ইসলাম ধর্ম হলো সমস্ত সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা প্রজ্ঞাময় ন্যায়বিচারক মহাজ্ঞানী প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর। আর মহান আল্লাহ তাঁর ন্যায়বিচার ও প্রজ্ঞা মোতাবেক পৃথক পৃথক বা আলাদা আলাদা দুইটি জিনিসের মধ্যে থেকে কোনো পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্য বিলীন বা বিলুপ্ত করেন না। সেই রূপ দুইটি অভিন্ন জিনিসের মধ্যে কোনো পার্থক্য ও পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করেন না। তাই আমরা পাচ্ছি যে, প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা নারী ও পুরুষের মধ্যে ওই সমস্ত বিষয়ে সাম্য প্রতিষ্ঠিত করেছে, যে সমস্ত বিষয়ে তাদের মধ্যে মিল ও সংযোগ আছে এবং কোনো প্রভেদ নেই। আর তাদের মধ্যে ওই সমস্ত বিষয়ে পার্থক্য সৃষ্টি করে, যে সমস্ত বিষয়ে তাদের মধ্যে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে বা অমিল আছে। এর ফলে তাদের সমস্ত অধিকার ও কর্তব্য তাদের প্রয়োজন ও ক্ষমতার দাবি মোতাবেক স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে এবং তাদের জীবন মহান আল্লাহর প্রদত্ত নিয়মমাফিক পরিচালিত হবে। অতএব প্রকৃত ইসলাম ধর্ম নারীকে তার সকল ক্ষেত্রে উপযুক্ত মর্যাদা প্রদান করেছে এবং নারী ও পুরুষকে অনেক ক্ষেত্রে সমান অধিকার প্রদান করেছে। আর সেই সমস্ত ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে:
সৃষ্টির আসল উৎপত্তি
নারীর প্রতি প্রাচীন জাতি ও সমাজের অবজ্ঞা এমন মাত্রায় পৌঁছেছিলো যে, তারা তাকে নিখুঁত ও সম্পূর্ণ মানবতার সীমার বাইরে ঠেলে দিয়েছিলো। এরিস্টটল বলেছেন: নারী হলো অসম্পূর্ণ মানুষ এবং প্রকৃতি তাকে সৃষ্টির জগতে সর্বনিম্ন স্তরে রেখে দিয়েছে। আর সক্রেটিস তাকে বিষাক্ত উদ্ভিদ বা বিষাক্ত গাছের সাথে তুলনা করেছেন। রোম দেশে একটি বড়ো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যেখানে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যে, নারীর আত্মা নেই বা নারীর আত্মার অমরত্ব নেই, সে পরকালের জীবন লাভ করতে পারবে না, সে ঘৃণার পাত্রী ও অপবিত্রা। তার মাংস খাওয়া ও হাসার এবং কথা বলার অধিকার নেই। ফরাসিরা ফ্রান্স দেশে 586 খ্রিস্টাব্দে একটি “গুরুত্বপূর্ণ” বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি সম্মেলন করেছিলো: আর সেই “গুরুত্বপূর্ণ” বিষয়টি হলো এই যে, নারীকে মানুষ বলে গণ্য করা হবে নাকি তাকে মানুষ ব্যতীত অন্য কোনো বস্তু বলে বলে গণ্য করা হবে?! নারীর মধ্যে আত্মা আছে কি না?! আর তার মধ্যে আত্মা থাকলে, সেটি পশুর আত্মা নাকি মানুষের আত্মা?! তার মধ্যে যদি মানুষের আত্মা থাকে, তাহলে সেই আত্মাটি পুরুষের আত্মার মতোই নাকি নিচুস্তরের আত্মা?! অবশেষে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যে, নারীকে মানুষ বলেই গণ্য করা হবে কিন্তু তাকে শুধুমাত্র পুরুষের সেবা করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত ইসলামের শিক্ষায় নারীপুরুষ আসল সৃষ্টির দিক দিয়ে হলো সম্পূর্ণরূপে সমান। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম নারীকে অধস্তন বা নিচুস্তরের অথবা নিম্ন পর্যারের মানুষ হিসেবে পরিগণিত করে না। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيْرًا وَّنِسَاءً وَّاتَّقُوْا اللّهَ الَّذِيْ تَسَاءَلُوْنَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا)، سورة النساء، الآية1. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে সকল জাতির মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের সেই পালনকর্তার উপাসনা করতে থাকো তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে, যিনি তোমাদেরকে তোমাদের প্রথম পিতা আদিম মানব আদম থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি সেই আদিম মানব আদম থেকেই তার জীবনসঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন। আর যিনি সেই দুই জনের মাধ্যমে অনেক নরনারীকে এই পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি করে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এবং তোমরা সেই সৃষ্টিকর্তা এক ও অদ্বিতীয় সত্য উপাস্য মহান আল্লাহকে একনিষ্ঠতার সহিত মেনে চলার বিষয়ে সজাগ থাকো, যাঁর নামে তোমরা পরস্পরের কাছে অধিকার দাবি করে থাকো। আর রক্তের বন্ধন অটুট ও মজবুত রাখার বিষয়ে তোমরা সচেতন থাকো। নিশ্চয় মহান আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সমস্ত বিষয়ে নিজের তত্ত্বাবধানে রেখেছেনে”। (সূরা আন্নিসা, আয়াত নং ১)।
প্রকৃত ইসলাম ধর্ম তার নিয়মকানুন ও বিধিবিধান মেনে চলার ক্ষেত্রে, পাপপুণ্য এবং ইহকাল ও পরকালের প্রতিদান ও প্রতিফলের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন: (مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ)، سورة النحل، الآية 97. ভাবার্থের অনুবাদ: “যারা মহান আল্লাহ ও তদীয় বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদের প্রতি প্রকৃত নিষ্ঠাবান হয়ে নিজেদের অন্তরে ইমান স্থাপন করে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক সৎকর্ম করবে, তারা পুরুষ হোক অথবা নারী হোক, আমি তাদেরকে পরম সুখের ও পরমানন্দের জীবন প্রদান করবো। এবং তারা প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক যে সমস্ত সৎকর্ম করবে, আমি তাদেরকে তাদের সেই সমস্ত সৎকর্মের প্রাপ্য হিসেবে উত্তম প্রতিদান প্রদান করবো”। [সূরা আন নাহাল, আয়াত নং 97] মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন: (مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ)، سورة النحل، الآية 97. ভাবার্থের অনুবাদ: “যারা মহান আল্লাহ ও তদীয় বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদের প্রতি প্রকৃত নিষ্ঠাবান হয়ে নিজেদের অন্তরে ইমান স্থাপন করে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক সৎকর্ম করবে, তারা পুরুষ হোক অথবা নারী হোক, আমি তাদেরকে পরম সুখের ও পরমানন্দের জীবন প্রদান করবো। এবং তারা প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক যে সমস্ত সৎকর্ম করবে, আমি তাদেরকে তাদের সেই সমস্ত সৎকর্মের প্রাপ্য হিসেবে উত্তম প্রতিদান প্রদান করবো”। [সূরা আন নাহাল, আয়াত নং 97] আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, সে স্বপ্নদোষের কথা স্মরণ করতে পারছে না কিন্তু বীর্যপাতের কারণে তার কাপড় ভিজা রয়েছে। জবাবে তিনি বলেন: “তাকে গোসল করতে হবে”। অতঃপর তাঁকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, তার স্বপ্নদোষ হয়েছে বলে মনে হয়, কিন্তু তার কাপড়ে বীর্যপাতের কোনো চিহ্ন নেই। জবাবে তিনি বলেন: “তাকে গোসল করতে হবে না”। অতঃপর উম্মে সুলাইম [রাদিয়াল্লাহু আনহা] জিজ্ঞাসা করেন: মহিলাদের যদি স্বপ্নদোষ হয় এবং বীর্যপাতের কারণে তার কাপড় ভিজা থাকে, তাহলে তাদেরকে গোসল করতে হবে কি? জবাবে তিনি বলেন: “হ্যাঁ, তাদেরকে গোসল করতে হবে। কেননা মহিলারাও হলো তাদের সাধারণ বিধিবিধানে পুরুষের মতোই”। (আবু দাউদ 236)।
এবং আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বার্তার প্রতি সর্বপ্রথমে যিনি বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন, তিনি একজন মহিলা। তিনি হলেন মুসলিম জাতির মাতা খাদিজা, [রাদিয়াল্লাহু আনহা]। মহিলারা আবিসিনিয়ায় প্রথম হিজরতের দলে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং ইয়াসরিব (মদীনার প্রাচীন নাম) থেকে যে প্রথম প্রতিনিধি দল আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছে এসেছিলেন, সেই দলেও মহিলারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সবাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে মেনে চলার ও তাঁর আনুগত্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
নারীরা প্রকৃত ইসলামের ইতিহাসে উজ্জ্বল উদাহরণ লিখেছেন। সুতরাং তাঁরা উন্নত চরিত্রে এবং প্রশংসনীয় আচরণে, গভীর জ্ঞান লাভে এবং প্রকৃত ইসলামের তাৎপর্য উপলব্ধি করার বিষয়ে খ্যাতি লাভ করেছেন। বরং তাঁরা অনেক সময় এই ক্ষেত্রে অগ্রগামিনী ও নায়িকা ছিলেন। তাই মুসলিম সমাজের অনেক মানুষ তাঁদের কাছ থেকে প্রকৃত ইসলামের সঠিক জ্ঞান লাভ করেছেন। তাঁরা প্রকৃতপক্ষে ছিলেন জ্ঞানের আধার ও জ্ঞান প্রচারের নিদর্শন। আর তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খ্যাতি লাভ করেছেন উম্মুলমুমেনীন মা আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] ।
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষায় অপরিহার্য কর্ম হিসেবে বা মোস্তাহাব ও উত্তম কর্ম হিসেবে অথবা বৈধ কর্ম হিসেবে পুরুষের সাথে সাথে মহিলাও অংশগ্রহণ করতে পারে। যেমন ওমরাহ ও হজ্জ পালন করা, বৃষ্টি লাভের জন্য নামাজ পড়া এবং দুই ঈদের নামাজ পড়া আর জুমার নামাজ পড়া এবং জামাআতের সহিত সাধারণ নামাজ পড়া ইত্যাদি। এই সমস্ত সৎ কর্মের সাথে সাথে মহিলা প্রকৃত ইসলামের প্রতি আহ্বানের কাজে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিবারণ বা নিষেধ করার কাজে পুরুষের মতোই অংশ গ্রহণ করার অধিকার রাখে এবং আরো বিভিন্ন বিধিবিধানের ক্ষেত্রে পুরুষের মতোই মহিলা কর্ম সম্পাদন করতে পারে। আর এই সমস্ত কর্মে মহিলা ও পুরুষের মধ্যে কোনো তফাত নেই। তবে মহিলা ও পুরুষের মধ্যে শুধু সৃষ্টির দিক দিয়ে যে তফাত রয়েছে, সেই তফাত ছাড়া আর অন্য কোনো তফাত বা প্রভেদ নেই।
প্রকৃত ইসলাম ধর্ম তার সাধারণ নিয়মকানুন ও বিধিবিধানের ক্ষেত্রে নারীপুরুষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠিত করার সাথে সাথে নারীপুরুষের মধ্যে সৃষ্টির দিক দিয়ে যে তফাত রয়েছে, সেই তফাতের সমর্থন করে এবং সম্মান ও যত্ন করে। তাই এই তফাতের কারণে কতকগুলি কাজের মধ্যে তফাত বা পার্থক্য হয়ে থাকে। অতএব প্রকৃত ইসলাম ধর্ম এই কাজগুলিকে সুশৃঙ্খলিত করেছে এবং নারীকে ও পুরুষকে তাদের যথাযথ স্থানে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। এর মাধ্যমে নারীপুরুষের জীবনের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সাধিত হবে এবং সামঞ্জস্য সৃষ্টি হবে। সুতরাং পুরুষের উপরে তার স্ত্রী ও পরিবার এবং পোষ্যবর্গের ভরণপোষণ বা খোরপোশ বহন করার দায়িত্ব রয়েছে এবং তাদের সংরক্ষণ, প্রতিপালন ও তত্ত্বাবধান করারও দায়িত্ব রয়েছে। অতএব সে তার দায়িত্ব পালনে উদ্যমশীল ও যত্নবান থাকবে। আর নারীর উপরে তার বাড়ি, তার স্বামী এবং তার সন্তানদের দেখাশুনা করার দায়িত্ব রয়েছে। সুতরাং সে যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালনে তৎপর থাকবে।
প্রকৃত ইসলাম ধর্ম নারীর নাগরিক, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত মর্যাদার অধিকারগুলির নিশ্চয়তা দিয়েছে। আর নারীর এই সমস্ত অধিকার 1400 বছরেরও অনেক আগেই প্রকৃত ইসলাম ধর্মের বার্তা প্রচারের শুরু থেকেই সংরক্ষিত করা হয়েছে। এবং আধুনিক যুগে নাগরিক ও মানবাধিকারের সংগঠনগুলির উৎপত্তি হওয়া এবং সেগুলির আকর্ষণীয় ডাক প্রচারিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই প্রকৃত ইসলাম ধর্মে নারীর সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে।
নারীর নাগরিক ও সামাজিক অধিকার
ব্যক্তিগত অবস্থায় এবং বিবাহে নারীর অধিকার
প্রকৃত ইসলাম ধর্মে নারীর অধিকারের বিষয়ে উপরে কেবলমাত্র কয়েকটি উদাহরণ পেশ করা হলো; কেননা প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা তো নারীকে অনেক বেশি অধিকার প্রদান করেছে।