মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় শিরোনাম: জুমার নামাজ
শুক্রবারে জোহরের নামাজের সময়ে মহান আল্লাহ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ নামাজ অপরিহার্য ফরজ করে দিয়েছেন, যে সেই নামাজটি হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠেএকটি নিদর্শন এবং সবচেয়ে বেশি দৃঢ় ফরজ নামাজ। সেই নামাজে মুসলিমগণ সপ্তাহে একবার একত্রিত ও সম্মিলিত হয়। তাতে তারা জুমার নামাজের ইমামের মুখ থেকে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা ও উপদেশ শুনে থাকে। তারপর তারা জুমার নামাজ পড়ে।
শুক্রবারের মর্যাদা
শুক্রবার হলো সপ্তাহের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে বেশি সম্মানিত দিন৷ মহান আল্লাহ সমস্ত দিনের মধ্যে এই দিনটিকে বেছে নিয়েছেন। এবং অন্যান্য দিনের মধ্যে এই দিনটিকে কতকগুলি মর্যাদা প্রদান করেছেন। আর সেই সব মর্যাদার মধ্যে রয়েছে:
1। নিশ্চয় প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ অন্যান্য জাতি ব্যতীত তাঁর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মুসলিম জাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে বেশি সম্মানিত দিন শুক্রবারকে বিশেষভাবে নির্ধারিত করে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "أضل الله عن الجمعة من كان قبلنا، فكان لليهود يوم السبت، وكان للنصارى يوم الأحد، فجاء الله بنا، فهدانا الله ليوم الجمعة" (مسلم 856). অর্থ: “মহান আল্লাহ শুক্রবারের দিন থেকে আমাদের পূর্ববর্তীদেরকে পথহারা করে দিয়েছেন। তাই ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য নির্ধারিত হয়েছে শনিবার এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য নির্ধারিত হয়েছে রবিবার। অতঃপর মহান আল্লাহ আমাদের উপস্থিত করেছেন এবং শুক্রবারের দিনটি আমাদেরকে প্রদান করেছেন”। (মুসলিম 856)।
২। “এই শুক্রবারের দিনেই আদম [আলাইহিস সালাম] কে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত হতে বের করা হয়েছে। আর এই জুমার বা শুক্রবারের দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে”। (মুসলিম 854)।
জুমার বা শুক্রবারের নামাজ কার প্রতি ওয়াজিব বা অপরিহার্য হয়?
জুমার বা শুক্রবারের নামাজের পূর্বে মুসলিম ব্যক্তির জন্য গোসল করা, খুতবা শুরু হওয়ার আগে তাড়াতাড়ি মাসজিদে যাওয়া, সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাব।
মুসলিম সমাজের মানুষ জামে মাসজিদে একত্রিত ও সম্মিলিত হয় এবং সেই জামে মাসজিদের ইমাম তাদের আগে থাকেন ও নেতৃত্ব দেন। তিনি মিম্বারে আরোহণ করেন আর মুসল্লিদের মুখোমুখি হন এবং তাদের সামনে দুইটি খুতবা বা অভিভাষণ পেশ করেন আর দুইটি খুতবা বা অভিভাষণের মাঝে তিনি সামান্য বা অতি অল্প সময়ের জন্য বসেন। দুইটি খুতবা বা অভিভাষণে তিনি মুসল্লিদেরকে মহান আল্লাহকে মেনে চলার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেন তাকওয়ার কথা বলেন এবং তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা ও উপদেশ এবং পবিত্র কুরআনের আয়াত।
মুসল্লিদের প্রতি জুমার খুতবা বা অভিভাষণ শ্রবণ করা অপরিহার্য। খুতবা বা অভিভাষণের দ্বারা উপকৃত হওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের জন্য কথা বলা বা ব্যস্ত হওয়া হারাম। এমনকি এই অবস্থায় তাদের জন্য কোনো কার্পেট, চাটাই, কঙ্কর এবং মাটি ইত্যাদি নিয়ে খেলা করা বা অসার কাজে রত ও লিপ্ত হওয়া হারাম।
যে ব্যক্তির জুমার নামাজ ছুটে যাবে
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক জুমার নামাজ শুধুমাত্র মাসজিদে মুসল্লিদেরকে একত্রিত করে সম্মিলিত হয়ে এক সাথে সম্পাদিত হয়। তবে যে ব্যক্তির জুমার নামাজ ছুটে যাবে বা যে ব্যক্তি অনিবার্য প্রয়োজনের কারণে জুমার নামাজ ছেড়ে দিবে, সে ব্যক্তি জুমার নামাজের পরিবর্তে জোহরের নামাজ পড়বে। আর তার একাকী জুমার নামাজ সঠিক বলে বিবেচিত হবে না।
যে ব্যক্তি দেরি করে জুমার নামাজ পড়তে যাবে।
যে ব্যক্তি দেরি করে জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ার কারণে ইমামের সাথে এক রাকাআতেরও কম নামাজ পেয়েছে, সে ব্যক্তি পূর্ণরূপে জোহরের নামাজ পড়বে।
যে ব্যক্তির প্রতি জুমার নামাজ পড়া ওয়াজিব বা অপরিহার্য নয়, যেমন:- মহিলা এবং মুসাফির। সে ব্যক্তি যদি মুসলিম সমাজের জামাআতের সহিত সম্মিলিত হয়ে জুমার নামাজ পড়ে, তাহলে তার জুমার নামাজ সঠিক বলে বিবেচিত হবে। এবং তাকে জোহরের নামাজ পড়তে হবে না। যেহেতু সে মুসলিম সমাজের জামাআতের সহিত সম্মিলিত হয়ে জুমার নামাজ পড়েছে।
জুমার নামাজ পড়তে আসা ওয়াজিব বা অপরিহার্য
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা জুমার নামাজ পড়তে আসা ওয়াজিব বা অপরিহার্য হওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব ও জোর দিয়েছে। এবং তাতে থেকে পার্থিব আনন্দ লাভের কাজে ব্যস্ত হওয়া হতে সতর্ক করেছে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُون) (الجمعة 9) . ভাবার্থের অনুবাদ: “হে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হবে, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের জন্য জুমার খুতবা বা অভিভাষণ শ্রবণ করার উদ্দেশ্যে এবং জুমার নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে তৎপর হও আর ক্রয়বিক্রয় বন্ধ করে দাও। এটাই হোলো তোমাদের জন্যে মঙ্গলদায়ক আচরণ। যদি তোমরা তোমাদের কল্যাণ লাভের জ্ঞান রাখো”। (সূরা জুমুয়া 9)।
যে ব্যক্তি জুমার নামাজ প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা ব্যতীত অকারণে ছেড়ে দিবে, তাকে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কিভাবে তিরস্কার বা ভর্ৎসনা করেছেন এবং ভীতি প্রদর্শন করেছেন?
যে ব্যক্তি জুমার নামাজ প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা ব্যতীত অকারণে ছেড়ে দিবে, তাকে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এমনভাবে তিরস্কার বা ভর্ৎসনা করেছেন এবং ভীতি প্রদর্শন করেছেন যে, তার হৃদয়কে সকল প্রকারের মঙ্গল থেকে পৃথক ও শূন্য করে দেওয়া হবে। কেননা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "من ترك ثلاث جمع تهاوناً من غير عذر طبع الله على قلبه" (أبو داود 1052، أحمد 15498) অর্থ: “যে ব্যক্তি তিনটি জুমা প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা ব্যতীত অকারণে অবহেলা করে ছেড়ে দিবে, মহান আল্লাহ তার অন্তরকে সকল প্রকারের মঙ্গল থেকে পৃথক ও শূন্য করে দিবেন”। (আবু দাউদ 1052, আহমদ 15498)। আল্লাহ যখন কারো অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেন, সিল মেরে দেন, তখন সে অন্তরে বিরাজ করবে অজ্ঞতা এবং অমঙ্গল, মুনাফিক ও পাপীদের অন্তরের মতো।
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক যে ব্যক্তির প্রতি জুমার নামাজ পড়া ওয়াজিব বা অপরিহার্য, সে ব্যক্তির জন্য জুমার নামাজ ছেড়ে দেওয়ার বৈধ কারণ হলো: জুমার নামাজ পড়ার কারণে কোনো মুসলিম ব্যক্তির অস্বাভাবিক ও অত্যন্ত কষ্ট হওয়ার ভয় থাকলে অথবা তার জীবিকার বা স্বাস্থ্যের বিরাট ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তার জন্য জুমার নামাজ ছেড়ে দেওয়া বৈধ হবে।
কর্মচারীর ডিউটি পালন করার কারণে বা তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের কাজে রত থাকার কারণে তার জুমার নামাজ ছেড়ে দেওয়া প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক বৈধ কী?
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক যে ব্যক্তির প্রতি জুমার নামাজ পড়া ওয়াজিব বা অপরিহার্য, সে ব্যক্তির স্থায়ী ডিউটি পালন করার কারণে বা তার প্রতিদিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে রত থাকার কারণে তার জুমার নামাজ ছেড়ে দেওয়া বৈধ নয়। তবে দুইটি অবস্থায় তার জন্য জুমার নামাজ ছেড়ে দেওয়ার বৈধ:
১। যে ব্যক্তি এমন মহা কল্যাণদায়ক কাজে রত থাকে যে, সেই মহা কল্যাণদায়ক কাজ সেই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোনো লোকের মাধ্যমে হবে না এবং জুমার নামাজ না ছাড়লেও চলবে না। আর সেই মহা কল্যাণদায়ক কাজ ছেড়ে জুমার নামাজ পড়তে গেলে বিরাট ক্ষতি সাধন হবে। এবং এই মহা কল্যাণদায়ক কাজে তার পরিবর্তে অন্য কোনো লোকও নেই।
কতকগুলি উদাহরণ
২। কোনো মুসলিম ব্যক্তি যখন এমন একটি কাজ করবে যে, সেই কাজটিই হলো তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস এবং তার কাছে আর অন্য এমন কিছু নেই যে, সেটার দ্বারা সে তার এবং তার পরিবারের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয় বস্তুর ব্যবস্থা করবে, তখন তার জন্য জন্য সেই কর্মস্থলে থাকা বৈধ হবে এবং জুমার নামাজ জরুরি প্রয়োজনের খাতিরে ছেড়ে দিতে পারবে, যতক্ষণ না সে অন্য কাজ খুঁজে পাবে অথবা তার জন্য এবং তার পরিবারের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয় দ্রব্য অর্জন করতে পারবে। তবে এর সাথে সাথে তাকে তৎপরতার সহিত অন্য কাজ এবং জীবিকা নির্বাহের অন্য উপায় ও উত্স ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধান করতে হবে।