মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় রোজা বিনষ্টকারী বিষয়মূহের বিবরণ
রোজা বিনষ্টকারী বিষয়মূহের বিবরণ
যে বিষয়গুলির দ্বারা রোজা নষ্ট হয়ে যায়, সে বিষয়গুলি হতে রোজাদারকে বিরত থাকা অপরিহার্য।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ( وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمْ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنْ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ مِنْ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ)، سورة البقرة، جزء من الآية 187. ভাবার্থের অনুবাদ: “ আর তোমরা রাতে ততক্ষণ পর্যন্ত পানাহার করতে পারবে, যতক্ষণ পর্যন্ত রাতের আঁধার ভেদ করে প্রভাতের শুভ্র আভা স্পষ্টভাবে পরিষ্কার আকাশে প্রকাশিত না হবে। এবং সমস্ত দিন রোজা রেখে পুনরায় রাত না আসা পর্যন্ত রোজা ইফতার করবে না”। [সূরা বাকারা, আয়াত 187 এর অংশবিশেষ)।
যে ব্যক্তি রোজা রাখার অবস্থায় ভুলবশত পানাহার করবে, তার রোজা সঠিক হবে, নষ্ট হবে না এবং তাতে তার গুনা বা পাপও হবে না। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "من نسِي وهو صائمٌ؛ فأكل أو شرب؛ فليتمَّ صومَه؛ فإنَّما أطعمه اللهُ وسقاه". (وصحيح مسلم، رقم الحديث 171 - (1155)، واللفظ له، وصحيح البخاري، رقم الحديث 6669). অর্থ: “যে ব্যক্তি রোজা রাখার অবস্থায় ভুলবশত পানাহার করবে, সে ব্যক্তি তার রোজা নষ্ট করবে না বরং সে তার রোজা পূর্ণ করে নিবে। কেননা তাকে আল্লাহই তো পানাহার করিয়েছেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১ - (১১৫৫), সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৬৬৯, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
২। পানাহারের মতোই রোজা বিনষ্টকারী কতকগুলি বিষয়ের সংযোগ
৩। রোজা বিনষ্টকারী বিষয় হলো দিনে স্ত্রীসহবাস করা নারীর যোনির ভিতরে পুরুষাঙ্গের কেবলমাত্র মাথা প্রবেশ করানোর মাধ্যমে সহবাস করা হয়, তাতে পুরুষের বীর্যপাত হোক বা না হোক।
৪। রোজা বিনষ্টকারী বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় হলো: যে কোনো পদ্ধতিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত করা বা হস্তমৈথুনের মাধ্যমে বীর্যস্খলন করা বা নিষ্ক্রমণ করা।
তবে নিদ্রিতাবস্থায় স্বপ্নদোষের কারণে বীর্য স্খলিত হওয়ার কারণে রোজা নষ্ট হয় না। আর যে রোজাদার ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারবে, সে ব্যক্তির জন্য রোজার অবস্থায় নিজের স্ত্রীকে চুম্বন দেওয়া জায়েজ। আর যে রোজাদার ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারবে না, সে ব্যক্তির জন্য রোজার অবস্থায় নিজের স্ত্রীকে চুম্বন দেওয়া জায়েজ নয়; যাতে তার রোজা নষ্ট না হয়।
৫। রোজা বিনষ্টকারী বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় হলো: ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা।
যে ব্যক্তি রোজার অবস্থায় দিনের বেলায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি করবে তার রোজা নষ্ট হবে না। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "مَنْ ذَرَعَهُ الْقَىْءُ؛ فَلَيْسَ عَلَيْهِ قَضَاءٌ، وَمَنِ اسْتَقَاءَ عَمْدًا؛ فَلْيَقْضِ". (جامع الترمذي، رقم الحديث 720، واللفظ له، وسنن أبي داود، رقم الحديث 2380، وسنن ابن ماجه، رقم الحديث 1676، وقال الإمام الترمذي عن هذا الحديث بأنه: حسن غريب، وصححه الألباني). অর্থ: “যে ব্যক্তি রোজার অবস্থায় দিনের বেলায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি করবে, তার রোজা নষ্ট হবে না। তাই তাকে পরবর্তীতে সেই রোজাটি কাজা করতেও হবে না। তবে যে ব্যক্তি রোজার অবস্থায় দিনের বেলায় ইচ্ছাকৃতভাবে জেনে শুনে বমি করবে, সে ব্যক্তি সেই রোজাটি পরবর্তীতে কাজা করবে”। [জামে তিরমিযী, হাদীস নং 720, সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 2380 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 1676, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান এবং গারীব (এক পন্থায় বর্ণিত) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
৫। রোজা বিনষ্টকারী বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় হলো: নারীর মাসিক ঋতুস্রাব বা রক্তস্রাব এবং প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ।
সুতরাং কোনো নারীর মাসিক ঋতুস্রাব বা রক্তস্রাব এবং প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ দিনের বেলায় যখনই শুরু হবে, তখনই তার রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। অতএব কোনো নারী যদি মাসিক ঋতুস্রাব বা রক্তস্রাবের অবস্থায় থাকে এবং ফজরের পর সে তার মাসিক ঋতুস্রাব হতে পবিত্র হয়ে যায়, তাহলে সেই দিন তার রোজা রাখা সঠিক বলে বিবেচিত হবে না। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ" قُلْنَ: بَلَى، قَالَ: "فَذَلِكِ مِنْ نُقْصَانِ دِينِهَا". (صحيح البخاري، جزء من رقم الحديث 304). অর্থ: “ঋতুবতী মহিলা ঋতুস্রাবের অবস্থায় কি নামাজ ও রোজা হতে বিরত থাকে না?" তারা বলেছিলেন: হ্যাঁ, এই কথাটি সত্য, যেহেতু সে তার ঋতুস্রাবের অবস্থায় নামাজ ও রোজা হতে বিরত থাকে। তিনি বললেন: "এটারই অর্থ হলো: প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা ও বিধিবিধান পরিপালনের দায়িত্ব তার প্রতি কিছু কমিয়ে দেওয়া হয়েছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৪ এর অংশবিশেষ]।
আর হ্যাঁ! জেনে রাখা দরকার যে, কোনো নারীর মাসিক ঋতুস্রাব বা রক্তস্রাব এবং প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ ব্যতীত ইস্তিহাজা অথবা রক্তপ্রদর বা রক্তস্রাবযুক্ত স্ত্রীরোগবিশেষের কারণে রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে এই অবস্থায় তার রোজা রাখা নিষিদ্ধ হবে না।