মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় শীতকাল এবং পবিত্রতা অর্জনের বিধিবিধান।
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ ও বিশোধক অর্থাৎ পবিত্র ও পবিত্রকারী। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَأَنزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً طَهُوْرًا)، جزء من الآية 48. ভাবার্থের অনুবাদ: “আমি আকাশ থেকে বর্ষণ করেন বিশুদ্ধ ও বিশোধক পানি”। (সূরা আল ফুরকান, আয়াত নং ৪৮ এর অংশবিশেষ)। তদ্রূপ কাঁচা রাস্তায় বা পাকা রাস্তায় অথবা পিচ রোডে যে সমস্ত বৃষ্টির পানি আটকে থাকে বা জমে থাকে, সে সমস্ত পানি বিশুদ্ধ ও পবিত্র। তাই সেই পানি মুসলিম নামাজি ব্যক্তির কাপড়-চোপড়ে বা পোশাক-পরিচ্ছদে লেগে গেলে, তা অপবিত্র বা অশুদ্ধ কিংবা নাপাক হবেনা। বরং তা বিশুদ্ধ ও পবিত্রই থাকবে। তাই তাতে নামাজও সঠিক বলে বিবেচিত হবে।
শীতকালের প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় সম্পূর্ণভাবে ওজু করার বিষয়
ঠাণ্ডা পানি বা গরম পানি হওয়া সত্ত্বেও সম্পূর্ণভাবে ওজু করা হলো মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি ইবাদত বা উপাসনা। তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সাহাবীদেরকে বলেছিলেন: অর্থ: “আমি কী তোমাদেরকে এমন বিষয় জানাবো না, যে বিষয়ের দ্বারা মহান আল্লাহ মানুষের পাপ মাফ করেন এবং তার মর্যাদা উচ্চ করেন? তাঁরা বলেছিলেন: হে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! আপনি বলুন: তিনি বলেছিলেন: “কষ্টকর পরিস্থিতি হলেও সম্পূর্ণভাবে ওজু করা, নামাজের জন্য মাসজিদে বারবার যাওয়া এবং এক নামাজের পর অন্য নামাজের জন্য অপেক্ষা করা; আর এই কাজগুলি হলো মুসলিম রাষ্ট্রের নির্ধারিত সীমান্ত রক্ষা করার জন্য জিহাদ করা ও পাহারা দেওয়ার মতো পুণ্যের কাজ”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১ -(২৫১) ]।
মানুষের একটি ভুল হলো এই যে, সে ঠাণ্ডা পানি থেকে বাঁচার জন্য ওজুর অঙ্গপ্রতঙ্গ ধৌত করার ক্ষেত্রে অবহেলা করে। সুতরাং কোনো কোনো মানুষকে আপনি দেখতে পাবেন যে, সে সম্পূর্ণভাবে তার মুখমণ্ডল ধৌত করছে না, কেবলমাত্র মুছে নিচ্ছে। অথবা সে তার হাত বা পা সম্পূর্ণভাবে ধৌত করছে না। আর এইভাবে ওজু অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই এইভাবে ওজু করা জায়েজ নয়। সুতরাং তার প্রতি ওয়াজিব বা অপরিহার্য হলো এই যে, তার ওজু করার ক্ষমতা থাকলে সে সম্পূর্ণভাবে ওজু করবে। নচেৎ পানি গরম করে নিয়ে গরম পানি দ্বারা ওজু করবে।
শীতকালে ওজু করার জন্য পানি গরম করা জায়েজ, আর এতে সওয়াব বা পুণ্য কিছু কম হবে না। তদ্রূপ ওজু করার পর ওজুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শুকানো জায়েজ, আর এতেও সওয়াব বা পুণ্য কিছু কম হবে না। আর শীতকালে ওজু করার জন্য পানি গরম না করার কারণে যদি মুসল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা সে সম্পূর্ণরূপে ওজু করতে অবহেলা করে, তাহলে সে যেন ওজু করার জন্য পানি গরম করার বিষয়টি পরিত্যাগ না করে।
তায়াম্মুম হলো এই যে, মুসলিম ব্যক্তি তার নিজের দুই হাত মাটিতে মারবে, তারপর সে তার দুই হাত দিয়ে নিজের মুখমণ্ডল মাসাহ করবে, অতঃপর বাম হাতের তালু দিয়ে ডান হাতের উপরের অংশ মাসাহ করবে এবং ডান হাতের তালু দিয়ে বাম হাতের উপরের অংশ মাসাহ করবে।
প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক তায়াম্মুম করা বৈধ হয়, পানি না থাকার সময়, পানির খুব প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অল্প পানি থাকার সময় এবং নিকটে পানি না থাকার সময়, ওজু করলে প্রচণ্ড কষ্ট হওয়ার সময়, প্রচণ্ড শীতের সময় অথবা রোগের সময়।
চামড়ার বা কাপড়ের দুই মোজার উপর মাসাহ করা হলো: প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি চামড়ার বা কাপড়ের এমন মোজা বা জুতা অথবা পায়ের আবরণ ইত্যাদি পরিধান করবে, যে সেই মোজা বা জুতা অথবা পায়ের আবরণ দ্বারা দুই পা সম্পূর্ণরূপে ঢেকে দিবে, ছোট ও বড় উভয় প্রকার অপবিত্রতা থেকে সম্পূর্ণরূপে পরিশুদ্ধ থাকার অবস্থায়। এরপর ওজু করার সময় যখন মাথা ও কানের মাসাহ করে নিবে, তখন তার জন্য দুই পা ধৌত করার জন্য সেই মোজা বা জুতা অথবা পায়ের আবরণ খুলে রাখার প্রয়োজন হবে না। বরং সে তার দুই পায়ের উপরের অংশে সেই মোজা বা জুতা অথবা পায়ের আবরণের উপর মাসাহ করবে।
চামড়ার বা কাপড়ের দুই মোজার উপর মাসাহ সঠিক হওয়ার শর্তাবলি
চামড়ার বা কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করার সময়সীমা
চামড়ার এবং কাপড়ের মোজার উপরে মাসাহ করার সময় শুরু হবে ওজু নষ্ট হওয়ার পর প্রথম মাসাহ করার সময় থেকে।
চামড়ার বা কাপড়ের দুই মোজার উপর মাসাহ করা ওই ব্যক্তির জন্য জায়েজ নয়, যে ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে পরিশুদ্ধ থাকার অবস্থায় দুই মোজা পরিধান করেনি। এবং মোজার উপর মাসাহ করা ওই ব্যক্তির জন্যও জায়েজ নয়, যে ব্যক্তির মোজার উপর মাসাহ করার সময়সীমা পার হয়ে গেছে। আর মোজার উপর মাসাহ করা ওই ব্যক্তির জন্যও বৈধ নয়, যে ব্যক্তির প্রতি জুনুবী ইত্যাদি হওয়ার কারণে গোসল করা ফরজ হয়ে গেছে। সুতরাং এই অবস্থায় সে মোজা খুলে দিবে এবং দুই পা ধৌত করে সম্পূর্ণরূপে পবিত্রতা অর্জন করবে।