মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় শিরোনাম: শীতকালের প্রয়োজনীয় সাধারণ বিধান
শীতকালে সচরাচর যে আগুন জ্বালানো হয়, সেই রূপ অনেক হিটার জ্বালানো হয়। তাই খেয়াল রাখতে হবে যে, ঘুমানোর আগে আগুন বা হিটার নিভিয়ে দেওয়া দরকার। যাতে আগুন লেগে না যায় বা আগুন ধরে না যায়। সুতরাং আবু মুসা আল আশআরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: একবার রাত্রি কালে মদীনার এক ঘরে আগুন লেগে ঘরের লোকজনসহ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। এদের অবস্থা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট উপস্থাপন করা হলে, তিনি বলেন: “এই আগুন নিঃসন্দেহে তোমাদের চরম শত্রু। সুতরাং তোমরা যখন ঘুমাতে যাবে, তখন তোমাদের সংরক্ষণের জন্য তোমরা আগুন নিভিয়ে দিবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৯৪ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১ - (২০১৬)]। অন্য বর্ণনায় আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন: “যখন তোমরা ঘুমাবে তখন তোমাদের ঘরগুলিতে আগুন রেখে ঘুমাবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৯৩ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০ - (২০১৫)]।
১। ঝড় বাতাসের প্রবল প্রবাহের সময় প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর অসীম ক্ষমতাকে স্মরণ করে। যেহেতু মহান আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতায় বায়ুমণ্ডলে অনেক সময় হালকা বাতাস প্রবাহিত হয় এবং অনেক সময় প্রবল বেগে বাতাস প্রবাহিত হয়। আর তাঁরই ক্ষমতায় কোনো কোনো সময় বাতাস প্রখর উষ্ণ হয় আবার কোনো কোনো সময় তীব্র ঠাণ্ডাও হয়। আর কোনো কোনো সময় বাতাস উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে বয়ে যায় আবার কোনো কোনো সময় দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে বয়ে যায়। আর কোনো কোনো বাতাস বৃষ্টির পানিতে ভরপুর থাকে আর কোনো কোনো বাতাস শুষ্ক থাকে। এই ভাবে ঝড় বাতাসের অনেক সময় অনেক রকম অবস্থা প্রকাশ পায়। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنزَلَ اللّهُ مِنَ السَّمَاءِ مِن مَّاء فَأَحْيَا بِهِ الأرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَآبَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخِّرِ بَيْنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ لآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ)، سورة البقرة، الآية 164 . ভাবার্থের অনুবাদ: “নিশ্চয় সমস্ত আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং জলপথে জলযানসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর মহান আল্লাহ আকাশ থেকে যে পানি বর্ষণ করেছেন, তদ্দ্বারা মৃত জমিনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকমের জীব-জন্তু। আর হাওয়ার পরিবর্তনে এবং তাঁরই হুকুমের অধীনে মেঘমালা যা আসমান ও জমিনের মাঝে বিচরণ করে, এই সবগুলির মধ্যে নিশ্চয়ই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর অস্তিত্ব সাব্যস্ত করার জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে, ওই সমস্ত বুদ্ধিমান লোকের জন্য যারা তাদের বুদ্ধির দ্বারা মহান আল্লাহর প্রতি সঠিক পন্থায় ঈমান স্থাপন করার ইচ্ছা রাখে”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং 164)।
২। ঝড় বাতাসের প্রবল প্রবাহের সময় যেন প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি এই বলে ভয় করে যে, এই ঝড় বাতাসের প্রবল প্রবাহ হতে পারে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর একটি শাস্তি। সুতরাং আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি কখনও আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে এইভাবে পুরোপুরি হাসতে দেখিনি, যে তাঁর হাসির কারণে তাঁর আলজিভ বা উপজিহ্বা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি সর্বদা কেবলমাত্র মুচকি হাসতেন। উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন মেঘ বা ঝড় বাতাসের প্রবল প্রবাহ দেখতেন, তখন তাঁর চেহারায় অস্থিরতার প্রক্রিয়া বা ভাব ফুটে উঠতো। উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] বলেন: হে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল! আমি দেখি জনগণ মেঘ দেখে খুব আনন্দিত হয় এই আশায় যে, এখন বৃষ্টি বর্ষিত হবে। আর আমি আপনার অবস্থা এই রকম দেখি যে, আপনি মেঘ দেখলেই আপনার চেহরায় অপছন্দনীয় অবস্থা প্রকাশিত হয়। উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছিলেন: “হে আয়েশা! আমি এই জন্য নিজেকে নিরাপদ মনে করি না যে, হতে পারে এর মধ্যে কোনো শাস্তি আছে! এক সম্পপ্রদায়কে ঝড় বাতাসের প্রবল প্রবাহের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আরেক সম্প্রদায় শাস্তি দেখে বলেছিলো: এই যে মেঘ উঠেছে! এখন আমাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষিত হবে”। (মুসলিম ৮৯৯)।
৩। ঝড় বাতাসের প্রবল প্রবাহের সময় প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি যেন প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কাছে সেই ঝড় বাতাসের মঙ্গল কামনা ও প্রর্থনা করে। সুতরাং আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] বলেন: ঝড় বাতাসের প্রবল প্রবাহের সময় আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এই দোয়াটি পাঠ করতেন: اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْألُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا فِيهَا وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ অর্থ: “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি এই ঝড় বাতাসের প্রবল প্রবাহের কল্যাণ এবং এর মধ্যে যে কল্যাণ নিহিত আছে, সেই কল্যাণ আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। আর এই ঝড় বাতাসের প্রবল প্রবাহের সাথে যে কল্যাণ প্রেরিত হয়েছে, সেই কল্যাণও আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। এবং হে আল্লাহ! এই ঝড় বাতাসের প্রবল প্রবাহের অনিষ্ট হতে আর এর মধ্যে যে অনিষ্ট নিহিত আছে, সেই অনিষ্ট হতে আপনার কাছে আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর এই ঝড় বাতাসের প্রবল প্রবাহের সাথে যে অনিষ্ট প্রেরিত হয়েছে, সেই অনিষ্ট হতেও আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
৪। ঝড় বাতাসের প্রবল প্রবাহের সময় প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি ঝড় বাতাসকে গালি দেওয়া হতে বিরত থাকবে। সুতরাং আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “ঝড় বাতাসকে তোমরা গালি দিও না। যেহেতু ঝড় বাতাস তো বেকলমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে আজ্ঞাবহ ও আদেশ পালনকারী সৃষ্টি। আর যে ব্যক্তি কোনো নির্দোষ নিরপরাধ বস্তুকে অভিশাপ দিবে, সেই অভিশাপ উক্ত ব্যক্তির প্রতি ফিরে আসবে”। (তিরমিযী 1978) অন্য হাদীসে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমরা ঝড় বাতাসকে গালি দিও না”। (তিরমিযী 2252)। ইমাম শাফেয়ী বলেছেন: কোনো ব্যক্তির জন্য উচিত নয় যে, সে ঝড় বাতাসকে গালি দিবে। যেহেতু আসলে ঝড় বাতাস হলো প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর অনুগত সৃষ্টি এবং তাঁর বাধ্য সৈন্যদের মধ্যেকার একটি সৈন্য। তাই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ এই ঝড় বাতাসকে যখন ইচ্ছা করেন করুণা হিসেবে এবং যখন ইচ্ছা করেন শাস্তি হিসেবে প্রেরণ করে থাকেন।
আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বজ্রপাত ও মেঘের গর্জনের সময় কথা বন্ধ রাখতেন আর বলতেন: سُبْحَانَ الَّذِيْ يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ অর্থ: আমি সেই পবিত্র সত্তা মহান আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি, যেই পবিত্র সত্তা মহান আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করে বজ্রধ্বনি ও মেঘের গর্জন। এবং ফেরেশতাগণও পবিত্র সত্তা মহান আল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করে সন্ত্রস্ত হয়ে তাঁর প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করেন। আর পবিত্র কুরআনের মধ্যে এসেছে: {وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَنْ يَشَاءُ وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللَّهِ وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ} (الرعد: 13). ভাবার্থের অনুবাদ: “বজ্রধ্বনি ও মেঘের গর্জন প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে তাঁর প্রশংসাসহ। এবং ফেরেশতাগণও প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করে সন্ত্রস্ত হয়ে তাঁর প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করেন। আর প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ বজ্রপাত করেন, অতঃপর যাকে ইচছা, তাকে তা দ্বারা তিনি আঘাত করেন। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর এই সমস্ত নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও অমুসলিম জাতি তাঁকে নিয়ে বিতর্ক করে। অথচ তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। আর তিনি সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী”। (সূরা রায়াদ, আয়াত নং 13)।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ বৃষ্টিকে কল্যাণময় নেয়ামত হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন: {وَنَزَّلْنَا مِنَ السَّمَاء مَاء مُّبَـارَكاً} (سورة ق: 9) ভাবার্থের অনুবাদ: “আমি আকাশের মেঘ বা বাদল থেকে কল্যাণময় বৃষ্টি বর্ষণ করেছি”। (সূরা কাফ: ৯)। বৃষ্টির সময় মুসলিম ব্যক্তির করণীয় কাজ হলো: ১। শরীরের কিছু অংশ থেকে কাপড় সরিয়ে দেওয়া। যাতে শরীরের সেই অংশে বৃষ্টির কিছু পানি স্পর্শ করে। আনাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা আমরা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সঙ্গে ছিলাম, আর সেই সময়ে আমাদের উপর বৃষ্টিপাত হতে শুরু হয়। তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর দেহের কিছু অংশ থেকে নিজের বস্ত্র সরিয়ে দিলেন। যাতে করে তাঁর শরীরে বৃষ্টির কিছু জল বা পানি স্পর্শ করে। সুতরাং তাঁর শরীর সেই বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেলো। অতএব আমরা জিজ্ঞাসা করলাম: হে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল! আপনি কেন এই কাজ করলেন? তিনি উত্তরে বললেন: “যেহেতু প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান প্রতিপালক আল্লাহর উচ্ছায় এখনই আসমান ও জমিনের মধ্যে থেকে এই বৃষ্টির জল এসে পড়লো। তাই আমি আমার শরীরে তা থেকে কিছু অংশ লাগিয়ে নিলাম”। (মুসলিম ৮৯৮)।
২। কতকগুলি হাদীসের বর্ণনা মোতাবেক বৃষ্টি পড়ার সময়ে দোয়া করলে, সেই দোয়া প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান প্রতিপালক আল্লাহর কাছে কবুল হয়।
বৃষ্টি পড়ার সময়ে এবং বৃষ্টি পড়ার পরবর্তী সময়ের কতকগুলি দোয়া
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন বৃষ্টি দেখতেন, তখন বলতেন: "اَللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا". অর্থ: “হে আল্লাহ! জনগণ ও দেশের উপকারের জন্য মুষলধারে কল্যাণকর বৃষ্টি প্রদান করুন”। (বুখারী 1032)। মুষলধারে কল্যাণকর বৃষ্টি পড়াকে সাইয়িব বলা হয়।
বৃষ্টি পড়ার সময় মুসলিম ব্যক্তি যেন মহান আল্লাহর কাছে কল্যাণকর বৃষ্টির জন্য দোয়া করে। কেন না কোনো কোনো সময় মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে কিন্তু তা কল্যাণকর হয় না। তাই হাদীসে এসেছে: “বৃষ্টি না হওয়া প্রকৃত দুর্ভিক্ষ নয়। বরং প্রকৃত দুর্ভিক্ষ হলো: তোমাদের জন্য বৃষ্টির পর বৃষ্টি পড়ে। কিন্তু সেই বৃষ্টি পড়ার কারণে মাটি কোনো ফসল উৎপাদন করে না”। (মুসলিম 2904)। বড়ো আকাল বা তীব্র অভাব এবং কঠিন দুর্ভিক্ষকে সানা বলা হয়।
৩। বৃষ্টি পড়ার সময় মুসলিম ব্যক্তির জন্য এই কথাটি বলা সুন্নাত: “এই বৃষ্টি হলো মহান আল্লাহর কৃপা”। সুতরাং আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন ঝড় বাতাসের প্রবল প্রবাহ এবং মেঘ দেখতেন, তখন তাঁর চেহারায় অস্থিরতার প্রক্রিয়া বা ভাব ফুটে উঠতো। এবং তিনি ঘরে আসতেন ও বাহিরে যেতেন। আর যখন বৃষ্টি হয়ে যেতো, তখন তাঁর চেহারায় আনন্দের আভা অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়ে উঠতো এবং জ্বলজ্বল করতো এবং অস্থিরতার প্রক্রিয়া বা ভাব অপসারিত হতো। উম্মুলমুমেনীন আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] আরো বলেছেন: আমি তাঁকে তাঁর এই অস্থিরতার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তাই তিনি উত্তরে বলেছিলেন: “আমি আশঙ্কিত হয়ে পড়ি এই বলে যে, এতে আমার উম্মতের প্রতি কোনো প্রেরিত শাস্তি রয়েছে! এবং তিনি যখন দেখতেন যে, বৃষ্টি পড়ছে, তখন তিনি বলতেন: “এই বৃষ্টি হলো মহান আল্লাহর কৃপা”। (মুসলিম ৮৯৯)।
৪। বৃষ্টি পড়ার সময় এবং বৃষ্টি পড়ার পরবর্তী সময়ে মুসলিম ব্যক্তির জন্য এই কথাটি বলা সুন্নাত: “আমাদের জন্য এই বৃষ্টি হলো মহান আল্লাহর সাহায্য ও কৃপা”। যেহেতু জ্যাইদ বিন খালিদ আল জুহানী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হুদায়বিয়ায় আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামাজ পড়েছিলেন। আর সেই ফজরের পূর্বে রাত্রি বেলায় বৃষ্টি বৃষ্টিপাত হয়েছিলো। তিনি আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামাজ পড়ার পর লোকদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেছিলেন: “তোমরা কী জানো! তোমাদের প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান প্রতিপাল আল্লাহ কী বলেছেন?” তাঁরা বলেছিলেন: মহান আল্লাহ ও তদীয় বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী ভালো জানেন। তিনি তখন বলেছিলেন: “প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান প্রতিপালক আল্লাহ বলেছেন: আমার সৃষ্ট মানব সমাজের মধ্যে থেকে কোনো কোনো মানুষ আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম হিসেবে সে সকালে উপনীত হয়েছে। আবার কোনো কোনো মানুষ আমাকে প্রত্যাখ্যান করে সে অমুসলিম ব্যক্তি হিসেবে সকালে উপনীত হয়েছে। অতএব যে ব্যক্তি বলেছে: আমাদের জন্য এই বৃষ্টি হলো মহান আল্লাহর সাহায্য ও কৃপা। সে ব্যক্তি আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং নক্ষত্রকে প্রত্যাখ্যান করেছে; তাই সে ব্যক্তি প্রকৃত ইমানদার মুসলিম হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। আর যে ব্যক্তি বলেছে: চাঁদের কক্ষপথের কারণে অমুক অমুক নক্ষত্র উদয় হওয়ার ফলে বৃষ্টিপাত হয়েছে। সে ব্যাক্তি আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। তাই সে ব্যক্তি অমুসলিম হিসেবে পরিগণিত হয়েছে”। (বুখারী 846, মুসলিম 71)।
যদি প্রবল বৃষ্টিপাত হয় এবং তাতে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে দুই হাত তুলে দোয়া করবে। আর এই বিষয়ের দোয়াগুলির মধ্যে নিম্নের দোয়াটি রয়েছে: "اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالظِّرَابِ، وَبُطُونِ الأَوْدِيَةِ، وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ". অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাদের চারপাশে বৃষ্টি বর্ষণ করুন এবং আর আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ! আপনি পাহাড়, পর্বতীয় এলাকায় বা উঁচু জায়গায়, বিভিন্ন প্রকারের উপত্যকায় এবং তৃণভূমিতে বা চারণক্ষেত্রে বৃষ্টি বর্ষণ করুন”। (বুখারী 1014 এবং মুসলিম 897)।