মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় মহান আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর প্রতি ইমানের অর্থ।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং এটার স্বীকৃতি প্রদান করা যে, সব জগতের কেবল মাত্র তিনিই প্রকৃত প্রতিপালক, তিনিই প্রকৃত উপাস্য এবং তিনিই সর্বোত্তম নাম ও গুণাবলির সত্য অধিকারী।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর পূর্ণ বশ্যতা স্বীকার করার একটি সব চেয়ে বড়ো নিদর্শন হলো তাঁর জন্য সিজদা করা।
মহান আল্লাহর অস্তিত্বের স্বীকৃত প্রদান করার বিষয়টি হলো মানুষের স্বাভাবিক অবস্থা। তাই সে এই বিষয়ে বিভিন্ন প্রকারের যুক্তি প্রমাণের মুখাপেক্ষী নয়। অতএব এই পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ বিভিন্ন ধর্ম ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হওয়া সত্ত্বেও তারা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে।
আমরা আমাদের হৃদয়ের গভীরতা থেকে অনুভব করি যে, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর অস্তিত্ব আছে, এটা সত্য বিষয়। তাই আমরা বিপর্যয়ের সময় এবং দুঃখকষ্টের সময় আমাদের ইমানের স্বাভাবিক অবস্থার আকর্ষণের কারণে এবং সেই ধর্মপরায়ণতার কারণে যে ধর্মপরায়ণতার আকর্ষণ মানুষের আত্মার মধ্যে রয়েছে, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করার জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে আত্মনিয়োগ করি। যদিও এই স্বাভাবিক অবস্থার আকর্ষণকে এবং ধর্মপরায়ণতার প্রভাবকে কোনো কোনো মানুষ অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করেছে এবং তাতে থেকে বেখেয়াল থাকার প্রয়াস করেছে।
আর প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনাকারীদের অবস্থা আমরা শুনছি এবং প্রত্যক্ষ করছি। তারা অসহায় হয়ে এবং নিরুপায় হয়ে তাঁকে আহ্বান করার কারণে তারা তাদের আকাঙ্ক্ষিত বস্তু বা কাম্যবস্তু অর্জন করেছে এবং তাঁর সাহায্য লাভ করেছে। এই বিষয়টির দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর অস্তিত্ব আছে, এটি সত্য বিষয়।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর অস্তিত্ব সাব্যস্ত করার প্রমাণাদি সবচেয়ে স্পষ্টরূপে এতো বেশি রয়েছে যে, সেগুলিকে গণনা করে এবং বর্ণনা করে শেষ করা যায় না। তবে সেই সব প্রমাণাদির মধ্যে থেকে কয়েকটি বিষয় এখানে উপস্থাপন করা হলো:
সবাই এটা জানে যে, কর্মের পিছনে থাকে কর্তা। সুতরাং এই বিশ্বনিখিলে বা সমগ্র জগতে অনেক সৃষ্টি জগৎ রয়েছে। আবার অনেক সৃষ্টি জগতের মধ্যে নানা রকম জিনিস বিরাজ করছে। আর এই সব জিনিস আমরা সর্বদা দেখতে পাচ্ছি। অতএব এই সব জিনিসের একজন প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা আছেন। আর তিনিই এই সব জিনিসকে সৃষ্টি করেছেন। আর প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক সেই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তাকেই সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ বলা হয়। আর এটা অসম্ভব যে, এই সুবিশাল সৃষ্টি জগৎ এবং সুবিশাল সৃষ্টি জগতের সমস্ত জিনিস প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা ব্যতীতই সৃষ্টি হয়েছে। তদ্রূপ এটাও অসম্ভব যে, এই সুবিশাল সৃষ্টি জগৎ এবং সুবিশাল সৃষ্টি জগতের সমস্ত জিনিস নিজেরাই নিজেদেরকে সৃষ্টি করেছে। যেহেতু সৃষ্টি জগতের কোনো জিনিস নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করতে পারে না। তাই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (أَمْ خُلِقُوْا مِنْ غَيْرِ شَيْءٍ أَمْ هُمُ الْخَالِقُوْنَ)، سورة الطور، الآية 35. ভাবার্থের অনুবাদ: “যারা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করছে, তারা কী প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা ব্যতীতই আপনা আপনি সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই নিজেদেরকে সৃষ্টি করেছে?”। আসলে তারা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা ব্যতীতই আপনা আপনি সৃষ্টি হয়নি আর না তারা নিজেরাই নিজেদেরকে সৃষ্টি করেছে। বরং তাদের প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা তাদের অস্তিত্বহীন অবস্থা শূন্য থেকেই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন”। (সূরা আত্তুর, আয়াত নং ৩৫)। আয়াতটির সারাংশ হলো: যারা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করছে, তারা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা ব্যতীতই আপনা আপনি সৃষ্টি হয়নি। আর না তারা নিজেরাই নিজেদেরকে সৃষ্টি করেছে। তাহলে এই বিষয়টি নির্ধারিত হয়ে যায় যে, তাদেরকে তাদের প্রকৃত সৃষ্টিকর্তাই সৃষ্টি কছেন। আর প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক সেই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তাকেই সত্য উপাস্য কল্যাণময় মহান আল্লাহ বলা হয়।
এই মহাবিশ্বের সুনিয়ন্ত্রিত আকাশ, পৃথিবী, নক্ষত্র এবং সমস্ত গাছপালার অস্তিত্ব নিশ্চিতভাবে ও নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, এই মহাবিশ্বের একজন প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা আছেন। আর প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক সেই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তাকেই কল্যাণময় সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ বলা হয়। তাই পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলা হয়েছে: (صُنْعَ اللَّهِ الَّذِي أَتْقَنَ كُلَّ شَيْءٍ)، سورة النمل، جزء من الآية 88. ভাবার্থের অনুবাদ: “এইগুলি কল্যাণময় সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কাজ, তিনি সব কিছুই অত্যন্ত যত্ন সহকারে সুদৃঢ় করে অতি সুন্দররূপে সৃষ্টি করেছেন”। (সূরা আন্নামল, আয়াত নং ৮৮ এর অংশবিশেষ)।
অতএব দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা হচ্ছে যে, এই সমস্ত গ্রহ ও নক্ষত্র এমন সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি মোতাবেক চলাচল করছে যে, তাতে কোনো প্রকারের গরমিল অথবা ত্রুটি-বিচ্যুতি হয় না। প্রত্যেকটি গ্রহ নিজের কক্ষপথে ভ্রমণ করছে। আর কোনো গ্রহ নিজের কক্ষপথকে ছেড়ে অন্য কোনো কক্ষপথে যায় না। তাই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (لَا الشَّمْسُ يَنْبَغِيْ لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْن)، سورة يس، الآية 40. ভাবার্থের অনুবাদ: “সূর্য কোনো সময় চন্দ্রের কক্ষপথে প্রবেশ করতে পারে না। এবং রাত অতিবাহিত হওয়ার আগে কোনো একটি রাত কোনো একটি দিনের সীমারেখার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না। সুতরাং একটির আলো অন্যটির আলোকে আবৃত করতে পারে না। আর এই মহাবিশ্বে সূর্য, চন্দ্র, রাত ও দিন নিজ নিজ কক্ষপথে অতি সহজে ও সঠিকভাবে যাতায়াত করছে”। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত নং ৪০)।