শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় ‏মহান আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থসমূহের প্রতি দৃঢ়ভাবে ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করার বিষয়। ‎

মহান আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থসমূহের প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা হলো ইমানের একটি স্তম্ভ। ‎এই অনুচ্ছেদে আপনি আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থসমূহের প্রতি দৃঢ়ভাবে ঈমান স্থাপন করার অর্থ ও ‎গুরুত্ব জানতে পারবেন। এর সাথে সাথে মহান আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থসমূহের মধ্যে থেকে ‎কতকগুলি গ্রন্থের নাম জানতে পারবেন। আর অতীতের গ্রন্থসমূহের প্রতি এই যুগে অমাদের ‎করণীয় বিষয় কী সেটাও জানতে পারবেন। ‎

 

  • মহান আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থসমূহের প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করার অর্থ এবং তার গুরুত্বের জ্ঞান লাভ করা।
  • অতীতের গ্রন্থসমূহের প্রতি এই যুগে অমাদের করণীয়বিষয় কী? তার জ্ঞান লাভ করা।
  • পবিত্র কুরআনের প্রতি মুসলিম সমাজের জরুরি কর্তব্যের জ্ঞান লাভ করা।

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

মহান আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থসমূহের প্রতি দৃঢ়ভাবে ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করার অর্থ:‎

এইভাবে দৃঢ় ঈমান বা দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে যে, মহান আল্লাহ তাঁর ‎বার্তাবহ‏ ‏রাসূল বা পয়গম্বরগণের প্রতি কতকগুলি পবিত্র গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন ‎মানবজাতিকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক সুপথে পরিচালিত করার জন্য। ‎এই সমস্ত পবিত্র গ্রন্থ হলো প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পবিত্র ‎বাণী। যেহেতু তিনি তাঁর মহিমা মোতাবেক এই সমস্ত পবিত্র গ্রন্থের কথাগুলি ‎আসলেই উচ্চারণ করেছেন। আর এই সমস্ত পবিত্র গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‎ন্যায়পরায়ণতার শিক্ষা, জীবনকে আলোকোজ্জ্বল সভ্যতার পথ এবং ইহকাল ও ‎পরকালে পরমানন্দের মঙ্গলময় জীবন লাভের শিক্ষা।

মহান আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থসমূহের প্রতি দৃঢ়ভাবে ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করার ‎গুরুত্ব

মহান আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা হলো ইমানের ছয়টি মূল ‎রুকন বা ভিত্তির অন্তর্ভক্ত একটি রুকন বা স্তম্ভ। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র ‎কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন: ‎ ‏(يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُواْ آمِنُواْ بِاللّهِ وَرَسُوْلِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِيْ نَزَّلَ عَلَى رَسُوْلِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ)، سورة ‏النساء، جزء الآية 136.‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজ! তোমরা আল্লাহ ও তদীয় ‎বার্তাবহ‏ ‏রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদের প্রতি নিশ্চিতভাবে নিজ নিজ ইমানে অবিচল ‎থাকো। আর সেই ঐশী বাণীর গ্রন্থ পবিত্র কুরআনের প্রতিও তোমরা তোমাদের নিজ ‎নিজ ইমানে নিশ্চিতভাবে অবিচল থাকো, যে ঐশী বাণীর গ্রন্থ পবিত্র পবিত্র ‎কুরআনকে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদের প্রতি মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন। এবং তাঁর ‎পূর্বে যে সমস্ত ঐশী বাণীর গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, সেই সমস্ত ঐশী বাণীর গ্রন্থের ‎প্রতিও তোমরা তোমাদের নিজ নিজ ইমানে নিশ্চিতভাবে অবিচল থাকো”। (সূরা ‎আন নিসা, আয়াত নং ‎১৩৬‎ এর অংশবিশেষ)। ‎ সুতরাং প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তাঁর প্রতি, তাঁর বার্তাবহ রাসূল ‎বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি এবং তাঁর সেই পবিত্র ‎বাণীর গ্রন্থ কুরআনের প্রতিও নিশ্চিতভাবে ইমান স্থাপনে অবিচল থাকার আদেশ ‎প্রদান করেছেন। যেমন তিনি পবিত্র কুরআনের পূর্বে যে সমস্ত ঐশী বাণীর গ্রন্থ ‎অবতীর্ণ করেছেন, সে সমস্ত ঐশী বাণীর গ্রন্থের প্রতিও ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন ‎করার আদেশ প্রদান করেছেন। ‎

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎মহাফেরেশতা জিবরীল [আলাইহিস সালাম] কে তাঁর প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন: ‎‎“ইমান হলো এই যে, আপনি আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর সমস্ত ‎ঐশী বাণীর গ্রন্থ বা কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর বার্তাবহ রাসূলগণের প্রতি এবং ‎মৃত্যুবরণের পর পরকালের শেষ দিবসে পুনরুত্থিত হওয়ার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ‎করবেন আর ভাগ্যের মঙ্গল ও অমঙ্গলের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করবেন”। ‎[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১ - (৮) এর অংশবিশেষ] ।

মহান আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থসমূহের প্রতি দৃঢ়ভাবে ইমান বা বিশ্বাস স্থাপনের অন্তর্ভুক্ত ‎কী কী বিষয় আছে?‎

١
এটা ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা যে, এই সমস্ত পবিত্র গ্রন্থ মহান আল্লাহর পক্ষ ‎থেকে অবতীর্ণ হয়েছে।
٢
এটা ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা যে, এই সমস্ত পবিত্র গ্রন্থ মহান আল্লাহর পবিত্র ‎বাণী। ‎
٣
যে সমস্ত পবিত্র গ্রন্থের নাম মহান আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, সে সমস্ত পবিত্র গ্রন্থের ‎প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য, যেমন দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে ‎পবিত্র কুরআনের কথা। এই পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের বিশ্বনাবী ‎মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি। এর পর বলা যেতে পারে ‎পবিত্র গ্রন্থ তাওরাতেরও কথা। এই পবিত্র গ্রন্থ তাওরাত অবতীর্ণ করা হয়েছিলো ‎মূসা [আলাইহিস সালাম] এর প্রতি। অতঃপর বলা যেতে পারে পবিত্র গ্রন্থ ‎ইঞ্জিলেরও কথা। আর এই পবিত্র গ্রন্থ ইঞ্জিল অবতীর্ণ করা হয়েছিলো ঈসা ‎‎[আলাইহিস সালাম] এর প্রতি। ‎
٤
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ‎পূর্ববর্তী বার্তাবহ‏ ‏রাসূল বা পয়গম্বরগণের যে সংবাদ বা বার্তাকে পবিত্র কুরআন ‎অথবা নির্ভরযোগ্য হাদীস সমর্থন করে, সে সংবাদ বা বার্তাকে আমরা সমর্থন করবো ‎আর যে সংবাদ বা বার্তাকে পবিত্র কুরআন অথবা নির্ভরযোগ্য হাদীস প্রত্যাখ্যান ‎করে, আমরাও সে সংবাদ বা বার্তাকে প্রত্যাখ্যান করবো। এবং বাকি অন্যান্য ‎বিষয়ের সংবাদ বা বার্তার বিষয়ে আমরা নীরব থাকবো এবং সেগুলিকে আমরা ‎সমর্থন করবো না এবং প্রত্যাখ্যানও করবো না। ‎

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ‎পূর্ববর্তী পবিত্র গ্রন্থসমূহের বিষয়ে আমাদের কর্তব্য কী? ‎

প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তি ইমান বা বিশ্বাস রাখে যে, যে পবিত্র গ্রন্থ তাওরাত মূসা ‎‎[আলাইহিস সালাম] এর প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিলো এবং পবিত্র গ্রন্থ ইঞ্জিল ঈসা ‎‎[আলাইহিস সালাম] এর প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিলো, সেই পবিত্র গ্রন্থগুলি ঐশী ‎বাণীর সত্য গ্রন্থ, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছিলো।‏ ‏সেই পবিত্র ‎গ্রন্থগুলির মধ্যে ছিলো সুখময় জীবনযাপনের বিধিবিধান, ন্যায়পরায়ণ জীবন লাভের ‎উপদেশ এবং ওই সমস্ত সংবাদ বা বার্তা, যে সমস্ত সংবাদ বা বার্তায় ছিলো প্রকৃত ‎ইসলাম ধর্মের শিক্ষা এবং জীবনকে আলোকোজ্জ্বল সভ্যতার পথে পরিচালিত করার ‎পদ্ধতি আর ইহকাল ও পরকালে পরমানন্দের মঙ্গলময় জীবন লাভের নিয়মকানুন। ‎কিন্তু প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ আমাদেরকে পবিত্র কুরআনের ‎মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ইহুদি ও খ্রিস্টান জাতি সেই তাওরাত ও ইঞ্জিল ‎গ্রন্থগুলিকে পরিবর্তিত, পরিবর্ধিত এবং বিকৃত করে দিয়েছে। অতএব সেই তাওরাত ‎ও সেই ইঞ্জিল এখন ওই অবস্থায় নেই, যে অবস্থায় প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য ‎মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করেছিলেন।

সুতরাং এখন বর্তমানে যে তাওরাত গ্রন্থ আছে, সেই তাওরাত গ্রন্থটি ওই তাওরাত গ্রন্থ ‎নয়, যে পবিত্র তাওরাত গ্রন্থ ‎মূসা [আলাইহিস সালাম] এর প্রতি অবতীর্ণ করা ‎হয়েছিলো। কেননা ইহুদি সম্প্রদায় সেই আসল তাওরাতের মধ্যে অনেক হেরফের ‎করেছে এবং রদবদল করেছে আর তার বিধিবিধানের মধ্যে পরিবর্তন ঘটিয়েছে। ‎যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏ (وَإِنَّ مِنْهُمْ لَفَرِيقًا يَلْوُونَ أَلْسِنَتَهُمْ بِالْكِتَابِ لِتَحْسَبُوهُ مِنَ الْكِتَابِ وَمَا هُوَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَقُولُونَ هُوَ مِنْ ‏عِنْدِ اللَّهِ وَمَا هُوَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ وَيَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ)، سورة آل عمران، الآية 78. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু লোক পবিত্র তাওরাত গ্রন্থকে বিকৃত ‎করার জন্য এবং পরিবর্তিত করার জন্য উলটপালট করে, যাতে তোমরা মনে করো যে, ‎তারা পবিত্র তাওরাত গ্রন্থের মূল অংশ পাঠ করছে, অথচ তা পবিত্র তাওরাত গ্রন্থের ‎অংশ নয়। ওরা বলে থাকে: এইগুলি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে কিন্তু আসলে তা ‎নয়। আর ওরা জেনেশুনে আল্লাহর নামে মিথ্যা কথা বলে থাকে”। ‎ ‎(সূরা আল ইমরান, আয়াত নং ১০5)।

সুতরাং এখন বর্তমানে যে ইঞ্জিল বা বাইবেল গ্রন্থ আছে, সেই ইঞ্জিল গ্রন্থটি ওই ইঞ্জিল ‎গ্রন্থ ‎নয়, যে পবিত্র ইঞ্জিল গ্রন্থ ঈসা [আলাইহিস সালাম] এর প্রতি অবতীর্ণ করা ‎‎হয়েছিলো। কেননা খ্রিস্টান সম্প্রদায় সেই আসল ইঞ্জিলের মধ্যে অনেক হেরফের ‎‎করেছে এবং রদবদল করেছে আর তার বিধিবিধানের মধ্যে পরিবর্তন ঘটিয়েছে। ‎‎যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(وَمِنَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّا نَصَارَى أَخَذْنَا مِيثَاقَهُمْ فَنَسُوا حَظًّا مِمَّا ذُكِّرُوا بِهِ فَأَغْرَيْنَا بَيْنَهُمُ الْعَدَاوَةَ ‏وَالْبَغْضَاءَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَسَوْفَ يُنَبِّئُهُمُ اللَّهُ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ)، سورة المائدة، الآية 14. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “যারা বলে: আমরা খ্রিষ্টান। আমি তাদেরও অঙ্গীকার গ্রহণ ‎করেছিলাম। কিন্তু তাদের যে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিলো, সেই শিক্ষার একাংশ তারা ‎হেরফের ও রদবদল এবং পরিবর্তন ঘটিয়েছিলো। তাই আমি তাদের মধ্যে স্থায়ীভাবে ‎তীব্র শত্রুতা ও তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি করেছি, যা অব্যাহত থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত। আর তারা ‎যা করেছে, আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের প্রতিফল বুঝিয়ে দিবেন”। (সূরা আল ‎মায়েদা, আয়াত নং ১৪)।‎

এই কারণেই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আজ খ্রিস্টানদের হাতে যে বাইবেল আছে, ‎বলা হয়, যার মধ্যে রয়েছে তাওরাত এবং ইঞ্জিল বা ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ ‎টেস্টামেন্ট, আর এই ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্ট এর মধ্যে রয়েছে অনেক ‎কলুষিত কথা, মিথ্যা সংবাদ এবং অবাস্তব গল্প। ‎

যদিও আমরা বিশ্বাস করি যে, আজ যে তাওরাত এবং ইঞ্জিল বা ওল্ড টেস্টামেন্ট ও ‎নিউ টেস্টামেন্ট বিশ্বে বিদ্যমান রয়েছে, তার মধ্যে হেরফের ও রদবদল করা হয়েছে। ‎যেমন পবিত্র কুরআনের দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। তবুও মুসলিম ব্যক্তি তাওরাত এবং ‎ইঞ্জিল বা ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্ট এর সম্মান করে, অসম্মান করে না এবং ‎অপবিত্রও করেন না; যেহেতু এর মধ্যে মহান আল্লাহর পবিত্র বাণীর কিছু অবশিষ্টাংশ ‎থাকতে পারে প্রকৃত অবস্থায় যা বিকৃত করা হয়নি। ‎

পবিত্র কুরআনের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কি?‎

١
পবিত্র কুরআনের প্রতি আমাদের দায়িত্ব হলো এই যে, আমরা পবিত্র কুরআনকে ‎অবশ্যই ভালবাসবো এবং তার মাহাত্ম্য ও সম্মান রক্ষা করবো; যেহেতু এই পবিত্র ‎কুরআন হলো প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর সবচেয়ে সত্য ও সর্বশ্রেষ্ঠ ‎বাণী। ‎
٢
পবিত্র কুরআনের প্রতি আমাদের এটাও দায়িত্ব রয়েছে যে, আমরা পবিত্র কুরআন ‎পড়বো ও পাঠ করবো এবং তার আয়াত ও সূরাগুলির ঐকান্তিকভাবে গভীর চিন্তা, ‎অনুধাবন ও জ্ঞান লাভ করবো। সুতরাং আমরা এই পবিত্র কুরআনের উপদেশ, সংবাদ ‎এবং কাহিনীগুলির বিষয়ে ঐকান্তিকভাবে গভীর মনোযোগের সাথে চিন্তা করে দেখবো ‎এবং আমাদের জীবনকে তার শিক্ষা মোতাবেক পরিচালিত করে ন্যায়নীতি গ্রহণ করবো ‎আর অন্যায়, অবিচার ও অনুচিত আচরণ বর্জন করবো।
٣
আর পবিত্র কুরআনের প্রতি আমাদের এটাও দায়িত্ব রয়েছে যে, আমরা পবিত্র ‎কুরআনের নির্দেশ মোতাবেক কর্ম করবো, তার বিধিবিধান ও আদর্শ মেনে চলবো, ‎তার নিষেধকৃত সকল বিষয় পরিহার করবো, তার আদবকায়দা অনুযায়ী চরিত্র গঠন ‎করবো এবং তাকেই আমরা আমাদের জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করবো। ‎

উম্মুল মুমেনীন আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] কে যখন আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ ‎‎[সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন: তাঁর ‎চরিত্র ছিল পবিত্র কুরআনের দ্বারা বিভূষিত ও অলঙ্কৃত। (আহমদ 24601)।‎

এই হাদিসটির অর্থ: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] এর জীবনে এবং তাঁর সমস্ত কর্মে ও কথায় পবিত্র কুরআনের বিধান এবং ‎শিক্ষা বিরাজ করতো। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] তাঁর নিজের জীবনে পবিত্র কুরআনের আইন সম্পূর্ণভাবে প্রয়োগ ‎করেছেন। আর তিনি হলেন আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র ‎কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْآَخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيرًا)، سورة الأحزاب، الآية 21. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “যারা আল্লাহর করুণার আশা রাখে এবং মৃত্যুবরণ করার ‎পর ‎পরকালে সুখশান্তপূর্ণ মঙ্গলময় জীবন লাভের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক ‎স্মরণ করে, তাদরে জন্যে বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদের জীবনযাত্রার প্রণালীর ‎মধ্যে রয়েছে ‎উত্তম আর্দশ”। (সূরা আল আহযাব, আয়াত নং ২১)।

পবিত্র কুরআন মুখস্থকারীদের ও তার তিলাওয়াতকারীদের বিভিন্ন ভাষা এবং বিভিন্ন ‎পরিস্থিতি হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পবিত্র কুরআন মুখস্থ করা এবং পাঠ করা ‎হলো একটি সহজ বিষয়। এই বিষয়টির দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র ‎কুরআন মহান আল্লাহর সংরক্ষণে রয়েছে। ‎

পবিত্র কুরআনের গুণ ও বৈশিষ্ট্য:‎

পবিত্র‎‏‎ কুরআন হলো প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পবিত্র‎‏‎ বাণী। এই ‎‎পবিত্র‎‏‎ বাণী আমাদের আদর্শ বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ‎প্রতি অবতীর্ণ ‎করা হয়েছে। তাই প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি এই পবিত্র‎‏‎ গ্রন্থ ‎কুরআনের সম্মান করে, তার বিধিবিধান আঁকড়ে ধরে, তার তিলাওয়াত ও পঠনপাঠন ‎করে এবং ঐকান্তিকভাবে গভীর চিন্তা ও গবেষণা করে। আমাদের জন্য এটাই যথেষ্ট ‎যে, পবিত্র‎‏‎ কুরআন ইহকালে আমাদের পথপ্রদর্শক এবং পরকালে আমাদের পরিত্রাণের ‎সম্বল। পবিত্র কুরআনের আনেক গুণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেই সব গুণ ও বৈশিষ্ট্যের ‎দ্বারা পবিত্র কুরআনের মধ্যে এবং অনন্য ঐশী বাণীর গ্রন্থগুলির মধ্যে পার্থক্য হয়ে যায়। ‎সুতরাং পবিত্র কুরআনের গুণ ও বৈশিষ্ট্যের রয়েছে:‎

১। পবিত্র কুরআনের মধ্যে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর সমস্ত ‎বিধিবিধানের সারমর্ম রয়েছে। ‎

প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর উপাসনার আদেশ সম্পর্কে পূর্ববর্তী ঐশী ‎বাণীর গ্রন্থগুলিতে যা বলা হয়েছে, তার সহায়ক এবং সমর্থনকারী হিসেবে পবিত্র ‎কুরআন এসেছে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন: ‎ ‏(وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقاً لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِناً عَلَيْه)، سورة المائدة، جزء من ‏الآية 48. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ! আমি তোমার প্রতি সত্যায়নকারী হিসেবে পবিত্র‎‏‎ ‎গ্রন্থ কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যা পূর্বের অবতীর্ণকৃত ঐশী বাণীর গ্রন্থগুলির সত্যতা ‎প্রমাণকারী ও রক্ষণাবেক্ষণকারী।‏ ‏‎(সূরা আল মায়িদা, আয়াত নং ৪৮ এর অংশবিশেষ)। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন হলো পূর্ববর্তী ঐশী বাণীর গ্রন্থগুলির সংবাদের ও মতবাদের ‎সত্যায়নকারী এবং সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং সাক্ষী প্রদানকারী।

২। পৃথিবীর সকল জাতির মানব সমাজের জন্য পবিত্র কুরআনের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস ‎স্থাপন করা ওয়াজিব বা অপরিহার্য, যদিও তারা বিভিন্ন গোত্রের মানুষ হয় আর যদিও ‎তাদের ভাষা বিভিন্ন প্রকারের হয়। ‎

পবিত্র কুরআনের শিক্ষা মোতাবেক পৃথিবীর সকল জাতির মানব সমাজের জন্য কর্ম ‎করা অপরিহার্য। যদিও তারা পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার অনেক পরবর্তী যুগের ‎মানুষ হয়। কিন্তু পূর্বের অবতীর্ণকৃত ঐশী বাণীর গ্রন্থগুলির বিষয় হলো আলাদা; যেহেতু ‎সেই গ্রন্থগুলি কেবলমাত্র সেই যুগের সম্প্রদায়দের জন্য এবং তাদের নির্দিষ্ট সময়ের ‎জন্য অবতীর্ণ হয়েছিলো। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন:‎ ‏(وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَذَا الْقُرْآَنُ لِأُنْذِرَكُمْ بِهِ وَمَنْ بَلَغَ)، سورة الأنعام، جزء من الآية 19. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আর এই পবিত্র কুরআন আমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে, যাতে ‎আমি তোমাদেরকে এবং যাদের কাছে ভবিষ্যতে এই পবিত্র কুরআনের বাণী পৌঁছবে ‎তাদের প্রত্যেককে আল্লাহর শাস্তি হতে সতর্ক করতে পারি”। (সূরা আল আন্আম, ‎আয়াত নং ১৯ এর অংশবিশেষ)।

৩। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সংরক্ষণ নিশ্চিত করেছেন

সুতরাং পবিত্র কুরআনকে কেউ বিকৃতি, হেরফের বা রদবদল করতে পারেনি এবং ‎পারবেও না কোনো দিন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন:‎ ‏(إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُوْنَ)، سورة‎ ‎الحجر، الآية‎ ‎‏9.‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “নিশ্চয় আমি এই পবিত্র‎‏‎ কুরআনকে অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই ‎এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছি”। ‎‏ ‏‎(সূরা আল হজির, আয়াত ‎নং ৯)।

মহান আল্লাহর অবতীর্ণকৃত গ্রন্থগুলির প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের ফল:‎

١
এই জ্ঞান লাভ করা যে, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি মানব ‎জাতির যত্ন করেছেন এবং তাদের প্রতি সম্পূর্ণরূপে কৃপা করেছেন; অতএব তিনি ‎প্রত্যেক সম্প্রদায়কে সুপথগামী করার জন্য তাদের প্রতি তাঁর গ্রন্থগুলি অবতীর্ণ ‎করেছেন। যাতে তারা ইহকাল ও পরকালে সুখময় জীবন লাভ করতে পারে। ‎
٢
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর অবতীর্ণকৃত আইনের তাৎপর্য ও রহস্যের ‎জ্ঞান লাভ করা। কেননা তিনি তো প্রত্যেক সম্প্রদায়ের অবস্থার মোতাবেক এবং ‎পরিস্থিতির উপযোগী আইন ও বিধিবিধান প্রদান করেছেন। তাই মহান আল্লাহ ‎পবিত্র ‎কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏(لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنكُمْ شِرْعَةً وَّمِنْهَاجًا)، سورة المائدة، جزء من الآية 48. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আমি তোমাদের প্রত্যেক সম্প্রদায়কে আলাদা আলাদা ‎আইন ও ‎স্পষ্ট জীবন পদ্ধতি প্রদান করেছি”।‏ ‏‎(সূরা আল মায়িদা, আয়াত নং ৪৮ ‎এর ‎অংশবিশেষ)।
٣
এই অবতীর্ণকৃত গ্রন্থগুলির জন্য প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা ‎প্রকাশ করা। যেহেতু এই অবতীর্ণকৃত গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে ইহকাল ও পরকালে ‎সুখময় জীবন লাভের জ্যোতি ও উজ্জ্বল উপাদান। তাই এই মহা অনুগ্রহের জন্য প্রকৃত ‎সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অপরিহার্য। ‎

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন