মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় শিরোনাম: প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষায় ব্যাধি ও মহামারী রোগ হতে পরিত্রাণের উপকরণ।
রোগ ও মহামারীর কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্কের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি রোগ প্রতিরোধমূলক বাহ্যিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক ব্যাধি ও মহামারী রোগ প্রতিরোধক উপায় অবলম্বন করে।
সমস্ত প্রকারের সংকট ও বিপর্যয় বা বিপজ্জনক পরিস্থিতি হতে নিরাপদ এবং আপদমুক্ত থাকার সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয় হলো সর্বশক্তিমান প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন করা, তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা এবং তাঁর আশ্রয় কামনা করা।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কাছে বিপদ ও দুঃখকষ্ট হতে পরিত্রাণ লাভের উদ্দেশ্যে বিনম্রতার সহিত মিনতি করা, অনুনয় করা, প্রার্থনা বা দোয়া করা এবং তাঁর কাছে নিজের অভাব ও প্রয়োজনের কথা প্রকাশ করা অপরিহার্য। যেহেতু প্রার্থনা বা দোয়া হলো মুসলিম ব্যক্তির শান্তি লাভের দুর্গ ও যন্ত্র বা অস্ত্র। অতএব প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্যের প্রক্রিয়া হিসেবে যখন বিপদ ও দুঃখকষ্ট নেমে আসবে, তখন তা দূরীভূত ও অপসৃত করার জন্য প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা বা দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই নেই। তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “প্রার্থনা বা দোয়া ছাড়া ভাগ্যের প্রক্রিয়া বা ফয়সালাকে কেউ অপসৃত করার নেই।” (তিরমিযী 2139)।
এবং পবিত্র কুরআনের দ্বারা আরোগ্য কামনা করা উচিত। যেহেতু এতে রয়েছে আধ্যাত্মিক ও বাহ্যিক রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার কার্যকর ঔষধ। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَنُنـزلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ)، سورة الإسراء، الآية 82. ভাবার্থের অনুবাদ: “আমি পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছি। এতে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজের জন্য রয়েছে আরোগ্য ও কৃপা”। (সূরা আল ইসরা (বানি ইসরাইল), আয়াত নং ৮২)। পবিত্র কুরআনের প্রতি ইমান, বিশ্বাস ও সততার দ্বারা আরোগ্য লাভের উপাদান বৃদ্ধি পায়। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاءٌ)، سورة فصلت، جزء من الآية 44. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তুমি বলে দাও: পবিত্র কুরআনের মধ্যে রয়েছে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজের জন্য মঙ্গলময় জীবন লাভের উপাদান ও আরোগ্য”। (সূরা ফুস্সিলাত ( হা, মীম, আস্ সাজদা), আয়াত নং ৪৪ এর অংশবিশেষ)।
সম্পূর্ণ পবিত্র কুরআনই হলো আরোগ্য লাভের উপাদান। তবে কতকগুলি সূরা এবং কতকগুলি আয়াতের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে, যেমন:- সুতরাং সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস, আয়াতুল কুরসি। ইবনুল কাইয়িম [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন: “যদি কোনো ব্যক্তি সূরা ফাতিহার দ্বারা চিকিত্সা করে বা আরোগ্য লাভের চেষ্টা করে, তাহলে সে আরোগ্য লাভে আশ্চার্যজনক সুফল অনুভব করবে। আমি কিছু সময়ের জন্য মক্কায় ছিলাম। সেখানে আমি অনেক রোগে ভুগছিলাম। আর সেখানে আমি কোনো ভালো চিকিৎসক বা ভালো ওষুধ খুঁজে পাইনি। তাই আমি সূরা ফাতিহা দিয়ে নিজের চিকিৎসা নিজেই করতাম। সুতরাং আমি তাতে আশ্চর্যজনক ভাবে আরোগ্য লাভ করেছি এবং তার সুফল অনুভব করেছি। তাই আমি অসুস্থদেরকে সূরা ফাতিহার দ্বারা চিকিত্সা করার এবং আরোগ্য লাভ করার পরামর্শ দিতাম আর তাদের মধ্যে থেকে অনেকেই দ্রুত আরোগ্য লাভ করতো।
বিশেষ করে ফজরের নামাজ। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করবে, সে ব্যক্তি আল্লাহর নিরাপত্তায় সুরক্ষিত থাকবে। (মুসলিম 657)।
স্বাস্থ্য রক্ষার উপাদান ও রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই বিষয়টি যে, দুর্দশাগ্রস্ত লোকদেরকে দেখার সময় দোয়া পাঠ করা। তাই হাদীসের মধ্যে এসেছে যে, যে ব্যক্তি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে দেখে এই দেয়াটি বলেবে: "الحمدُ لله الذي عافَانِي ممَّا ابتلاكَ به، وفَضَّلَني على كثيرٍ ممن خلقَ تفضِيلاً". অর্থ: “আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা, যিনি তোমাকে যে ব্যাধি দ্বারা পরীক্ষা করেছেন, তা থেকে আমাকে নিরাপদে রেখেছেন এবং তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তাদের অনেকের থেকে আমাকে যথার্থ শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন”। (তিরমিযী 3432)। তাকে সেই ব্যাধি বা রোগ কোনো দিন স্পর্শ করবে না।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর জিকির সযত্নে পাঠ করার মধ্যে ইহকালে অগণন উপকার হয়েছে এবং পরকালে অসংখ্য পুণ্য রয়েছে। আর সকাল ও সন্ধ্যার জিকির পাঠ করা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিকির। তাই মুসলিম ব্যক্তির প্রতি সকাল ও সন্ধ্যার জিকির সযত্নে পাঠ করা উচিত। মহান আল্লাহর জিকিরের মধ্যে অনেক উপকারিতা রয়েছে। সেই সব উপকারিতার মধ্যে রয়েছে: অন্তরে অতিশয় আনন্দ এবং গভীর সুখশান্তি স্থাপিত হয় এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ হয়। আর প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে উচ্চ স্থানে স্মরণ করেন ও তাকে সাহায্য করেন, যে ব্যক্তি তাঁর জিকিরে মগ্ন থাকে।
দোয়া, জিকির এবং প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা সম্মত স্বাস্থ্য রক্ষার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে:
ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসী পাঠ করার বিবরণ:
একটি হাদীসে এসেছে: এক ব্যক্তি আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] কে বলেছিলো: আপনি যখন বিছানায় যাবেন, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন; এর কারণে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার সংরক্ষণকারী নিযুক্ত থাকবে। এবং সকাল হওয়া পর্যন্ত আপনার কাছে কোনো শয়তান আসতে পারবে না। তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “সে আপনাকে সত্য কথা বলেছে এবং সে মিথ্যাবাদী। আর সে হলো শয়তান”। ( বুখারী 3275)।
সূরা বাকারার শেষের দুইটি আয়াত পাঠ করার বিবরণ:
অর্থ: আবু মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী কারীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সূরা বাকারার শেষের দুইটি আয়াত পাঠ করবে, সে ব্যক্তির সমস্ত প্রকার অমঙ্গল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই দুইটি আয়াতই যথেষ্ট হয়ে যাবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং 5009 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 256 -(808), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর খুব বেশি তাসবীহ পাঠ করা: (সুবহানাল্লাহ বলা: অর্থাৎ আমি আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি) এবং তাঁর কাছে ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা:
সুতরাং যখন কোনো ব্যক্তি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর খুব বেশি তাসবীহ পাঠ করবে এবং তাঁর কাছে ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তখন তিনি তার বিপদ ও দুঃখকষ্ট হতে তাকে পরিত্রাণ দান করবেন। তাই তিনি এই বিষয়ে পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ)، سورة الأنفال، جزء من الآية 33. ভাবার্থের অনুবাদ: “মহান করুণাময় আল্লাহর রীতিনীতি এটা নয় যে, মানব সমাজ তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন”। (সূরা আল আনফাল, আয়াত নং ৩৩ এর অংশবিশেষ)।