মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় মলমূত্র ত্যাগ ও মলমূত্র ত্যাগান্তে পরিত্রতা লাভ করার আদবকায়দা ও বিধিবিধান
পেচ্ছাব-পায়খানার আদবকায়দা
যে ব্যক্তি শৌচাগারে প্রবেশ করার ইচ্ছা করবে, সে ব্যক্তির জন্য আগে বাম পা শৌচাগারে রাখা মোস্তাহাব বা পছন্দনীয় কাজ। তারপর শৌচাগারে প্রবেশ করার পূর্বে পাঠ করবে নিম্নের দোয়াটি: "بسم الله، اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ". অর্থ: “আল্লাহর নাম নিয়ে প্রবেশ করতে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে পুরুষ জাতীয় শয়তান জিন এবং স্ত্রী জাতীয় শয়তান জিন হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”।
মুসলিম ব্যক্তির জন্য পেচ্ছাব-পায়খানার সময় মানুষের দৃষ্টি বা নজর থেকে তার লজ্জাস্থান আচ্ছাদিত বা আবৃত করা অপরিহার্য।
মুসলিম ব্যক্তির জন্য সেই জায়গায় পেচ্ছাব-পায়খানা করা হারাম বা অবৈধ, যে জায়গায় পেচ্ছাব-পায়খানা করলে মানুষের ক্ষতি বা কষ্ট হয়।
মুসলিম ব্যক্তির জন্য খোলা জায়গায় বা মাঠে অথবা মরুভূমির কোনো খালে বা গর্তে পেচ্ছাব-পায়খানা করা হারাম বা অবৈধ। যেহেতু সেই খালের বা গর্তের কোনো পোকা বা কীটের তাতে ক্ষতি হতে পারে অথবা যে ব্যক্তি সেই খালে বা গর্তে পেচ্ছাব-পায়খানা করবে, সেই ব্যক্তিরও ক্ষতি করবে উক্ত খালের বা গর্তের কোনো পোকা বা কীট।
পেচ্ছাব-পায়খানা করার সময় মুসলিম ব্যক্তির জন্য উচিত নয় যে, সে কিবলার দিকে মুখ করে বসবে বা কিবলাকে পিছনে রেখে বসবে। তবে সে যদি মাঠে, ময়দানে বা মরুভূমিতে হয় এবং তার সামনে কোনো প্রাচীর না থাকে, তাহলে এই ক্ষেত্রে তার জন্য পেচ্ছাব-পায়খানা করার সময় কিবলার দিকে মুখ না করে বসা বা কিবলাকে পিছনে রেখে না বসা ওয়াজিব বা অপরিহার্য। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তোমরা যখন পেচ্ছাব-পায়খানায় যাবে, তখন তোমরা কিবলার দিকে মুখ করে বসবে না বা কিবলাকে পিছনে রেখে বসবে না”। (বুখারি 394, মুসলিম 264)।
পেচ্ছাব-পায়খানা করার সময় মুসলিম ব্যক্তির জন্য সতর্ক থাকা ওয়জিব বা অপরিহার্য। যাতে করে তার জামাকাপড় এবং শরীরে অপবিত্র কোনো বস্তুর ছিটেফোঁটা না আসে। আর তার জামাকাপড় এবং শরীরে যদি অপবিত্র কোনো বস্তু লেগে যায়, তাহলে সে তা ধৌত করবে এবং পবিত্র করবে।
প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তিকে পেচ্ছাব-পায়খানা করার পর ইস্তিনজা অথবা ইস্তিজমার, এই দুইটি কাজের মধ্যে একটির দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।
পেচ্ছাব-পায়খানা করার পর পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করাকে ইস্তিনজা বলা হয়।
ইস্তিজমার: ইস্তিজমার হলো পেশাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে নির্গত অপবিত্রতা তিনটি অথবা তার চেয়ে বেশি পাথর বা কাগজ বা অনুরূপ জিনিস দ্বারা দূর করা।
হাদাস বা অপবিত্রতা
মানুষের এমন একটি অভ্যন্তরীণ ও আধ্যাত্মিক অবস্থা, যে পবিত্রতা অর্জন না করে সেই অবস্থায় নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। তবে এই অবস্থাটি বাহ্যিক কোনো অপবিত্র বস্তুর মতো নয়।
মুসলিম ব্যক্তি যখন পবিত্র পানি দ্বারা ওজু বা গোসল করবে, তখন তার হাদাস বা অপবিত্রতা অপসৃত হবে। পবিত্র পানি সেই পানিকে বলা হয়, যে পানির সাথে অপবিত্র কোনো বস্তু সংমিশ্রিত হয়নি এবং তার রঙ অথবা স্বাদ কিংবা গন্ধকে প্রভাবিত করেনি।
হাদাস বা অপবিত্রতা দুই ভাগে বিভক্ত:
ছোটো হাদাস বা অপবিত্রতা এবং তার কারণে ওজু করার বিধান
যখন মুসলিম ব্যক্তির ছোটো হাদাস বা অপবিত্রতা সংঘটিত হবে, তখন তার জন্য ওজু করা অপরিহার্য হয়ে যাবে। আর ছোটো হাদাস বা অপবিত্রতা হলো আসলে ওজু নষ্টকারী সমস্ত বিষয়।
মলমূত্র ত্যাগ করা। অতএব পেচ্ছাব ও পায়খানার রাস্তা থেকে কিছু নির্গত হওয়া, যেমন:- বায়ু নিঃসরণ করা বা বাতকর্ম করা। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ)(النساء: 43). ভাবার্থের অনুবাদ: “অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে”। (সূরা নিসা, আয়াত নং ৪৩)। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ওই ব্যক্তির বিষয়ে বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাজ পড়ার অবস্থায় নিজের ওজু নষ্ট হওয়ার ব্যপারে সন্দেহ করে: "لا ينصرف حتى يسمع صوتاً أو يجد ريحًا" (البخاري 175، مسلم 361). অর্থ: “সে যেন নামাজ থেকে ফিরে না যায়, যতক্ষণ না সে তার বায়ু নিঃসরণ করার বা বাতকর্ম করার শব্দ না শুনবে বা দুর্গন্ধ না পাবে”। (বুখারি 175, মুসলিম 361)।
২। কোনো অন্তরাল বা পর্দা অথবা আবরণ ছাড়াই উত্তেজিত অবস্থায় লজ্জাস্থান স্পর্শ করা। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "من مسّ ذكره فليتوضأ" (أبو داود 181). অর্থ: “যে ব্যক্তি তার লিঙ্গ স্পর্শ করবে, সে যেন ওজু করে”। (আবু দাউদ 181)।
৩। উটের গোশত খাওয়া। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: আমি কি উটের গোশত খেয়ে ওজু করবো? তিনি বলেছিলেন: "হ্যাঁ" (মুসলিম 360)।
৪। ঘুম বা পাগল অথবা অজ্ঞান কিংবা নেশাগ্রস্ত হওয়ার কারণে বুদ্ধি বা বোধ শক্তি হারিয়ে ফেলা।