মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় ওজুর বিষয়
ওজু করার মর্যাদা
ওজু হলো এমন একটি মহা ইবাদত বা উপাসনা যার মাধ্যমে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির মহা পুণ্য নির্ধারিত হয় এবং উচ্চ মর্যাদা লাভ হয়। একনিষ্ঠতার সহিত মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের ইচ্ছায় ওজু করলে এই ওজুর দ্বারা আনেক ছোটো ছোটো পাপ মহান আল্লাহ ক্ষমা করেদেন। তাই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ أَوْ الْمُؤْمِنُ؛ فَغَسَلَ وَجْهَهُ؛ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ؛ فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ؛ فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلُّ خَطِيئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنْ الذُّنُوبِ". (صحيح مسلم, رقم الحديث 32 - (244)،). অর্থ: “যখন মুসলিম ব্যক্তি বা মুমিন ব্যক্তি ওজু করতে শুরু করে এবং তার মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ ফোঁটার সাথে তার চেহারা থেকে তার চোখ দ্বারা কৃত সমস্ত পাপ বের হয়ে যায়। তার পর যখন সে তার দুই হাত ধৌত করে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ ফোঁটার সাথে তার দুই হাত দ্বারা কৃত সমস্ত পাপ বের হয়ে যায়। এরপর যখন সে তার দুই পা ধৌত করে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ ফোঁটার সাথে তার পা দ্বারা কৃত সমস্ত পাপ বের হয়ে যায়, এর কারণে সে সমস্ত ছোটো পাপ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র হয়ে যায়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩২ - (২৪৪)] ।
কিভাবে ওজু করবো আর কিভাবে সর্বপ্রকারের ছোটো অপবিত্রতা হতে পবিত্রতা অর্জন করবো?
খাঁটি নিয়ত করা
কোনো মুসলিম ব্যক্তি যখন ওজু করার ইচ্ছা করবে, তখন যেন সে ওজু করার দৃঢ় সংকল্প বা খাঁটি নিয়ত করে। অর্থাৎ সে মনের মধ্যে এবং অন্তরে তার অপবিত্রতা দূর করে পবিত্রতা অর্জন করার দৃঢ় সংকল্প করবে। আর সমস্ত সৎ কর্মে এই রকমভাবে দৃঢ় সংকল্প করা হলো সৎ কর্ম কবুল হওয়া একটি শর্ত। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّةِ، ولِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى". (صحيح البخاري، جزء من رقم الحديث 54، واللفظ له، وصحيح مسلم، جزء من رقم الحديث 155 - (1907)،). অর্থ: “যাবতীয় কর্ম সঠিক বলে বিবেচিত হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে মনের দৃঢ় সংকল্প বা খাঁটি নিয়তের উপর। আর প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের মনের দৃঢ় সংকল্প বা খাঁটি নিয়ত মোতাবেক নিজের পাপ ও পুণ্যের ফল ভোগ করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪ এর অংশবিশেষ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৫ -(১৯০৭) এর অংশবিশেষ, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে] । তারপর ওজুর কাজ শুরু করতে হবে নিম্নের পদ্ধতি মোতাবেক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে। এবং ওজু করার অবস্থায় লম্বা সময় ধরে অন্য কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া চলবে না।
দুই হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার করে ধৌত করবে আর এটা হলো উত্তম।
কুলকুচা বা কুলি করা। অর্থাৎ মুখের ভিতর পরিস্কার করার জন্য মুখভর্তি পানি দিয়ে মুখের চারি দিকে সঞ্চালন করা বা নড়াচড়া করার পর বাইরে ফেলে দেওয়া। তিনবার এইভাবে কুলকুচা করা বা কুলি করা উত্তম এবং এবার করা অপরিহার্য।
নাকে পানি দিয়ে নাকের পানি ঝেড়ে ফেলা। অর্থাৎ নাকের ভিতরে পানি শোষণ করা বা টানা তারপর সেই নাকের পানি বায়ুর দ্বারা ঝেড়ে ফেলা। ওজু করার সময় নাকে গভীরভাবে পানি দেওয়া উচিত। এইভাবে তিনবার নাকে গভীরভাবে পানি দেওয়া উত্তম আর একবার অপরিহার্য তবে কোনো সমস্যা বা জটিলতা থাকলে অথবা রোজা রাখার অবস্থায় নাকে গভীরভাবে পানি দেওয়া উচিত নয়।
মুখমণ্ডল ধৌত করার বিবরণ। আর মুখমণ্ডলের সীমা দৈর্ঘের দিক দিয়ে সাধারণত মাথার চুল গজানোর জায়গা থেকে নিয়ে থুতনি পর্যন্ত এবং প্রস্থের দিক দিয়ে এক কান থেকে নিয়ে অন্য কান পর্যন্ত। আর দুই কান মুখমণ্ডলের অন্তর্গত নয়। মুখমণ্ডল তিনবার করে ধৌত করা উত্তম আর একবার করে ধৌত করা অপরিহার্য।
দুই হাতের সমস্ত আঙ্গুল হতে দুই হাত কনুইসহ ধৌত করবে। প্রথমে ডান হাত ধৌত করার কাজ শুরু করা এবং তিনবার করে ধৌত করা মোস্তাহাব বা উত্তম, কিন্তু একবার করে ধৌত করা ওয়াজেব বা অপরিহার্য।
পানি দ্বারা হাত ভিজিয়ে নিয়ে মাথা মাসাহ করবে। মাথা মাসাহ করবে মাথার সামনের দিক থেকে শুরু করে মাথার সেই পেছন দিক পর্যন্ত যে পেছন দিক ঘাড়ের সাথে সংযুক্ত বা মিলিত আছে। তারপর মাথার পেছন দিক থেকে আবার মাথার সামনের দিক পর্যন্ত মাসাহ করবে। আর এটাই হলো সুন্নাত।
মাথা মাসাহ করার পর দুই কান মাসাহ করবে এই নিয়মে যে, দুই হাতের তর্জনী আঙ্গুল কানের ছিদ্রতে প্রবেশ করাবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি বা বুড়া আঙুল দিয়ে দুই কানের পিঠ মাসাহ করবে।
দুই পায়ের গিঁট বা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করবে। প্রথমে ডান পা ধৌত করার কাজ শুরু করা এবং তিনবার করে পা ধৌত করা মোস্তাহাব বা উত্তম, কিন্তু একবার করে পা ধৌত করা ওয়াজেব বা অপরিহার্য। তবে যদি পায়ে মোজা থাকে, তাহলে সেই মোজার উপরে কতকগুলি শর্তসহ বা শর্তসাপেক্ষ মাসাহ করা চলবে।