মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় নামাজ পড়ার পদ্ধতি
১। নিয়ত করার বিবরণ
নামাজ সঠিক হওয়ার জন্য একটি শর্ত হলো নিয়ত করা। তাই মুসল্লি বা নামাজি ব্যক্তি নামাজ পড়ার সময় ইচ্ছা বা নিয়ত করবে যে, সে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর জন্য নামাজ পড়ছে। এবং সে দৃষ্টান্তস্বরূপ নির্দিষ্ট জ্ঞান রাখবে যে, সে মাগরিব বা ইশার নামাজ পড়ছে। আর এই নিয়তের মৌখিক উচ্চারণ করা শরিয়ত সম্মত বিষয় নয়। বরং হৃদয় এবং মনের অভিপ্রায় বা ইচ্ছা করারই শুধুমাত্র প্রয়োজন রয়েছে। তাই নিয়তের মৌখিক উচ্চারণ করা হলো ভুল। যেহেতু নিয়তের মৌখিক উচ্চারণ করার বিষয়টি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে এবং সম্মানিত সাহাবীগণ হতে সাব্যস্ত হয়নি।
মুসল্লি বা নামাজি ব্যক্তি নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে বা দণ্ডায়মান হয়ে (اللَّهُ أَكْبَرُ) আল্লাহু আকবার বলবে এবং দুই কাঁধ পর্যন্ত বা দুই কানের দুই লতি পর্যন্ত দুই হাত তুলবে বা উত্তোলন করবে এই পদ্ধতিতে যে, আঙ্গুলগুলি প্রসারিত অবস্থায় থাকবে এবং হাতের তালুও কিবলার দিকে থাকবে।
আল্লাহু আকবার বা তাকবিরের অর্থ:
আল্লাহু আকবার (اللَّهُ أَكْبَرُ) ছাড়া অন্য বাক্য বা শব্দের দ্বারা তাকবির বলা জায়েজ বা সঠিক নয়। আর (اللَّهُ أَكْبَرُ) আল্লাহু আকবার এর অর্থ হলো: মহান আল্লাহর মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা; সুতরাং আল্লাহু আকবার এর অর্থ হলো: মহান আল্লাহর সত্তা ছাড়া যে সমস্ত বস্তু আছে, সে সমস্ত বস্তুর চেয়ে তিনি বড়ো ও শ্রেষ্ঠ এই বলে ষণা করা। পৃথিবীর মধ্যে যে সমস্ত আনন্দ ও আমোদের বিষয় আছে, যে সমস্ত বিষয়ের চেয়ে তিনি বড়ো। অতএব আমরা জাগতিক আমোদের সমস্ত বিষয় বর্জন করে মহামহিমান্বিত আল্লাহর জন্য নামাজ পড়বো আন্তরিকতার সহিত মন দিয়ে বিনম্রতার সাথে।
৩। তাকবির বলার পর, মুসল্লি বা নামাজি ব্যক্তি নামাজ পড়ার সময় তার ডান হাত তার বাম হাতের উপরে বুকের স্থানে রাখবে এবং সে সর্বদা দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থায় এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করবে।
৪। মুসল্লি বা নামাজি ব্যক্তি নামাজ পড়া শুরু করবে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে যে সব দোয়া সাব্যস্ত হয়েছে, সে সব দোয়ার মধ্যে থেকে যে কোনো দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে। আর সেই সব দোয়ার অন্তর্ভুক্ত হলো: "سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، تَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ". (صحيح مسلم52 - (399)،). অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার প্রশংসার সহিত, আপনার নাম অতি কল্যাণময়, আপনার মহিমা অতি উৎকৃষ্ট, আর আপনি ছাড়া অন্য কোনো প্রকৃত উপাস্য নেই”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 52 - (399)]।
৫। এরপর বলবে: "أَعُوْذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ". অর্থ: “আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”। এটা হলো আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করার একটি পদ্ধতি। এর অর্থ হলো: আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি তার অমঙ্গল থেকে সংরক্ষিত থাকার জন্য।
৬। অতঃপর বলবে: "بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ". অর্থ: “অনন্ত করুণাময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে আমি শুরু করছি”। বিসমিল্লাহ বলার অর্থ হলো: আল্লাহর নামের দ্বারা সাহায্য ও কল্যাণ লাভের মাধ্যমে আমি শুরু করছি।
এখানে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
৭। তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। আর সূরা ফতিহা হলো পবিত্র কুরআনের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সূরা। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তাঁর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সূরা ফাতিহা অবতীর্ণ করার মাধ্যমে তাঁকে মহা মঙ্গল প্রদান করার কথাটি উল্লেখ করেছেন। সুতরাং তিনি পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنَ الْعَظِيمَ)، سورة الحجر، الآية 87. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে অবশ্যই বার বার পাঠ করার সাতটি আয়াত তথা সূরা ফাতেহা প্রদান করেছি। তার সাথে সাথে প্রদান করেছি মহা কুরআন”। সূরা ফাতেহাকে السبع المثاني বলা হয়; এই জন্য যে, এই সূরাটিকে বার বার পাঠ করা হয়।
প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য সূরা ফাতেহা মুখস্ত করা অপরিহার্য। কেননা কোনো মুসলিম ব্যক্তি যখন একাকী নামাজ পড়বে তখন অথবা ইমামের পিছনে যখন এমন নামাজ পড়বে, যে নামাজে ইমাম সশব্দে পবিত্র কুরআন পাঠ করেন না, তখন তার জন্য সূরা ফাতেহা পাঠ করা হলো নামাজের একটি রুকন বা স্তম্ভ।
সূরাতুল ফাতেহা
৮। মুসল্লি বা নামাজি ব্যক্তি নামাজ পড়ার সময় সূরা ফাতেহা পাঠ করার পর অথবা ইমামের সূরা ফাতেহার তিলাওয়াত শ্রবণ করার পর বলবে আমীন। আর এর অর্থ হলো: হে আল্লাহ! আপনি কবুল করুন।
৯। মুসল্লি বা নামাজি ব্যক্তি নামাজ পড়ার সময় সূরা ফাতেহা পাঠ করার পর প্রথম দুই রাকাআতে অন্য সূরা কিংবা অন্য সূরার কয়েকটি আয়াত পাঠ করবে। তবে তৃতীয় এবং চতুর্থ রাকাআতে কেবলমাত্র সূরা ফাতেহা পাঠ করবে।
মুসল্লি বা নামাজি ব্যক্তি নামাজ পড়ার সময় ফজরের ফরজ নামাজে এবং মাগরিব ও ইশার ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাআতে সূরা ফাতেহা এবং অন্য সূরা বা আয়াত সশব্দে বা উচ্চস্বরে পাঠ করবে। এবং জোহর ও আসরের ফরজ নামাজে আর মাগরিবের তৃতীয় রাকাআতে আর ইশার তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাআতে সূরা ফাতেহা এবং অন্য সূরা বা আয়াত গোপনে পাঠ করবে।
১০। অতঃপর মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি উভয় হাত দুই কাঁধ অথবা দুই কাঁধের ঊর্ধ্বে উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যাবে এই অবস্থায় যে, হাতের দুই তালু কিবলার দিকে থাকবে যেমনভাবে প্রথম তাকবিরের অবস্থায় ছিলো।
১১। মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী এই পদ্ধতিতে রুকু করবে যে, সে নিজের পিঠ কাবা ঘরের দিকে ঝুকাবে এবং মাথা ও পিঠ সোজা করে বরাবর রাখবে। আঙ্গুলগুলিকে খোলাবস্থায় উভয় হাটুর উপরে রাখবে আর রুকুতে বলবে: سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ অর্থ: “আমি আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা ঘোষণা করি”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 203-(772), সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 874 এবং সুনান নাসায়ী, হাদীস নং 1145]। তিনবার করে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ পাঠ করা মোস্তাহাব বা উত্তম। তবে একবার পাঠ করা অপরিহার্য। রুকু হলো মহান আল্লাহর মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করার স্থান।
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ এর অর্থ হলো: “আমি আমার মহান আল্লাহকে সকল প্রকারের দোষ-ত্রুটি ও খুঁত হতে পবিত্র বলে ঘোষণা করছি”। এই পবিত্র বাক্যটি মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী রুকু করার অবস্থায় পাঠ করবে।
তারপর উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে রুকু থেকে উঠে দাঁড়াবে এবং দুই হাতের তালু কিবলার দিকে থাকবে যেমনভাবে প্রথমে বলা হয়েছে। আর মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী যদি একা হয় অথবা ইমাম হন, তাহলে বলতে হবে: "سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ". অর্থ: “আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে, আল্লাহ তার প্রার্থনা গ্রহণ করেন”। আর সকল মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারীকে বলতে হবে: "رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ". অর্থ: “হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার আনুগত্য করেছি আর আপনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা”।
আর এর সাথে মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারীর জন্য এটাও সংযুক্ত করা মোস্তাহাব বা উত্তম: "حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ، مِلْءَ السَّمواتِ، ومِلْءَ الأرضِ، ومِلْءَ ما شِئتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ". অর্থ: “এমন প্রশংসা যা অফুরান্ত, পবিত্র এবং কল্যাণময়, যা সমস্ত আসমানপূর্ণ ও জমিনপূর্ণ এবং এর পরও আপনি যতো ও যেমনভাবে অসংখ্য ও অগণন প্রশংসা গ্রহণ করার ইচ্ছা করেন, সবই আপনার জন্য রয়েছে”।
১৩। অতঃপর মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি আল্লাহু আকবার বলে মেঝের উপরে লুটিয়ে পড়ে সাতটি অঙ্গে সিজদা করবে। আর সাতটি অঙ্গ হলো: নাকসহ কপাল, দুই হাত, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের পাতা। এবং দুই হাত দুই পাঁজর থেকে দূরে রাখা, পেট দুই ঊরু থেকে পৃথক রাখা আর দুই পা থেকে দুই ঊরু আলাদা রাখা এবং মাটি থেকে দুই বাহু ঊর্ধ্বে রাখা মোস্তাহাব বা উত্তম কাজ।
১৪। তারপর মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি সিজদার অবস্থায় বলবে: "سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى". অর্থ: “আমি আমার সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ প্রভুর পবিত্রতা ঘোষণা করি”। তিনবার করে "سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى". পাঠ করা মোস্তাহাব বা উত্তম। তবে একবার পাঠ করা অপরিহার্য। "سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى". এর অর্থ হলো: “আমি আমার সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ প্রভু মহান আল্লাহর মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের পবিত্রতা ঘোষণা করছি; অতএব তাঁর মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের মধ্যে কোনো প্রকারের দোষ-ত্রুটি ও খুঁত নেই বলে ঘোষণা করছি। তিনি সর্বোচ্চ ও সমস্ত আকাশের ঊর্ধ্বে”। আর এতে যে ব্যক্তি সিজদা করছে মহান আল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করে এবং তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করে ও তাঁর জন্য মেঝের উপরে লুটিয়ে পড়ে, তাকে সতর্ক করা হয়েছে এবং বুঝানো হয়েছে যে, তার মধ্যে এবং সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ প্রভু মহান আল্লাহর মধ্যে কতো বড়ো তফাত রয়েছে। সুতরাং সে যেন তার প্রকৃত প্রভু মহান আল্লাহর প্রতি সদাসর্বদা প্রত্যাবর্তন করে এবং তাঁকে সঠিকভাবে মেনে চলে।
সিজদা হলো সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর কাছে দোয়া বা প্রার্থনা করার সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান, তাই মুসলিম ব্যক্তি সিজদার অবস্থায় অপরিহার্য জিকির পাঠ করার পর নিজের ইচ্ছা মোতাবেক ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ প্রার্থনা করবে। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِن رَّبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ؛ فَأَكْثِرُوْا الدُّعَاءَ". (صحيح مسلم، رقم الحديث 215- (482)، ). অর্থ: “মুসলিম ব্যক্তি সিজদার অবস্থায় তার প্রতিপালক মহান আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হয়ে থাকে। অতএব এই অবস্থায় তোমরা অধিক দোয়া করবে”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৫-(৪৮২) ।
১৫। অতঃপর মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি আল্লাহু আকবার বলবে এবং দুই সিজদার মাঝে বসবে। আর এটা তার জন্য মোস্তাহাব বা উত্তম যে, সে তার বাম পায়ের উপরে বসবে এবং তার ডান পা খাড়া করে রাখবে আর তার দুই হাত তার দুই ঊরুর উপরে হাঁটুর দিকে রাখবে।
নামাজে বসার পদ্ধতি
সমস্ত নামাজে বসার মোস্তাহাব বা উত্তম পদ্ধতি হলো এই যে, উল্লিখিত নিয়ম মোতাবেক বাম পায়ের উপরে বসবে এবং ডান পা খাড়া করে রাখবে আর দুই হাত দুই ঊরুর উপরে হাঁটুর দিকে রাখবে। কিন্তু শেষ তাশাহহুদে বসার উত্তম পদ্ধতি হলো এই যে, ডান পা খাড়া করে রাখবে এবং তার নীচ দিয়ে বাম পা বের করবে আর মেঝের উপরে বসবে।
১৬। মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি দুই সিজদার মাঝে পাঠ করবে: " رَبِّ اغْفِرْ لِي". অর্থ: “হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন”। এই জিকিরটি তিনবার পাঠ করা মোস্তাহাব বা উত্তম।
১৭। তারপর মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি প্রথম সিজদার মতোই দ্বিতীয় সিজদা করবে।
১৮। তারপর মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি দ্বিতীয় সিজদা থেকে আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে উঠবে।
১৯। তারপর মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি প্রথম রাকাতের মতোই দ্বিতীয় রাকাআত নামাজ পড়বে।
২০। তারপর মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি দ্বিতীয় রাকাআতের দ্বিতীয় সিজদা করার পর তাশাহ্হুদের জন্য বসে যাবে। দুই সিজদার মাঝে যেমনভাবে বসতে হয়, ঠিক সেই রকমভাবেই বসবে। এবং কাবা ঘরের দিকে শাহাদাত বা তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করবে আর বলবে: "اَلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، اَلسَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أنْ لَّا إلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ". অর্থ: “যাবতীয় মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদতসহ সমস্ত নামাজ ও পবিত্র কর্ম এবং সকল প্রকারের বড়ত্ব মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব মহান আল্লাহর জন্য। হে নাবী! আপনার জন্য আল্লাহর শান্তি, করুণা ও কল্যাণ নির্দিষ্ট হোক। আর আমাদের জন্য এবং আল্লাহর সমস্ত ন্যায়পরায়ণ মানুষের জন্যও শান্তি নির্ধারিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর সুপ্রিয় ব্যক্তি ও তাঁর বার্তাবহ রাসূল” ।
২১। নামাজ যদি দুই রাকাআত বিশিষ্ট হয় যেমন:- ফজরের নামাজ, তাহলে এই নিয়ম ও পদ্ধতিতে দরূদে ইবরাহিমি পাঠ করবে: "اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ ". অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে সম্মানিত করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে যে সম্মান বা মর্যাদা প্রদান করেছেন, সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের সম্মান বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত”। অতঃপর মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি সালাম ফিরাবে। আর এর বিবরণ পরে আসছে। আর নামাজ যদি তিন বা চার রাকাআত বিশিষ্ট হয়, তাহলে সে তার বাকি নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে। তবে সে তৃতীয় এবং চতুর্থ রাকাআতে শুধুমাত্র সূরা আল ফাতেহা পাঠ করবে।
২২। তারপর মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি শেষ রাকাআতের দ্বিতীয় সিজদা করার পর শেষ তাশাহ্হুদের জন্য বসে যাবে। আর শেষ তাশাহহুদে বসার উত্তম পদ্ধতি হলো এই যে, ডান পা খাড়া করে রাখবে এবং তার নীচ দিয়ে বাম পা বের করবে আর মেঝেতে নিতম্বের উপরে বা পাছার উপরে বসবে। এরপর প্রথম তাশাহহুদে বলেছে, তা আবার বলবে আর দরূদে ইবরাহিমি পাঠ করবে: "اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ ". (صحيح البخاري, رقم الحديث 3370، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 66 - (406)،). অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে এমনভাবে সম্মানিত করুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে সম্মানিত করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে এবং তাঁর অনুসরণকারীগণকে যে সম্মান বা মর্যাদা প্রদান করেছেন, সে সম্মান বা মর্যাদা এমনভাবে বলবৎ রাখুন, যেমনভাবে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের সম্মান বা মর্যাদা বলবৎ রেখেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মহিমান্বিত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং 3370 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 66 - (406), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।
তারপর মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির জন্য এই দোয়াটি পাঠ করা মোস্তাহাব বা উত্তম: اَللَّهُمَّ! إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ". অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করি জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ডের শাস্তি হতে, কবরের শাস্তি হতে, জীবন ও মরণের অমঙ্গল হতে এবং মাসীহ দাজ্জালের অমঙ্গলজনক পরীক্ষা হতে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 128 -(588) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1377, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
২৩। অতঃপর মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি প্রথমে তার ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে বলবে: "اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ". “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” অর্থ: “মহান আল্লাহ আপনাদেরকে আপনাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে রক্ষা করুন। এবং আপনাদের জন্য সর্ব প্রকারের শান্তি ও আল্লাহর করুণা নির্ধারিত হোক”। অতঃপর তার বাম দিকে মুখ ফিরিয়ে বলবে: "اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ". “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” অর্থ: “মহান আল্লাহ আপনাদেরকে আপনাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে রক্ষা করুন। এবং আপনাদের জন্য সর্ব প্রকারের শান্তি ও আল্লাহর করুণা নির্ধারিত হোক”। এই নিয়মে নামাজ আদায়কারী মুসলিম ব্যক্তি বা মুসাল্লি তার নামাজের কাজ শেষ করবে। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "وَتَحْرِيْمُهَا التَّكْبِيرُ، وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيْمُ". (سنن أبي داود, رقم الحديث 61, وجامع الترمذي, رقم الحديث 3, وسنن ابن ماجه, رقم الحديث 275, قَالَ الإمام الترمذي: هذا حديث بأنه: أصح شيءٍ في هذا الباب وأحسن, وحسنه الألباني وصححه). “নামাজে প্রবেশ করার বাণী হলো: আল্লাহু আকবার (اَللَّهُ أَكْبَرُ অর্থাৎ আল্লাহ সবচেয়ে বড়ো ও সর্বশ্রেষ্ঠ( বলা। এবং নামাজ থেকে বের হওয়ার বাণী হলো: (اَلسَّلاُمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ) “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” অর্থ: “মহান আল্লাহ আপনাদেরকে আপনাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে রক্ষা করুন। এবং আপনাদের জন্য সর্ব প্রকারের শান্তি ও আল্লাহর করুণা নির্ধারিত হোক”। বলা বা পাঠ করা। [সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 61, জামে তিরমিযী, হাদীস নং 3 এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 275, ইমাম তিরমিযী এই হাদীসটিকে এই অধ্যায়ের অত্যাধিক বিশুদ্ধ বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে হাসান সহীহ (সুন্দর সঠিক) বলেছেন]। এর সার কথা হলো এই যে, প্রথম তাকবির দিয়ে নামাজে প্রবেশ করতে হয় এবং সালাম ফিরিয়ে নামাজ থেকে বের হতে হয়।
২৪। ফরজ নামাজের সালাম ফিরানোর পর মুসল্লি বা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির জন্য পাঠ করা মোস্তাহাব বা উত্তম:
সে ব্যক্তি সূরা ফাতেহা আরবীতে মুখস্ত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করবে। যেহেতু এই সূরাটি ছাড়া নামাজ সঠিক হয়না। তদ্রূপ সে নামাজের ফরজ জিকির ও দোয়া মুখস্থ করার জন্য চেষ্টা করবে। আর নামাজের ফরজ জিকির ও দোয়ার মধ্যে পড়ছে সূরা ফাতেহা, তাকবীর বা আল্লাহু আকবার বলা। এরপর "سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ". "رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ". "سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ". "سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى". "رَبِّ اغْفِرْ لِي". আর তাশাহহুদ এবং আল্লাহর রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠ করার বাক্যগুলি আর সালাম ফিরানো শব্দগুলি।
অতএব যে ব্যক্তি সূরা ফাতেহা এবং নামাজে পঠনীয় দোয়া জানেনা, সে ব্যক্তি সেগুলি মুখস্ত করার চেষ্টা করবে। আর সে যে সমস্ত তাসবিহ তাহমিদ ও তাকবির জানে অথবা যে আয়াতটি তার মুখস্ত আছে, সেটি বার বার পাঠ করবে। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন: (فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ)، سورة التغابن، جزء من الآية 16. ভাবার্থের অনুবাদ: “সুতরাং হে ইমানদার মুসলিম সমাজ! তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো শ্রদ্ধা সহকারে আল্লাহকে সকল ক্ষেত্রে মেনে চলো এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করো আর তাঁর শাস্তি থেকে বেঁচে থাকো তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে এবং তার অবাধ্যতাকে এড়িয়ে চলার মাধ্যমে”। (সূরা আত্তাগাবুন, আয়াত নং ১৬ এর অংশবিশেষ)।
নওমুসলিম বা নবদীক্ষিত মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য ও করণীয় কাজ হলো এই যে, সে নিজের ক্ষমতানুযায়ী জামাআতের সাথে নামাজ পড়ার জন্য পুরো চেষ্টা করবে। যেহেতু ইমাম মুক্তাদিগণের কিছু ত্রুটি বহন করে থাকে।