মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় জামাতের সহিত নামাজ পড়া
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ পুরুষদেরকে জামাআতের সাথে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ পড়ার আদেশ প্রদান করেছেন। আর জামাআতের সহিত নামাজ পড়ার মহা মর্যাদা রয়েছে। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "صَلاَةُ الْجَمَاعَةِ تَفْضُلُ صَلاَةَ الْفَذِّ بِسَبْعٍ وَّعِشْرِيْنَ دَرَجَةً". (صحيح البخاري، رقم الحديث 645، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 250- (650)،). অর্থ: “জামাআতের সহিত নামাজ পড়া, একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে সাতাশ গুণ বেশি উত্তম”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৫ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫০ - (৬৫০), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে] ।
জামাআতের মধ্যে সবচেয়ে ছোটো জামাআত হলো দুই জনের জামাআত: একজন ইমাম এবং একজন মুকতাদি। আর জামাআত যতো বড়ো হবে, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কাছে ততোই বেশি প্রিয় হবে।
ইমামের একতেদা করে নামাজ পড়ার অর্থ
মুকতাদি তার নিজের নামাজকে তার ইমামের সাথে সংযুক্ত করবে। অতএব সে তার ইমামের রুকু ও সিজদায় তাকে অনুসরণ করে এবং তার তিলাওয়াত শুনবে আর সে তার ইমামের আগে কোনো কাজ করবে না বা তার বিপরীত কোনো কাজ করবে না। বরং সে তার ইমামের কাজের পরে কাজ করবে।
ইমামের অনুসরণ করা
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: ইমাম এজন্যই নিয়োগ করা হয়, যেন তার অনুসরণ করা হয়। কাজেই ইমামের তাকবির বলার পর তোমরা তাকবির বলবে। ইমাম তাকবির না বলা পর্যন্ত তোমরা তাকবির বলবে না। ইমাম রুকুতে গেলে তোমরা রুকু করবে। ইমাম রুকুতে না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা রুকু করবে না। ইমাম "سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ". “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’’ অর্থ: “আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে, আল্লাহ তার প্রার্থনা গ্রহণ করেন”। বললে তোমরা বলবে: "اَللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ". “আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ’’ অর্থ: “হে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ! আমরা আপনার আনুগত্য করেছি আর আপনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা”। ইমাম সিজদা করলে তোমরাও সিজদা করবে। ইমাম সিজদা না করা পর্যন্ত তোমরা সিজদা করবে না”। (বুখারি 734, মুসলিম 411, আবু দাউদ 603, এবং শব্দটি তার)।
ইমামতি করার জন্য অধিক প্রাধান্য লাভকারী ব্যক্তি হবে সেই ব্যক্তি, যে ব্যক্তি কুরআন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান রাখে এবং কুরআন বেশি ভালো করে পাঠ করতে পারে আর কুরআন সবচেয়ে বেশি মুখস্থ রাখে। তারপর যে ব্যক্তি বেশি উত্তম ও বেশি জ্ঞান রাখে। তারপর যে ব্যক্তি বেশি জ্ঞান রাখে। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "يؤم القوم أقرؤهم لكتاب الله، فإن كانوا في القراءة سواء فأعلمهم بالسنة.." (مسلم 673). অর্থ: “ইমামতি করার জন্য অধিক প্রাধান্য লাভকারী ব্যক্তি হবে সেই ব্যক্তি, যে ব্যক্তি কুরআন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান রাখে এবং কুরআন বেশি ভালো করে পাঠ করতে পারে আর কুরআন সবচেয়ে বেশি মুখস্থ রাখে। তাতে সবাই সমান হলে যে ব্যক্তি হাদীসের বেশি জ্ঞান রাখে সে ব্যক্তি ইমামতি করার জন্য অধিক প্রাধান্য লাভকারী ব্যক্তি হবে”। (মুসলিম 673)।
ইমামের উচিত যে তিনি সমস্ত কাতারের আগে দাঁড়াবেন। এবং মুক্তাদিগণ তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবেন। প্রথম কাতারটি তারা আগে পূর্ণ করবেন। অতঃপর পরের কাতারটি পূর্ণ করবেন। আর মুক্তাদি যদি একজন পুরুষ হন, তাহলে তিনি ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবেন।
নামাজের কিছু অংশ ছুটে যাওয়ার পর যে ব্যক্তি ইমামের সাথে নামাজে প্রবেশ করবে, সে ব্যক্তি ইমামের সাথে নামাজ পড়বে যতক্ষণ পর্যন্ত সেই ইমাম সালাম না ফিরাবেন। তার পর সে তার ছুটে যাওয়া বাকি নামাজ পূর্ণ করবে। আর নামাজ শুরু করার সময় ইমামের সাথে সে যে নামাজ পেয়েছে, সেই নামাজ হবে তার নামাজের প্রথমাংশ। আর তার পরে সে তার ছুটে যাওয়া নামাজের অংশ পূর্ণ করবে, আর সেই অংশ হবে তার নামাজের শেষাংশ।
যে ব্যক্তি ইমামের সাথে রুকূ করতে পারবে, সে ব্যক্তি এই রুকূ পাওয়ার কারণে পূর্ণ রাকাআত পেয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি ইমামের সাথে রুকূ করতে পারবে না, সে ব্যক্তির এই রাকাআত এবং পূর্বের সমস্ত রাকাআত ছুটে যাবে। কিন্তু সে ইমামের সাথে নামাজে প্রবেশ করবে এবং ইমাম যখন সালাম ফিরাবেন, তখন সে তার সাথে ছুটে যাওয়া বাকি নামাজ পূর্ণ করবে।
ইমামের সাথে যে ব্যক্তির নামাজের প্রথমাংশ ছুটে যাবে, সে ব্যক্তির কয়েকটি উদাহরণ।
যে ব্যক্তি ইমামের সাথে ফজরের দ্বিতীয় রাকাআত পাবে, ইমামের সালাম ফিরানোর পর সে তার ছুটে যাওয়া বাকি নামাজ পূর্ণ করবে। এবং তার ছুটে যাওয়া বাকি নামাজ পূর্ণ না করা পর্যন্ত সে সালাম ফিরাবে না। যেহেতু ফজরের ফরজ নামাজ হলো দুই রাকাআত। আর সে তাতে থেকে মাত্র এক রাকাআতই ইমামের সাথে পেয়েছে
যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজে ইমামের সাথে শেষ তাশাহহুদ পাবে, ইমামের সালাম ফিরানোর পর সে তার ছুটে যাওয়া পূর্ণ তিন রাকাআত নামাজ অবশ্যই পড়বে। যেহেতু সে ইমামের সাথে শুধুমাত্র শেষ তাশাহহুদ পেয়েছে। অথচ ইমামের সাথে রুকূ করতে পারলে, এই রুকূ পাওয়ার কারণে পূর্ণ রাকাআত নমিাজ পেয়ে যেতো।
যে ব্যক্তি জোহরের নামাজে ইমামের সাথে তৃতীয় রাকাআতের রুকু পেয়ে যাবে, সে ব্যক্তি ইমামের সাথে দুই রাকাআত নামাজ পেয়ে যাবে। আর এই দুই রাকাআত নামাজ মুক্তাদির জন্য হবে জোহরের নামাজের প্রথমাংশের দুই রাকাআত নামাজ। সুতরাং ইমামের সালাম ফিরানোর পর সে তার ছুটে যাওয়া বাকি দুই রাকাআত নামাজ তৃতীয় রাকাআত এবং চতুর্থ রাকাআত পূর্ণ করবে। কেননা জোহরের ফরজ নামাজ হলো মাত্র চার রাকাআত নামাজ।