মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই, এই কথার সাক্ষ্য প্রদান করা।
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের এই পবিত্র বাণী: "لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ". উচ্চারণ: লাইলাহা ইল্লাল্লাহু । অর্থ: “আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো প্রকৃত উপাস্য নেই”। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম এই পবিত্র বাণীকে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা প্রদান করেছে এবং সবচেয়ে বেশি সম্মানিত করেছে।
“লাইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাঠ করার মর্যাদা।
সুতরাং এই পবিত্র বাণী: “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ” হলো সর্বশ্রেষ্ঠ দায়িত্ব এবং সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য।
পবিত্র বাণী “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর অর্থ
"لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ". “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ” অর্থ: “আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো প্রকৃত উপাস্য নেই”। এই পবিত্র বাণী দ্বারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই বলে ঘোষণা করা হয়। এবং এর দ্বারা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ সত্য উপাস্য হওয়ার বিষয়টিকে গ্রহণ করার হয়। আর প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য বস্তু বা ব্যক্তিকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করার বিষয়টিকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান ও সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা হয়। সুতরাং সত্য উপাস্য হলেন প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ। তিনি এক ও অদ্বিতীয় অতএব তাঁর কোনো অংশীদার নেই।
ইলাহ শব্দের সাধারণ অর্থ: ইলাহ বা উপাস্য অথবা আরাধ্য বলা হয় সেই সত্তাকে, যে সত্তার বশ্যতা স্বীকার করে মানুষের হৃদয়সমূহ, যে সত্তার সম্মান করে মানুষের হৃদয়সমূহ, যে সত্তার কাছে আকাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করে মানুষের হৃদয়সমূহ এবং যে সত্তাকে ভয় করে মানুষের হৃদয়সমূহ আর যে সত্তার করুণা লাভের আশা করে মানুষের হৃদয়সমূহ। সুতরাং যখন কোনো ব্যক্তি কোনো সত্তার বশ্যতা স্বীকার করে, তার কাছে আত্মসমর্পণ করে, তাকে ভালোবাসে এবং তার কাছ থেকে আকাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু পাওয়ার জন্য আশাবান হয়, তখন সে ব্যক্তি সেই সত্তাকে আসলে নিজের জন্য উপাস্য বা আরাধ্য অথবা ইলাহ বলে বিশ্বান করে বা ইলাহ বানিয়ে নেয়। তবে জেনে রাখতে হবে যে, সর্বশক্তিমান প্রকৃত মঙ্গলদায়ক প্রতিপালক এবং প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ ছাড়া সকল প্রকারের উপাস্য বা আরাধ্য অথবা ইলাহ হলো বিলকূল বাতিল ও বর্জনীয় বস্তু।
সুতরাং মহান আল্লাহ নিশ্চয় সত্য উপাস্য, তিনি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। তাই তিনি ব্যতীত উপাসনার কোনো ন্যায্য অধিকারীও নেই। অতএব তিনিই কেবলমাত্র সমস্ত উপাসনার সত্য অধিকারী। আর হৃদয়সমূহ শুধুমাত্র তাঁরই উপসনা করে তাঁর ভালোবাসার সহিত, তাঁর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সহিত, তাঁর বশ্যতা স্বীকার করার সহিত, তার কাছে আত্মসমর্পণ করার সহিত, তাঁর ভয়ে ভীত হয়ে, তাঁর প্রতি ভরসা রেখে তাঁর কাছ থেকে আকাঙ্ক্ষিত বস্তু লাভের জন্য এবং তাঁর সাহায্যের জন্য তাঁরই নিকটে অনুগ্রহ প্রার্থনা করার সহিত, তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যের নিকটে প্রার্থনা না করার সহিত, তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যের প্রতি ভরসা না রাখার সহিত, তাঁরই সন্তুষ্টি লাভের জন্য নামাজ পড়ার সহিত এবং তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যের সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোনো জন্তু জবাই না করার সহিত কেবল মাত্র তাঁরই ইবাদত বা উপাসনা করা অপরিহার্য। সুতরাং সকল প্রকারের ইবাদত বা উপাসনায় সেই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠতা নির্ধারিত করা ও সাব্যস্ত করা অপরিহার্য কর্তব্য। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَمَا أُمِرُوْا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ)، سورة البينة، جزء من الآية 5. ভাবার্থের অনুবাদ: “আর সকল জাতির মানব সমাজকে এটাই আদেশ প্রদান করা হয়েছে যে, তারা যেন আল্লাহর উপাসনা করার সাথে সাথে তাঁর আনুগত্য করে একনিষ্ঠতার সহিত”। (সূরা বাইয়েনা, আয়াত নং 5 এর অংশবিশেষ)।
আর যে ব্যক্তি পবিত্র বাণী “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর দাবি মোতাবেক একনিষ্ঠতার সহিত প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা করবে, সে ব্যক্তি পরমানন্দময় জীবন লাভ করবে এবং তার জীবনে সদাসর্বদা বিরাজ করবে সুখশান্তি ও সর্ব প্রকারের কল্যাণ। আর জেনে রাখতে হবে যে, মনের প্রকৃত আনন্দ ও শান্তি কেবলমাত্র প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর একত্ব বজায় রেখে তাঁরই ইবাদত বা উপাসনার মাধ্যমে লাভ হয়। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً)، سورة النحل، جزء من الآية 97. ভাবার্থের অনুবাদ: “যারা মহান আল্লাহ ও তদীয় বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদের প্রতি প্রকৃত নিষ্ঠাবান হয়ে নিজেদের অন্তরে ঈমান স্থাপন করবে এবং প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক সৎকর্ম করবে, তারা পুরুষ হোক অথবা নারী হোক, আমি তাদেরকে পরম সুখের ও পরমানন্দের পবিত্র জীবন প্রদান করবো”। [সূরা আন নাহাল, আয়াত নং ৯৭ এর অংশবিশেষ)।
"لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ". “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ” অর্থ: “আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো প্রকৃত উপাস্য নেই”। এর স্তম্ভসমূহ:
সকল প্রকারের ইবাদত বা উপাসনা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর জন্য সুপ্রতিষ্ঠিত করা অপরিহার্য। সুতরাং যে ব্যক্তি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো বস্তু বা ব্যক্তির জন্য কোনো একটি ইবাদত বা উপাসনা সম্পাদন করবে, সে ব্যক্তি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর অংশীদার স্থাপন করার পাপে পতিত হবে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَمَنْ يَّدْعُ مَعَ اللهِ إِلَهًا آَخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُوْنَ)، سورة المؤمنون، الآية 117. ভাবার্থের অনুবাদ: “যে ব্যক্তি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনায় অন্য কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে শরিক করবে বিনা কোনো দলিলে, তার এই কৃতকর্মের ফল হিসেবে তার প্রতিপালকের কাছে পরকালে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। আর প্রকৃত ইসলাম ধর্ম প্রত্যাখ্যানকারীরা পরকালে কোনো দিন জান্নাত বা স্বর্গ লাভ করতে পারবে না”। [সূরা আল মুমিনুন, আয়াত নং ১১৭)।
"لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ". “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর অর্থ: “আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো প্রকৃত উপাস্য নেই”। এবং রুকন বা স্তম্ভসমূহ মহান আল্লাহ এই পবিত্র বাণীর মধ্যে রয়েছে: (فَمَن يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى)، سورة البقرة، جزء الآية 256. ভাবার্থের অনুবাদ: “প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর উপাসনা বাদে যে সমস্ত প্রতিমা, মূর্তি, বস্তু বা ব্যক্তি অথবা অপশক্তির উপাসনা করা হয়, যে সমস্ত প্রতিমা, মূর্তি, বস্তু বা ব্যক্তি অথবা অপশক্তির উপাসনা যে ব্যক্তি প্রত্যাখ্যান করবে এবং প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহকে সত্য উপাস্য হিসেবে সঠিকভাবে বিশ্বাস করবে, সে এমন একটি সত্য সঠিক ন্যায়সঙ্গত কল্যাণকর ধর্ম প্রকৃত ইসলামের অনুগামী হতে পারবে যে, সেই ন্যায়সঙ্গত কল্যাণকর ধর্ম প্রকৃত ইসলামের দ্বারা জাহান্নাম বা নরক থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং নিশ্চিতভাবে চিরস্থায়ী পরমানন্দের জীবন লাভ করার পবিত্র ধাম জান্নাত বা স্বর্গ লাভ করা যাবে।”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং 256 এর অংশবিশেষ)। “লাইলাহা” অর্থ: “কোনো প্রকৃত উপাস্য নেই”। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহ ব্যতীত প্রত্যেক উপাস্যকে প্রত্যাখ্যান করা হলো “লাইলাহা” প্রথম স্তম্ভ। এবং প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস স্থাপন করা হলো “ইল্লাল্লাহ” দ্বিতীয় স্তম্ভ।