মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর জীবনচরিত।
প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির অপরিহার্য কর্তব্য হলো এই যে, সে যেন আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর জীবনচরিত সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণের জ্ঞান লাভ করে। যাতে সে জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁর অনুসরণ করতে পারে। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর জীবনচরিত ছিলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষার ও নিয়মকানুন বা বিধিবিধানের বাস্তবরূপ। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيْرًا)، سورة الأحزاب، الآية 21. ভাবার্থের অনুবাদ: “যারা আল্লাহর করুণার আশা রাখে এবং মৃত্যুবরণ করার পরে পরকালে সুখশান্তিপূর্ণ মঙ্গলময় জীবন লাভের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদের জীবনযাত্রার প্রণালীর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ”। (সূরা আল আহযাব, আয়াত নং ২১)।
১। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বংশ পরিচয়।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বংশ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোৎকৃষ্ট। তিনি হলেন মুহাম্মদ, তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ, তাঁর পিতা আব্দুল মুত্তালিব, তাঁর পিতা হাশিম, তাঁর পিতা আব্দ মানাফ, তাঁর পিতা কুসাই, তাঁর পিতা কিলাব, তাঁর পিতা মুর্রাহ, তাঁর পিতা কায়াব, তাঁর পিতা লুই, তাঁর পিতা গালিব, তাঁর পিতা ফেহের, তাঁর পিতা মালিক, তাঁর পিতা আন্নাদার, তাঁর পিতা কিনানা, তাঁর পিতা খুজাইমা, তাঁর পিতা মুদরিকা, তাঁর পিতা ইলইয়াস, তাঁর পিতা মুদার, তাঁর পিতা নিজার, তাঁর পিতা মায়াদ্দ, তাঁর পিতা আদনান আর আদনান হলেন ইসমাইল (আলাইহিস সালাম) এর সন্তান।
২। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মাতাপিতার পরিচয়।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর পিতার নাম হলো আব্দুল্লাহ, তাঁর পিতা আব্দুল মুত্তালিব, তাঁর পিতা হাশিম। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন তাঁর মায়ের গর্ভে ছিলেন, তখন তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মাতার নাম হলো আমিনা, তাঁর পিতা ওয়াহাব, তাঁর পিতা আব্দ মানাফ তাঁর পিতা হলেন জুহরাহ ।
৩। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর তাঁর জন্মের বিবরণ।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হাতিবাহিনীর ঘটনার বছর রবিউল আউয়াল মাসে সোমবার জন্মগ্রহণ করেন।
৪। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] শিশুকালে যে সমস্ত মহিলার স্তনের দুধ পান করেছেন, তার বিবরণ:
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] শিশুকালে কিছুদিন ধরে আবু লাহাবের দাসী সুয়াইবার দুধ পান করেছিলেন। অতঃপর তাঁকে সাদ বংশে দুধ পান করানো হয় সুতরাং হালিমা আস্সায়াদিয়াহ তাঁকে দুধ পান করান এবং তার কাছে তিনি শিশুকালে চার বছর ধরে থাকেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তাঁর বুক চিরে তাঁর হৃদয় অপারেশন করা হয় এবং তাঁর হৃদয় থেকে কুপ্রবৃত্তি এবং শয়তানের প্রভাবের অংশটিকে অপসারিত করা হয়। এই ঘটনার পরই হালিমা শিশু মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে তাঁর মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর শৈশবাবস্থা এবং তরুণতা।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নাবী হওয়ার পূর্বের কর্ম।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নাবী হওয়ার পূর্বের জীবনচরিত ছিলো পুণ্যময় সম্মানিত ও পবিত্র। তাই তাঁর জীবনচরিতে কোনো প্রকারের অশিষ্টতা ও অভদ্রতার লেশ নেই। মহান আল্লাহর সযত্নে তিনি প্রতিপালিত হয়েছেন এবং বড়ো হয়েছেন। তাঁকে মহান আল্লাহ জাহেলিয়াতের বা প্রাগ-ইসলামী যুগের বর্বরতা ও নোংরামি থেকে রক্ষা করেছেন। সুতরাং তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে আচরণের দিক দিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ, সচ্চরিত্রের দিক দিয়ে সর্বোত্তম, বংশের দিক দিয়ে সর্বোৎকৃষ্ট, প্রতিবেশীর সবচেয়ে বেশি মহৎ, সহনশীলতার দিক দিয়ে মহানুভব, কথাবার্তার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড়ো সত্যবাদী এবং আমানত রক্ষা করার দিক দিয়ে সব চেয়ে বেশি ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। আর তিনি সকল প্রকারের অশ্লীলতা ও অসচ্চরিত্রের বহু ঊর্ধ্বে ছিলেন। তাই তিনি সকলের কাছে বিখ্যাত ছিলেন আস্সাদিক বা সত্যবাদী এবং আলআমীন বা বিশ্বাসভাজন আমানতদার হিসেবে।
৬। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর স্ত্রীগণ
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর পঁচিশ বছর বয়সে খাদিজাকে বিয়ে করেছিলেন। যখন তিনি খাদিজার বাণিজ্যের কাজে মাইসারাকে সাথে নিয়ে শাম দেশে গিয়েছিলেন তখন। কেননা মাইসারা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সততা, আমানত রক্ষা করার বিশিষ্টতা ও মাহাত্ম্য দেখে অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত ও বিস্মিত হয়েছিলেন। তাই তিনি যখন শাম দেশে বাণিজ্যের কাজ শেষ করে ফিরে এসেছিলেন, তখন তিনি তাঁর মালিক খাদিজাকে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সততা, আমানত রক্ষা করার বিশিষ্টতা ও মাহাত্মের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাই খাদিজা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আর খাদিজা ছিলেন আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রথম বিয়ের প্রথম স্ত্রী। খাদিজা যত দিন জীবিতা ছিলেন, ততো দিন আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আর অন্য কোনো মহিলাকে বিবাহ করেননি। ইবরাহিম ছাড়া আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সমস্ত সন্তানের মা ছিলেন খাদিজা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] । হিজরতের তিন বছর পূর্বে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর স্ত্রীগণের নাম।
৭। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সন্তান
সঠিক মত মোতাবেক আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সন্তানের সংখ্যা হলো সাতজন: (তিনজন পুরুষ ও চারজন মহিলা)।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর পুরুষ সন্তান ছিলো তিনজন: ১। আল-কাসিম, যার সাথে তাঁর ডাকনাম ছিলো আবুল কাসিম বলে। আর আল-কাসিম মাত্র কয়েকদিন বেঁচে ছিলেন। ২। আবদুল্লাহ, যার ডাকনাম ছিলো আত্তাহির এবং আত্তাতাইয়েব। ৩। অতঃপর ইবরাহিম।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর পুরুষ সন্তান ছিলো তিনজন: ১। আল-কাসিম, যার সাথে তাঁর ডাকনাম ছিলো আবুল কাসিম বলে। আর আল-কাসিম মাত্র কয়েকদিন বেঁচে ছিলেন। ২। আবদুল্লাহ, যার ডাকনাম ছিলো আত্তাহির এবং আত্তাতাইয়েব। ৩। অতঃপর ইবরাহিম। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কন্যা ছিলো চারজন: জায়নাব, ইনি তাঁর কন্যাদের মধ্যে সব চেয়ে বড়ো ছিলেন, অতঃপর ছিলেন: রুকাইয়া তারপর ছিলেন: উম্মু কুলসুম এবং শেষের কন্যা ছিলেন ফাতিমা। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সমস্ত কন্যা ছিলেন তাঁর স্ত্রী, উম্মুল মুমেনীন খাদিজা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] এর পেট থেকে। আর ইবরাহিম ছিলেন আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর উপপত্নী মারিয়া আলকিবতীর পেট থেকে। আলমুকাওকিস সম্রাট মারিয়া কিবতীকে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর জন্য উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন।