শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় আর্থিক লেনদেনে প্রকৃত ইসলামের চারিত্রিক আদবকায়দা

এই অনুচ্ছেদে আমরা আর্থিক লেনদেনে প্রকৃত ইসলামের চারিত্রিক জরুরি ‎আদবকায়দার জ্ঞানলাভ করতে পারবো।

  • প্রকৃত ইসলামের আলোকে আর্থিক লেনদেনের ভাবার্থ জানা।
  • আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রকৃত ইসলামের বৈশিষ্ট্যের উদ্ভাস।
  • আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রকৃত ইসলামের আলোকে জরুরি আদবকায়দার উদ্ভাস।

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ‎আছে সচ্চরিত্রের বিষয়টি। আর প্রকৃত ইসলামের আর্থিক ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‎বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে চারিত্রিক পবিত্রতা ও নৈতিক মূল্যবোধ। এই ‎চারিত্রিক পবিত্রতা ও নৈতিক মূল্যবোধের উপরে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রকৃত ইসলামের ‎আর্থিক ব্যবস্থা। প্রকৃত ইসলামের আর্থিক ব্যবস্থা এই বৈশিষ্ট্যের কারণে অন্যান্য আর্থিক ‎ব্যবস্থা হতে পৃথক হয়ে যায়। ‎

প্রকৃত ইসলাম ধর্মে আর্থিক লেনদেনের কর্মবিধি

প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক বৈধ বা হালাল ধনসম্পদ এবং জীবিকা উপার্জন ‎‎করার সমস্ত কর্ম ও পদক্ষেপই হলো আর্থিক কর্মবিধি। আর সকল প্রকারের আর্থিক ‎কর্মবিধির মধ্যে রয়েছে ‎সমস্ত আর্থিক চুক্তি এবং অর্থ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা ও অধিকার। ‎যেমন ক্রয়বিক্রয়, ভাড়া, কোম্পানি এবং অন্যান্য চুক্তি। ‎ প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক আর্থিক কার্যবিধির বিধান হলো মানুষের আর্থিক ও ‎অর্থনৈতিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করার কর্মবিধি।

প্রকৃত ইসলাম ধর্মে আর্থিক লেনদেনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

١
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান প্রতিপালক আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা; আর বৈধ বা হালাল ‎ধনসম্পদ এবং জীবিকা উপার্জন ‎করার জন্য পৃথিবীতে বিরাজ করার আদেশ পালন করা। ‎যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏(هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُوْلًا فَامْشُوْا فِيْ مَنَاكِبِهَا وَكُلُوْا مِن رِّزْقِهِ ۖ وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ)، سورة الملك، الآية 15.‏ ‎ ‎ ভাবার্থের অনুবাদ: “প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান প্রতিপালক আল্লাহই এই পৃথিবীকে ‎তোমাদের উপযোগী ও সুগম করে দিয়েছেন এবং তোমাদের অধীনে রেখে দিয়েছেন; অতএব ‎তোমরা তার দিগ্বিদিকে ছড়িয়ে পড়ো এবং তাঁর প্রদত্ত ধনসম্পদ এবং জীবিকা উপার্জন ‎করো ‎আর আহার করো। এবং জেনে রাখো! তাঁরই কাছে তোমাদেরকে পুনরুজ্জীবিত হয়ে প্রত্যাবর্তন ‎করতে হতে হবে”। (সূরা আল মুলক, আয়াত নং ১৫)।
٢
পার্থিব প্রেয়োজন পূরণের জন্য ও দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য সহজ ও সুবিধাজনক পন্থা ‎অবলম্বন করে বৈধ ধনসম্পদ এবং জীবিকা উপার্জন ‎করা।
٣
প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক বৈধ আর্থিক লেনদেনের কর্মবিধির মাধ্যমে ধনসম্পদ এবং ‎জীবিকা উপার্জন ‎করা এবং অবৈধ ধনসম্পদ এবং জীবিকা উপার্জন ‎করা হতে বিরত থাকার ‎মাধ্যমে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা লাভ করা। যেহেতু এই বিষয়ে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী ‎মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: ‎ ‏"التَّاجِرُ الصَّدُوقُ الأَمِينُ مع النَّبيِّينَ والصِّدِّيقِينَ والشُّهداءِ" (الترمذي 1209).‏ অর্থ: “সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী পরকালে সমস্ত নাবী, সত্যবাদী এবং শহীদের সাথে থাকবে”। ‎‎(তিরমিযী 1209)।
٤
প্রকৃত ইসলামের সেই শিক্ষা মোতাবেক আর্থিক লেনদেনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যে, ‎শিক্ষা সুন্দর সমাজ গড়ে তুলার নিশ্চিতভাবে দায়িত্ব নিয়েছে। আর সেই সুন্দর সমাজ মানব ‎জাতির সকল প্রকারের বিকাশ, উন্নতি এবং সমৃদ্ধির পথ প্রদর্শন করে। ‎
٥
মানব সমাজের প্রয়োজন পূরণ করা। যাতে তারা এর মাধ্যমে মহান ‎আল্লাহর ইচ্ছার বাস্তবায়ন ‎করে এবং তারা তাদের কর্ম ও কথার দ্বারা মহান আল্লাহর নিকটে ‎আত্মসমর্পণ করে। ‎
٦
এই পৃথিবীকে মহান আল্লাহর প্রদত্ত শিক্ষা মোতাবেক ন্যায়পরায়ণতার সহিত আবাদ ও ‎পরিচালিত করা এবং জগদ্বাসীর হিতসাধন ও মঙ্গলসাধন করা। তাই মহান আল্লাহ‏ ‏পবিত্র ‎কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلَائِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ إِنَّ رَبَّكَ ‏سَرِيعُ الْعِقَابِ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَحِيمٌ)، سورة الأنعام، الآية 165.‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আর প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান প্রতিপালক আল্লাহ তোমাদেরকে ‎এই পৃথিবীতে অতীতের মানব জাতির পর তাদের প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আর ‎তোমাদের মধ্যে থেকে অনেক মানুষকে চরিত্র, জ্ঞান, শক্তি, ক্ষমতা এবং ধনসম্পদ বা জীবিকার ‎দিক দিয়ে অনেক মানুষের উপরে উচ্চ মর্যাদা প্রদান করেছেন। যাতে তিনি তোমাদেরকে ওই ‎সমস্ত বিষয়ে পরীক্ষা করেন, যে সমস্ত বিষয় তিনি তোমাদেরকে প্রদান করেছেন। হে বার্তাবহ ‎রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তোমার মহান প্রতিপালক আল্লাহ ওই সমস্ত মানুষকে দ্রুত শাস্তি দিয়ে ‎থাকেন, যারা তাঁর প্রকৃত ইসলাম ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করে। আর তিনি প্রকৃত ইসলাম ধর্মের ‎অনুগামীদের জন্য মহা ক্ষমাবান ও পরম দয়ালু”। (সূরা আনআম, আয়াত নং ১৬৫)।

প্রকৃত ইসলাম ধর্মের আর্থিক লেনদেন ও কার্যবিধির মধ্যে রয়েছে ভারসাম্য। ‎

প্রকৃত ইসলাম হলো সত্য সঠিক ধর্ম। এবং এই ধর্মটি মানব জাতির জন্য ওই সমস্ত ‎বিধিবিধান নিয়ে এসেছে, যে সমস্ত বিধিবিধান তাদের জীবনযাপনের জন্য উপযোগী ‎এবং তাদের জীবনকে সঠিক ও শান্তিদায়ক পথে পরিচালিত করে। যেহেতু এই সত্য ‎সঠিক ধর্মটি মানব জাতির প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কাছ থেকে ‎এসেছে। আর তিনি জানেন যে, মানব জাতির মঙ্গলময় জীবনযাপনের জন্য কী ‎কল্যাণকর ও উপযোগী এবং তাদের জীবনের জন্য কী শান্তিদায়ক ও উপকারী। তাই ‎মহান আল্লাহ‏ ‏পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ)، سورة الملك، الآية 14. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “জেনে রাখা দরকার যে, যিনি সৃষ্টি জগতের সৃষ্টিকর্তা, তিনি সৃষ্টি ‎জগতের সমুদয় বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। আর তিনি সূক্ষ্মজ্ঞানী সম্যক অবগত”। ‎ ‎(সূরা আল মুলক, আয়াত নং ১৪)। প্রকৃত ইসলাম ধর্মে আর্থিক লেনদেন ও কার্যবিধির নিয়মকানুন ও বিধিবিধান হলো ‎অতি মঙ্গলজনক ও আলাদা এবং অন্যান্য আর্থিক লেনদেন ও কার্যবিধির নিয়মকানুন ও ‎বিধিবিধান হলো অন্যরকম। ‎ তাই প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মানব সমাজের জন্য এমন আর্থিক লেনদেনের বিধিবিধান ও ‎নিয়মকানুন নিয়ে এসেছে যে, যাতে মানব সমাজের শারীরিক চাহিদা এবং জাগতিক ‎প্রয়োজন পূরণ করার সদ্বিবেচনা করা হয়েছে এবং এর সাথে সাথে আত্মার চাহিদা ‎এবং পরকালের বিষয়গুলিকেও সামনে রাখা হয়েছে। ‎

প্রথমত:‎‏ ‏জাগতিক দিক, প্রকৃত ইসলাম ধর্মের বিধিবিধান ও নিয়মকানুন মানব সমাজের ‎আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খলিত করে দিয়েছে। যাতে ‎লেনদেনকারীদের মধ্যে ন্যায়নীতি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। আর যাতে তাদেরকে ‎তাদের ন্যায্য অধিকার সম্পূর্ণরূপে প্রদান করা হয় এবং যথেষ্ট পরিমাণে ও পর্যাপ্ত ‎পরিমাণে তারা তাদের প্রাপ্য পেয়ে যায়। আর প্রকৃত ইসলাম ধর্মের বিধিবিধান ও ‎নিয়মকানুন মানব সমাজের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিকে অনেক প্রশস্ত করে দিয়েছে। ‎আর যে সমস্ত বিষয়ে কোনো লেনদেনকারীর ক্ষতি সাধন হবে, সে সমস্ত বিষয়কে ‎হারাম বা অবৈধ করে দিয়েছে। ‎

দ্বিতীয়ত: আধ্যাত্মিক বা ধর্ম মেনে চলার দিক, প্রকৃত ইসলাম ধর্মের সমস্ত বিধিবিধান ‎ও নিয়মকানুনের প্রধান লক্ষ্য হলো প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ‎লাভ করা এবং পরমানন্দের স্থান জান্নাত বা স্বর্গ লাভ করা। এর সাথে সাথে প্রকৃত ‎ইসলাম ধর্মের আর্থিক লেনদেনের বিধিবিধান ও নিয়মকানুনের মাধ্যমে প্রকৃত ইমানদার ‎মুসলিম সমাজে ন্যায়নীতি ও সুবিচার এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন প্রতিষ্ঠিত করা। আর অন্যের ‎হিতার্থে ও মঙ্গলের উদ্দেশ্যে কল্যাণকর উপদেশ প্রদান করা, যেমন:- উদাহরণস্বরূপ ‎বলা যেতে পারে যে, অভাবগ্রস্ত ঋণী ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধ করার জন্য অতিরিক্ত ‎সময় ও সুযোগ দেওয়া এবং যে সমস্ত কর্মকাণ্ডে মানুষের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়, সে ‎সমস্ত কর্মকাণ্ডকে হারাম বা অবৈধ করা যথা সুদের কারবার এবং জুয়া খেলা।

মানুষের ন্যায্য অধিকারের দিক দিয়ে আর্থিক লেনদেন ও কার্যবিধির কতকগুলি বিবরণ

প্রথমত: আদল বা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করা: আর তা হলো আর্থিক লেনদেনকারীদের ‎মধ্যে যেন সকলের অধিকার সুবিচারের সহিত সংরক্ষিত হয়। এবং তাতে যেন ‎কমবেশি না হয়, যেমন, ক্রয়বিক্রিয় করা, ভাড়া দেওয়া ইত্যাদি যেন বাজারের প্রচলিত ‎ন্যায্য মূল্যে বা আসল মূল্যে হয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ)، سورة البقرة، جزء من الآية 275.‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন”।‏ ‏‎(সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ‎‎275 এর অংশবিশেষ)। দ্বিতীয়ত: অন্যের প্রতি অনুগ্রহ করা, আর তা হলো পরোপকার করা বা উপকারসাধন ‎করা, যেমন অভাবগ্রস্ত ঋণী ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধ করার জন্য অতিরিক্ত সময় ও ‎সুযোগ দেওয়া বা তার ঋণ মকুব করা অথবা তার ঋণ মাফ করা। মহান আল্লাহ ‎পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(وَإِنْ كَانَ ذُوْ عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلَى مَيْسَرَةٍ وَأَنْ تَصَدَّقُوْا خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ)، سورة البقرة، الآية 280.‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “যদি ঋণী ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হয়, তাহলে তার সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত ‎তাকে সময় দেওয়া অপরিহার্য। আর যদি তোমরা তাকে ক্ষমা করে দিতে পারো এবং ‎তার ঋণ মকুব দিতে পারো অথবা ঋণ মাফ দিতে পারো, তাহলে তা খুবই উত্তম ‎হতো যদি তোমরা এই বিষয়টির মর্যাদা উপলব্ধি করতে পারতে”।‏ ‏‎(সূরা আল বাকারা, ‎আয়াত নং 2৮০)।‎ তদ্রূপ কোনো শ্রমিকের সাথে নির্দিষ্ট মজুরিতে কাজ করার চুক্তি করে তাকে কিছু বেশি ‎মজুরি প্রদান করা হলো একটি সৎ কর্ম। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে ‎বলেছেন: ‎ ‏(وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ)، سورة البقرة، جزء من الآية 195. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আর যে কোনো কাজে ও আচরণে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো আর ‎অভাবগ্রস্ত মানুষের উত্তম পন্থায় উপকার করো। অবশ্যই মহান আল্লাহ উত্তম পন্থা ‎অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ১৭৫ এর ‎অংশবিশেষ)।

তৃতীয়ত: অবিচার বা অন্যায় ও জুলুম। আর নিজের প্রাপ্য অধিকারের চেয়ে ‎বেশি পরিমাণে কোনো জিনিস গ্রহণ করাকে বা অন্য লোকের ধনসম্পদ বা অর্থ হারাম ‎পন্থায় গ্রহণ করাকে অবিচার বা অন্যায় বলা হয়। যেমন:- সুদ, জুয়া ইত্যাদি। তাই ‎মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏ (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ۖ ‏وَإِن تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَٰلِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ) سورة البقرة، الآية 278-279. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজ! তোমরা আল্লাহকে মেনে চলো ‎ও তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করা হতে বিরত থাকো এবং সুদের কারবারের বাকি বিষয় বর্জন ‎করো, যদি তোমরা প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকো। আর যদি ‎তোমরা সুদের কারবার পরিত্যাগ না করো, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরুদ্ধে ‎যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত থাকো। তবে যদি তোমরা সুদ খাওয়া ছেড়ে দিয়ে তওবা করো, ‎তাহলে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই প্রাপ্য হবে। তোমরা কোনো ব্যক্তির প্রতি ‎অবিচার করবে না এবং তোমাদের প্রতিও কোনো ব্যক্তির পক্ষ থেকে অবিচার করা ‎হবে না।”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ২৭৮-২৭৯)। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন: ‎ ‏"قالَ اللَّهُ: ثَلاثَةٌ أنا خَصْمُهُمْ يَومَ القِيامَةِ: رَجُلٌ أعْطَى بي ثُمَّ غَدَرَ، ورَجُلٌ باعَ حُرًّا فأكَلَ ثَمَنَهُ، ورَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أجِيرًا ‏فاسْتَوْفَى منه ولم يُعطِه أجرَه". ‏ ‏(صحيح البخاري، رقم الحديث 2227).‏ অর্থ: “মহান আল্লাহ বলেছেন: কিয়ামাতের দিন আমি তিন ধরণের লোকের বিরুদ্ধে ‎বাদী হবো। প্রথমত ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবো, যে ব্যক্তি আমার নামে অঙ্গীকার ‎করে এবং পরে সে অঙ্গীকার ভঙ্গ করে। দ্বিতীয়ত ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবো, যে ‎ব্যক্তি কোনো স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করে। আর তৃতীয়ত ওই ‎ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবো, যে ব্যক্তি কোনো শ্রমিকের দ্বারা পূর্ণ কাজ করায়, কিন্তু ‎তাকে তার তার পূর্ণ মজুরী দেয় না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২২৭]। ‎

ইসলামি আর্থিক কার্যবিধি বা লেনদেনে চারিত্রিক বিষয়সমূহের মধ্যে রয়েছে: (১)‎

١
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক বৈধ চুক্তির সংরক্ষণ করা ও সেই চুক্তি মেনে ‎চলা। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ মহান আল্লাহ পবিত্র‎‏‎ কুরআনের মধ্যে বলছেনে:‎ ‏ (يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَوْفُوْا بِالْعُقُوْدِ)، سورة المائدة، جزء من الآية‎ ‎‏1.‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজ! তোমরা তোমাদের ‎পালনর্কতার সাথে ‎বিশ্বাসঘাতকতা করিও না এবং তাঁর সাথে সকল প্রকারের চুক্তির ‎দাবি মোতাবেক ‎ন্যায়পরায়ণতার সহিত তোমরা জীবনযাপন করো আর কোনো প্রকারের চুক্তি তোমরা ভঙ্গ ‎করিও না”। ‎(সূরা আল মায়েদা, আয়াত নং ১ এর অংশবিশেষ)। ‎
٢
আমানতের সংরক্ষণ করা এবং খিয়ানত না করা। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে ‎বলেছেন:‎ ‏(فَلْيُؤَدِّ الَّذِي اؤْتُمِنَ أَمَانَتَهُ وَلْيَتَّقِ اللَّهَ رَبَّهُ)،‏‎ ‎سورة البقرة، جزء من الآية 283. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “কোনো বিশ্বাসিত ব্যক্তির কাছে আমানত রাখা হলে, সে যেন সেই আমানত ‎ফেরত দেয় এবং সদাসর্বদা যেন সে মহান আল্লাহকে মেনে চলে”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত ‎নং ২৮৩ এর অংশবিশেষ)।
٣
সাক্ষ্য গোপন না করা। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ وَمَنْ يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آثِمٌ قَلْبُهُ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ)،‏‎ ‎سورة البقرة، جزء من الآية 283. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করিও না। যে ব্যক্তি সাক্ষ্য গোপন করবে, তার ‎অন্তর পাপে পরিপূর্ণ হবে। আর তোমরা যে সমস্ত কর্ম করবে, সে সমস্ত কর্মের বিষয়ে মহান ‎আল্লাহ সম্যক অবগত”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ২৮৩ এর অংশবিশেষ)।
٤
ক্রয়বিক্রয়ের সময় সততা বজায় রাখা এবং কল্যাণ কামনা করা। আল্লাহর ‎বার্তাবহ ‎রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] দুই ক্রয়বিক্রয়কারীর ‎বিষয়ে ‎বলেছেন:‎ فإنْ صَدَقا وبَيَّنا بُورِكَ لهما في بَيْعِهِما، وإنْ كَتَما وكَذَبا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِما ‏(صحيح مسلم، رقم الحديث 47 - (1532)، واللفظ له، وصحيح البخاري، رقم الحديث 2079).‏ অর্থ: “যদি দুই ক্রয়বিক্রয়কারী তাদের ক্রয়বিক্রয়ের সময় সত্য কথা বলে এবং ‎পণ্যদ্রব্যের প্রয়োজনীয় সমস্ত বিষয় স্পষ্টভাবে অকপটে খুলে বলে, তাহলে তাদের ‎ক্রয়বিক্রয়কে মঙ্গলময় করা হয়। আর যদি তারা ক্রয়বিক্রয়ের সময় পণ্যদ্রব্যের ‎প্রয়োজনীয় সমস্ত বিষয় স্পষ্টভাবে অকপটে খুলে না বলে এবং সত্য কথা না বলে, ‎তাহলে তাদের ক্রয়বিক্রয়কে অমঙ্গলময় করা হয় না”। ‎[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭ -(১৫৩২)‎‏ ‏এবং‏ ‏সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৭৯ ‎তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
٥
ক্রয়বিক্রয়ের সময় পণ্যদ্রব্যের প্রয়োজনীয় সমস্ত বিষয় স্পষ্টভাবে অকপটে খুলে বলা ‎এবং প্রতারণা না করা আর ধোঁকা না দেওয়া। আল্লাহর বার্তাবহ ‎রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎বলেছেন:‎ ‏"وَمَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا".‏ ‏(صحيح مسلم، رقم الحديث 164 - (101)، ).‏ مَن خَدَعَ النَّاسَ بأيِّ صُورةٍ فليس على هَديِ النَّبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ وسُنَّتِه وطَريقتِه অর্থ: “আর যে ব্যক্তি কোনো পন্থায় আমাদেরকে ধোঁকা দিবে, সে ব্যক্তি আমাদের ‎শিক্ষার বাইরে থাকবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৪ - (১০১) ]।

ইসলামি আর্থিক কার্যবিধি বা লেনদেনে চারিত্রিক বিষয়সমূহের মধ্যে রয়েছে: (২)‎

١
সংশয়ের বিষয় বর্জন করা। আর যে বিষয়ে হালাল ও হারামের মধ্যে মানুষের ‎অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি হয়, সেই বিষয়টিকে সংশয়ের বিষয় বলা হয়। আল্লাহর বার্তাবহ ‎রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎ ‏"إنَّ الحلالَ بيِّنٌ، وإنَّ الحرامَ بيِّنٌ، وبينهما ٌ مُشتبِهاتٌ، لا يعلمهنَّ كثيرٌ من الناس؛ فمنِ اتَّقى الشُّبُهاتِ؛ ‏استبرأ لدِينِه وعِرضِه، ومن وقع في الشُّبهاتِ وقع في الحرامِ".‏ ‏(صحيح مسلم، رقم الحديث 107 - (1599)، واللفظ له، وصحيح البخاري، رقم الحديث 52).‏ অর্থ: “অবশ্যই হালাল স্পষ্ট বিষয় এবং হারামও স্পষ্ট বিষয়। আর এই দুইটি বিষয়ের ‎মাঝে রয়েছে অনেক সন্দেহজনক বিষয়। এই সন্দেহজনক বিষয়গুলির ব্যাপারে অনেক ‎লোক কিছুই জ্ঞান রাখে না। তাই যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়গুলি থেকে নিজেকে ‎রক্ষা করতে পারবে, সে ব্যক্তি প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক নিজের জীবন ‎পরিচালিত করতে পারবে এবং নিজের মর্যাদাও রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু যে ব্যক্তি ‎সন্দেহজনক বিষয়গুলিতে নিমজ্জিত হবে, সে ব্যক্তি হারাম বিষয়ের নিকটবর্তী হয়ে ‎যাবে”। ‎[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 107 -(১৫৯৯)‎‏ ‏এবং‏ ‏সহীহ বুখারী, হাদীস নং 52 তবে ‎হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
٢
অন্য লোকের ধনসম্পদ বা অর্থ হারাম পন্থায় গ্রহণ না করা অথবা প্রকৃত ইসলামের ‎শিক্ষা মোতাবেক নিষিদ্ধ ধনসম্পদ বা অর্থ উপার্জন না করা। যেহেতু মহান আল্লাহ ‎পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(وَلَا تَأْكُلُوْا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوْا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوْا فَرِ‌يْقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنْتُمْ ‏تَعْلَمُوْنَ)، سورة البقرة، الآية 188.‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আর হে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে ‎অপরের ধনসম্পদ গ্রাস করবে না। আর জেনেশুনে অন্যায়ভাবে অপরের ধনসম্পত্তির ‎কিছু অংশ হরাম পন্থায় গ্রাস করার উদ্দেশ্যে জজদেরকে বা বিচারকদেরকে বিভ্রান্ত ‎করে বা প্রভাবিত করে তোমরা নিজেদের স্বার্থে জজদের বা বিচারকদের ফয়সালা নিবে ‎না। জজদের বা বিচারকদের রায় এবং ফয়সালার কারণে হারাম ধনসম্পদ বা অর্থ ‎হালাল হয়ে যায় না। যেহেতু তারা বাহ্যিক দলিল প্রমাণ মোতাবেক রায় প্রদান করে ‎এবং ফয়সালা করে”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ১৮৮)।‎
٣
মুসলিম ব্যক্তি অন্য মুসলিমের সাথে এমন সুন্দর আচরণ করবে, যেমন সুন্দর আচরণ ‎সে নিজে তার কাছ থেকে পেতে পছন্দ করে। তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী ‎মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎ ‏"لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيْهِ، مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ".‏‎ ‎ ‏(صحيح البخاري، رقم الحديث13، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 71- (45).‏ অর্থ: “তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত ইমানদার মুসলিম হতে পারবে না, ‎যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য ওই বস্তুটি না পছন্দ করবে, যে বস্তুটি সে ‎নিজের জন্য পছন্দ করে”। ‎ ‎[সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১ - (৪৫), তবে ‎হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে] ।

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন