শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় নামাজের অর্থ ও মর্যাদা

প্রকৃত ইসলাম ধর্মে নামাজ প্রতিষ্ঠিত করার মহা মর্যাদা রয়েছে। মুসলিম ব্যক্তির জীবনে নামাজ প্রতিষ্ঠিত করা হলো একটি প্রধান স্তম্ভ। এই পরিচ্ছেদে আপনি নামাজের অর্থ, মহত্ত্ব ও মর্যাদার জ্ঞান লাভ করতে পারবেন।

উদ্দেশ্য হলো:১। নামাজের অর্থ জানা।২। নামাজ প্রতিষ্ঠিত করার মহত্ত্ব জানা।৩। নামাজ প্রতিষ্ঠিত করার গুরুত্ব ও মর্যাদার জ্ঞান লাভ করা।  

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

নামাজের আসল অর্থ

প্রকৃতপক্ষে নামাজ হলো দোয়া। আর নামাজের দ্বারা মানুষের সুসম্পর্ক স্থাপিত হয় তার প্রকৃত প্রতিপালক ও প্রকৃত সৃষ্টিকর্তার সাথে। নামজের মধ্যে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর জন্য রয়েছে মানুষের দাসত্ব স্বীকারের সর্বোচ্চ অর্থ এবং নামজের মাধ্যমে তাঁর নিকটে আশ্রয় গ্রহণ করা হয় এবং তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। সুতরাং নামাজে মানুষ প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তাঁর কাছে আবেদন করে এবং তাঁকে স্মরণ করে। তাই তার আত্মা পবিত্র হয়, সে তার জীবনের ও সেই পৃথিবীর তাৎপর্য বুঝতে পারে, যে পৃথিবীতে সে বসবাস করছে। এবং সে তার প্রকৃত মালিক ও প্রকৃত সৃষ্টিকর্তার করুণা অনুভব করতে পারে। তাই এই নামাজ মানুষকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার প্রতি সুপ্রতিষ্ঠিত করে এবং অন্যায়, অশ্লীলতা এবং পাপের কাজ থেকে রক্ষা করে। অতএব মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَر)، سورة العنكبوت، جزء من الآية 45. ভাবার্থের অনুবাদ: “অবশ্যই নামাজ মানুষকে রক্ষা করে অশ্লীল ও অপকর্ম হতে”। (সূরা আল আনকাবূত, আয়াত নং 45 এর অংশবিশেষ)।

নামাজের মর্যাদা

নামাজ হলো সমস্ত দৈহিক উপাসনা বা ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো এবং গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন একটি উপাসনা বা ইবাদত যাতে হৃদয়, বুদ্ধি এবং জিহ্বা কাজ করে। আর নামাজের মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেকগুলি বিষয়ের মাধ্যমে উদ্ভাসিত হয়।

১। নামাজ হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় স্তম্ভ। তাই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “পাঁচটি স্তম্ভের উপরে প্রকৃত ইসলাম ধর্ম সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। [প্রথমটি হলো] আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই আর মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল, এই কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। [দ্বিতীয়টি হলো] নামাজ প্রতিষ্ঠিত করা...”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১ - (১৬), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]। যে কোনো অট্টালিকার স্তম্ভই হলো তার গুরুত্বপূর্ণ প্রকৃত অংশ। তাই তারই উপরে অট্টালিকা নির্মিত হয়। সেটি না থাকলে অট্টালিকা নির্মিত হয়না।

২। মুসলিম জাতির মধ্যে এবং অমুসলিম জাতির মধ্যে বাহ্যিক পার্থক্যকারী ইবাদত বা উপাসনা হলো নামাজ। তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ, وَبْينَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلاَةِ". (صحيح مسلم، رقم الحديث 134-(82)،). অর্থ: “যে কোনো মুসলিম ব্যক্তির মধ্যে এবং আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করা ও তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ ছেড়ে দেওয়া”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪ - ( ৮২) ]। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আরো বলেছেন: "اَلْعَهْدُ الَّذِيِ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ: اَلصَّلاَةُ؛ فَمَنْ تَرَكَهَا؛ فَقَدْ كَفَرَ". (جامع الترمذي, رقم الحديث 2621, وسنن النسائي، رقم الحديث 463, وسنن ابن ماجه, رقم الحديث 1079, قال الإمام الترمذي عن هذا الحديث: بأنه حسن صحيح غريب, وصححه الألباني). অর্থ: “আমাদের মধ্যে এবং অমুসলিমদের মধ্যে যে বাহ্যিক বিষয়টির প্রতিশ্রুতি রয়েছে, সে বাহ্যিক বিষয়টি হলো নামাজ। তাই যে ব্যক্তি নামাজ পরিত্যাগ করবে, সে ব্যক্তি একজন অমুসলিম হয়ে যাবে”। [জামে তিরমিযী, হাদীস নং ২৬২১, সুনান নাসায়ী, হাদীস নং ৪৬৩ এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ১০৭৯, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান, সহীহ এবং গারীব (এক পন্থায় বর্ণিত) বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন] ।

৩। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ সর্বাবস্থায় মুসলিম জাতিকে নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। সুতরাং তিনি তাদেরকে সফর অবস্থায়, আবাস অবস্থায়, শান্তির অবস্থায়, যুদ্ধের অবস্থায়, সুস্থ অবস্থায় এবং অসুস্থ অবস্থায় সদাসর্বাদা যথাসাধ্য নামাজ প্রতিষ্ঠিত করার উপদেশ প্রদান করেছেন। সুতরাং তিনি পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (حَافِظُوْا عَلَى الصَّلَوَاتِ)، سورة البقرة، جزء من الآية 238. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে মুসলিম জাতি! তোমরা যথাসময়ে সময়ে সঠিকভাবে নামাজ প্রতিষ্ঠিত করার কাজে মনোযোগী হও”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ২৩৮ এর অংশবিশেষ)। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন: (وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ)، سورة المؤمنون، الآية 9. ভাবার্থের অনুবাদ: “মুসলিম জাতির বৈশিষ্ট্যের অন্তর্গত বিষয় হলো এই যে, তারা তাদের নামাজ প্রতিষ্ঠিত করার কর্তব্যে সদাসর্বাদা যত্নবান থাকে”। (সূরা আল মুমিনুন, আয়াত নং ৯)।

নামাজের শ্রেষ্ঠত্ব বা ফজিলত

পবিত্র কুরআন ও নির্ভরযোগ্য হাদীসের মধ্যে নামাজের শ্রেষ্ঠত্ব বা ফজিলতের অনেক প্রমাণ বর্ণিত হয়েছে।

১। নামাজ হলো ছোটো ছোটো সমস্ত পাপ মোচনের উপাদান । আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "اَلصَّلَاةُ الخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إلى الجُمُعَةِ كفَّارَاتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ مَا لَمْ تُغْشَ الْكَبَائرَ". (صحيح مسلم, رقم الحديث 14 - (223), ). অর্থ: “সর্বদা দিনরাতে পাঁচবারের নামাজ এবং এক শুক্রবারের জুমার নামাজ হতে আরেক শুক্রবারের জুমার নামাজ পর্যন্ত যতো নামাজ রয়েছে, সমস্ত নামাজই তাদের মধ্যবর্তী সময়ের ছোটো ছোটো সমস্ত পাপ মিটিয়ে দেওয়ার উপাদান হয়ে যায়, যদি কবিরা গুনাহ বা মহাপাপ হতে মুক্ত থাকা যায়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১ -( ২২৩) ]।

২। নামাজ হলো মুসলিম ব্যক্তির সারাজীবনের কল্যাণদায়ক একটি উজ্জ্বল জ্যোতি। এই ‎নামাজ তাকে মঙ্গলের দিকে আহ্বান করে এবং অমঙ্গল থেকে তাকে রক্ষা করে ও ‎দূরে রাখে।‏ ‏তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏ (إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَر)، سورة العنكبوت، جزء من الآية 45.‏ ভাবার্থের অনুবাদ:‎‏ ‏‎“নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও অসৎ কাজ থেকে বিরত ‎রাখে”। ‎ (সূরা আল আনকাবূত, আয়াত নং ৪৫ এর অংশবিশেষ)। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ‏ ‏‎[সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎‏ ‏"الصَّلاةُ نُوْرٌ".‏ ‏(صحيح مسلم، رقم الحديث 1-(223)، ). ‏ অর্থ: “নামাজ হলো মুসলিম ব্যক্তির ইহকাল ও পরকালের কল্যাণদায়ক একটি জ্যোতি”। ‎ ‎[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১ -(২২৩) ]।

৩। কিয়ামতের দিন মানুষের সর্বপ্রথমে এই নামাজের হিসাব হবে। সুতরাং যদি নামাজ ‎ঠিক ও গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে তার অন্য সমস্ত সৎ কর্ম গৃহীত হবে। আর যদি নামাজ ‎প্রত্যাখ্যান করা হয়, তাহলে বাকি তার সমস্ত সৎ কর্ম প্রত্যাখ্যান করা হবে। যেহেতু ‎আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: ‎ ‏"إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهِ صَلَاتُهُ؛ فَإِنْ صَلُحَتْ فَقَدْ أَفْلَحَ وَأَنْجَحَ وَإِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ" .‏ ‏(المعجم الأوسط للطبراني 1859).‏ ‏(جامع الترمذي، رقم الحديث 413، وَسنن النسائي، رقم الحديث 465 ، واللفظ للترمذي، قَالَ ‏الإمام الترمذي عن هذا الحديث: بأنه حسن غريب، وصححه الألباني).‏ অর্থ: “কিয়ামতের দিন মানুষের সর্বপ্রথমে হিসাব নেওয়া হবে নামাজের বিষয়ে, ‎অতএব যদি নামাজ ঠিক ও গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে সে উত্তীর্ণ ও সফলকাম হবে, আর ‎যদি তার নামাজ অকেজো হয়ে যায়, তাহলে সে ক্ষতিগ্রস্ত ও নিরাশ ‎হয়ে যাবে”। ‎‎(তাবারানির মোজাম আওসাত 1859)। ‎ ‎[জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৪১৩, এবং সুনান্ নাসায়ী, হাদীস নং: ৪৬৫, তবে হাদীসের ‎শব্দগুলি জামে ‎তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ‎গারীব বলেছেন এবং আল্লামা মুহাম্মাদ ‎নাসেরুদ্দিন আল্আল্বাণী হাদীসটিকে সহীহ ‎বলেছেন]।‎

নামাজ হলো প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক মুহূর্তের ‎উপাসনা যখন সে ‎তার প্রভুর সাথে কথা বলে; তাই সে অতি আনন্দ ও শান্তি অনুভব ‎করে এবং ‎প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর সাথে তার সুসম্পর্ক স্থাপিত ‎হয়।

এবং আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ‎জন্য এই নামাজ ছিলো সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দের বিষয়। তাই তিনি বলেছেন: “আর আমার ‎চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে নামাজের মধ্যে”। (নাসায়ী 3940)।

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর জন্য ‎প্রীতিজনক ও আরামদায়ক জিনিস ছিলো নামাজ। ‎

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর ‎মুয়াজ্জিন ও নামাজের প্রতি আহ্বানকারী বিলাল [রাদিয়াল্লাহু আনহু] কে বলতেন:‎ ‏"يا بلال، أقم الصلاة أرحنا بها" (أبو داود 4985).‏ অর্থ: “হে বিলাল! নামাজের জজন্য আজান এবং ইকামত দাও। এর দ্বারা ‎আমাকে ক্লান্তি এবং ব্যস্ততা থেকে আরাম দাও”। (আবু দাউদ 4985)। ‎

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সামনে ‎যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ অথবা বিষণ্ণতা ও ব্যস্ততা উপনীত হতো, তখন তিনি ‎নামাজ পড়তেন। ‎[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 1319]।

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন