শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় শিরোনাম: নামাজের শর্তাবলি ও তার বিধান।

বিবরণ: নামাজের কতকগুলি শর্ত নির্ধারিত রয়েছে। সেই সব শর্ত ছাড়া নামাজ সঠিক হয় না। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য সেই সব শর্ত জেনে রাখা ওয়াজিব বা অপরিহার্য। এই অনুচ্ছেদ আমরা নামাজের নির্ধারিত শর্তবলি, তার ওয়াজিব হওয়ার বিষয় এবং তার স্থান জানতে পারবো।

উদ্দেশ্য হলো: নামাজের নির্ধারিত শর্তবলির জ্ঞান লাভ করা। নামাজের বিধান জানা। নামাজ পড়ার জায়গার বিধিবিধান জানা।

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

নামাজের শর্তাবলি

১। পরিত্রতা অর্জন করা

নামাজ পড়ার জন্য অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে এবং নাপাক বস্তু বা নোংরা অথবা ময়লা বস্তু পরিত্রতা লাভ করতে হবে। আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "لَا تُقْبَلُ صَلاةٌ بِغِيْرِ". (صحيح مسلم، جزء من رقم الحديث 1- (224)، ). অর্থ: “পবিত্রতা অর্জন না করে নামাজ পড়লে নামাজ কবুল হয় না”। [ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১ - (২২৪) এর অংশবিশেষ]।

নামাজ পড়ার জন্য লজ্জাস্থানকে আচ্ছাদিত করা

নামাজ পড়ার জন্য লজ্জাস্থানকে এমন পোশাক দিয়ে আবৃত করার শর্ত রয়েছে, যে সেই পোশাক যেন এমন ফিনফিনে পাতলা কাপড় না হয় যে, তার দ্বারা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আকৃতি বা গঠন বিকশিত হয়ে যায়।

পুরুষের লজ্জাস্থান

পুরুষের লজ্জাস্থান হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত।

মহিলার লজ্জাস্থান

মহিলার লজ্জাস্থান হলো তার মুখমণ্ডল ও হাত ছাড়া সারা শরীর। عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "لَا يَقْبَلُ اللهُ صَلَاةَ حَائِضٍ إِلَّا بِخِمَارٍ". (جامع الترمذي, رقم الحديث 377, وسنن أبي داود, رقم الحديث 641، وسنن ابن ماجه, رقم الحديث 665, واللفظ للترمذي, قَالَ الإمام الترمذي: هذا حديث حسن, وصححه الألباني). অর্থ: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “প্রাপ্তবয়স্কা স্ত্রীলোক বা সাবালিকা নারীর নামাজ তার মাথা এবং ঘাড় আচ্ছাদিত না করলে তার নামাজ সঠিক হবে না”। [জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৩৭৭, সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৪১, এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৬৫৫, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (يَا بَنِيْ آدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ)، سورة الأعراف، جزء من الآية31. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে আদম সন্তান! তোমরা সমস্ত নামাজ সুশোভিত হয়ে পড়বে এবং মাসজিদে প্রবেশ করবে, সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান করে”। (সূরা আল আরাফ, আয়াত নং ৩১ এর অংশবিশেষ)। লজ্জাস্থান আচ্ছাদিত করা হলো সুশোভিত হওয়ার নিম্নস্তর। এই আয়াতে মাসজিদের অর্থ হলো নামাজ।

৩। কিবলামুখী হওয়া

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ)، سورة البقرة، الآية 149. ভাবার্থের অনুবাদ: “ হে ইমানদার মুসলিম মানুষ! তুমি পৃথিবীর মধ্যে যে দিকেই যাও না কেন আর যেখানেই থাকো না কেন, নামাজ পড়ার সময় মসজিদুল হারামের দিকেই মুখ ফিরাবে।”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ১৪৯ এর অংশবিশেষ)।

সমস্ত মুসলিম সমাজের কিবলা বলতে কী বুঝানো হয়?

সমস্ত মুসলিম সমাজের কিবলা হলো সম্মানিত ও পবিত্র কাবা ঘর। এই পবিত্র কাবা ঘরটি নাবীদের পিতা ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম) দ্বারা নির্মিত হয়েছে। এবং নবীগণ এই পবিত্র কাবা ঘরের হজ্জ পালন করেছেন। আর আমরা জানি যে, এই পবিত্র কাবা ঘর নির্মিত হয়েছে পাথর দ্বারা। এই পাথর অপকার ও উপকার করার কোনো ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহ আমাদেরকে আদেশ প্রদান করেছেন: আমরা যেন সেই পবিত্র কাবা ঘরের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ি এবং সমস্ত মুসলিম সমাজ একত্রিত হয়ে এক নিয়মে এক পন্থায় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং আমরা মুসলিম জাতি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর উপাসনা করার জন্য এইভাবে একই দিকে মুখ করি ও নামাজ পড়ি।

কিবলা বা সম্মানিত ও পবিত্র কাবা ঘরকে কিভাবে সামনে করে নামাজ পড়তে হবে?

মুসলিম ব্যক্তি যখন কিবলা বা সম্মানিত ও পবিত্র কাবা ঘরকে নিজের সামনে দেখতে পাবে, তখন তার জন্য সেই কিবলা বা সম্মানিত ও পবিত্র কাবা ঘরকে সামনে রেখেই নামাজ পড়া অপরিহার্য হবে। তবে যে ব্যক্তি সেই কিবলা বা সম্মানিত ও পবিত্র কাবা ঘর হতে দূরে থাকবে, তার জন্য পবিত্র শহর মক্কার দিকে মুখ করে নামাজ পড়লেই বৈধ ও যথেষ্ট হবে। এবং এই ক্ষেত্রে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি বা ভুলচুক হলে কোনো ক্ষতি বা সমস্যা নেই। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "مَا بَيْنَ الْـمَشْرِقِ وَالْـمَغْرِبِ قِبْلَةٌ". (جامع الترمذي, رقم الحديث 342, وسنن ابن ماجه, رقم الحديث 1011، وصححه الألباني). অর্থ: “পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝেই হলো কিবলা”। [জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪২ এবং সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ১০১১, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

যে ব্যক্তি অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণের জন্য নামাজ পড়ার সময় কেবলামুখী হতে অক্ষম হবে, সে ব্যক্তি কী করবে?

যে ব্যক্তি অপারগতার কারণে অথবা অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে নামাজ পড়ার সময় কেবলামুখী হতে অক্ষম হবে, সে ব্যক্তির জন্য কেবলামুখী হওয়া অপরিহার্য হবে না বা ওয়াজিব হবে না। সুতরাং তার প্রতি যেমন অন্যান্য অপরিহার্য বিষয় বা ওয়াজিব বিষয় তার অপারগতার কারণে অথবা অসুস্থতার কারণে কিংবা অন্য কোনো কারণে রহিত হয়ে যায়, সেই রূপ কিবলা বা সম্মানিত ও পবিত্র কাবা ঘরকে নিজের সামনে রেখে নামাজ পড়ার বিষয়টি রহিত হয়ে যায়। যেহেতু প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ)، سورة التغابن، الآية 16. ভাবার্থের অনুবাদ: “সুতরাং হে ইমানদার মুসলিম সমাজ! তোমরা তোমাদের সাধ্য মোতাবেক প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহকে মেনে চলো”। (সূরা আত্তাগাবুন, আয়াত নং 16 এর অংশবিশেষ)।

৪। নামাজের সময় হওয়া:

নামাজ সঠিক হওয়ার শর্ত হলো নামাজের নির্ধারিত সময় হওয়া। সুতরাং নামাজের নির্ধারিত সময়ের আগেই নামাজ পড়লে নামাজ হয় না। আবার নামাজের নির্ধারিত সময়ে নামাজ না পড়ে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজের নির্ধারিত সময়কে পিছিয়ে দেওয়া হারাম বা অবৈধ। যেহেতু প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَوْقُوْتًا)، سورة النساء، الآية 103. ভাবার্থের অনুবাদ: “প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজের প্রতি নির্ধারিত সময়ে নামাজ প্রতিষ্ঠিত করা ও পড়া একটি অপরিহার্য ফরজ বিষয় রয়েছে”। (সূরা আন নিসা, আয়াত নং নং ১০৩ এর অংশবিশেষ)।

নামাজের প্রথম সময়ে নামাজ পড়া হলো সর্বোত্তম কর্ম। উম্মু ফারওয়া থেকে বর্ণিত, ‎তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: কোন কাজটি সর্বোত্তম? তিনি বলেছিলেন: “নামাজের প্রথম ‎সময়ে নামাজ পড়া হলো সর্বোত্তম কর্ম”। ‎[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৪২৬। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী এই ‎হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।

নামাজের নির্ধারিত সময় পার করে দেওয়ার পর নামাজ পড়া কি জায়েজ?‎

নামাজের নির্ধারিত সময়ে অবশ্যই নামাজ পড়া অপরিহার্য। এবং দুই নামাজকে একত্রিত ‎করে পড়ার বৈধ অবস্থা ছাড়া অকারণে কোনো নামাজকে তার নির্ধারিত সময় পার ‎করে দেওয়ার পর সেই নামাজ পড়া অবৈধ। ‎

যে ব্যক্তির ঘুমের কারণে বা ভুলে যাওয়ার কারণে তার নামাজ ছুটে গেছে সে কী করবে?‎

তার অপরিহার্য কর্তব্য হলো এই যে, যখনই তার উক্ত নামাজের কথা স্মরণ হবে, তখনই তা আদায় করে ‎নিবে। যেহেতু এই বিষয়ে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আর তা হলো: ‎ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ نبِيُّ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "مَنْ نَسِيَ صَلاَةً أَوْ ‏نَامَ عَنْهَا؛ فَكَفَّارَتُها أَنْ يُصَلِّيَهَا إِذَا ذَكَرَهَا".‏ ‏(صحيح مسلم، رقم الحديث 315- (684)، ).‏ অর্থ: আনাস বিন মালেক‏ ‏‎[রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:‎‏ ‏আল্লাহর নাবী‏ ‏‎[সাল্লাল্লাহু ‎আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎‏ ‏‎“যে ব্যক্তি কোনো নামাজ ভুলে যাবে অথবা নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার ‎পূর্বে ঘুমিয়ে পড়বে, তার কাফ্ফারা হলো এই যে, যখনই তার উক্ত নামাজের কথা স্মরণ হবে বা ঘুম ‎হতে জাগ্রত হবে, তখনই তা আদায় করে নিবে” । ‎ ‎ [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৫-(৬৮৪)]‎

নামাজ ফরজ বা অপরিহার্য হওয়া বিষয়

প্রত্যেক বুদ্ধিমান প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ব্যক্তির প্রতি নামাজ পড়া ফরজ বা অপরিহার্য। ‎তবে যে মহিলা ঋতুস্রাব বা রক্তস্রাব এবং প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ অবস্থায় উপনীত হবে, ‎সে মহিলা তার ঋতুস্রাব বা রক্তস্রাব এবং প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ অবস্থায় নামাজ পড়বে ‎না এবং সেই অবস্থায় ছুটে যাওয়া নামাজ পরবর্তীতে পবিত্রতা অর্জনের পর কাজা ‎করবে না। ‎

আর নিম্নলিখিত লক্ষণগুলির মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার ফয়সালা করা হবে:‎

١
পনের বছর বয়স পূর্ণ হওয়া।
٢
লজ্জাস্থানের চারপাশে রুক্ষ চুল অঙ্কুরিত হওয়া। ‎
٣
স্বপ্নে বা জাগ্রত অবস্থায় বীর্য স্খলিত হওয়া।
٤
মহিলার মাসিক হওয়া বা গর্ভবতী হওয়া।

পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ও তার সময়

মহান আল্লাহ মুসলিম ব্যক্তির উপর দিনে ও রাতে পাঁচটি নামাজ ফরজ করেছেন। ‎নামাজ হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের স্তম্ভ এবং সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিষয়। ‎আর মহান আল্লাহ এই নামাজের জন্য স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট সময় নিম্নোক্তভাবে নির্ধারণ ‎করেছেন:‎

ফজরের নামাজ

ফজরের নামাজ হলো দুই রাকাআত। আর এর সময় দ্বিতীয় ভোর উদয় হওয়ার পর ‎থেকে শুরু হয়। আর তা হলো পূর্ব দিকে আলোর আভা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে ‎শুরু হয় এবং সূর্য উদয়ের সাথে সাথে শেষ হয়ে যায়।

জোহরের নামাজ

জোহরের নামাজ হলো চার রাকাআত। আর এর সময় সূর্য আকাশের মাঝখান থেকে ‎পশ্চিম দিকে ঝুঁকে পড়ার পর শুরু হয় এবং যে কোনো জিনিসের ছায়া তার দৈর্ঘ্যের ‎দিক দিয়ে সমান হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে শেষ হয়ে যায়। ‎

আসরের নামাজ

আসরের নামাজ হলো চার রাকাআত। আর এর সময় হলো জোহরের নামাজের সময় ‎শেষ হওয়ার পরে যে কোনো জিনিসের ছায়া তার সমান হয়ে যাওয়ার পর থেকে শুরু ‎হয় এবং সূর্যাস্তের সাথে সাথে শেষ হয়ে যায়। তবে মুসলিম ব্যক্তির জন্য সূর্যের আভা ‎দুর্বল হওয়ার আগে এবং সূর্যের রঙ হলুদ হওয়ার পূর্বে অতি সত্বর আসরের নামাজ ‎পড়ে নেওয়া উচিত। ‎

মাগরিবের নামাজ

মাগরিবের নামাজ হলো তিন রাকাআত। আর এর সময় সূর্যাস্তের সাথে সাথে এবং ‎তার চাকতি দিগন্তে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পরেই শুরু হয়ে যায়। আর সূর্যাস্ত কালের ‎পর প্রদর্শিত লাল রেখা দিগন্তে অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথে এর সময় শেষ হয়ে যায়। ‎ ‎

ইশার নামাজ

ইশার নামাজ হলো চার রাকাআত। আর এর সময় সূর্যাস্ত কালের পর প্রদর্শিত লাল ‎রেখা দিগন্তে অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয়ে যায় এবং মধ্যরাতে এর সময় শেষ ‎হয়ে যায়। তবে জরুরি প্রয়োজনের খাতিরে ইশার নামাজ ভোরের আভা বা ফজরের ‎আভা প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত পড়া চলবে।

নামাজ পড়ার স্থান

প্রকৃত ইসলাম ধর্ম পুরুষদেরকে জামাআতের সাথে মাসজিদে নামাজ পড়ার আপ্রকৃত ‎ইসলাম ধর্ম পুরুষদেরকে জামাআতের সাথে মাসজিদে নামাজ পড়ার আদেশ ‎ও ‎উৎসাহ ‎প্রদান করেছে। যাতে এটা তাদের জন্য সম্মিলিত ও একত্রিত হওয়ার ‎একটি ‎সভা ও ‎সমিতির মতো কাজ করে এবং তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসার বন্ধন ‎বেশি ‎মজবুত ‎হয়। আর একাই নামাজ পড়ার চেয়ে এইভাবে সম্মিলিত ও একত্রিত হয়ে ‎জামাআতের ‎সাথে মাসজিদে নামাজ পড়ার মর্যাদা প্রকৃত ইসলাম ধর্ম অনেকগুণ বেশি বৃদ্ধি করেছে। ‎সুতরাং আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎বলেছেন: ‎ ‏"صَلاَةُ الْجَمَاعَةِ تَفْضُلُ صَلاَةَ الْفَذِّ بِسَبْعٍ وَّعِشْرِيْنَ دَرَجَةً".‏ ‏(صحيح البخاري، رقم الحديث 645، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 250- ‏‏(650)، وأحمد 5921).‏ অর্থ: “জামায়াতের সহিত নামাজ পড়া, একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে সাতাশ গুণ বেশি ‎উত্তম”। ‎[সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৫ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫০ - (৬৫০), তবে ‎হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে। আহমদ 5921] ।‎

নামাজের স্থানের কতকগুলি নিয়মকানুন

প্রকৃত ইসলাম ধর্ম নামাজের স্থানের জন্য এইভাবে শর্ত দিয়েছে যে, নামাজের স্থান ‎যেন পবিত্র হয়। তাই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের ‎মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏{وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُود} (البقرة: 125).‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আর আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করেছিলাম: তোমরা ‎আমার গৃহ কাবা ঘরকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী এবং রুকু-সিজদাকারীদের জন্য ‎পবিত্র রাখ।”। (সূরা বাকারা: 125)।

আসলে যে কোনো স্থানের পবিত্রতার বিষয়টি নির্ধারিত রয়েছে।

যে কোনো স্থানের পবিত্রতার বিষয়টি হলো নির্ধারিত আসল বিষয়। আর অপবিত্রতার ‎বিষয়টি হলো অল্পকালের জন্য একটি অস্থায়ী অবস্থা। সুতরাং আপনি যদি কোনো ‎স্থানের বিষয়ে অপবিত্রতার কথা না জেনে থাকেন, তাহলে সেই স্থানটিকে পবিত্র স্থান ‎হিসেবে ধরতে হবে। আর প্রতিটি পরিষ্কার ও পবিত্র স্থানের পিঠে বা পৃষ্ঠে নামাজ পড়া ‎বৈধ হবে। এবং নামাজ পড়ার জন্য সদাসর্বদা জায়নামাজ, চাটাই বা কাপড় নেওয়া ‎অপরিহার্য নয়। তাই নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে জায়নামাজ, চাটাই বা কাপড় ইত্যাদি অর্জন ‎করার জন্য খুববেশি কষ্ট করা উচিত নয়। ‎

নামাজের স্থানের জন্য কতকগুলি সাধারণ নিয়ম রয়েছে। সুতরাং মুসল্লিকে উক্ত ‎নিয়মগুলি অবশ্যই পালন করতে হবে। আর সেই নিয়মগুলির মধ্যে রয়েছে: ‎

১। নামাজ পড়ার কারণে মানুষকে কোনো প্রকারের কষ্ট দেওয়া জায়েজ নয়। তাই যে ‎স্থানে নামাজ পড়লে মানুষের কষ্ট হবে, সে স্থানে নামাজ পড়া বৈধ নয়, যেমন:- রাস্তা ‎ও মানুষর চলাচলের পথে নামাজ পড়া নিষেধ। যেহেতু রাস্তায় ও মানুষের চলাচলের ‎পথে নামাজ পড়লে লোকের কষ্ট হবে এবং ভিড় জমে যাবে। তাই আল্লাহর বার্তাবহ ‎রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মানুষকে কষ্ট দেওয়া হতে ‎এবং কোনো লোকের কোনো ক্ষতি করা হতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন:‎ ‏"لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ ".‏ অর্থ: “ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মানুষ যেন নিজের বা অন্য কোনো মানুষের ক্ষতি সাধন না ‎করে”। ‎[সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ২৩৪১, আল্লামা মুহাম্মাদ নাসেরুদ্দীন আল আলবাণী ‎এই হাদীসটিকে সহীহ সঠিক বলেছেন। আহমদ 2865] ।‎

২। নামাজের স্থানে এমন কিছু থাকা উচিত নয় যা মুসল্লিকে ব্যস্ত বা অস্থির করে দিবে, ‎যেমন:- ছবি, উচ্চ ধ্বনি বা আওয়াজ এবং সুর ও ঝঙ্কার। ‎

৩। নামাজের স্থান যেন ওই সব জায়গা না হয়, যে সব জায়গা আসলে পাপ কর্ম ও ‎প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর অবাধ্যতার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, ‎যেমন:- নৃত্যশালা বা নাচঘর বা যে স্থানে নাচা হয় এবং নাইটক্লাব ইত্যাদি। এই সব ‎জায়গায় নামাজ পড়া অপছন্দনীয় বিষয় বা মকরুহ। ‎

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন