মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় ঈদ
ঈদগুলি হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের প্রকাশ্য নিদর্শন
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন তিনি মদীনার মুসলিমদেরকে তথা আনসারী সাহাবীগণকে দেখলেন যে, তারা বছরে দুই দিন খেলাধূলা ও আমোদ করেছে ও আনন্দ প্রকাশ করছেন। তাই তিনি জিজ্ঞাসা করে বললেন: “এই দিন দুইটি কিসের দিন”? তারা বললেন: প্রকৃত ইসলামের পূর্বে জাহিলিয়্যাতের যুগে আমরা এই দিন দুইটিতে খেলাধূলা ও আমোদ করতাম। তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন: “এই দিন দুইটির পরিবর্তে মহান আল্লাহ তোমাদেরকে সর্বোৎকৃষ্ট দুইটি দিন প্রদান করেছেন। ঈদুল আজহার দিন বা কুরবানির ঈদের দিন এবং অপরটি ঈদুল ফেতেরের দিন”। (আবু দাউদ 1134)। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] জানিয়ে দিয়েছেন যে ঈদগুলি হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের প্রকাশ্য নিদর্শন। আর বলেছেন: "إن لكل قوم عيداً، وهذا عيدنا" (البخاري 952، مسلم 892). অর্থ: “প্রত্যেক জাতির ঈদের দিন আছে। আর এটি হলো আমাদের ঈদের দিন”। (বুখারি 952, মুসলিম 892)।
প্রকৃত ইসলাম ধর্মে ঈদ হলো উপাসনা পূর্ণ করার কারণে আনন্দ প্রকাশ করা মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার মাধ্যমে। যেহেতু তিনিই উপাসনা সম্পূর্ণরূপে সম্পাদিত করার উপাদান ও শক্তি প্রদান করেছেন। এবং ঈদের সময়ে সমস্ত মানুষের অন্তরে আনন্দ ও খুশি স্থাপিত করা হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা সম্মত একটি কাজ। এবং তাতে সবচেয়ে বেশি সুন্দর পোশাক পরিধান করা, অভাবগ্রস্তদের প্রতি অনুগ্রহ করা, সমস্ত বৈধ পন্থায় অনুষ্ঠান উদযাপন করা এবং মানুষের হৃদয়ে আনন্দ ফুটিয়ে তোলা আর তাদেরকে মহান আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা।
মুসলিম জাতির জন্য বছরে দুইটি ঈদ রয়েছে। সেই দুই ঈদে তারা আনন্দ ও খুশির অনুষ্ঠান উদযাপন করে থাকে। এই দুই ঈদ ব্যতীত অন্য কোনো দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারিত করা জায়েজ নয়। সেই দুই ঈদ হলো:
ঈদের নামাজ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ নামাজ। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মুসলিম জাতির পুরুষদেরকে, নারীদেরকে এবং শিশুদেরকে এই নামাজ পড়ার প্রতি জোর দিয়েছে এবং উৎসাহিত করেছে। ঈদের নামাজের সময় হলো সূর্য উদয় হওয়ার পর সূর্য দিগন্তে এক বর্শার মতো উপরে উঠার পরেই ঈদের নামাজের সময় শুরু হয়ে যায় আর এই সময় থাকে সূর্য আকাশ থেকে হেলে পড়া বা ঢলে যাওয়ার আগের মূহুর্ত পর্যন্ত।
ঈদের নামাজ হলো দুই রাকাআত। তাতে ইমাম উচ্চস্বরে সূরা তিলাওয়াত করেন। এবং দুই রাকাআত নামাজ পড়ার পর তিনি দুইটি খুতবা দিবেন। ঈদের নামাজের জন্য প্রত্যেক রাকাআতের আগেই বেশি তাকবির বলার বিধান আছে। সুতরাং প্রথম রাকাআতে ছয় তাকবির বলতে হবে তাকবিরে তাহরিমা ছাড়া। এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সিজদা থেকে দাঁড়ানোর তাকবির ছাড়া আরো পাঁচটি তাকবির বলতে হবে।
ঈদের সময় নির্বিশেষে সাধারণভাবে ছোটো বড়ো, নারীপুরুষ সবাই মিলে সমস্ত বৈধ পন্থায় অনুষ্ঠান উদযাপন করা এবং আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করা জায়েজ। এবং সবচেয়ে সুন্দর ও ভালো জামাকাপড় বা পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করা উচিত। আর ঈদের দিনে রোজা না রাখার মাধ্যমে আর পানাহার করার মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা করতে হয়। তাই ঈদের দিনে রোজা রাখা হারাম।
ঈদুল ফিতরে তাকবির পাঠ করা হলো প্রকৃত ইসলামের একটি শিক্ষা; ঈদে আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করার জন্য এবং কল্যাণময় রমাজান মাসের রোজা পূর্ণ করার জন্য। যেহেতু মহান আল্লাহ আমাদেরকে রোজা রাখার শক্তি ও তার উপাদান প্রদান করেছেন তাই তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার জন্য। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُون) (البقرة: 185). ভাবার্থের অনুবাদ: “আর যাতে তোমরা রোজার নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করতে পারো। আর এই উপাসনার শক্তি ও উপাদান তোমাদেরকে মহান আল্লাহ প্রদর্শন ও প্রদান করেছেন; তাই তোমরা তাঁর মহিমা বর্ণনা করো। তবেই তোমরা তোমাদের প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে পারবে”। (সূরা বাকারা: 185)। সেই রূপ কুরবানির ঈদে বা ঈদুল আদহাতেও তাকবির পাঠ করা হলো প্রকৃত ইসলামের একটি শিক্ষা; ঈদে আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করার জন্য। আর হজ্জ পালনকারীদের ফরজ হজ্জ পালন করার জন্য। আর যেহেতু মহান আল্লাহ তাদেরকে এবং মুসলিম জাতিকে জুলহিজ্জা মাসের প্রথম দশ দিনের মধ্যে সৎ কর্ম করার শক্তি ও তার উপাদান প্রদান করেছেন তার জন্য। আর কুরবানি করার বিষয়ে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ كَذَلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ) (الحج: 37). ভাবার্থের অনুবাদ: “কুরবানির মাংস ও রক্ত আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় না, তবে হ্যাঁ আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় শুধু তোমাদের আন্তরিক একনিষ্ঠতা। যেহেতু তিনি কুরবানির পশুগুলিকে তোমাদের অধীনে করে দিয়েছেন। যাতে তোমরা তাঁর মহিমা বর্ণনা করতে পারো। কেননা তিনিই তো তোমাদেরকেতাঁর উপাসনা করার শক্তি ও উপাদান প্রদর্শন ও প্রদান করেছেন। আর হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তুমি সৎকর্মশীলদেরকে মঙ্গলময় জীবন লাভের সুসংবাদ দাও”। (সূরা আল হাজ্জ, আয়াত নং ৩৭)।
ঈদে তাকবির পাঠ করার পদ্ধতি
“আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ”। আবার এটাও বলা যাবে: “আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদু লিল্লাহি কাসিরা, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা”।
পুরুষরা এমন সশব্দে বা উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করবে, যাতে মানুষের কষ্ট বা ক্ষতি না হয়। আর মহিলারা সাবধানতার সঙ্গে আস্তে আস্তে বা গোপনে তাকবির পাঠ করবে।