মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় শিরোনাম: সফর বা যাত্রা কিংবা পর্যটনের ক্ষেত্রে ইমানের সাথে সম্পৃক্ত কতকগুলি শিক্ষণীয় বিষয়।
সফর করা বা যাত্রা করা কিংবা পর্যটন করার অর্থ হলো: মানুষের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা যাওয়ার জন্য ভ্রমণ করা এবং প্রকৃতির দৃশ্য ইত্যাদি পরিদর্শন করার উদ্দেশ্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা রওনা হওয়া।
পবিত্র কুরআনের মধ্যে রিহলা (যাত্রা) শব্দটি শুধুমাত্র একবারই উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (لإِيلافِ قُرَيْشٍ، إِيلافِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَاءِ وَالصَّيْفِ)، سورة قريش، الآيات 1-2. ভাবার্থের অনুবাদ: তোমরা আশ্চর্যান্বিত ও বিস্মিত হও কুরাইশদের আচরণের কারণে। তারা শীতকালে ও গ্রীষ্মকালের বাণিজ্যযাত্রায় অতি মগ্ন থাকতে ভালোবাসে”। (সূরা আল কুরাইশ, আয়াত নং ১-২)। শীতকালের সফর হলো এই যে, কুরাইশ বংশের ব্যবসায়ীরা শীতকালে ব্যবসা করার জন্য ইয়েমেন দেশ ভ্রমণ করতো এবং গ্রীষ্মকালে সিরিয়া বা শাম দেশ ভ্রমণ করতো।
মুসলিম ব্যক্তির জীবন সমস্ত পরিস্থিতিতে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর সাথে ও তাঁর বিধিবিধানের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। আর মুসলিম ব্যক্তির সফর বা ভ্রমণও ওই সমস্ত বিধিবিধানের সাথে সব দিক দিয়ে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে, যে সমস্ত বিধিবিধান প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ আমাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। যেহেতু সেই সমস্ত বিধিবিধানের মধ্যে ইহকাল ও পরকালে মানব সমাজের জন্য সর্ব প্রকারের মঙ্গল রয়েছে, যদি মানব সমাজ সেই বিধিবিধানগুলিকে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করতে পারে।
প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি তার সফর বা ভ্রমণকে এই ভাবে একটি ইবাদতে পরিণত করতে পারবে যে, সে এমন জায়গায় সফর করবে, যে সেখানে আল্লাহর ইবাদত করা হয়, যেমন:- হজ্জ পালন করা বা ওমরা পালন করা অথবা জ্ঞান ইত্যাদি অর্জন করা। আর সে তার সফরে বা ভ্রমণে এইভাবে নিয়ত বা উদ্দেশ্য ভালো রাখবে যে, সেখানে সে তার আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক ও তার রক্তের বন্ধন মজবুত করবে, তাদের প্রতি দয়া করবে, তাদেরকে আনন্দিত করবে, তার নিজের মন বৈধ পন্থায় ফুর্তি রাখবে এবং তাদেরও মন বৈধ পন্থায় ফুর্তি রাখতে। এর মাধ্যমে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর আনুগত্যের কাজে সাহায্য লাভ করা হবে এবং তাঁর হারামকৃত কাজ হতে বিরত থাকা যাবে।
ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তুমি বলে দাও: আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন এবং আমার মরণ সবকিছুই বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর একত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য”। (সূরা আল আনআম, আয়াত নং 162)।
মহাবিশ্ব প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর অগণন ও অসংখ্য নিদর্শনে পরিপূর্ণ রয়েছে। আর এই সমস্ত নিদর্শন তাঁর মহত্ত্ব, করুণা ও প্রজ্ঞার সত্য প্রমাণ বহন করে৷ তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (إنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الأَلْبَابِ)، سورة آل عمران، الآية 190. ভাবার্থের অনুবাদ: “নিশ্চয় সমস্ত আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে এবং দিবারাত্রির আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্যে রয়েছে অনেক নিদর্শন”। (সূরা আল ইমরান, আয়াত নং ১৯০)। সুতরাং প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তাঁর অসংখ্য নিদর্শনের বিষয়ে ঐকান্তিকভাবে গভীর মনোযোগের সাথে চিন্তা করে দেখার প্রতি অনেক উৎসাহ প্রদান করেছেন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: {أَوَلَمْ يَنْظُرُوا فِي مَلَكُوتِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ مِنْ شَيْءٍ} (الأعراف: 185). ভাবার্থের অনুবাদ: মহাবিশ্ব ও পৃথিবীর সকল সৃষ্টির উপর প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে প্রকৃত ইসলাম ধর্ম প্রত্যাখ্যানকারীরা কি কখনো ভেবে দেখবে না? (সূরা আরাফ: 185)।
তদ্রূপ নিরিবিলিতে বা নির্জনে থাকাও কোনো কোনো সময় ঐকান্তিকভাবে গভীর মনোযোগের সাথে নিজের জীবনের বিষয়ে এবং জীবনের কর্মের বিষয়ে মঙ্গলময় চিন্তা করার উত্তম সুযোগ হয়েছে। সুতরাং মানুষ যখন নির্জন স্থানে একা থাকবে আর মহান আল্লাহ ছাড়া তার কাছে কোনো পর্যবেক্ষণকারী থাকবে না, তখন তার জন্য নিজের জীবনের বিষয়ে এবং জীবনের কর্মের বিষয়ে মঙ্গলময় চিন্তা করার খুব ভালো সুযোগ হয়েছে।
আপনি যখন আপনার সফরের বা ভ্রমণের নির্দিষ্ট স্থানে মরুভূমিতে বা অন্য কোনো জায়গায় আপনি পৌঁছাবেন, তখন আপনার জন্য নিম্নের দোয়াটি পাঠ করা হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের একটি শিক্ষা।
عَنْ خَوْلَةَ بِنْتِ حَكِيْمٍ اَلسُّلَمِيَّةِ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا تَقُوْلُ سَمِعَتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُوْلُ: "مَنْ نَزَلَ مَنْزِلًا ثُمَّ قَالَ: أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ؛ لم يَضُرُّهُ شَيْءٌ، حَتَّى يَرْتَحِلَ مِنْ مَنْزِلِهِ ذَلِكَ". (صحيح مسلم، رقم الحديث54 - (2708)،). অর্থ: খাওলা বিনতে হাকীম আস্সুলামীইয়া [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন: আমি আল্লাহর রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি: তিনি বলেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যখন কোনো স্থানে অবতরণ করবে এবং এই দোয়াটি পাঠ করবে: "أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ". (অর্থ: “আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীসমূহের দ্বারা মহান আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তাঁর সৃষ্টি জগতের সমস্ত অমঙ্গল হতে”) । তখন সেখান থেকে প্রস্থান করা পর্যন্ত সেখানে তার কোনো প্রকারের ক্ষতি সাধন হবে না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 54 -(2708)]