মডেল: বর্তমান বিভাগ
![](/storage/thumbnails/academy/trips/compressed/maxresdefault_eqfa3oo.jpg)
পাঠ্য বিষয় সফর বা যাত্রা কিংবা পর্যটনে নামাজ পড়ার এবং রোজা রাখার বিধিবিধান
প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি যখন পিকনিকের জন্য কোনো জায়গায় ঘুরতে যাবে অথবা ভ্রমণ করতে যাবে, তখন সেই জায়গায় বা সেই জায়গার নিকটে যদি মাসজিদ না থাকে, তাহলে সেই জায়গায় প্রত্যেক নামাজের জন্য আজান দিয়ে নামাজ পড়া প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা সম্মত কাজ হবে।
![](/storage/academy/salah/prayer13.jpg)
অর্থ: আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আবু সয়াসয়া [রাহিমাহুল্লাহ] হতে বর্ণিত। তাকে তার পিতা সংবাদ দিয়েছেন যে, আবু সাঈদ আলখুদরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁকে বলেছেন: আমি দেখছি তুমি ছাগল চরানো এবং দেহাতে বা পল্লিগ্রামে থাকতে ভালোবাসো। তাই তুমি যখন ছাগল নিয়ে থাকবে অথবা দেহাতে থাকবে, তখন তুমি নামাজের জন্য আজান দিবে। এবং আজান দেওয়ার সময় উচ্চকণ্ঠে আজান দিবে। কেননা, জিন, মানুষ বা অন্য যে সব বস্তু তোমার আজান শুনবে, সে সব বস্তু কিয়ামতের দিন মুআজ্জেনের উচ্চ মর্যাদার জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবে। আবু সাঈদ আলখুদরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] বলেন: এই কথাটি আমি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছ থেকে শুনেছি। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৯]।
এই হাদীসটির দ্বারা আজান দেওয়ার মর্যাদা জানা যায়। সুতরাং যারা সফরে থাকবে, তারা যেন আজান দেওয়াতে লজ্জা না করে। বা আজান দেওয়া হতে বিরত না থাকে। কেনা অন্য হাদিসে আছে: “মুআজ্জেনের কণ্ঠস্বরের আওয়াজ যত দূর ছড়াবে, ততো দূরের সমস্ত রসযুক্ত বস্তু এবং রসহীন বস্তু তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে”। [সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং ৭২৪ এবং আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী হাদীসটিকে হাসান সহীহ (সুন্দর সঠিক) বলেছেন]।
![](/storage/academy/trips/maxresdefault (1).jpg)
যে ব্যক্তি সফরে বা ভ্রমণে থাকবে, তার প্রতি কিবলার দিকটি জানার চেষ্টা করা অপরিহার্য হবে। আর এর উদ্দেশ্য হলো মক্কার দিকটি নির্ণয় করা। এবং যদি কিবলা বা কাবা ঘরকে দেখা সম্ভব না হয়, তাহলে তার দিকে মুখ করে নামাজ পড়া যথেষ্ট হবে। আর একেবারে নির্ভুলভাবে কিবলা বা কাবা ঘরকেই নির্ধারিত করা জরুরি নয়। যেহেতু এই রকমভাবে নির্ধারিত করা কঠিন বিষয়। তাই সাহাবীদের কাছ থেকে এই রকম নির্ভুলভাবে নির্ধারিত করার বিষয়টি আসেনি।
![](/storage/NSGEWkqSC2uhsRCT3540lfvh0HPBwuX5dNV3NrlI.jpeg)
যদি কোনো ব্যক্তি কিবলা বা কাবা ঘরের দিক নির্ণয় করার জন্য কাবা ঘরের দিকের সন্ধান করে এবং নামাজ পড়ে, তাহলে তার নামাজ সঠিক হবে। যদিও সে নামাজ পড়ার পর জানতে পারে যে, কিবলার দিক ভুল করে সে নামাজ পড়েছে। আর তাকে এই ক্ষেত্রে সেই নামাজ পুনরায় পড়তে হবে না। তবে নামাজ পড়ার অবস্থায় যখন সে কাবা ঘরের দিক নির্ণয়ের বিষয়টি জানতে পারবে, তখন সে কিবলার দিকে ফিরে নামাজ পড়বে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যখন কিবলা বা কাবা ঘরের দিক নির্ণয় করার জন্য কাবা ঘরের দিকের সন্ধান না করে নামাজ পড়বে এবং নামাজ পড়ার পর জানতে পারবে যে, সে কিবলার দিক ভুল করে নামাজ পড়েছে, তখন তাকে এই ক্ষেত্রে সেই নামাজ পুনরায় পড়তে হবে।
কিবলার দিক নির্ণয় করার জন্য এই বিষয়ের যন্ত্র ব্যবহার করা যথেষ্ট হবে। কিংবা সূর্য ইত্যদির নির্ভরযোগ্য ইঙ্গিত বা আলামতের দ্বারা কিবলার দিক নির্ণয় করাও যথেষ্ট হবে। অথবা এলাকা বা শহরের কোনো বিশ্বস্ত ব্যক্তির মাধ্যমেও কিবলার দিক নির্ণয় করা চলবে। কিংবা কোনো মাসজিদের মেহরাবের দিক দেখে কিবলার দিক নির্ণয় করাও যথেষ্ট হবে।
সফরে বা ভ্রমণে থাকার সময় নামাজের যত্ন করা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। আর এটি হলো একটি মানুষের ইমানের সত্য একটি নিদর্শন। কাজগুলোর একটি এবং এটি বান্দার ঈমানের আন্তরিকতার প্রমাণ।
![](/storage/academy/salah/salah.jpg)
হাদীসে এসেছে: “জামায়াতের সহিত একটি নামাজ পড়া হলো পঁচিশটি নামাজ সমতুল্য; তবে কোনো ব্যক্তি যখন মরুভূমিতে একাই নামাজ পড়বে এবং তাতে রুকু সিজদা সম্পূর্ণরূপে করবে, তখন তার একটি নামাজ হবে পঞ্চাশটি নামাজ সমতুল্য”। [সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৬০]।
এই মর্যাদার কারণ এটা হতে পারে যে, সেই ব্যক্তি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর সাথে গভীরভাবে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছে এবং তাঁকে ভক্তিসহকারে ভয় করে তাঁর সঠিক ভক্ত হতে পেরেছে। তাই সে নির্জন স্থানে বা নিরিবিলিতে থাকা সত্ত্বেও তাঁর উপাসনায় মগ্ন রয়েছে। তাই হাদীসে এসেছে: “তোমাদের প্রতিপালক খুশি হন সেই ছাগলের রাখালের প্রতি, যে ছাগলের রাখাল একাই পর্বতচূড়ায় নামাজের জন্য আজান দেয় এবং নামাজ পড়ে। তাই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ উচ্চ স্থানের ফেরেশতাগণকে বলেন: দেখ আমার এই সুপ্রিয় ব্যক্তিকে! সে নামাজের জন্য আজান দিচ্ছে এবং নামাজ পড়ছে আর ভক্তিসহকারে ভয় করে আমাকে মেনে চলছে। তাই আমি আমার এই সুপ্রিয় ব্যক্তির সমস্ত পাপ ক্ষমা করেদিলাম এবং তাকে জান্নাতবাসী করে দিলাম। (আবু দাউদ 1203)।
শীতের এলাকায় অনেক লোক তাদের সফরে বা ভ্রমণে আগুন জ্বালায়। তাই সেই আগুন কোনো কোনো সময় নামাজ পড়ার সময় মুসল্লির সামনের দিকে থাকে। অতএব জেনে রাখা দরকার যে, নামাজ পড়ার সময় আগুনকে সামনের দিকে না রাখাই উত্তম। বিশেষ করে ইমামের জন্য আগুনের দিকে মুখ করে নামাজ পড়া উচিত নয়। মাজুসী জাতি আগুনের উপাসনা করে। তাই তাদের সাথে মুসলিম জাতির যেন সাদৃশ্য না হয়। এবং আগুন মুসল্লিকে যেন তার নামাজে অমনোযোগী না করে দেয়। তাই জন্য আগুনের দিকে মুখ করে নামাজ না পড়াই উচিত। তবে যদি উষ্ণতার প্রয়োজন হয় বা জায়গা পরিবর্তন করতে কোনো অসুবিধা হয়, তাহলে আগুনকে সামনে রেখে নামাজ পড়লে কোনো সমস্যা নেই।
![](/storage/academy/salah/salah.jpg)
দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়ার অর্থ হলো এই যে, আপনি জোহরের নামাজ পড়বেন আর তার সাথে আসরের নামাজকে একত্রিত করে পড়বেন। অথবা আপনি মাগরিবের নামাজ পড়বেন আর তার সাথে ইশার নামাজকে একত্রিত করে পড়বেন। সুতরাং আপনি দুই নামাজকে একত্রিত করে একটি নামাজের সময়ে পড়বেন। তাতে কোনো নামাজকে আগিয়ে দেওয়া হোক অথবা পিছিয়ে দেওয়া হোক, তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়ার জন্য কোনো কারণ থাকতে হবে।
![](/storage/academy/salah/istisqa.jpg)
কোনো নামাজকে কসর করে পড়ার অর্থ হলো এই যে, চার রাকাআত বিশিষ্ট নামাজকে দুই রাকাআত করে পড়া। অর্থাৎ জোহরের নামাজ, আসরের নামাজ এবং ইশার নামাজ। তবে মাগরিবের নামাজ এবং ফজরের নামাজ কসর করে পড়া চলবে না।
কোনো নামাজকে একত্রিত করে পড়া এবং কসর করে পড়ার কারণ হলো: সফর করা বা ভ্রমণ করা। আর সফর বা ভ্রমণের অর্থ হলো এই যে, নিজের এলাকা বা শহর থেকে এতটাই দূরে চলে যাওয়া যে, সেটাকে সাধারণভাবে সফর বা ভ্রমণ বলা হয়। আর এই সফর বা ভ্রমণের দূরত্ব কতকগুলি আলেমের মতে হলো আশি (৮০) কিলোমিটার। অতএব যে ব্যক্তি নিজের এলাকা বা শহরের নিকটেই পিকনিকের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করবে, তার জন্য নামাজ কসর করে পড়া বৈধ হবে না। কিন্তু যখন সে নিজের এলাকা বা শহর থেকে এতটাই দূরে চলে যাবে যে, সেটাকে সাধারণভাবে সফর বা ভ্রমণ বলা হয়, তাহলে তার জন্য এই অবস্থায় নামাজ কসর করে পড়া বৈধ হবে। যদিও তার এই সফর বা ভ্রমণ পিকনিকের উদ্দেশ্যে হয়।
মুসাফিরের জন্য নামাজ কসর করে পড়া হলো একটি সুন্নাত। কিন্তু সে যদি সফরের অবস্থায় সফরের রাস্তায় থাকে, তাহলে তার জন্য দুই নামাজকে একত্রিত করে একটি নামাজের সময়ে দুইটি নামাজ পড়া বৈধ বা জায়েজ হবে। আর এই অবস্থায় তার সফরের পরিস্থিতি মোতাবেক কোনো নামাজকে আগিয়ে পড়তে পারে বা পিছিয়ে পড়তে পারে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। আর কোনো মুসাফির যদি কোনো একটি স্থানে স্থির অবস্থায় অবস্থান করে, তাহলে তার জন্য প্রত্যেকটি নামাজকে তার নির্দিষ্ট সময়ে পড়া উত্তম বলে বিবেচিত হবে, বিশেষ করে মাসজিদের জামাআতের সহিত যদি তা সম্ভব হয় তবে।
মুসাফিরদের জন্য এবং ভ্রমণকারীদের জন্য নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া দরকার। তাই তারা যেন সফরের ব্যস্ততার কারণে যথাসময়ে বা সময়মতো নামাজ পড়তে অবহেলা না করে। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (فَإِذَا اطْمَأْنَنتُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ ۚ إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا)، سورة النساء، الآية 103. ভাবার্থের অনুবাদ: “যখন তোমরা পারিপার্শ্বিক নিরাপত্তা লাভ করবে, তখন যথাযথভাবে নামাজ প্রতিষ্ঠিত করবে। প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজের প্রতি নির্ধারিত সময়ে নামাজ প্রতিষ্ঠিত করা ও পড়া একটি অপরিহার্য ফরজ বিষয়”। (সূরা আন নসিা, আয়াত নং নং ১০৩ এর অংশবিশেষ)।
মুসলিম ব্যক্তি যখন দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়বে, তখন তার জন্য একটি আজান দেওয়া যথেষ্ট হবে। আর প্রত্যেকটি নামাজের জন্য আলাদা আলাদা করে ইকামত দিবে। এবং দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়ে নেওয়ার পর সুন্নাতে মুআক্কাদার নামাজগুলি পড়বে তারপর নামাজের পরে পঠনীয় জিকিরগুলি পাঠ করবে।
![](/storage/academy/salah/salah.jpg)
কতকগুলি সফরে দুই নামাজকে একত্রিত করে এবং কসর করে নামাজ পড়ার বৈধ কারণের বিষয়ে কোনো কোনো সময় মতভেব দেখা দেয়। তবে এই বিষয়ে ইমাম ও দলের প্রধান নেতা, যেমন:- পিতা হবেন আসলে দায়ী। তাই তিনি যদি জ্ঞানবান হন আর জ্ঞানীদের সাথে পরামর্শ করেন তারপর তিনি যদি দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়া বৈধ না মনে করেন, তাহলে তিনি দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়বেন না। আর দলের লোকদের জন্য বিতর্কে জড়িয়ে পড়া উচিত হবে না। ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও ঐক্য বজায় রাখাও হলো একটি ইবাদত বা উপাসনা।
বিশেষ করে সফরে বা ভ্রমণে রোজা রাখার ইচ্ছা না করাই উচিত। তবে কোনো ব্যক্তির যদি কোনো রোজা রাখার অভ্যাস থাকে, যেমন:- দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে: সোমবারের রোজা এবং বৃহস্পতিবারের রোজ। আর সেই দিনেই সফর হয়ে যায়, তাহলে সেই দিনে উক্ত রোজা রাখলে কোনো বাধা বা সমস্যা নেই।
![](/storage/academy/fasting/560fotolia_92456361.jpg)
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: كُنَّا نُسَافِرُ مَعَ النَّبيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؛ فَلَمْ يَعِبِ الصَّائِمُ عَلَى الْمُفْطِرِ، وَلاَ الْمُفْطِرُ عَلَى الصَّائِمِ. (صحيح البخاري، رقم الحديث 1947، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 98 - (1118)،). অর্থ: আনাস বিন মালিক [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রমাজান মাসে আমরা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে সফর করতাম। সেই সময় রোজা পালনকারী ব্যক্তি রোজা ভঙ্গকারী ব্যক্তির কোনো নিন্দা করেনি। এবং রোজা ভঙ্গকাকারী ব্যক্তিও রোজা পালনকারী ব্যক্তির কোনো নিন্দা করেনি। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1947 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 98 -(1118), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।