মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় সফর বা যাত্রা কিংবা পর্যটনে সাধারণভাবে যে সমস্ত বিধিবিধানের খুব বেশি প্রয়োজন হয়, সে সমস্ত বিধিবিধানের বিবরণ।
ঘুমানোর পূর্বে সেই আগুন নিভিয়ে দেওয়া উচিত, যে আগুন সাধারণভাবে শীতকালের ভ্রমণে তাঁবু ইত্যাদির ভিতরে জ্বালানো হয়।
অর্থ: আবু মুসা আল আশআরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: একবার রাত্রি কালে মদীনার এক ঘরে আগুন লেগে ঘরের লোকজনসহ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। এদের অবস্থা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট উপস্থাপন করা হলে, তিনি বলেন: “এই আগুন নিঃসন্দেহে তোমাদের চরম শত্রু। সুতরাং তোমরা যখন ঘুমাতে যাবে, তখন তোমাদের সংরক্ষণের জন্য তোমরা আগুন নিভিয়ে দিবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৯৪ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১ - (২০১৬)]। অন্য বর্ণনায় আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন: “যখন তোমরা ঘুমাবে তখন তোমাদের ঘরগুলিতে আগুন রেখে ঘুমাবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৯৩ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০ - (২০১৫)]। আরো একটি আলাদা বর্ণনায় আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন: “কোনো একটি ইঁদুর জালানো বাতির ফিতা টেনে নিয়েছে এবং ঘরে আগুন লাগিয়ে গৃহবাসীদেরকে জ্বালিয়ে দিয়েছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩১৬ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৬ - (২০১২)]।
আসলে শিকার ধরা বৈধ কাজ। তবে শিকার ধরার কাজে খুব মগ্ন হয়ে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের জরুরি কর্ম এবং পরিবারের ও পোষ্যবর্গের ভরণপোষণ ও খোরপোশের সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন ত্যাগ করা উচিত নয়। আর শিকার ধরার বিষয়টিকে অপচয়, অসার কাজ এবং অহঙ্কারের উপাদান হিসেবে গ্রহণ করাও উচিত নয়। তাই এই বিষয়ে হাদীসে এসেছে: “যে ব্যক্তি দেহাতে বা পল্লিগ্রামে বসবাস করবে, সে ব্যক্তি শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ করবে। আর যে ব্যক্তি শিকার ধরার জন্য মগ্ন হবে, সে ব্যক্তি দায়িত্ব পালনে বেখেয়াল হবে”। (আবু দাউদ ২৮৫৯)।
প্রকৃতপক্ষে সমস্ত প্রজাতির প্রাণী শিকার করা এবং খাওয়া বৈধ। তবে যে সমস্ত প্রজাতির প্রাণী শিকার করা প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক জায়েজ নয়, সে সমস্ত প্রজাতির প্রাণী শিকার করা বৈধ নয়, যেমন:- সকল প্রকারের হিংস্র পশু খাওয়া অবৈধ। তাই দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে: বাঘ, নেকড়ে বাঘ আর শিয়াল বা শৃগাল ইত্যাদি। তদ্রূপ ওই সমস্ত পাখি খাওয়া হারাম, যে সমস্ত পাখির তীক্ষ্ণধার নখ আছে, যেমন:- চিল জাতীয় মাংসাশী বৃহৎ পাখি বা ঈগল ইত্যাদি। সেই রূপ বিষাক্ত প্রাণী খাওয়া হারাম, যেমন:- সাপ সাপিনী ইত্যাদি।
সারা বছর বন্য ও সামুদ্রিক প্রাণী শিকার করা জায়েজ। শুক্রবার বা রমজান মাস বা সমস্ত হারাম মাস এবং অন্যান্য মাসের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তবে মক্কা বা মদীনার পবিত্র স্থানে শিকার করা হারাম। আর অন্য কোনো লোকের মালিকানাধীন পশু শিকার করা হারাম। এবং হজ্জ বা ওমরা পালনের জন্য ইহরাম বাঁধা অবস্থায় বন্য প্রাণী শিকার করা নিষিদ্ধ।
একটি জরুরি শর্ত হলো এই যে, যে ব্যক্তি শিকার করবে সে যেন আবশ্যই মুসলিম ব্যক্তি হয়। আর সে যেন শিকার করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে এবং তার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুর বা পাখি দ্বারা শিকার করে। তাই যদি কোনো পাখি নিজের ইচ্ছায় উড়ে গিয়ে শিকার করে অথবা বন্দুকের গুলি অজান্তে ছুটে গিয়ে কোনো প্রাণীকে লাগে, তাহলে তা খাওয়া জায়েজ নয়। তবে হ্যাঁ! সেই প্রাণীটিকে যদি সে জীবিত অবস্থায় পায় এবং তাকে বিসমিল্লাহ বলে জীবিত অবস্থায় জবাই করে, তাহলে তার জন্য তা খাওয়া বৈধ হবে।
অরেকটি জরুরি শর্ত হলো এই যে, শিকারকৃত প্রাণীর মৃত্যু যেন শিকার করার সময় আঘাতিত হওয়ার কারণে হয়, শিকারকারী ব্যক্তি যেন শিকারকৃত প্রাণীর শ্বাসরোধ না করে বা তাকে পানিতে ডুবিয়ে না দেয় অথবা তাকে ভারী ওজনের কোনো বস্তু দ্বারা প্রহার না করে কিংবা তাকে উপর থেকে ফেলে না দেয়। আর সে যদি শিকারকৃত প্রাণীটিকে জীবিত অবস্থায় পায়, তাহলে তাকে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক জবাই করে।
কোনো শিকারকৃত প্রাণীকে অকারণে খেলাধুলা করার উদ্দেশ্যে হত্যা করা জায়েজ নয়। যেমন:- কোনো ব্যক্তি কোনো প্রাণীকে শিকার করে কিন্তু তাকে খায় না। তদ্রূপ কোনো মানুষকে শিকার করার হাতিয়ার বা যন্ত্র ও অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখানো জায়েজ নয়। সেই রূপ কোনো পাখিকে বেঁধে রেখে তাকে নিয়ে শিকার করার অভ্যাস করা বা চর্চা করা হলো পাপের কাজ।
আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] কুরাইশ বংশের কতকগুলি যুবকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। আর ওই সব যুবক একটি পাখিকে বেঁধে রেখে শিকার করার অভ্যাস করার জন্য তার দিকে লক্ষ্য করে কিছু নিক্ষেপ করছিলো। এবং তারা তাদের প্রতিটি ভুল লক্ষ্যের জন্য একটি করে তীর নির্ধারিত করে রেখেছিলো। আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] কে দেখার পর তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আব্দুল্লাহ বিন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] বললেন: এই কাজটি কে করেছে? যে ব্যক্তি এই কাজটি করেছে, মহান আল্লাহ তাকে অভিশপ্ত করুন। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সেই ব্যক্তিকে অভিশপ্ত করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো জিবন্ত প্রাণীকে বেঁধে রেখে তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে”। (বুখারি 5515, মুসলিম 1958)।
অন্য লোকদেরকে কোনো হাতিয়ার বা অস্ত্র দেখিয়ে ইঙ্গিত করা হারাম। যদিও তা নিরর্থক বেকার সময় নষ্ট করার উদ্দেশ্যে হয়। তাই হাদীসে এসেছে: (لا يُشيرُ أحدُكم إلى أخيه بالسِّلاحِ؛ فإنَّه لا يدري أحدُكم لعلَّ الشَّيطانَ ينزِعُ في يدِه؛ فيقعُ في حُفْرَةٍ مِنَ النَّارِ)، البخاري 7072، ومسلم 2617 অর্থ: “তোমাদের মাঝে কেউ যেন তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দ্বারা ইঙ্গিত না করে। কেননা, সে হয়তো জানে না শায়তান তার এই হাতিয়ার দ্বারা তার ভাইয়ের উপরে আঘাত করিয়ে তার ক্ষতিসাধন করতে পারে, ফলে সে জাহান্নামের গর্তে নিক্ষিপ্ত হবে”। (বুখারি 7072, মুসলিম 2617)। অন্য হাদীসে এসেছে: (مَنْ أَشَارَ إِلَى أَخِيهِ بِحَدِيدَةٍ، فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ تَلْعَنُهُ حَتَّى يَدَعَهُ، وَإِنْ كَانَ أَخَاهُ لِأَبِيهِ وَأُمِّهِ). (مسلم 2616) অর্থ: “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি ধারালো কিছু অস্ত্র দ্বারা ইশারা করবে, ফিরিশতাগণ তাকে অভিশপ্ত করতে থাকবেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে তাতে থেকে বিরত না হবে। যদিও সে তার এক মায়ের ও এক বাপের দিক থেকে সহোদর ভাই হয়”। (মুসলিম 2616)
যে ব্যক্তি শিকার করতে চায়বে, সে ব্যক্তির জন্য শিকার করার নিয়মকানুন জেনে নেওয়া অপরিহার্য হবে। আর নিজেকে এবং অন্যদেরকে রক্ষা করার বিধিবিধানও জেনে রাখা আর নিরাপত্তার যন্ত্রপাতিও নিজের সাথে রাখা দরকার। আর প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক জবাই করার নিয়ম পদ্ধতি জেনে নেওয়া আর শিকারী কুকুরের সাথে আচরণ পদ্ধতি জেনে নেওয়া উচিত। এবং শিকারকৃত প্রাণীর মৃত্যুবরণের অবস্থা ইত্যাদির বিষয়ে জ্ঞান থাকা দরকার। তাই এই সব বিষয় জানার জন্য জ্ঞানী ব্যক্তিদের প্রতি প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
আসলে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক সমস্ত খাদ্যদ্রব্য হালাল ও বৈধ। তবে যে সমস্ত খাদ্যদ্রব্যকে নির্দিষ্টভাবে নিষিদ্ধ বা হারাম করা হয়েছে, সে সমস্ত খাদ্যদ্রব্য নির্দিষ্টভাবে নিষিদ্ধ বা হারাম বলেই বিবেচিত হবে।
যে সমস্ত খাদ্যদ্রব্যকে এবং পানীয় দ্রব্যকে নির্দিষ্টভাবে নিষিদ্ধ বা হারাম করা হয়েছে, সে সমস্ত খাদ্যদ্রব্যের এবং পানীয় দ্রব্যের বিবরণ
জমিনে বা মরুভূমিতে অথবা বাজারে যে সমস্ত গাছপালা, ফলমূল ও শাকসবজি পাওয়া যায়, সে সমস্ত গাছপালা, ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া হালাল ও বৈধ। তবে মুসলিম ব্যক্তি যেন ওই সমস্ত গাছপালা, ফলমূল ও শাকসবজি না খায়, যে সমস্ত গাছপালা, ফলমূল ও শাকসবজির দ্বারা তার ক্ষতি হবে এবং ওই সমস্ত গাছপালা, ফলমূল ও শাকসবজিও যেন না খায়, যে সমস্ত গাছপালা, ফলমূল ও শাকসবজির অবস্থা সে জানে না।