মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় ইবাদত বা উপাসনার তাৎপর্য
প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক যে সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কথা ও কাজকে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ ভালবাসেন এবং পছন্দ করেন, সে সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কথা ও কাজকে ইবাদত বা উপাসনা বলা হয়। সুতরাং প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পছন্দনীয় সকল প্রকারের কথা ও কাজ ইবাদত বা উপাসনা বলেই বিবেচিত হবে।
প্রকৃত ইসলাম ধর্মে উপাসনা বা ইবাদতের তাৎপর্য:
প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক উপাসনা বা ইবাদত হলো: অতিভক্তি ও ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধাসহকারে আত্মসমর্পণের সহিত পরম আনুগত্য করা। আর এটি হলো প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহরই অধিকার তাঁর সৃষ্ট মানব জাতির প্রতি। তাই সকল প্রকারের উপাসনা বা ইবাদত একমাত্র তাঁরই অধিকার, অন্য কারো নয়। আর উপাসনা বা ইবাদতের মধ্যে পড়ছে: ওই সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কথা ও কাজ, যে সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কথা ও কাজকে সেই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ ভালোবাসেন এবং পছন্দ করেন। আর তিনি যে সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কথা ও কাজকে ভালোবাসেন, সে সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কথা ও কাজ সম্পাদন করার প্রতি তিনি সমস্ত মানুষকে আদেশ দিয়েছেন ও উৎসাহিত করেছেন। প্রকাশ্য ও কথা ও কাজের মধ্যে রয়েছে নামাজ পড়া, জাকাত প্রদান করা এবং হজ্জ পালন করা। অপ্রকাশ্য কাজের মধ্যে রয়েছে হৃদয়ে মহান আল্লাহর জিকির বা স্মরণ, তাঁর বিপরীত পথ অবলম্বন করা হতে তাঁকে ভয় করা, তাঁর উপরে ভরসা রাখা, তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা এবং অন্যান্য বিষয়।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্ট মানব জাতির প্রতি তিনি অনুগ্রহ করে বিভিন্ন প্রকারের উপাসনা বা ইবাদতের ব্যবস্থা ও বিধিবিধান তাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন। আর সেই সমস্ত উপাসনা বা ইবাদতের মধ্যে কয়েকটি উপাসনা বা ইবাদত হলো:
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তাঁর মহাপ্রজ্ঞার দ্বারা তাঁর উপাসনা বা ইবাদতের নিয়ম পদ্ধতি একাধিক এবং বিচিত্র ও বিভিন্ন প্রকারের করেছেন। যাতে করে মানুষ সর্বদা উপাসনা বা ইবাদতের কাজে তত্পর ও উত্সাহিত থাকতে পারে এবং ক্লান্ত ও বিরক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে। তদ্রূপ সে যেন ওই উপাসনা বা ইবাদতে বেশি আগ্রহী হয়, যে উপাসনা বা ইবাদতে সে বেশি সক্রিয় থাকতে পারবে।
যেমন উপাসনা বা ইবাদত রয়েছে বিচিত্র ও বিভিন্ন প্রকারের, তেমনি সমাজের মানুষও রয়েছে তাদের ইচ্ছা, আগ্রহ এবং ক্ষমতার দিক দিয়ে বিচিত্র ও বিভিন্ন প্রকারের। তাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি অন্য লোকের তুলনায় উপাসনা বা ইবাদতে বেশি সক্রিয় থাকতে পারে। আবার কোনো ব্যক্তি অন্য লোকের তুলনায় মানুষের বেশি উপকার করতে পারে এবং দয়া প্রদর্শন করতে পারে। কিন্তু আবার কোনো কোনো মানুষ বেশি নফল রোজা রাখতে পারে। আর অন্য প্রকারের মানুষ আবার বেশি পবিত্র কুরআন পাঠ ও মুখস্থ করতে পারে।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে বেশি নফল নামাজ আদায়কারী, তাঁকে নামাজের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে মুজাহিদ তাঁকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে, যে রোজা পালনকারী, তাঁকে রোজার দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সাদকা দানকারী তাঁকে সাদকার দরজা থেকে ডাকা হবে”। এরপর আবু বাকর [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] বললেন: হে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল! এই সব দরজা থেকে একজন একজন করে ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সমস্ত দরজা থেকে ডাকা হবে? আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন: “হ্যাঁ। আমি আশা করি তুমি তাঁদের মধ্যে হবে”। (বুখারি: 1897, মুসলিম: 1027)।
প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির উপাসনা বা ইবাদত তার জীবনের সকল ক্ষেত্রের সাথে জড়িয়ে থাকবে যখন সে তার সমস্ত বৈধ কর্মের দ্বারা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইচ্ছা রাখবে। যেহেতু প্রকৃত ইমলাম ধর্মে উপাসনা বা ইবাদত শুধুমাত্র সুপরিচিত নামাজ, রোজা ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি যখন তার ভালো নিয়তের সহিত সঠিকভাবে কোনো মঙ্গলদায়ক কাজ করবে, তখন তার সেই মঙ্গলদায়ক কাজ উপাসনা বা ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হবে এবং সেই কাজের মাধ্যমে পুণ্য লাভ করবে। অতএব সে যদি মহান আল্লাহর আনুগত্যের উদ্দেশ্যে শরীরকে শক্তিশালী করার জন্য পানাহার করে বা ঘুমায়; তাহলে তার মাধ্যমে সে পুণ্য লাভ করবে।
প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির সারা জীবন হলো প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর জন্য। সুতরাং সে মহান আল্লাহর আনুগত্যের উদ্দেশ্যে শরীরকে শক্তিশালী করার জন্য পানাহার করে। তাই তার পানাহার মহান আল্লাহর একটি উপাসনায় বা ইবাদতে পরিণত হয়। এবং সে নিজেকে হারাম থেকে রক্ষা করার জন্য বিবাহ করে; তাই তার বিবাহ একটি উপাসনায় বা ইবাদতে পরিণত হয়। আর প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির এই রকম পবিত্র নিয়ত বা উদ্দেশ্যের কারণে তার তার ব্যবসা, তার চাকুরী এবং তার অর্থ উপার্জনের পরিশ্রম বা মেহনত মহান আল্লাহর উপাসনায় বা ইবাদতে পরিণত হয়। সই রূপ প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির জ্ঞান লাভ করা, সার্টিফিকেট অর্জন করা, গবেষণা করা, কোনো ভালো জিনিস আবিষ্কার ও উদ্ভাবন করাও হলো মহান আল্লাহর ইবাদত। আর নারী যখন তার স্বামী, তার সন্তান এবং তার গৃহের যত্ন করে, তখন সেটাও হয় তার মহান আল্লাহর উপাসনা বা ইবাদত। এইভাবে ভালো উদ্দেশ্যের কারণে এবং পবিত্র নিয়তের কারণে মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রের সাথে, সকল কর্মের সাথে এবং মঙ্গলদায়ক সমস্ত আচণের সাথে মহান আল্লাহর উপাসনা বা ইবাদত জড়িয়ে আছে।
সৃষ্টির আসল রহস্য:
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ • مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ • إِنَّ اللهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ) (الذاريات: 56-58). ভাবার্থের অনুবাদ: “আমার উপাসনার জন্যই আমি মানব জাতিকে ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য প্রদান করবে। মহান আল্লাহই তো জীবিকাদাতা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত”। (সূরা জারিয়াত: 56-58)।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে, মানব জাতি ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করার রহস্য ও উদ্দেশ্য হলো এই যে, তারা যেন তাদের প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর উপাসনা করে। আর জেনে রাখে যে, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তাদের উপাসনার মুখাপেক্ষী নন। কিন্তু মানব জাতি ও জিন জাতি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর উপাসনার সদাসর্বদা মুখাপেক্ষী। যেহেতু তারা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর উপরে সর্বদা সব দিক দিয়ে নির্ভরশীল।
আর যখন মানুষ নিজের জীবনের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে অবহেলা করবে বা উপেক্ষা করবে এবং এই জগতের তামাশা ও মজা উড়ানোর কাজে নিমজ্জিত হবে আর প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জাতির সৃষ্টির নির্ধারিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ভুলে যাবে, তখন সে পৃথিবীর সাধারণ সৃষ্টি জগতের বস্তুর মতো হয়ে যাবে এবং তার কোনো বৈশিষ্ট্য থাকবে না। সুতরাং এই পৃথিবীর সমস্ত জীবজন্তু পানাহার করছে এবং আমোদ প্রমোদ ও খেলাধুলা করছে। আর তাদের পরকালে কোনো হিসাব ও জবাবদিহি বা কৈফিয়ত নেই। কিন্তু মানব জাতির জন্য হিসাব ও জবাবদিহির ব্যবস্থা আছে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَالَّذِينَ كَفَرُوا يَتَمَتَّعُونَ وَيَأْكُلُونَ كَمَا تَأْكُلُ الْأَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَهُمْ) (محمد: 12). ভাবার্থের অনুবাদ: “এবং যারা অমুসলিম, তারা আমোদ প্রমোদ ও খেলাধুলায় মত্ত রয়েছে এবং চতুস্পদ জন্তুর মতো আহার করছে। তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম”। (সূরা মুহাম্মাদ: 12)। তারা আসলে তাদের জীবনের প্রধান লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্যে সমস্ত জীবজন্তুর মতো হয়ে গেছে। তবে তারা তাদের কর্মের ফল ভোগ করবে এবং শাস্তি পাবে; কেননা তাদেরকে বুদ্ধি প্রদান করা হয়েছে। যাতে তারা তাদের বুদ্ধির দ্বারা ভালো ও মন্দ উপলব্ধি করতে পারে। অথচ এই পৃথিবীর জীবজন্তুকে বুদ্ধির দ্বারা ভালো ও মন্দ উপলব্ধি করার কোনো ক্ষমতা প্রদান করা হয়নি।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ যে সমস্ত উপাসনা করার আদেশ দিয়েছেন, সে সমস্ত উপাসনার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ রয়েছে, আর এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের মধ্যে একটি স্তম্ভ অন্যটির পরিপূরক হিসেবে পরিগণিত।
ইবাদত বা উপাসনার স্তম্ভসমূহ
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তাঁর মানব সমাজের প্রতি যে উপাসনা ফরজ করেছেন, সেই উপাসনাতে মহান আল্লাহ কাছে আত্মসমর্পণ করা, তাঁর বশ্যতা স্বীকার করা, তাঁর বিপরীত পথ অবলম্বন করা হতে ভয় করা অপরিহার্য। এবং এর সাথে সাথে তাঁকে নিখুঁতভাবে পূর্ণ ভালবাসা এবং তাঁর প্রতি আকাঙ্ক্ষা করা ও আশা রাখা অপরিহার্য।
এই কারণে যে ভালবাসার সাথে আত্মসমর্পণ করা, বশ্যতা স্বীকার করা এবং ভয় করার বিষয়টি থাকবে না, যেমন:- খাদ্য এবং অর্থের ভালবাসা, সেই ভালবাসা ইবাদত বা উপাসনার মধ্যে পড়বে না। সেই রূপ যে ভয়ের মধ্যে ভালবাসা থাকবে না, যেমন:- প্রাণহারক বা হিংস্র প্রাণীর ভয় এবং অত্যাচারী শাসকের ভয়, সেই ভয় ইবাদত বা উপাসনার মধ্যে পড়বে না। অতএব প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর জন্য যখন কোনো কর্মে ভয়, ভালবাসা এবং আশা একত্রিত অবস্থায় পাওয়া যাবে, তখন সেই কর্মটি ইবাদত বা উপাসনা হিসেবে পরিগণিত হবে। আর ইবাদত বা উপাসনা শুধুমাত্র প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ জন্য সম্পাদিত হওয়া অপরিহার্য।
সুতরাং যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি নামাজ পড়বে বা রোজা রাখবে, তখন তা কেবলমাত্র প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর প্রতি ভালবাসা, আশা এবং তাঁর কাছ থেকে পুণ্য লাভের আশায় সম্পাদিত হবে আর তাঁর শাস্তির ভয়েও সম্পাদিত হবে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যখন এই জন্য নামাজ পড়বে, তাকে যেন কেউ না বলে যে, সে নামাজ পড়ে না। সেই রূপ কোনো ব্যক্তি যদি স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য রোজা রাখে, তাহলে এই সব ক্ষেত্রে সেই নামাজ ও রোজা মহান আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনার মধ্যে পড়বে না।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে তাঁর নাবীগণের প্রশংসার বিষয়ে বলেছেন: ভাবার্থের অনুবাদ: “তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তারা আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকতো এবং তারা ছিলো আমার কাছে বিনীত”। (সূরা আম্বিয়া: ৯০)
ইবাদত বা উপাসনার প্রকারসমূহ
১। শুধুমাত্র ইবাদত বা উপাসনা
শুধুমাত্র ইবাদত বা উপাসনা হলো সেই সমস্ত কর্ম, যে সমস্ত কর্ম একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সম্পাদন করার আদেশ প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ ও তাঁর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] প্রদান করেছেন। আর এই সমস্ত কর্ম শুধুমাত্র ইবাদত বা উপাসনা ছাড়া অন্য কিছু হয় না, যেমন:- নামাজ পড়া, রোজা রাখা, হজ্জ পালন করা, দোয়া করা এবং তাওয়াফ করা ইত্যাদি। এই সমস্ত ইবাদত বা উপাসনা মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য সম্পাদন করা জায়েজ নয়। সেই রূপ এই সমস্ত ইবাদত বা উপাসনার প্রতিদান বা সুফল মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে চাওয়া বৈধ নয়।
২। ভালো নিয়ত বা ভালো উদ্দেশ্যের কারণে যা ইবাদত বা উপাসনা হয়ে থাকে
এই সমস্ত ইবাদত বা উপাসনার মধ্যে রয়েছে ওই সমস্ত সচ্চরিত্রের বিষয়, সে সমস্ত সচ্চরিত্রের বিষয়ের প্রতি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ আদেশ প্রদান করেছেন বা উৎসাহ প্রদান করেছেন, যেমন:- পিতা-মাতার সম্মান করা, মানুষের প্রতি সদয় হওয়া, নিপীড়িতদের সাহয্য করা ইত্যাদি। এই সমস্ত মহৎ অভ্যাস ও সচ্চরিত্রের সাধারণভাবে আদেশ প্রদান করেছেন মহান আল্লাহ। তাই এই সমস্ত মহৎ অভ্যাস ও সচ্চরিত্রের আদেশ প্রত্যাখ্যানে মুসলিম ব্যক্তির পাপ হয়ে থাকে। আর এই ধরণের ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বিস্তারিতভাবে অনুসরণ করা জরুরি নয়। এই ক্ষেত্রে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বিপরীত পথ অবলম্বন না করা এবং অবৈধ বিষয়ে নিমজ্জিত না হওয়াই যথেষ্ট।
কোনো ব্যক্তি যখন এই সমস্ত কর্ম সম্পাদন করার সময় ভালো নিয়ত বা ভালো উদ্দেশ্য রাখবে আর এই সমস্ত কর্ম সম্পাদন করার সময় মহান আল্লাহর আনুগত্যের ইচ্ছা রাখবে, তখন সে এই সমস্ত কর্মের দ্বারা মহান আল্লাহর কাছে পুণ্য লাভ করবে এবং পুরস্কৃত হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি এই সমস্ত কর্ম সম্পাদন করার সময় মহান আল্লাহর আনুগত্যের ইচ্ছা রাখবে না, সে ব্যক্তি মহান আল্লাহর কাছে পুণ্য লাভ করবে না এবং পুরস্কৃতও হবে না। তবে সে গুনাগারও হবেনা। আর এই সমস্ত কর্ম সম্পাদনের মধ্যে রয়েছে: জাগতিক জীবনযাপনের বিষয়, যেমন:- ঘুম, কর্ম, ব্যবসা, খেলাধুলা ইত্যাদি। সুতরাং যে ব্যক্তি মঙ্গলদায়ক সমস্ত কর্ম সম্পাদন করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুণ্য লাভ করার ইচ্ছা রাখবে, সে ব্যক্তি মহান আল্লাহর কাছে পুণ্য লাভ করবে এবং পুরস্কৃতও হবে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ مَنْ أَحْسَنَ عَمَلًا) (الكهف: 30). ভাবার্থের অনুবাদ: “আমি সৎকর্মশীলদের পুণ্য বা পুরস্কার নষ্ট করি না”। (আল-কাহফ: 30)।
মহান আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা সঠিক ও কবুল হওয়ার জন্য দুইটি শর্ত রয়েছে:
তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলছেনে: (فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحًا وَلا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا) (الكهف: 110). ভাবার্থের অনুবাদ: “অতএব পরকালে মহাবিচার দিবসে যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর পুরস্কারের প্রত্যাশতি হবে, সে ব্যক্তি যেন প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার প্রতিপালক মহান আল্লাহর উপাসনায় কাউকে অংশীদার না করে”। (সূরা আল কাহাফ, আয়াত নং ১১০ এর অংশবিশেষ)।
(وَلا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَداً) মহান আল্লাহর এই পবিত্র বাণীর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত প্রকারের ইবাদত একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠতার সহিত বা আন্তরিকতার সহিত সম্পাদন করা অপরিহার্য। যেহেতু মহান আল্লাহর কোনো শরীক নেই। এবং عَمَلاً صَالِحًا মহান আল্লাহর এই পবিত্র বাণীর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা তাঁর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিয়ম পদ্ধতি মোতাবেক হতে হবে। যেহেতু সৎকর্মই হলো সঠিক কর্ম। আর কোনো কর্মকে সঠিক কর্ম ততক্ষণ পর্যন্ত বলা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সেই কর্মটি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিয়ম পদ্ধতি মোতাবেক না হবে। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুণ্য এবং পরকালে জান্নাত লাভ করার ইচ্ছা রাখবে, সে ব্যাক্তি উল্লিখিত আয়াতের দুইটি শর্ত মোতাবেক মহান আল্লাহর উপাসনা বা ইবাদত করেবে।