শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস ইমান স্থাপন করা। ‎

ভাগ্যের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা হলো ইমানের ষষ্ঠ ‎রুকন বা ষষ্ঠ ‎স্তম্ভ। তাই কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত ইমানদার মুসলিম হিসেবে পরিগণিত ‎হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ভাগ্যের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন না করবে। আপনি এই ‎অনুচ্ছেদে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক ভাগ্যের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস ‎স্থাপনের তাৎপর্য ও তার গুরুত্বপূর্ণ আনুষঙ্গিক বিষয় জানতে পারবেন। ‎

 

  • ভাগ্যের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপনের তথ্যের জ্ঞান লাভ করা ও তার গুরুত্বের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা।
  • ভাগ্যের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপনের সুফলের জ্ঞান লাভ করা।

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

ভাগ্যের প্রতি ইমানের অর্থ:‎

ভাগ্যের প্রতি ইমান হলো এইভাবে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে, সকল প্রকারের মঙ্গল ও ‎অমঙ্গল প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর অকাট্য ফয়সালা মোতাবেক ‎নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে সীমিত। আর তিনি তাঁর ইচ্ছামতো যা কিছু করতে চান, ‎তাই তিনি করেন। তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই সংঘটিত হয়না এবং তাঁর ইচ্ছার বিপরীত ‎কিছুই উদ্ভাবিত হয়না। তাই সৃষ্টি জগতে তাঁর নির্ধারিত আজ্ঞা বা হুকুমের পরিধির ‎বাইরে কোনো কিছুই বিচরণ করার ক্ষমতা রাখে না। আর তাঁর তত্ত্বাবধান ছাড়া কিছুই ‎ঘটে না। তবুও তিনি মানব জাতিকে আদেশ প্রদান করেছেন এবং তাদের জন্য ‎নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। আর তাদেরকে তাদের কর্ম সম্পাদনের বিষয়ে স্বাধীনতা ‎প্রদান করেছেন। এবং তাদের স্বাধীনতাকে নষ্ট করে তাদেরকে অস্বাধীন করেননি। তাই ‎তাদের সমস্ত কর্ম তাদের ক্ষমতা ও ইচ্ছা মোতাবেক উৎপাদিত হয়ে থাকে। ‎ এবং আল্লাহ তাদের প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা আর তাদের সকল ক্ষমতারও প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা, ‎তিনি যাকে ইচ্ছা তার কৃপার দ্বারা প্রকৃত ইসলাম ধর্মের পথে পরিচালিত করেন। আর ‎তিনি যাকে ইচ্ছা তার প্রজ্ঞা মোতাবেক প্রকৃত ইসলাম ধর্মের বিপরীত পথে পরিচালিত ‎করেন। তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন, তাকে প্রশ্ন করার কেউ নেই। তবে সমস্ত মানুষ ‎আপন আপন কাজে দায়বদ্ধ; তাই তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। ‎

ভাগ্যের সংজ্ঞা:‎

সব জগতের সমুদয় বস্তুর ভাগ্য প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পক্ষ ‎থেকে নির্ধারিত করা হয়েছে। সুতরাং তিনি জানেন সমুদয় বস্তুর সকল ঘটনার নির্দিষ্ট ‎সময় ও বিস্তারিত বৈশিষ্ট্য। আর তিনি সেগুলিকে লিপিবদ্ধ করেছেন এবং সৃষ্টি করার ‎ইচ্ছা করেছেন অতঃপর সেগুলিকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তিনি যেভাবে যে ‎সমস্ত বস্তুর ভাগ্য নির্ধারিত করেছেন, ঠিক সেইভাবে সে সমস্ত বস্তু উদ্ভাবিত বা ‎উৎপাদিত ও সংঘটিত হবে। ‎

ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা হলো ইমানের একটিস্তম্ভ

প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস ‎স্থাপন করা হলো ইমানের একটি স্তম্ব। তাই মহাফেরেশতা জিবরীল [আলাইহিস সালাম] ‎এর প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] বলেছিলেন: ‎ ‏"أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ، وَمَلَائِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَرُسُلِهِ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ".‏‎ ‎ ‏(صحيح مسلم، جزء من رقم الحديث 1- (8)،‎ ‎‏).‏ অর্থ: “ঈমান হলো এই যে, আপনি আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর ‎কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর বার্তাবহ রাসূলগণের প্রতি এবং মৃত্যুবরণের পর পরকালের ‎শেষ দিবসে পুনরুত্থিত হওয়ার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবেন আর ভাগ্যের মঙ্গল ও ‎অমঙ্গলের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করবেন”। ‎[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১ - (৮) এর অংশবিশেষ] ।

ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের সাথে কী সংশ্লিষ্ট রয়েছে?‎

ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের সাথে চারটি বিষয় সংশ্লিষ্ট রয়েছে।

‎1। মহান আল্লাহর সর্বব্যাপী অনন্ত জ্ঞান। ‎

অন্তরে দৃঢ়ভাবে ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে যে, মহান আল্লাহ নিজের অনন্ত ‎অসীম জ্ঞানের দ্বারা সব জগতের সমস্ত বস্তুকে সংক্ষিপ্তভাবে এবং বিস্তারিতভাবে ‎পরিবেষ্টিত করে রেখেছেন। মহান আল্লাহ সৃষ্টি করার আগেই সকল সৃষ্টি জগতের ‎সমস্ত বস্তুর বিস্তারিত বিবরণের জ্ঞানে জ্ঞানবান। আর তিনি সকল সৃষ্টি জগতের সমস্ত ‎বস্তুর‏ ‏জীবিকা, আয়ু ও জীবনের মেয়াদ, কথা, কর্ম, চলাফেরা বা অস্থিরতা, স্থিরতা, গুপ্ত ‎ও প্রকাশ্য অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত। আর তিনি এটাও সম্যকভাবে জ্ঞাত যে, ‎মানব জাতির মধ্যে কে জান্নাতবাসী বা স্বর্গবাসী হবে আর কে জাহান্নামবাসী বা ‎নরকবাসী হবে। যেহেতু তিনি পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(هُوَ اللهُ الَّذِيْ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَة)، سورة الحشر، جز من الآية 22. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “তিনি এমন সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ যে, তিনি ছাড়া ‎অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। তিনি সমস্ত অদৃশ্য জগৎ এবং দৃশ্য জগতের জ্ঞাতা”। ‎(সূরা আল হাশর, আয়াত নং 22 এর অংশবিশেষ)। ‎

২। লিপিবদ্ধ করণ ‎

এই বিষয়টির প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা যে, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য ‎মহান আল্লাহ তাঁর সুরক্ষতি ফলকে বা লাওহে মাহফুজে সব কিছুই তাঁর অনাদি জ্ঞানের ‎দ্বারা সংরক্ষিত করে লিখে রেখেছেন। আর এর প্রমাণ হলো: মহান আল্লাহ পবিত্র‎‏‎ ‎কুরআনের মধ্যে আরো বলছেনে: ‎ ‏(مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيْبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِيْ أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِيْ كِتَابٍ مِّنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا)، ‏سورة الحديد، جزء من الآية‎ ‎‏22.‏ ‎ ‎‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে সকল জাতির মানব সমাজ! তোমরা জনে রাখো! পৃথিবীর ‎মধ্যে ‎এবং তোমাদের জীবনের মধ্যে যে সমস্ত বিপদাপদ বা সঙ্কট আসে, সে ‎সমস্ত ‎বিপদাপদ বা সঙ্কটের বিস্তরিত বিবরণ সুরক্ষতি ফলকে বা লাওহে মাহফুজে ‎সযত্নে ‎লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, কোনো কিছু সৃষ্টি করার অনেক পূর্বেই”। ‎(সূরা আল হাদীদ, আয়াত নং ২২ এর অংশবিশেষ)। এই বিষয়ে আল্লাহর বার্তাবহ‏ ‏রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎এর হাদীস বর্ণিত হয়েছে নিম্নরূপে: ‎ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ‏‏"كَتَبَ اللهُ مَقَادِيْرَ الخَلَائِقِ قَبْلَ أَنْ يَّخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِخَمْسِيْنَ أَلْفَ سَنَةٍ، قَالَ: ‏‏"وَعَرْشُهُ عَلَى المَاءِ". ‏ ‏(صحيح مسلم، رقم الحديث 16- (2653)،).‏ অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর ‎বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “মহান ‎আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সমস্ত সৃষ্টির ভাগ্য অথবা ‎অদৃষ্ট লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি আরো বলেন: “তখন তার আরশ বা সিংহাসন ছিলো ‎জলের উপরে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬ - (২৬৫৩)] ।

৩। মহান আল্লাহর শক্তিশালী ও সক্রিয় ইচ্ছা। ‎

মহান আল্লাহর এমন শক্তিশালী ও সক্রিয় ইচ্ছার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা, যে ইচ্ছার ‎কোনো প্রতিরোধক নেই এবং তাঁর শক্তিরও কোনো প্রতিরোধকারী নেই। সুতরাং মহা ‎বিশ্বে যা কিছু সংঘটিত হয়, সবই তাঁর সক্রিয় ও শক্তিশালী ইচ্ছায় সংঘটিত হয়। ‎অতএব প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন, তাই হয়েছে। ‎আর যা ইচ্ছা করেননি, তা হয়নি। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র‎‏‎ কুরআনের মধ্যে বলছেনে:‎ ‏(وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللهُ) (التكوير: 29).‏ ‎ ‎ ভাবার্থের অনুবাদ: “তোমরা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য সব জগতের প্রতিপালক ‎মহান আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পারবে না”। (সূরা তাকভীর: ‎‎29)।

৪। সব জগতের সমস্ত বস্তুর সৃষ্টি ‎

এই বিষয়টির প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা যে, সত্য উপাস্য মহান আল্লাহই ‎কেবলমাত্র সব জগতের সমস্ত বস্তুর প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি ছড়া সবই তাঁর সৃষ্টি। ‎তিনি সর্বময় ক্ষমতার সত্য অধিকারী। যেহেতু তিনি বলেছেন: ‎ ‏(وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيرًا) (الفرقان: 2).‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ সব জগতের সমস্ত ‎বস্তুকে সৃষ্টি করেছেন এবং সেগুলিকে তিনি নির্ধারিত পরিমাণে পরিমিত করেছেন”। ‎‎(সূরা ফুরকান: 2)।

মানুষের স্বাধীনতা, শক্তি এবং ইচ্ছা আছে:‎

ভাগ্যের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপনের বিষয়টি মানুষের কর্ম সাধনের স্বাধীনতা এবং ‎তার ইচ্ছা ও শক্তির বিপরীত মতবাদ নয়। প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা ও মানব জীবনের ‎বাস্তব অবস্থা এর সমর্থন করে। ‎

এই ক্ষেত্রে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে ‎বলেছেন:‎ ‏(ذَلِكَ الْيَوْمُ الْحَقُّ فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ إِلَى رَبِّهِ مَآَبًا) (النبأ: 39).‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “সেই কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার দিনটি সত্য, সুতরাং যে ব্যক্তি ইচ্ছা ‎করবে, সে ব্যক্তি তার প্রকৃত প্রতিপালক ও উপাস্য মহান আল্লাহর দিকে প্রকৃত ‎ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ইমান ও সৎ কর্মের সহিত প্রত্যাবর্তন করবে”। (সূরা আন্ ‎নাবা, আয়াত, নং 39)।‎ মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন:‎ ‏(لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ) (البقرة: 286)‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো কর্ম ‎সম্পাদনের দায়িত্ব অর্পণ করেন না। সুতরাং সে ব্যক্তি যে সমস্ত সৎকর্ম সম্পাদন ‎করেছে, সে সমস্ত সৎকর্ম তার কল্যাণের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে। এবং যে সমস্ত ‎অপকর্ম সম্পাদন করেছে, সে সমস্ত অপকর্ম তার অমঙ্গলের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে”। ‎‎(সূরা বাকারা : ২৮৬)‎

মানব জীবনের বাস্তব অবস্থার মাধ্যমে সমস্ত মানুষ জানে যে, তাদের কিছু ইচ্ছা এবং ‎‎কিছু ক্ষমতা আছে। আর তারা তাদের সেই ইচ্ছা এবং ক্ষমতার দ্বারা কিছু কাজ করে ‎‎এবং কিছু কাজ বর্জন করে। আর সমস্ত মানুষ পার্থক্য করতে পারে যে, কিছু কাজ ‎তাদের ইচ্ছায় সংঘটিত হয়, যেমন:- হাঁটা, আর কিছু কাজ তাদের ইচ্ছা ছাড়াই ‎সংঘটিত হয়, যেমন:- কম্পিত হওয়া এবং হঠাৎ করে পড়ে যাওয়া। তবে মানুষের ‎ইচ্ছা ও শক্তি মহান আল্লাহর ইচ্ছা ও শক্তির অন্তর্গত। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র ‎কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(لِمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ أَنْ يَسْتَقِيمَ • وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ الله رَبُّ الْعَالَمِينَ) (التكوير: 28-29)‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “এই উপদেশ সেই ব্যক্তির জন্যে, যে তোমাদের মধ্যে সঠিকভাবে ‎প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মেনে চলার ইচ্ছা রাখে। আর তোমরা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক ‎মহান আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পারবে না”। (সূরা তাকভীর: ‎‎28-29)। ‎ মহান আল্লাহ মানুষের ইচ্ছাকে নিশ্চিত করেছেন তারপর এটাও নিশ্চিত করেছেন যে, ‎মানুষের ইচ্ছা তাঁরই ইচ্ছার অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু সমগ্র মহাবিশ্ব সর্বশক্তিমান মহান ‎আল্লাহর রাজ্য; তাই তাঁর জ্ঞান ও ইচ্ছা ব্যতীত তাঁর রাজ্যে কিছুই ঘটতে পারে না। ‎

ভাগ্যের দোহাই দিয়ে কার্যসিদ্ধি করার বিধান ‎

মানুষের শক্তি ও স্বাধীনতাই হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্ম ও তার শিক্ষা মেনে চলার বা ‎তার আদেশ ও নিষেধের দায়িত্ব বহন করার উৎস বা নিমিত্ত। তাই ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি ‎স্বাধীনভাবে প্রকৃত ইসলাম ধর্ম ও তার শিক্ষা মেনে চলার পথ অবলম্বন করার জন্য ‎তাকে পুরস্কৃত করা হবে। এবং বিপথগামী লোক স্বাধীনভাবে প্রকৃত ইসলাম ধর্ম ও ‎তার শিক্ষা বর্জন করে চলার পথ অবলম্বন করার জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। মহান ‎আল্লাহ আমাদেরকে আমাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো কর্ম সম্পাদনের দায়িত্ব অর্পণ ‎করেন নি। তাই ভাগ্যের দোহাই দিয়ে কোনো ব্যক্তি প্রকৃত ইসলাম ধর্ম ও তার শিক্ষা ‎মোতাবেক উপাসনা বর্জন করলে, তা তার কাছ থেকে কোনো সময় পরিগৃহীত হবে ‎না। ‎

অতঃপর মানুষ পাপ করার পূর্বে কোনো সময় জানতে পারে না যে, সর্বশক্তিমান মহান ‎আল্লাহ তার বিষয়ে কী জেনেছেন এবং তার ভাগ্যে কী লিখেছেন। আর মহান আল্লাহ ‎তাকে শক্তি ও স্বাধীনতা প্রদান করেছেন এবং তাকে এবং তাকে মঙ্গল ও অমঙ্গলের ‎পথ প্রদর্শন করেছেন। এরপর সেই মানুষ যখন স্বাধীনভাবে পাপ করবে এবং পাপকে ‎প্রাধান্য দিবে, তখন সে সেই পাপের শাস্তি ও ফল ভোগ করবে। ‎

ভাগ্যের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপনের ফল:

মহান আল্লাহর ফয়সালা ও ভাগ্যের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপনের অনেকগুলি সুফল ‎‎মুসলিম ব্যক্তির জীবনে কার্যকর প্রভাব বিস্তার করে। সেই সব সুফলের মধ্যে রয়েছে:‎

১। ভাগ্যের প্রতি সঠিক ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন কর্মে তৎপর হওয়া এবং সুখময় জীবন ‎লাভের সঠিক উপাদান গ্রহণ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে আর অলসতা ও অন্যের ‎উপর নির্ভর করা হতে সতর্ক করে। ‎

প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজকে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর উপর নির্ভর করার ‎সাথে সাথে সুখময় জীবন লাভের সঠিক উপাদান গ্রহণ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। ‎আর এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, সুখময় জীবন লাভের সঠিক উপাদান মহান আল্লাহর ‎অনুমতি ছাড়া উপকার করতে পারে না। কেননা তিনিই তো হলেন সমস্ত উপাদানের ‎সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি হলেন সমস্ত ফলাফলের সৃষ্টিকর্তা। তাই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু ‎আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎ ‏‭‏‎"‬‎احرص‭‏‎ ‬‎على‭‏‎ ‬‎ما‭‏‎ ‬‎ينفعك،‭‏‎ ‬‎واستعن‭‏‎ ‬‎بالله،‭‏‎ ‬‎ولا‭‏‎ ‬‎تعجز،‭‏‎ ‬‎وإن‭‏‎ ‬‎أصابك‭‏‎ ‬‎شيء‭‏‎ ‬‎فلا‭‏‎ ‬‎تقل‭‏‎ ‬‎لو‭‏‎ ‬‎أني‭‏‎ ‬‎فعلت‭‏‎ ‎‎‬‎كان‭‏‎ ‬‎كذا‭‏‎ ‬‎وكذا،‭‏‎ ‬‎ولكن‭‏‎ ‬‎قل‭‏‎: ‬‎قدر‭‏‎ ‬‎الله‭‏‎ ‬‎وما‭‏‎ ‬‎شاء‭‏‎ ‬‎فعل،‭‏‎ ‬‎فإن‭‏‎ ‬‎لو‭‏‎ ‬‎تفتح‭‏‎ ‬‎عمل‭‏‎ ‬‎الشيطان‭‏‎" ‬‎‏(مسلم 2664)‭‏‎.‬‎ অর্থ: যে জিনিসের মাধ্যমে তোমার উপকার হবে, সেই জিনিসটি তুমি অর্জন করার ‎আপ্রাণ চেষ্টা করবে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে। আর নিজের জীবনের ‎মধ্যে কোনো সময় অক্ষমতাকে বা অলসতাকে অথবা আলসেমিকে স্থান দিবে না। ‎এমন বলিও না যে, যদি আমি এমন এমন করতাম তবে এমন হতো না। ‎বরং এই কথা বলবে যে, মহান আল্লাহ যা নির্দিষ্ট করেছেন এবং যা চেয়েছেন ‎তাই করেছেন। কেননা (যদি) শব্দটি শয়তানের কর্মের দুয়ার খুলে দেয়”। ‎‎[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং (2664)]। ‎ তাই যখন কিছু লোক মনে করেছিলো যে, ভাগ্যে যেহেতু সব লিখা আছে, সেহেতু ‎কাজ করার দরকার নেই, তখন আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাদের এই ধারণা ভুল এবং বলেছিলেন: ‎ ‏(اعْمَلُوا، فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خُلِقَ لَهُ. ثُمَّ قَرَأَ: {فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى، وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى} [الليل: 6]، إِلَى ‏قَوْلِهِ {فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى} [الليل: 10]). (البخاري 4949، ومسلم 2647).‏ অর্থ: “তোমরা আমল করে যাও। প্রত্যেকের পথ সুগম করে দেওয়া হয়েছে। ‎নেক আমলকারীদের জন্য নেক আমল করা সহজ করে দেওয়া হবে। আর ‎বদকারদের জন্য বদকারের আমল সহজ করে দেওয়া হবে।”। এরপর তিনি ‎পাঠ করেছিলেন: ‎ ‏{فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى، وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى} [الليل: 6]، إِلَى قَوْلِهِ {فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى} [الليل: ‏‏10]). (البخاري 4949، ومسلم 2647).‏ ‎“সুতরাং যে ব্যক্তি দান করবে, আল্লাহকে মেনে চলবে এবং উত্তম বিষয়কে ‎সত্য বলে গ্রহণ করবে (সূরা আল লায়ল ৬।) আল্লাহর বাণী পর্যন্ত ‏{فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى} [الليل: 10]). (البخاري 4949، ومسلم 2647).‏ আমি তাকে কষ্টের বিষয়ের জন্যে পথ সহজ করে দিবো। (সূরা আল লায়ল ‎১০।)‎ ‎(বুখারী 4949, মুসলিম 2647)।

২। মুসলিম ব্যক্তি যেন তার নিজের মান জানতে পারে

সুতরাং মুসলিম ব্যক্তি অহংকার করবে না এবং দম্ভ প্রকাশ করবে না। কেননা সে তো ‎নিজের ভাগ্যে কী ঘটবে সে বিষয়ে জানতে অপারক আর তার ভবিষ্যতে কী ঘটবে সে ‎বিষয়েও কিছু জানতে অক্ষম। এর দ্বারা সে নিজের অক্ষমতা মেনে নিচ্ছে এবং ‎সদাসর্বদা সে তার প্রতিপালক মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়ার কথাটিও মেনে নিচ্ছে। ‎তবে মানুষ যখন ভালো জিনিস পায়, তখন সে অহংকার করে এবং দম্ভ প্রকাশ করে ‎আর প্রতারিত হয়। আর যখন তার অমঙ্গল হয় তখন সে উদ্বিগ্ন ও দুঃখিত হয়। তাই ‎জেনে রাখা দরকার যে, মানুষ যখন ভালো জিনিস পাবে তখন সে অহংকার এবং দম্ভ ‎প্রকাশ করা থেকে কিভাবে রক্ষা পাবে? এবং সে যখন উদ্বিগ্ন ও দুঃখিত হবে তখন ‎সে কিভাবে অমঙ্গল থেকে রক্ষা পাবে? এর উত্তর হলো এই যে, সে যখন তার অন্তরে ‎সঠিকভাবে তার ভাগ্যের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করবে, তখন সে সর্ব প্রকারের ‎দুঃখকষ্ট, অমঙ্গল এবং অহংকার ও দম্ভ প্রকাশ করা থেকে রক্ষা পাবে। এবং জানতে ‎পারবে যে, যা কিছু তার ঘটেছে সবই তার ভাগ্যে লিখা আছে আর আল্লাহর অনাদি ‎জ্ঞানের সাথে জড়িয়ে আছে।

৩। ভাগ্যের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন হিংসার অমঙ্গল দূর করে

প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর যা অনুগ্রহ লঅভ করে তাতেই সে রাজি থাকে ‎মানুষকে হিংসা করে না। কেননা সে তো জানে যে, মহান আল্লাহই তাদেরকে তাদের ‎রুজি বা জীবিকা প্রদান করেছেন এবং তাদের ভাগ্যে তা নির্ধারিত করেছেন। আর সে ‎আরো জানে যে, যখন সে অন্য কাউকে হিংসা করবে, তখন সে কেবল আল্লাহর লিখা ‎ভাগ্যের উপর এবং তাঁর ফয়সালার উপর তার আপত্তি হবে।

৪। ভাগ্যের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন হৃদয়কে সকল প্রকারের সমস্যার মোকাবিলা ‎করার জন্য সাহস জোগায়।

ভাগ্যের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন মানুষের ইচ্ছাকে শক্তিশালী করে। কেননা সে তো ‎জানে যে, জীবনের সময়সীমা এবং রুজি বা জীবিকা নির্ধারিত রয়েছে এবং তার জন্য ‎যা কিছু লিখা আছে তা ছাড়া আর তার কিছুই হবে না।

৫। ভাগ্যের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন মানুষের ইচ্ছাকে শক্তিশালী করে। কেননা সে তো ‎জানে যে, জীবনের সময়সীমা এবং রুজি বা জীবিকা নির্ধারিত রয়েছে এবং তার জন্য ‎যা কিছু লিখা আছে তা ছাড়া আর তার কিছুই হবে না।

প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহ কাছে সাহায্য চায়, তাঁর উপরে নির্ভর ‎করে ও ভরসা রাখে এবং সুখময় জীবন লাভের সঠিক উপাদানগুলি গ্রহণ করে আর ‎সদাসর্বদা আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয় এবং তাঁরই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে প্রকৃত ইসলাম ‎ধর্মের উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য। ‎

৬। ভাগ্যের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস হৃদয়ে শান্তি স্থাপিত করে

সুতরাং প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি জানে যে, যা কিছু ঘটেছে তা কিছুতেই অঘটিত ‎থাকত না এবং যা কিছু ঘটেনি তা কখনোও তাকে স্পর্শ করবে না। ‎

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন