শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় শিরোনাম:‎ মদিনা মুনাওয়ারার জিয়ারত ‎

বিবরণ: ‎ মক্কার পর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্থান হলো আল্লাহর নাবীর শহর মদিনা মুনাওয়ারা। এই ‎অনুচ্ছেদে আপনি মদিনা মুনাওয়ারার কতকগুলি বিশেষ মর্যাদা ও তার জিয়ারতের ‎আদবকায়দা জানতে পারবেন। ‎

উদ্দেশ্য: মদিনা মুনাওয়ারার কতকগুলি বিশেষ মর্যাদার সঠিক জ্ঞান লাভ করা। মদিনা মুনাওয়ারা জিয়ারতের আদবকায়দা সঠিক জ্ঞান লাভ করা।

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

মদিনা মুনাওয়ারার কতকগুলি বিশেষ মর্যাদা

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর‏ ‏হিজরতের মাধ্যমে মদিনা মুনাওয়ারার মর্যাদা এমনভাবে উচ্চ স্থানে পৌঁছেছে যে, মক্কার ‎পর পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের চেয়ে এই স্থানকেই সব চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া ‎হয়েছে। আর মদিনা মুনাওয়ারার জিয়ারত সদাসর্বদা বৈধ। আর মদিনা মুনাওয়ারার ‎জিয়ারত ফরজ হজ্জের সাথে সম্পর্কিত নয়। তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ ‎মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: ‎ ‏"لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ: المَسْجِدِ الحَرَامِ، وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ ‏صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَسْجِدِ الأَقْصَى" (البخاري 1189، ومسلم 1397).‏ অর্থ: “মাসজিদুল হারাম, মাসজিদুর রাসূল এবং মাসজিদুল আক্‌সা এই তিনটি মাসজিদ ‎ব্যাতীত অন্য কোনো জায়গায় উপাসনার উদ্দেশ্যে সফর করা চলবে না”। (বুখারী ‎‎1189, মুসলিম 1397)। মদিনা মুনাওয়ারার অনেক মর্যাদা রয়েছে। সেই সব মর্যাদার মধ্যে রয়েছে: ‎

১। মদিনা মুনাওয়ারায় আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] এর মাসজিদ রয়েছে।

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মদিনায় ‎আসার পর সর্বপ্রথম যে কাজটি করেছিলেন, তা হলো আল্লাহর নাবীর মাসজিদ নির্মাণ ‎করা। আর এই পবিত্র মাসজিদটি প্রকৃত ইসলামের জ্ঞান ও শিক্ষা এবং দাওয়াত আর ‎কল্যাণ প্রচারের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিলো। এই মাসজিদের মহা মর্যাদা রয়েছে। তাই ‎আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎ ‏"صلاة في مسجدي هذا خير من ألف صلاة فيما سواه إلا المسجد الحرام" (البخاري 1190، مسلم ‏‏1394).‏ অর্থ: “মাসজিদুল হারাম ব্যতীত, আমার এই মাসজিদের একটি নামাজ ‎অন্যান্য মাসজিদের এক হাজার নামাজের চেয়েও বেশি উত্তম। আর ‎মাসজিদুল হারামের একটি নামাজ অন্যান্য মাসজিদের এক লক্ষ নামাজের ‎চেয়েও বেশি উত্তম”। (বুখারী 1190, মুসলিম 1394)।

২। মদিনা মুনাওয়ারা হলো একটি নিরাপদ স্থান

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎মদিনা মুনাওয়ারাকে আল্লাহর আদেশে নিরাপদ স্থান হিসেবে ঘোষণা করে ‎দিয়েছেন। তাই এই স্থানে রক্তপাত করা, অস্ত্র বহন করা, কোনো ব্যক্তিকে ‎ভয় দেখানো, কোনো গাছ কাটা ইত্যাদি নিষিদ্ধ। তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল ‎বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎ ‏"لَا يُخْتَلَى خَلاهَا، وَلا يُنَفَّرُ صَيْدُهَا، وَلا تُلْتَقَطُ لُقَطَتُهَا، إِلا لِمَنْ أَشَارَ بِهَا، وَلا تُقْطَعُ مِنْهَا شَجَرَةٌ إِلا ‏أَنْ يَعْلِفَ رَجُلٌ بَعِيرَهُ، وَلا يُحْمَلُ فِيهَا السِّلاحُ لِقِتَالٍ" (أبو داود 2035، وأحمد 959).‏ অর্থ: “তার কোনো ঘাস কাটা যাবে না। তার কোনো শিকার তাড়ানো যাবে না। ‎সেখানে কোনো হারানো বস্তু কুড়ানো যাবে না। অবশ্য যে ব্যক্তি হারানো বস্তুর মালিক ‎খুঁজবে, সে কুড়াতে পারবে। এর কোনো গাছ কাটা যাবে না। তবে কেউ যদি তার ‎উটকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য কাটে, তাহলে তা কাটতে পারবে। সেখানে লড়াই এর ‎জন্য অস্ত্ৰ বহন করা যাবে না”। (আবু দাউদ 2035, আহমদ 959)। ‎

৩। কল্যাণদায়ক জীবিকা, ফল, ফসল ও শস্য এবং সুশীল জীবন লাভ। ‎

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎ ‏"اللهم بارك لنا في ثمرنا، وبارك لنا في مدينتنا، وبارك لنا في صاعنا، وبارك لنا في ‏مُدنا، اللهم إن إبراهيم عبدك وخليلك ونبيك وإني عبدك ونبيك، وإنه دعاك لمكة، ‏وإني أدعوك للمدينة بمثل ما دعاك لمكة ومثله معه" (مسلم 1373).‏ অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ফল ফসলে মঙ্গল দান করুন। আমাদের ‎শহরে মঙ্গল দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের তিন কিলো ওজনের ‎পাত্র সায়ে মঙ্গল দান করুন। আপনি আমাদের ৬০০ গ্রাম ওজনের পাত্র ‎মুদ্দয়ে মঙ্গল দান করুন। হে আল্লাহ! নিশ্চয় ইবরাহিম আপনার দাস ও ‎বন্ধু। আমিও নিশ্চয় আপনার দাস ও নাবী। ইবরাহিম যেমন মক্কার মঙ্গলের ‎জন্য আপনার নিকটে দোয়া করেছিলেন। আমিও তদ্রূপ মদিনার মঙ্গলের ‎জন্য আপনার নিকটে দোয়া করছি তাঁরই মতো এবং তাঁরই সাথে”। ‎‎(মুসলিম 1373)।

৪। মদিনা মুনাওয়ারা মহামারী রোগ থেকে এবং দজ্জাল থেকে মহান ‎আল্লাহর সংরক্ষণে থাকবে:‎

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎ ‏"على أنقاب المدينة ملائكة لا يدخلها الطاعون ولا الدجال" (البخاري 1880, مسلم ‏‏1379).‏ ‎5‎‏.‏ حفظ الله لها من الطاعون والدجال‎:‎ অর্থ: “মদিনার প্রবেশ প্রবেশপথে ফেরেশতা পাহারায় নিয়োজিত আছে। ‎তাই মহামারী রোগ এবং দাজ্জাল মদিনায় প্রবেশ করতে পারবে না”। ‎ ‎(বুখারী 1880, মুসলিম 1379)।

৫। মদিনা মুনাওয়ারায় জীবনযাপন করা, বসবাস করা এবং মৃত্যুবরণ করার ‎মর্যাদা:‎

যারা মদিনার কষ্টে ধৈর্যধারণ করবে এবং সেখানের জীবনের সংকীর্ণতা সহ্য ‎করবে, আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] কিয়ামতের দিন তাদের মঙ্গলের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ‎সুপারিশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সুতরাং সায়াদ বিন আবু ওয়াক্কাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি ‎বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎ ‎ মদিনা ওই সমস্ত লোকের জন্য কল্যাণকর, যদি তারা বুঝতে পারে। যে ‎ব্যক্তি অনাগ্রহী হয়ে মদিনা ত্যাগ করবে, তার বদলে মহান আল্লাহ তার ‎চেয়েও উত্তম ব্যক্তিকে সেখানে স্থান দেবেন। যে ব্যক্তি মদিনার অভাব-‎অনটন ও বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করে সেখানে অটল থাকবে, কিয়ামতের দিন ‎আমি তার জন্য সুপারিশকারী ও সাক্ষী হয়ে থাকবো”। (মুসলিম 1363)।

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎আরো বলেছেন:‎ ‏"من استطاع أن يموت بالمدينة فليمت بها، فإني أشفع لمن يموت بها" (الترمذي 3917, ابن ماجه 3112).‏ অর্থ: “কেউ মদিনাতে মৃত্যুবরণ করতে সক্ষম হলে সে যেন সেখানেই ‎মৃত্যুবরণ করে। কারণ যে ব্যক্তি সেখানে মৃত্যুবরণ করবে, আমি তার জন্য ‎সুপারিশ করব”। (তিরমিযী 3917, ইবনে মাজাহ 3112)।

৬। মদিনা মুনাওয়ারা হলো ইমানের গুহা এবং মদিনা মুনাওয়ারা নিকৃষ্ট ‎লোককে আর খারাপ মানুষকে বের করে দিবে:‎

মদিনায় ঈমান আশ্রয় নিবে সব দেশ যতই সংকীর্ণ হোকনা কেন। আর ‎মদিনায় নিকৃষ্ট লোকদের এবং পাপাচারীদের থাকার কোনো স্থান নেই বা ‎থাকার সুযোগ নেই। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু ‎আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎ ‏"إن الإيمان ليأرِز إلى المدينة كما تأرِز الحية إلى جحرها" (البخاري 1876, مسلم ‏‏147)،‏ অর্থ: “মদিনায় ঈমান আশ্রয় নিবে। যেমন সাপ সংকুচিত হয়ে আপন গর্তে ‎আশ্রয় নিয়ে থাকে”। (বুখারি 1876, মুসলিম 147)। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎আরো বলেছেন:‎ ‏"...والذي نفسي بيده لا يخرج منهم أحد رغبة عنها إلا أخلف الله فيها خيراً منه، ألا ‏إن المدينة كالكير؛ تخرج الخَبِيث، لا تقوم الساعة حتى تنفي المدينة شرارها كما ‏ينفي الكير خَبَثَ الحديد"(مسلم 1381).‏ অর্থ: “যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর কসম! যে ব্যক্তি অনাগ্রহী হয়ে ‎মদিনা ত্যাগ করবে, তার বদলে মহান আল্লাহ তার চেয়েও উত্তম ব্যক্তিকে ‎সেখানে স্থান দেবেন। সাবধান! মদিনা হলো হাপর তুল্য, যা নিজের মধ্য ‎থেকে নিকৃষ্ট জিনিস (ময়লা) বের করে দেয়। কিয়ামত সংঘটিত হবে না, ‎যতক্ষন মদিনা তার বুক থেকে নিকৃষ্ট লোকদেরকে বের করে না দেবে ‎যেমন হাপর লোহার ময়লা দূর করে দেয়”। (মুসলিম 1381)।

৭। মদিনা মুনাওয়ারা নিকৃষ্ট লোককে আর পাপাচারীদেরকে বের করে দেয়:‎

য্যাইদ বিন সাবিত [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর ‎বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎ ‏"إِنَّهَا طَيْبَةُ - يَعْنِي الْمَدِينَةَ- وَإِنَّهَا تَنْفِي الْخَبَثَ، كَمَا تَنْفِي النَّارُ خَبَثَ الْفِضَّةِ" (البخاري ‏‏4589، مسلم 1384).‏ অর্থ: “এই মাদিনা হলো পবিত্র স্থান, আগুন যেভাবে রৌপ্যের কালিমা বা ‎ময়লা দূর করে। মাদিনা নিকৃষ্ট লোককে দূর করে দেয়”। (বুখারী 4589, ‎মুসলিম 1384)।

মদিনা মুনাওয়ারা জিয়ারত করার কতকগুলি আদবকায়দা

যারা মদিনা মুনাওয়ারা জিয়ারত করবে, তারা যেন জিয়ারতের কতকগুলি ‎আদবকায়দার খেয়াল রাখে। জিয়ারতের কতকগুলি আদবকায়দার মধ্যে ‎রয়েছে: ‎

১। যে ব্যক্তি মদিনার জিয়ারত করার ইচ্ছা করবে, সে যেন আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু ‎আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মাসজিদের জিয়ারত করার ইচ্ছা পোষণ করে। তাঁর ‎মাসজিদের জন্য সফর করে। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ‎কবরের জন্য সফর না করে। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ ‎‎[সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: ‎ ‏"لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ: المَسْجِدِ الحَرَامِ، وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ ‏صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَسْجِدِ الأَقْصَى" (البخاري 1189، ومسلم 1397).‏ অর্থ: “মাসজিদুল হারাম, মাসজিদুর রাসূল এবং মাসজিদুল আক্‌সা এই তিনটি মাসজিদ ‎ব্যাতীত অন্য কোনো জায়গায় উপাসনার উদ্দেশ্যে সফর করা চলবে না”। (বুখারী ‎‎1189, মুসলিম 1397)।

২। মদিনার জিয়ারতকারী যখন আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ‎মাসজিদে পৌঁছাবে, তখন সে তার ডান পা আগে রাখবে আর বলবে:‎ ‏«اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ». (مسلم 713).‏ অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার কৃপার দরজাগুলি উম্মুক্ত ‎করে দাও”। (মুসলিম 713)।

৩। জিয়ারতকারী আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মাসজিদে প্রবেশ ‎করার পর দুই রাকাআত মাসজিদে প্রবেশ করার নামাজ পড়বে। আর যদি পবিত্র ‎রাওজাতে সেই দুই রাকাআত নামাজ পড়ে, তবে বেশি ভালো। ‎

৩। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ‎এবং তাঁর দুই সাহাবীর কবর জিয়ারত করা সুন্নাত। তাই বিনম্রতার সহিত ভদ্রভাবে, ‎মৃদ আওয়াজে বলবে:‎ ‏"السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، أشهد أنك رسول ‏الله حقا وأنك قد بلغت الرسالة وأديت الأمانة ونصحت الأمة ‏وجاهدت في الله حق جهاده , فجزاك الله عن أمتك أفضل ما ‏جزى نبيا عن أمته".‏ ‎ অর্থ: “হে আল্লাহর নাবী! আপনার উপর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত বর্ষিত হোক! ‎এবং আমি‏ ‏সাক্ষ্য‏ ‏দিচ্ছি‏ ‏যে, অবশ্যই আপনি‏ ‏আল্লাহর‏ ‏সত্য‏ ‏বার্তাবহ‏ ‏রাসূল। আপনি ‎আল্লাহর বাণী ও আমানত পৌঁছে দিয়েছেন। আপনি মানব জাতির মঙ্গল করেছেন ও ‎সৎ উপদেশ তাদেরকে প্রদান করেছেন। আর এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ‎ন্যায়পরায়ণতার সহিত জিহাদ ও সংগ্রাম করেছেন। তাই আল্লাহ আপনাকে আপনার ‎উম্মতের তরফ থেকে এই ভালো কাজের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিদান প্রদান করুন। যেমন ‎একজন নাবীকে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিদান প্রদান করা হয় তার জাতির তরফ থেকে”।

অতঃপর সে তার ডানদিকে এক বা দুই কদম এগিয়ে আবু বাকর [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ‎এর কবরের সামনে দাঁড়াবে এবং তাঁকে সালাম দিবে এবং আল্লাহ তার প্রতি যেন ‎সন্তুষ্ট হন তাই বলবে [রাদিয়াল্লাহু আনহু] । তারপর সে তার ডানদিকে এক বা দুই ‎কদম এগিয়ে ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর কবরের সামনে দাঁড়াবে এবং তাঁকে সালাম ‎দিবে এবং আল্লাহ তার প্রতি যেন সন্তুষ্ট হন তাই বলবে [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ।

৫। জিয়ারতকারীর জন্য আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] এর মাসজিদে অনেক নামাজ পড়া মোস্তাহাব। যাতে আল্লাহর বার্তাবহ ‎রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কথা মোতাবেক বেশি ‎পুণ্য লঅভ করা যায়। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু ‎আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “মাসজিদুল হারাম ব্যতীত, আমার এই মাসজিদের ‎একটি নামাজ অন্যান্য মাসজিদের এক হাজার নামাজের চেয়েও বেশি উত্তম। আর ‎মাসজিদুল হারামের একটি নামাজ অন্যান্য মাসজিদের এক লক্ষ নামাজের চেয়েও বেশি ‎উত্তম”। (বুখারি 1190, মুসলিম 1394)।

৬। মাসজিদে কুবার জিয়ারত করা সুন্নাত। যেহেতু এই বিষয়ে আল্লাহর ‎বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: ‎ ‏«مَنْ خَرَجَ حَتَّى يَأْتِيَ هَذَا الْمَسْجِدَ - مَسْجِدَ قُبَاءَ - فَصَلَّى فِيهِ كَانَ لَهُ عَدْلَ عُمْرَةٍ» (النسائي 699).‏ ‎ অর্থ: “যে ব্যক্তি বের হয়ে এই কুবার মাসজিদে আসবে এবং তাতে নামাজ ‎পড়বে, তার জন্যে একটি ওমরা পালন করার সমান পুণ্য বা সাওয়াব ‎রয়েছে”। (নাসাঈ ৬৯৯)।

৭। বাকী কবরস্থান এবং ওহুদের শহীদদের কবরস্থান পরিদর্শন করাও হলো সুন্নাত। ‎যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎তাদের জিযারত করতেন। কবরবাসীদেরকে জিয়ারত করার সময় আল্লাহর বার্তাবহ ‎রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এই দোয়াটি পাঠ করতেন: ‎ ‏"السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ ‏لَلَاحِقُونَ، أَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ" (مسلم 975).‏ অর্থ: “আসসালামু আলাইকুম! কবরবাসী মুমিন ও মুলমানদের উপর শান্তি ‎বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরাও অবশ্য আপনাদের সাথে মিলিত হবো। ‎আমাদের এবং আপনাদের সবার জন্য আল্লাহর নিকট শান্তি ও নিরাপত্তা ‎প্রার্থনা করছি”। (মুসলিম 975)।

৮। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ‎এই মদিনা শহরে মুসলিম ব্যক্তি যেন ন্যায়পরায়ণ হওয়ার আগ্রহী হয় এবং মহান ‎আল্লাহর এবং তাঁর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর আনুগত্যের প্রতি অটল ‎থাকে। আর সকল প্রকারের বিদআতি কাজ হতে এবং সকল প্রকারের পাপ হতে ‎সতর্কতা অবলম্বন করে। ‎

৯। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর এই ‎মদিনা শহরে মুসলিম ব্যক্তি যেন কোনো গাছ না কটে বা শিকার না করে। যেহেতু এই ‎বিষয়ে আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ‎সুতরাং আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎বলেছেন: ‎ ‏"إنَّ إبراهيمَ حرَّم مكَّةَ، وإنِّي حرَّمتُ المدينةَ ما بين لابتيها، لا يُقطَع عِضاهُها، ولا يُصادُ صيدُها"، ‏‏(مسلم 1362).‏ ‎ অর্থ: “নিশ্চয় ইবরাহিম মক্কা শহরকে হারাম ও সম্মনিত বলে ঘোষণা ‎দিয়েছেন। আমি মদিনার দুই পার্শ্বের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশকে ‎হারাম ও সম্মনিত বলে ঘোষণা দিচ্ছি। এখানকার কাঁটাযুক্ত গাছও কাটা ‎যাবে না এবং এখানকার জীবজন্তুও শিকার করা যাবে না”। (মুসলিম ‎‎1362)। ‎

১০। এই মদিনা শহরে থাকার সময় মুসলিম ব্যক্তি যেন উপলব্ধি করে যে, সে এমন ‎শহরে আছে যে, সেই শহর হতে জ্ঞানের জ্যোতি এবং উপকারী শিক্ষার আলো সারা ‎বিশ্বের সমস্ত প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সে যেন প্রকৃত ইসলামের জ্ঞান অর্জন ‎করতে আগ্রহী হয়। আর সেই জ্ঞানের মাধ্যমে আল্লাহর পথের পথিক হবে। বিশেষ ‎করে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ‎মাসজিদে প্রকৃত ইসলামের জ্ঞান অর্জন তৎপর হবে। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল ‎বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন: ‎ ‏"مَن دخل مسجدَنا هذا يتعلَّمُ خيراً أو يُعلِّمه كان كالمجاهدِ في سبيلِ الله، ومَن دخلَه لغير ذلك كان ‏كالنَّاظرِ إلى ما ليس له"، (أحمد 10814، وابن حبان 87).‏ অর্থ: “যে ব্যক্তি আমাদের এই মাসজিদে প্রবেশ করবে, সে ব্যক্তি মঙ্গলদায়ক ‎বিষয়ের জ্ঞান লাভ করবে অথবা জ্ঞান প্রচার করবে, সে হবে আল্লাহর পথে ‎জিহাদকারীর মতো। আর যে ব্যক্তি অন্য উদ্দেশ্যে প্রবেশ করবে, সে এমন ‎জিনিসের দিকে তাকানোর মতো কাজ করবে, যে জিনিসটি তার নয়”। (আহমেদ ‎‎10814, ইবনে হিব্বান 87)।‎

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন