শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় পবিত্র কুরআন পড়ার নিয়ম ও আদবকায়দা ‎

পবিত্র কুরআন হলো মহান আল্লাহর পবিত্র বাণী। তাই যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন ‎পড়বে, সে ব্যক্তির প্রতি পবিত্র কুরআন পড়ার নিয়ম ও আদবকায়দা জানা দরকার। ‎এই অনুচ্ছেদে আমরা পবিত্র কুরআন পড়ার নিয়ম ও আদবকায়দার জ্ঞান লাভ করতে ‎পারবো। ‎

উদ্দেশ্য:পবিত্র কুরআন পড়ার নিয়ম ও আদবকায়দার জ্ঞান লাভ করা।

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

পবিত্র কুরআন মুখস্থ করার হুকুম বা বিধান

١
প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম জাতির কতকগুলি মানুষের জন্য সম্পূর্ণ কুরআন হৃদয়ের মধ্যে মুখস্থ করা সর্বসম্মত মত মোতাবেক অপরিহার্য কর্তব্য। সুতরাং প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম জাতির মধ্যে থেকে কতকগুলি মানুষ সম্পূর্ণ কুরআন হৃদয়ের মধ্যে মুখস্থ করলেই যথেষ্ট হবে। এবং প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম জাতির অপরিহার্য কর্তব্য পালন করা হবে আর সবাই গুনাহ বা পাপ হতে রেহাই পাবে।
٢
প্রত্যেক ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তির জন্য পবিত্র কুরআনের সেই অংশটি মুখস্থ করা অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য, যে অংশটির দ্বারা তার নামাজ সঠিক বলে বিবেচিত হবে। আর তা হলো সুরা আল ফাতিহা। সুতরাং সুরা আল ফাতিহা প্রত্যেক ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তির জন্য জন্য মুখস্থ করা অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য।
٣
মুসলিম ব্যক্তির জন্য নিজের সাধ্যমতো পবিত্র কুরআন মুখস্থ করা একটি পছন্দনীয় ও উত্তম কর্ম। তাই সে নিজের সাধ্যানুযায়ী যতো পারবে পবিত্র কুরআনের অংশ মুখস্থ করার চেষ্টা করবে। যেহেতু পবিত্র কুরআন মুখস্থ করা হলো একটি মহা মর্যাদা ও মহা পুণ্য লাভের কর্ম।

অর্থ:‎ আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “কুরআনের হাফেজ ও তার সংরক্ষণকারী সম্মানিত ফেরেশতাদের সাথে থাকবেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৩৭] ।

পবিত্র কুরআন পাঠ করার বিধান

প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির জন্য পবিত্র কুরআন পাঠ করা হলো মোস্তাহাব ও ‎‎পছন্দনীয় একটি উত্তম কর্ম। সুতরাং সে নিজের সাধ্য মোতাবেক পবিত্র কুরআন যতো ‎বেশি পাঠ করতে পারবে, ‎ততই বেশি তার মঙ্গল হবে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র ‎কুরআনের ‎মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(إِنَّ الَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنْفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً يَرْجُونَ تِجَارَةً لَنْ تَبُورَ)، سورة ‏فاطر، ‏الآية 29. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “যারা মহান আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থ কুরআন পাঠ করে, তার প্রতি ‎‎বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তার শিক্ষা মেনে চলে। আর নামাজ প্রতিষ্ঠিত করে এবং ‎‎আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি, তা থেকে তারা প্রকাশ্যে ও গোপনে দান করে, ‎তারা ‎এই সমস্ত কর্মের দ্বারা এমন পুণ্য ও সুফলের আশা করে যে, সেই পুণ্য ও সুফল ‎কোনো দিন নষ্ট হবে ‎না”। ‎ ‎(সূরা ফাতির, আয়াত নং ২৯ এর অংশবিশেষ) । ‎

পবিত্র কুরআন শ্রবণ করা ও তার জন্য নীরব থাকার বিধান

ফরজ নামাজের অবস্থায় এবং জুমার খুতবা কিংবা জুমার নামাজের আগে ইমাম-প্রদত্ত ‎অভিভাষণ চলার সময় পবিত্র কুরআন পাঠের শ্রবণ করা ও তার জন্য নীরব থাকা ‎অপরিহার্য। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ)، سورة الأعراف، الآية 204.‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আর হে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজ! যখন পবিত্র কুরআন ‎পাঠ করা হবে, তখন তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে এবং নীরব থাকবে। ‎যাতে তোমরা মহান আল্লাহর করুণার প্রকৃত অধিকারী হতে পারো”। ‎(সূরা আল আরাফ, আয়াত নং ২০৪)।‎

প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বাণীর সম্মান রক্ষা করার জন্য ‎নামাজের অবস্থা এবং জুমার খুতবা কিংবা জুমার নামাজের আগে ইমাম-প্রদত্ত ‎অভিভাষণ চলা ব্যতীত অন্য সময়েও পবিত্র কুরআন পাঠের শ্রবণ করা ও তার জন্য ‎নীরব থাকা হলো মোস্তাহাব ও পছন্দনীয় একটি উত্তম কর্ম।

পবিত্র কুরআনের শিক্ষা মোতাবেক কর্ম করার বিধান

পবিত্র কুরআনের প্রতি এইভাবে ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য যে, পবিত্র ‎‎কুরআন প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পবিত্র বাণীর গ্রন্থ। তাই এই ‎‎পবিত্র বাণীর গ্রন্থ কুরআনের বিধিবিধান মোতাবেক জীবনযাপন করা, এর মধ্যে যা ‎‎কিছু হালাল বা বৈধ করা হয়েছে, তা হালাল বা বৈধ বলে মেনে নেওয়া এবং এর ‎মধ্যে ‎যা কিছু হারাম বা অবৈধ করা হয়েছে, তা হারাম বা অবৈধ বলে গ্রহণ করা, ‎তার ‎বিনিবারিত বা নিষিদ্ধকৃত বিষয়কে নিষিদ্ধ বিষয় হিসেবে বরণ করা জরুরি বিষয়। এর ‎‎সঙ্গে সঙ্গে পবিত্র কুরআনের সমস্ত উপদেশ ও সমস্ত নিয়মকানুন মেনে চলাও ‎দরকার। ‎‎ ‎

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏(اَلَّذِيْنَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُوْنَهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ)، سورة البقرة، جزء من الآية 121.‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা যথাযথভাবে সেই কিতাব ‎পাঠ করে ও তার অনুসরণ করে”। ‎(সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ১২১ এর অংশবিশেষ)। ইবনে মাসউদ এবং ইবনে আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুম] বলেছেন: এর মধ্যে যা ‎কিছু ‎হালাল বা বৈধ করা হয়েছে, তা হালাল বা বৈধ বলে তারা গ্রহণ করে এবং এর ‎মধ্যে ‎যা কিছু হারাম বা অবৈধ করা হয়েছে, তা হারাম বা অবৈধ বলে তারা গ্রহণ করে এবং ‎এর পবিত্র বাণীকে তারা বিকৃত করে না এবং তার স্থান থেকে বিচ্ছিন্ন বা বিচ্যুত করে ‎না। (তাফসির ইবনে কাছীর ১/৪০৩)। ‎

আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর ‎বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছ থেকে ‎আমরা যখন পবিত্র কুরআনের দশটি আয়াতের জ্ঞান লাভ করতাম, তখন তার ‎পরের দশটি আয়াতের জ্ঞান লাভ করতাম না যতক্ষণ পর্যন্ত প্রথম দশটি আয়াতের ‎জ্ঞান লাভের সাথে সাথে সেগুলির দাবি মোতাবেক কর্ম না করতাম। (আল হাকিম, ‎২০৪৭)। সুতরাং প্রথম দশটি আয়াতের জ্ঞান লাভের সাথে সাথে সেগুলির দাবি মোতাবেক ‎কর্ম করার বিষয়টির প্রতি আমরা গুরুত্ব দিতাম। এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারীর ‎হলো এটি ব্যাখ্যা। ‎

পবিত্র কুরআনের পঠনপাঠনের প্রতি সদাসর্বদা যত্নশীল হওয়া দরকার এবং তা ‎বর্জন করা উচিত নয়।

প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির একটি কর্তব্য হলো এই যে, সে যেন পবিত্র ‎কুরআনের পঠনপাঠনের প্রতি সদাসর্বদা যত্নশীল হয়। অতএব সে যেন পবিত্র ‎কুরআনের পঠনপাঠন ব্যতীত একটি দিনও অতিবাহিত না করে। যাতে সে পবিত্র ‎কুরআনের কোনো অংশ ভুলে না যায় এবং পরিত্যাগ না করে। যেহেতু মহান ‎আল্লাহ বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বিষয়ে পবিত্র কুরআনের ‎মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(وَقَالَ الرَّسُوْلُ يَا رَبِّ إِنَّ قَوْمِيْ اتَّخَذُوْا هَذَا الْقُرْآَنَ مَهْجُوْرًا)، سورة الفرقان، الآية 30. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আর আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু ‎আলাইহি ওয়াসাল্লাম] পরকালে কিয়ামতের দিন বলবেন: হে আমার প্রতিপালক! ‎আমার সম্প্রদায়ের অনেক লোক পবিত্র কুরআনকে পরিত্যাগ করেছিলো এবং তা ‎থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো”। ‎(সূরা আল ফুরকান, আয়াত নং ৩০)।‎

عَنْ أبِيْ مُوْسَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:"تَعَاهَدُوْا القُرْآنَ؛ ‏فَوَالذِيْ ‏نَفْسِيْ بيَدِهِ لَهُوَ أشَدُّ تَفَصِّيًا مِنَ الإبِلِ فِيْ عُقُلِهَا".‏ ‏(صحيح البخاري, رقم الحديث 5033, واللفظ له، وصحيح مسلم, رقم ‏الحديث‏‏231 - (791),).‏ অর্থ: আবু মুসা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বার্তাবহ ‎রাসূল ‎বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হতে বর্ণনা করেন: ‎আল্লাহর ‎বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎বলেছেন: ‎‎“তোমরা সদাসর্বদা পবিত্র কুরআনের প্রতি যত্নবান ও যত্নশীল হও। যাঁর ‎হাতে ‎আমার জীবন রয়েছে, তাঁর শপথ করে বলছি: নিশ্চয় পবিত্র কুরআন হৃদয় ‎হতে ‎এতই তাড়াতাড়ি সরে যায় যে, উটও তত তাড়াতাড়ি নিজের দড়ি ছিঁড়ে সরে ‎যেতে ‎পারে না”। ‎[সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৩৩ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩১ -(৭৯১), ‎তবে ‎হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।

পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের বা পঠনপাঠনের আদবকায়দা ‎

পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের বা পঠনপাঠনের কতকগুলি আদবকায়দা রয়েছে। সুতরাং ‎পবিত্র ‎কুরআন তিলাওয়াতের বা পঠনপাঠনের সময় সেই আদবকায়দাগুলির প্রতি লক্ষ ‎রাখতে হবে। যাতে ‎পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াত বা পঠনপাঠন গ্রহণযোগ্য হয়। আর ‎সেই আদবকায়দাগুলির মধ্যে ‎কতকগুলি আদবকায়দা পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের ‎পূর্বে বাস্তবায়িত করতে হবে ‎এবং কতকগুলি আদবকায়দা কুরআন তিলাওয়াতের সময় ‎বাস্তবায়িত করতে হবে।

পবিত্র কুরআন পাঠ বা তিলাওয়াতের পূর্বের কতকগুলি আদবকায়দা‏:‏

١
পবিত্র কুরআন পাঠ বা তিলাওয়াতের সময় ও তার পূর্বে হৃদয়ের মধ্যে ‎প্রকৃত ‎সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর জন্য ইখলাস বা একনিষ্ঠতা স্থাপন ‎করা ‎জরুরি। সুতরাং পবিত্র কুরআন পাঠ বা তিলাওয়াতের দ্বারা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা ‎সত্য ‎উপাস্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি‏ ‏‎ লাভের আশা করতে হবে। যেহেতু মহান ‎আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏(وَمَا أُمِرُوْا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ)، سورة البينة، جزء من الآية 5. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আর সকল জাতির মানব সমাজকে এটাই আদেশ প্রদান করা ‎হয়েছে যে, তারা যেন আল্লাহর উপাসনা করার সাথে সাথে তাঁর আনুগত্য করে ‎একনিষ্ঠতার সহিত”। (সূরা বাইয়েনা, আয়াত নং 5 এর অংশবিশেষ)।
٢
পবিত্র কুরআন পাঠ বা তিলাওয়াতের জন্য বড়ো এবং ছোটো সকল প্রকারের ‎পবিত্রতা অর্জন করা। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(لَا يَمَسُّهُ إِلا الْمُطَهَّرُوْنَ)، سورة الواقعة، الآية 79. ‏‎ ‎ ভাবার্থের অনুবাদ: “আর বিশুদ্ধতা বা পবিত্রতা ছাড়া অন্য অবস্থায় কেউ পবিত্র ‎কুরআন স্পর্শ করতে পারে না”। (সূরা আল ওয়াকিয়া, আয়াত নং ৭৯)।‎
٣
দাঁতন করা প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা সম্মত একটি কাজ। তাই পবিত্র ‎কুরআন পাঠ বা তিলাওয়াতের পূর্বে দাঁতন করা উচিত; যেহেতু মুখের ‎দ্বারা পবিত্র কুরআন পাঠ করা হয়। সুতরাং হুজায়ফা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ‎থেকে বর্ণিত হয়েছে:‎ أنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كانَ إذَا قَامَ لِلتَّهَجُّدِ مِنَ اللَّيْلِ، يَشُوْصُ فَاهُ بالسِّوَاكِ‎ ‎‏.‏ ‏(صحيح البخاري, رقم الحديث 1136, واللفظ له، وصحيح مسلم, رقم الحديث 46- ‏‏(255),).‏ অর্থ: “আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] যখন রাতে নামাজ পড়ার জন্য উঠতেন, তখন তিনি ‎মিসওয়াক বা দাঁতন দিয়ে নিজের মুখ পরিষ্কার করে নিতেন। ‎ ‎[সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৩৬ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 46 -(২৫৫), তবে ‎হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
٤
পবিত্র কুরআন পাঠ বা তিলাওয়াতের সময় কেবলার দিকে বা পবিত্র কাবা ঘরের দিকে মুখ করা উচিত। যেহেতু সেই ‎দিকটি হচ্ছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিক। যেহেতু আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ ‎রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “প্রত্যেক জিনিসেরই রয়েছে প্রধান বিষয় বা প্রধান ‎সরদার। আর মজলিসের প্রধান বিষয় হলো কাবা ঘরের দিক বা কেবলার দিক”। ‎ ‎(আল-তাবারানী (২৩৫৪) বর্ণনাকারীদের সানাদ ভাল)।
٥
পবিত্র কুরআন পাঠ বা তিলাওয়াতের শুরুতে আউজুবিল্লাহি মিনাশ ‎শাইতানির রাজিম পাঠ করা দরকার। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র ‎কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآَنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ)، سورة النحل، الآية 98.‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! যখন তুমি পবিত্র কুরআন ‎পাঠ করার ইচ্ছা করবে, তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় ‎চাইবে”। (সূরা আন্নাহল, আয়াত নং ৯৮)।‎
٦
পবিত্র কুরআন পাঠ বা তিলাওয়াতের সময় যে কোনো সূরার প্রথমে বিসমিল্লাহির ‎রাহমানির রাহীম বলে তিলাওয়াত শুরুতে ‎করতে হবে। সুতরাং আনাস [রাদিয়াল্লাহু ‎আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:‎ ‎একদিন আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎আমাদের মাঝে ছিলেন। তিনি একটু ‎ঘুম ঘুম ভাবে প্রভাবিত হন। এরপর তিনি ‎হাসিমুখে মাথা উঠান। আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, আপনি হাসছেন কেন? ‎তিনি ‎বললেন: এখন আমার প্রতি একটি সূরা অবতীর্ণ করা হলো। সুতরাং তিনি সূরা ‎কাউসার পাঠ করলেন: “বিসমিল্লাহির ‎রাহমানির রাহীম: ‎ ‏(إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ. فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ. إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ)، سورة الكوثر، الآيات ‏‏1-3. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! আমি অবশ্যই তোমাকে ‎কাওসার তথা অনন্ত কল্যাণ দান ‎করেছি। অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্যই ‎নামাজ পড়ো ও কুরবানি করো। নিশ্চয় তোমার শত্রু বিলীন হয়ে যাবে ‎সুতরাং সে ‎নির্বংশ ও আঁটকুড়ে হয়ে যাবে। (সূরা আল কাওসার, আয়াত নং ১-৩)।‎ ‎[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩ - (৪০০) ]।

পবিত্র কুরআন পাঠ বা তিলাওয়াতের অবস্থায় কতকগুলি আদবকায়দা মেনে চলা ‎দরকার‏:‏

١
পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াত নম্রভাবে ধীরে ধীরে স্পষ্টভাবে করা উচিত। ‎যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏(وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا )، سورة المزمل، جزء من الآية 4. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আর পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াত অতিশয় ‎সুন্দরভাবে শান্তভাবে ধীরে ধীরে স্পষ্ট করে ভাবার্থের প্রতি মনোযোগী ‎হয়ে করো”।‏ ‏‎(সূরা আল মুজ্জাম্মিল, আয়াত নং ৪ এর অংশবিশেষ)।
٢
তাজভীদের সাথে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা দরকার। আনাস ‎‎[রাদিয়াল্লাহু আনহু] কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল ‎বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কুরআন ‎তিলাওয়াতের পদ্ধতির বিষয়ে। তাই তিনি উত্তরে বলেছিলেন: আল্লাহর ‎বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ‎তিলাওয়াত ছিলো সুস্পষ্ট। তাই তিনি দীর্ঘ করে স্পষ্টভাবে কুরআন ‎তিলাওয়াত করতেন। অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পাঠ ‎করলেন এবং বিসমিল্লাহ পাঠ করেছেন দীর্ঘ করে স্পষ্টভাবে। তারপর ‎আর রাহমান পাঠ করেছেন দীর্ঘ করে স্পষ্টভাবে। এবং আর রাহীম পাঠ ‎করেছেন দীর্ঘ করে স্পষ্টভাবে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৪৬]। ‎
٣
সর্বোত্তম সুরে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। সুতরাং আল বারা ‎‎[রাদিয়াল্লাহু ‎আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল ‎বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ ‎‎[সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎ ‏" زَيِّنُوا القرآنَ بأصواتِكم". ‏‎ ‎ ‏(سنن أبي داود, رقم الحديث 1468, وصححه الألباني).‏ অর্থ: “তোমরা অতি সুন্দর সুরে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করো”। ‎‎[সুনান আবু ‎দাউদ, হাদীস নং ১৪৬৮]। ‎[সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৬৮, আল্লামা মুহাম্মাদ নাসেরুদ্দিন আল ‎আলনাণী ‎হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]। ‎
٤
পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করার সময় যখন মহান আল্লাহর কৃপার ‎আয়াত পাঠ করা ‎হবে, তখন তাঁর কৃপা প্রার্থনা করা উচিত। এবং যখন ‎শাস্তির আয়াত পাঠ করা হবে, ‎তখন শাস্তি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা ‎উচিত। আর যখন মহান আল্লাহর তাসবীহ বা ‎পবিত্রতা ঘোষণার আয়াত ‎পাঠ করা হবে, তখন তাঁর জন্য তাসবীহ বা পবিত্রতা ‎ঘোষণা করা ‎উচিত। সুতরাং হোজাইফা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর হদীস এবং আল্লাহর বার্তাবহ ‎রাসূল ‎বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সাথে তাঁর ‎নামাজ পড়ার ‎বিবরণে এসেছে, তিনি বলেছেন: ‎ ‏" ثمَّ افتتح آلَ عمرانَ فقرأها, يقرأُ مترسِّلًا, إذا مرَّ بآيةٍ فيها تسبيحٌ سبَّح, وإذا مرَّ ‏بسؤالٍ سأل, وإذا مرَّ بتعوُّذٍ تعوَّذ". صحيح مسلم، رقم الحديث ‏‏203- (772).‏ অর্থ:‎‏ ‏আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] রাতের ‎নামাজে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করলেন। অতঃপর ‎তিনি আবার সূরা আল ইমরান ‎আরম্ভ করলেন এবং তার সম্পূর্ণ ‎তিলাওয়াত করলেন। তিনি স্পষ্ট করে ও ধীরে ধীরে ‎তিলাওয়াত ‎করতেন। সেই তিলাওয়াতে তিনি যখন মহান আল্লাহর তাসবীহ বা ‎‎পবিত্রতা ঘোষণা করার আয়াত পাঠ করতেন, তখন তিনি মহান আল্লাহর ‎তাসবীহ বা ‎পবিত্রতা ঘোষণা করতেন। এবং যখন কোনো কিছু প্রার্থনা ‎করার আয়াত পাঠ ‎করতেন, তখন তিনি প্রার্থনা করতেন। আর যখন ‎আশ্রয় প্রার্থনা করার আয়াত পাঠ ‎করতেন, তখন তিনি আশ্রয় প্রার্থনা ‎করতেন। ‎[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০৩ -(৭৭২)]। ‎
٥
পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করার সময় যখন সিজদার আয়াত আসবে, ‎তখন সিজদা করা মোস্তাহাব ও পছন্দনীয় বিষয়। যেহেতু আয়েশা ‎‎[রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে এই বিষয়ে হদীস বর্ণিত হয়েছে: তিনি বলেন:‎ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ فِيْ سُجُوْدِ الْقُرْآنِ بِاللَّيْلِ: يَقُوْلُ فِي ‏السَّجدةِ مِرَارًا: "سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِيِ خَلَقَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ".‏ ‏ (سنن أبي داود, رقم الحديث 1414, واللفظ له، وجامع الترمذي, رقم ‏الحديث 580, قال الإمام الترمذي عن هذا الحديث: بأنه حسن صحيح, ‏وصححه الألباني).‏ অর্থ: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম]‎‏ ‏রাতে কুরআনের সিজদার আয়াতে নিম্নের এই দোয়াটি ‎একাধিকবার বা বারংবার পাঠ করতেন।‏ ‏ ‎"‎سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِيِ خَلَقَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ‎".‎ অর্থ: ‎‏“‏আমার মুখমণ্ডল সিজদায় অবনমিত সেই মহান সত্তার জন্য, যিনি ‎স্বীয় কৌশল ও শক্তিতে এই মুখমণ্ডলকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে উদ্ভিন্ন ‎করেছেন কর্ণ ও চক্ষু ‎‏”‏। ‎[সুনান আবু দাউদ, হাদীস, নং ১৪১৪ এবং জামে তিরমিযী, হাদীস নং ‎৫৮০, তবে হাদীসের শব্দগুলি সুনান আবু দাউদ থেকে নেওয়া হয়েছে। ‎ইমাম তিরমিযী হাদীসটি হাসান সহীহ বলেছেন এবং আল্লামা মুহাম্মাদ ‎নাসেরুদ্দীন আল আলবাণীও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন] ।
٦
ঐকান্তিকভাবে গভীর মনোযোগের সাথে বিনম্রতা ও প্রশান্তি বজায় রেখে ‎পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা দরকার। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র ‎কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏ (كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوْا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُو الْأَلْبَابِ)، سورة ص، الآية 29. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! আমি তোমার প্রতি এই ‎কল্যাণময় গ্রন্থ পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে সকল জাতির মানব সমাজ ‎এই পবিত্র কুরআনের উপদেশগুলির জ্ঞান লাভ করার জন্য ঐকান্তিকভাবে গভীর ‎মনোযোগের সাথে গভীর চিন্তা ও অনুধাবন করে এবং তার শিক্ষার আলোকে জীবন ‎পরিচালিত করে। আর বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা যেন এই পবিত্র কুরআনের উপদেশগুলি ‎সঠিকভাবে মেনে চলে”। (সূরা সদ, আয়াত নং ৫২)। ‎

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন