শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় পবিত্র কুরআন ও তার তাফসীরের গভীর গবেষণা করে উপকৃত হওয়া।

বিবরণ:‎ পবিত্র কুরআনের তাফসীর বা ব্যাখ্যা এবং তার ঐকান্তিকভাবে গভীর ‎মনোযোগের ‎সাথে গভীর চিন্তা ও অনুধাবন করা হলো মহা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এই দুইটি কাজের ‎দ্বারা মুসলিম ব্যক্তিকে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য জানার ‎নিকটবর্তী করে। আর এই দুইটি বিষয় মুসলিম ব্যক্তিকে পবিত্র কুরআনের শিক্ষা ‎মোতাবেক কাজ করতে সাহায্য করে। এই অনুচ্ছেদে আপনি পবিত্র কুরআনের ‎তাফসীর বা ব্যাখ্যা এবং তার ঐকান্তিকভাবে গভীর ‎মনোযোগের সাথে গভীর চিন্তা ও ‎অনুধাবন করার জ্ঞান ও তার মহা গুরুত্বের জ্ঞান লাভ করতে পারবেন।

উদ্দেশ্য:

  • পবিত্র কুরআনের তাফসীর বা ব্যাখ্যা এবং তার ঐকান্তিকভাবে গভীর ‎মনোযোগের সাথে গভীর চিন্তা ও অনুধাবন করার উদ্দেশ্য জানা।
  • পবিত্র কুরআনের তাফসীর বা ব্যাখ্যা এবং তার ঐকান্তিকভাবে গভীর ‎মনোযোগের সাথে গভীর চিন্তা ও অনুধাবন করার মর্যাদা ও তার প্রয়োজনের জ্ঞান লাভ করা।
  • পবিত্র কুরআনের তাফসীর বা ব্যাখ্যার বিভিন্ন পন্থা ও পদ্ধতির জ্ঞান লাভ করা।
পবিত্র কুরআনের তাফসীর বা ব্যাখ্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য বইয়ের লাভ করা। 

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

পবিত্র কুরআনের গভীর চিন্তা ও একাগ্রভাবে অনুধাবন ও গভীর গবেষণা এবং তার তাফসীর

প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য হলো এই যে, সে যেন সঠিকভাবে পবিত্র কুরআন পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়, পবিত্র কুরআনের গভীর জ্ঞান লাভ করে, তার ভাবার্থ জানার জন্য গভীর গবেষণা করে, তার উপদেশ জানার চেষ্টা করে, তার বিনিবারিত বিষয় হতে বিরত থাকে, তার তাফসীরের জ্ঞান লাভ করে এবং তার বিধিবিধানের জ্ঞান লাভ করে আর তার শিক্ষা মোতাবেক জীবন পরিচালিত করে। তাহলে সে ইহকাল ও পরকালে মঙ্গলময় ও সুখশান্তিতে পরিপূর্ণ জীবন লাভ করতে পারবে।

পবিত্র কুরআনের তাদাব্বুরের অর্থ:

পবিত্র কুরআনের তাদাব্বুরের অর্থ হলো: পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলির বিষয়ে গভীর চিন্তা ও একাগ্রভাবে অনুধাবন করা এবং সেগুলির দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবান্বিত ও উপকৃত হওয়া আর সেগুলির শিক্ষা মোতাবেক কর্ম সাধন করা।

যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলির বিষয়ে গভীর চিন্তা ও একাগ্রভাবে অনুধাবন ও গভীর গবেষণা করার ইচ্ছা করবে, সে যেন পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলির ভাবার্থের সঠিক জ্ঞান লাভ করে, তবেই সে পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলির আসল তাৎপর্য বুঝতে পারবে।

পবিত্র কুরআনের বিষয়ে ঐকান্তিকভাবে গভীর মনোযোগের সাথে গভীর চিন্তা ও অনুধাবন করা অপরিহার্য

প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য হলো এই যে, সে যেন পবিত্র কুরআনের বিষয়ে ঐকান্তিকভাবে গভীর মনোযোগের সাথে গভীর চিন্তা ও অনুধাবন করে আর তার আয়াত ও ভাবার্থের জ্ঞান লাভ করে এবং তার শিক্ষা মোতাবেক নিজের জীবন পরিচালিত করে। তাই এই বিষয়ে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوْا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُو الْأَلْبَابِ)، سورة ص، الآية 29. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! আমি তোমার প্রতি এই কল্যাণময় গ্রন্থ পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে সকল জাতির মানব সমাজ এই পবিত্র কুরআনের উপদেশগুলির জ্ঞান লাভ করার জন্য ঐকান্তিকভাবে গভীর মনোযোগের সাথে গভীর চিন্তা ও অনুধাবন করে এবং তার শিক্ষার আলোকে জীবন পরিচালিত করে। আর বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা যেন এই পবিত্র কুরআনের উপদেশগুলি সঠিকভাবে মেনে চলে”। (সূরা সদ, আয়াত নং ৫২)। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন: (أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا)، سورة محمد، الآية 24. ভাবার্থের অনুবাদ: “তারা কি পবিত্র কুরআনের উপদেশগুলির জ্ঞান লাভ করার জন্য ঐকান্তিকভাবে গভীর মনোযোগের সাথে গভীর চিন্তা ও অনুধাবন করবে না এবং তার শিক্ষার আলোকে জীবন পরিচালিত করবে না? নাকি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তাদের হৃদয়কে বন্ধ করে রেখেছেন; সুতরাং তাদের হৃদয়ে পবিত্র কুরআনের শিক্ষার আলো প্রবেশ করবে না? (সূরা সদ, আয়াত নং ৫২)।

পবিত্র কুরআনের তাফসীরের অর্থ

তাফসীর বলা হয় পবিত্র কুরআনের ভাবার্থের ব্যাখ্যাকে।

‎ তাফসীরের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

তাফসীর বিদ্যা হলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে বেশি ‎কল্যাণদায়ক বিদ্যা। ‎এই বিদ্যা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান ‎আল্লাহর বাণী পবিত্র কুরআনের সাথে ‎সংশ্লিষ্ট ও জড়িত। এই বিদ্যার ‎দ্বারা পবিত্র কুরআনের ভাবার্থ, উদ্দেশ্য ও ভাবার্থের ‎অনুবাদ জানা যায়। ‎এর মাধ্যমে প্রকৃত ইমানদার মুলিম ব্যক্তি সৎ কর্ম সম্পাদন করার ‎নিয়ম ‎নীতির সন্ধান পায়, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য ‎উপাস্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ‎লাভ ‎করার সুযোগ পায় এবং জান্নাত বা স্বর্গ লাভে সফলকাম হয়; পবিত্র ‎কুরআনের ‎উপদেশ মেনে চলার মাধ্যমে, তার বিনিবারিত বা নিষেধকৃত বিষয় ‎থেকে বিরত থাকার ‎মাধ্যমে, তার শিক্ষামূলক বিভিন্ন প্রকারের কিসসা কাহিনি অথবা গল্প বা ‎ঘটনা ও ‎সংবাদের উপদেশ গ্রহণের মাধ্যমে। আর তাফসীর বিদ্যার ‎সাহায্যে মানুষ সত্য ও ‎মিথ্যার মধ্যে তফাত করতে পারে এবং আয়াতের ‎সঠিক জ্ঞান ও শিক্ষা লাভ করতে ‎পারে আর বিভিন্ন প্রকারের দ্বিধা সংশয় ‎ও সন্দেহ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ‎নিকট থেকে সম্মানিত সাহাবীগণ [রাদিয়াল্লাহু আনহুম] এর পবিত্র কুরআনের ভাবার্থ ‎ও তাফসীর জানার আগ্রহ ও গুরুত্ব।

সম্মানিত সাহাবীগণ [রাদিয়াল্লাহু আনহুম] এর মধ্যে পবিত্র কুরআনের কোনো কিছু ‎উপলব্ধি করার বিষয়ে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাঁরা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল ‎বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে ‎নিতেন এবং সমস্যার সমাধান করা হতো। যেহেতু আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: যখন ‎এই আয়াতটি অবতীর্ণ হলো: ‎ ‏(الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْا إِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ)، سورة الأنعام، الآية 82.‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “যারা প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক নিজেদের অন্তরে মহান ‎আল্লাহর প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং নিজেদের ঈমানকে জুলুমের ‎দ্বারা কলুষিত করেনি”। (সূরা আল আন্আম, আয়াত নং ৮২ এর অংশবিশেষ)। তখন তা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎এর সাহাবীদের নিকটে অত্যন্ত জটিল বিষয় মনে হয়েছিলো। তাই তাঁরা বললেন: ‎আমাদের মাঝে এমন কে আছে যে তার ঈমানকে জুলুমের দ্বারা সে কলুষিত ‎করেনি। সুতরাং আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] তাঁদেরকে বললেন: এই অয়াতের যে ভাবার্থটি তোমরা নিয়েছো সে ‎ভাবার্থটি এই স্থানে প্রযোজ্য নয়। তোমরা কি লুকমানের কথা শ্রবণ করনি? ‎ কেননা লোকমান হাকীম বা প্রজ্ঞাবান লোকমান তাঁর পুত্রকে এই শিক্ষা ও পরামর্শ ‎দিয়েছিলেন:‎ ‏(يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ)، سورة لقمان، جزء من الآية 13. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে আমার সন্তান! প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর ‎সাথে কাউকে অংশীদার স্থাপন করিও না। নিশ্চয়ই অংশীদার স্থাপন করা হলো ‎জঘন্য অপরাধ ও মহাপাপ বা জুলুম”। (সূরা লোকমান, আয়াত নং ১৩ এর ‎অংশবিশেষ)। ‎[সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৩৭ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭ -(১২৪), ‎তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।

পবিত্র কুরআনের তাফসীর এবং তার ভাবার্থ জানার জন্য নিম্নলিখিত ‎নিয়ম পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে:‎

١
পবিত্র কুরআনের দ্বারা পবিত্র কুরআনের তাফসীর।
٢
নির্ভরযোগ্য হাদীসের দ্বারা পবিত্র কুরআনের তাফসীর।
٣
সাহাবীগণের তাফসীর।
٤
তাবেয়ীদের তাফসীর।

প্রথমত : পবিত্র কুরআনের দ্বারা পবিত্র কুরআনের তাফসীর।

এর কারণ হলো এই যে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ ‎পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং তিনিই যে উদ্দেশ্যে সেই পবিত্র ‎কুরআন অবতীর্ণ করেছেন, সেই উদ্দেশ্য তিনিই সব চেয়ে বেশি জানেন।

উদাহরণস্বরূপ:‎‏ ‏মহান আল্লাহ এই বিষয়ে পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏(أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ. الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ)، ‏سورة يونس، الآية 62- 63. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে মানব সকল! তোমরা সবাই জেনে রাখো! প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা ‎সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর প্রিয়জনদের ও তাঁর নৈকট্যলাভকারীদের পরকালে ‎কোনো শাস্তির ভয় নেই এবং কোনো দুঃখকষ্টের আশঙ্কা নেই। তাঁরা হলেন আসলে ‎প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজ এবং তাঁরা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান ‎আল্লাহকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক সতর্কতার সহিত সঠিকভাবে মেনে ‎চলেন”। (সূরা ইউনুস, আয়াত নং ৬২-৬৩)। ‎ ‎“প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর প্রিয়জনদের ও তাঁর ‎নৈকট্যলাভকারীদের” তাফসীর পবিত্র কুরআনের দ্বারা করা হলো এই বলে যে, ‎‎“তাঁরা হলেন আসলে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজ এবং তাঁরা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা ‎সত্য উপাস্য মহান আল্লাহকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক সতর্কতার সহিত ‎সঠিকভাবে মেনে চলেন”। ‎

দ্বিতীয়ত : নির্ভরযোগ্য হাদীসের দ্বারা পবিত্র কুরআনের তাফসীর।

এর কারণ হলো এই যে, আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ ‎‎[সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান ‎আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর পবিত্র বাণীর প্রচারক। সুতরাং তিনি সেই ‎পবিত্র বাণীর ভাবার্থ ও উদ্দেশ্য মানুষের মধ্যে চেয়ে বেশি জানেন।

এর উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী ‎মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] শক্তির তাফসীর করেছেন অস্ত্র ‎নিক্ষেপ করা। সুতরাং ওকবা বিন আমের [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে ‎বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু ‎আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে আমি মিম্বারের উপরে বলতে শুনেছি। তিনি ‎প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বাণী:‎ ‏(وَأَعِدُّوْا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ)،‏‎ ‎‏ سورة الأنفال، جزء من الآية60. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আর হে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজ! তোমরা ‎প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শত্রুদের অমঙ্গল হতে নিজেদেরকে সংরক্ষিত করে ‎রাখার উদ্দেশ্যে সমাজ উপযোগী কার্যকর শক্তি তৈরি করো”। ‎(সূরা আল আনফাল, আয়াত নং ৬০ এর অংশবিশেষ)। এর তাফসীরে বলেছেন: তোমরা সতর্কভাবে জেনে রাখো! শক্তি হলো ‎আসলে এমন অস্ত্র যা শত্রুদের প্রতি নিক্ষেপ করা হয়। শক্তি হলো ‎আসলে এমন অস্ত্র যা শত্রুদের প্রতি নিক্ষেপ করা হয়। শক্তি হলো ‎আসলে এমন অস্ত্র যা শত্রুদের প্রতি নিক্ষেপ করা হয়। ‎ ‎[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৭ - (১৯১৭)] ।‎

তৃতীয়ত: সাহাবীগণ [রাদিয়াল্লাহু আনহুম] এর তাফসীর।

এর কারণ হলো এই যে, তাফসীর সম্পর্কে সাহাবীগণ [রাদিয়াল্লাহু ‎আনহুম] বেশি জ্ঞান রাখতেন। যেহেতু তাঁরা সেই সময় পবিত্র কুরআন ‎অবতীর্ণ হওয়ার কারণ ও পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছেন; তাই তাঁরা পবিত্র ‎কুরআনের তাফসীর সম্পর্কে বেশি ও সঠিক জ্ঞান রাখতেন এবং সেই ‎মোতাবেক তাঁরা কর্মও করতেন। ‎

এর উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, এই বিষয়ে মহান আল্লাহ পবিত্র ‎কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لامَسْتُمُ النِّسَاءَ)، ‏سورة النساء، جزء من الآية 43. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “এবং যদি তোমরা অসুস্থ হও বা ভ্রমণের অবস্থায় ‎থাকো কিংবা তোমাদের মধ্যে থেকে কেউ প্রাকৃতিক প্রয়োজনের কাজ ‎সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীসহবাস করে থাকো”। ‎(সূরা আন্নিসা, আয়াত নং ৪৩ এর অংশবিশেষ)। ‎“অথবা তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করে থাকো”। সঠিক বর্ণনা ‎মোতাবেক এর তাফসীরে আবদুল্লাহ বিন আব্বাস বলেছেন: স্পর্শ করার ‎অর্থ হলো সহবাস করা। ‎ তাফসীর তাবারী (৮/৩৮৯)।

চতুর্থত: তাবেয়ীদের তাফসীর।

তাবেয়ীগণ সাহাবীগণ [রাদিয়াল্লাহু আনহুম] এর কাছ থেকে তাফসীরের ‎জ্ঞান লাভ করার বিষয়ে অতি যত্নবান ছিলেন। যেহেতু তারা সাহাবীগণ ‎‎[রাদিয়াল্লাহু আনহুম] এর পর মানব জাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন। ‎তাদের পরের যুগের মানব জাতির চেয়ে তারা ছিলেন সর্বোত্তম মানুষ। ‎তাই তরা কুপ্রবৃত্তি ও খারাপ আচরণের অনেক ঊর্ধ্বে ছিলেন। আর ‎তাদের যুগে আরবী ভাষার খুব একটা পরিবর্তনও ঘটেনি। তাই পরবর্তী ‎যুগের মানুষের তুলনায় তাদের বোধশক্তি কুরআনের তাফসীরের বিষয়ে ‎বেশি সঠিক ছিলো।

পবিত্র কুরআনের তাফসীরের বিষয়ে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির ‎দায়িত্ব।

প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির জন্য পবিত্র কুরআনের কোনো আয়াত ‎উপলব্ধি করা এবং তার ভাবার্থের অনুবাদ জানা সহজে বোধগম্য না হলে, ‎তাফসীরের সহায়তা নেওয়া উচিত এবং নির্ভরযোগ্য মুফাসসিরগণের ‎ব্যাখ্যা ও বিবরণ এবং তাফসীরের সাহায্য নেওয়া উচিত। ‎

পবিত্র কুরআনের তাফসীর বা ব্যাখ্যা করা প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ‎সমাজের জনসাধারণের জন্য প্রযোজ্য নয়। সুতরাং পবিত্র কুরআনের ‎তাফসীর তাঁরাই করতে পারবেন, যাঁদের মধ্যে পবিত্র কুরআনের ‎তাফসীরের বিষয়ে সঠিক জ্ঞান রয়েছে। অতএব প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ‎সমাজের জনসাধারণের জন্য না জেনে পবিত্র কুরআনের তাফসীরের ‎বিষয়ে কিছু বলা উচিত নয়। যেহেতু তাফসীরকারক বা মুফাসসির হলেন ‎প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ভাষান্তরকারী ‎এবং তাঁর বাণীর উদ্দেশ্যের ভাষ্যকার ও সাক্ষীস্বরূপ। আর তাফসীরকারক ‎বা মুফাসসির যেন তাঁর সাক্ষ্য দানের সম্মান করেন আর প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা ‎সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর প্রতি না জেনে কোনো কথা না বলেন। ‎কেননা মহান আল্লাহর প্রতি না জেনে কোনো কথা বলা হলো হারাম বা ‎অবৈধ কাজ। আর এই হারাম বা অবৈধ কাজের জন্য কিয়ামতের দিন ‎লাঞ্ছিত হতে হবে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوْا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ ‏سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُوْلُوْا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ)، سورة الأعراف، الآية 33.‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মদ! তুমি বলে দাও: আমার ‎পালনকর্তা সমস্ত প্রকারের প্রকাশ্য ও গুপ্ত অশালীন আচরণ, পাপকর্ম, ‎অন্যায় অত্যাচার এবং আল্লাহর সাথে এমন কোনো অংশীদার স্থাপন করা, ‎যা আল্লাহর প্রদত্ত প্রমাণসাপেক্ষ নয় আর না জেনে আল্লাহর প্রতি কোনো ‎প্রকারের কথা আরোপ করা নিশ্চয় হারাম করে দিয়েছেন”। (সূরা আল ‎আরাফ, আয়াত নং 33)।

সবচয়ে বেশি গুরুত্বর্পূণ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরের ববিরণ:‎

পবত্রি কুরআনের ‎তাফসীর অনেক প্রকারের রয়েছে। আর যেহেতু সেই তাফসীরগুলির ‎গ্রহণযোগ্যতার স্তর একই রকম নয়, সেহেতু প্রকৃত ইমানদার মুসলমি ব্যক্তির কর্তব্য ‎হলো এই যে, সে যেন ওই সমস্ত বিশ্বাসযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য ‎তাফসীরের দ্বারা ‎উপকৃত হয়, যে সমস্ত ‎তাফসীরের তাফসীরকারক তাফসীরের রীতিনীতি ও নিয়ম ‎পদ্ধতির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত। আর সেই সমস্ত বিশ্বাসযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য ‎তাফসীরের ‎মধ্যে রয়েছে নিম্নের তাফসীরগুলি: ‎

সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ ‎তাফসীরের তালিকা:‎

١
جامع البيان عن تأويل آي القرآن للإمام ابن جرير الطبري.‏‎ ‎ ইমাম ইবনু জারির আত্তাবারী [রাহিমাহুল্লাহ] এর সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর। ‎ ‎
٢
تفسير القرآن العظيم، للإمام ابن كثير الدمشقي.‏ ইমাম ইবনু কাসীর [রাহিমাহুল্লাহ] এর বিখ্যাত তাফসীর। ‎
٣
تيسير الكريم الرحمن في تفسير كلام المنان، للشيخ عبدالرحمن السعدي.‏ শায়খ আল্লামা আব্দুল রহমান আস্সায়াদী [রাহিমাহুল্লাহ] এর প্রখ্যাত তাফসীর। ‎
٤
التفسير الميسر، تأليف نخبة العلماء، الناشر: مجمع الملك فهد لطباعة المصحف الشريف بالمدينة ‏المنورة.‏ আত্তাফসীরুল মুইয়াস্সার “সহজ তাফসীর” কতকগুলি তাফসীরকারক দ্বারা রচিত, ‎প্রকাশক: মদীনার পবিত্র কুরআন মুদ্রণের কিং ফাহদ কমপ্লেক্স।

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন