মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় প্রকৃত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার নিয়ম পদ্ধতি।
কোনো মানুষ যখন এই বলে দুইটি সাক্ষ্য উচ্চারণ করবে যে, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই আর বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল ও প্রিয় ব্যক্তি। এবং এই দুই সাক্ষ্য উচ্চারণের অর্থ ও তাৎপর্য বুঝতে পারবে আর তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তার দাবি মোতাবেক নিজের জীবন পরিচালিত করার ইচ্ছা পোষণ করবে, তখন সে প্রকৃত মুসলিম হিসেবে পরিগণিত হবে।
দুইটি সাক্ষ্য হলো:
যে কোনো মাষের প্রকৃত ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করার মুহূর্তটি হলো তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। আর এই মুহূর্তটি হলো তার প্রকৃত জন্ম গ্রহণের আসল মুহূর্ত। এই নতুন জন্মে সে তার জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য বা লক্ষ জানতে পেরেছে। তার প্রকৃত ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করার সাথে সাথে তার জন্য স্নান বা গোসল করা হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা সম্মত একটি কাজ। তাই সে তার সারা শরীরকে পবিত্র পানি দিয়ে ধৌত করবে। সে যেমন প্রকৃত ইসলাম ধর্ম গ্রহণের দ্বারা সমস্ত প্রকারের শির্ক ও পাপ থেকে নিজেকে পবিত্র করেছে, সেই রূপ তার জন্য তার সারা শরীরকে পবিত্র পানি দিয়ে ধৌত করা এবং স্নান কিংবা গোসল করা হলো তার জন্য মোস্তাহাব বিষয়।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আরবদের একজন নেতা সাহাবী যখন প্রকৃত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার ইচ্ছা করেছিলেন, তখন তিনি তাকে স্নান কিংবা গোসল করা নির্দেশ দিয়েছিলেন। (আল বাইহাকী ৮৩৭)।
তওবা করার বিবরণ
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী কতকগুলি নির্দিষ্ট নিয়ম মোতাবেক যে কোনো পাপ থেকে মহান আল্লাহর আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করাকে তওবা বলা হয়। তাই যে ব্যক্তি তার পাপ ও কুফুর অথবা আল্লাহকে বা তাঁর শিক্ষাকে প্রত্যাখ্যান করা হতে আন্তরিকতার সহিত নিষ্টাবান হয়ে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর প্রদত্ত শিক্ষার দিকে প্রত্যাবর্তন করাই হলো তওবা করা।
তওবা করার শর্তসমূহ:
তওবার প্রতি স্থিরভাবে অবিচল থাকার কতকগুলি পদক্ষেপ
তওবা করার পর করণীয় কাজ কী?
মানুষ যখন অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে এবং তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করবে, তখন তিনি তার সমস্ত পাপ মাফ করে দিবেন তার পাপ যত বড়োই হোক না কেন। যেহেতু তাঁর করুণা সবকিছুকেই পরিবেষ্টিত করে রেখেছে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ أَسْرَفُوْا عَلَى أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ)، سورة الزمر، الآية 53. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তুমি বলে দাও: আল্লাহ বলেছেন: হে আমার সকল জাতির মানব সমাজ! তোমরা যারা নিজেদের আত্মার প্রতি বড়ো বড়ো পাপের দ্বারা জুলুম অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহর কৃপা হতে কোনো সময় নিরাশ হয়ো না; কেননা তোমরা যদি সঠিকভাবে অনুতাপী হয়ে ইসলামের পথে পরিচালিত হও, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দিবেন; নিশ্চয় তিনি ক্ষমাবান দয়াবান”। (সূরা আযযুমার, আয়াত নং ৫৩)।
সত্যপরায়ণ মুসলিম ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়ে সঠিকভাবে একনিষ্ঠতার সহিত সত্যিকারের তওবা করলে সে নিষ্পাপ ও পবিত্র হয়ে যায়। বরং মহান আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তনকারী সত্যিকারের অনুতপ্ত তওবাকারীকে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ মহা সম্মানিত করে মহা পুরস্কার প্রদান করেন। অতএব তার সমস্ত পাপকে পুণ্যে পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত করেন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: {إِلَّا مَنْ تَابَ وَآَمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا} (الفرقان: 70). ভাবার্থের অনুবাদ: “ তবে যারা অনুতপ্ত হয়ে তওবা করবে এবং তাদের অন্তরে মহান আল্লাহর প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং সৎকর্ম করবে, মহান আল্লাহ তাদের সমস্ত পাপকে পুণ্যে রূপান্তরিত করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। (আল-ফুরকান : ৭০)।
আর যে ব্যক্তি এই নিয়মে অনুতপ্ত হয়ে সঠিকভাবে একনিষ্ঠতার সহিত সত্যিকারের তওবা করবে, সে ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন তার পবিত্র তওবার সংরক্ষণ করার জন্য সবচেয়ে মূল্যবান ও মর্যাদাবান বিষয় বিসর্জিত করে এবং শয়তানের প্রভাবে পড়ে পুনরায় পূর্বাবস্থায় নিমজ্জিত না হয়।
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সর্বাধিক ভালোবাসে এবং অন্যদেরকে ততটাই ভালোবাসে যতটা তারা আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারে এবং যতটা তারা প্রকৃত ইসলাম ধর্মকে সঠিকভাবে মেনে চলতে পারে। এবং কুফরি করা, আল্লাহর অংশীদার স্থাপন করা এবং প্রকৃত ইসলাম ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করা তার নিকটে ওই রকম ঘৃণিত বিষয় হয়ে যায়, যে রকম সে নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা ঘৃণিত বিষয় মনে করে। আর সে ব্যক্তি নিশ্চয় তার হৃদয়ে ইমানের বা বিশ্বাসের স্বাদ বা মিষ্টতা ও আনন্দ এবং মাধুর্য লাভ করবে আল্লাহর প্রতি তার বিমুগ্ধতার কারণে এবং প্রকৃত ইসলাম ধর্মে সুখশান্তি অনুভব করার কারণে এবং মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত হওয়ার কারণে। তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “তিনটি বিষয় যে ব্যক্তির মধ্যে থাকবে, সে ব্যক্তি ইমানের বা বিশ্বাসের স্বাদ গ্রহণ করবে । আর সেই তিনটি বিষয় হলো: “আল্লাহ ও তাঁর বার্তাবহ রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছুর চেয়ে বেশি প্রিয় হবে এবং সে কোনো ব্যক্তিকে ভালোবাসলে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে এবং সে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের অনুগামী হওয়ার পর প্রকৃত ইসলাম ধর্ম থেকে অন্য দিকে ফিরে যাওয়াকে এমন ঘৃণা করবে, যেমন সে নিজেকে আগুনে নিক্ষিপ্ত করাকে ঘৃণা করে” (বুখারি 21, মুসলিম 43)।
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের প্রতি অটল থাকা এবং সেই ক্ষেত্রে কষ্টের বিষয়ে ধৈর্যধারণ করা:
যে ব্যক্তি কোনো মূল্যবান সম্পদের মালিক হবে, সে ব্যক্তি সেই মূল্যবান সম্পদের সংরক্ষণ করবে। যাতে সেই মূল্যবান সম্পদের প্রতি অপব্যবহারকারীদের এবং চোরদের হাত না যায়। আর সেই মূল্যবান সম্পদের সংরক্ষণের জন্য সে সর্ব প্রকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এবং প্রকৃত ইসলাম ধর্ম হলো মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ মূল্যবান সম্পদ ও মহান আল্লাহর সর্বোত্তম অনুগ্রহ। আর প্রকৃত ইসলাম ধর্ম কোনো একটি ভাবমূলক মত বা ধারণা ও শখ বা মনের ঝোঁক নয় যে, মানুষ তার ইচ্ছামতো কোনো সময় এই ধর্মটিকে মেনে চলবে বা বর্জন করবে। বরং প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মানব জীবনের সমস্ত বিষয়ে এবং তার সমস্ত অস্থিরতা, স্থিরতা ও চলাফেরা করার বিষয়ে ফয়সালা প্রদান করে। তাই মহান আল্লাহ তাঁর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে প্রকৃত ইসলাম ও পবিত্র কুরআনের শিক্ষা দৃঢ়ভাবে মেনে চলার আদেশ প্রদান করেছেন এবং সেই প্রকৃত ইসলাম ও পবিত্র কুরআনের শিক্ষাকে কোনো সময় ত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: {فَاسْتَمْسِكْ بِالَّذِي أُوحِيَ إِلَيْكَ إِنَّكَ عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيم} (الزخرف: 43). ভাবার্থের অনুবাদ: “অতএব, তোমার প্রতি যে ওহী অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা দৃঢ়ভাবে তুমি অবলম্বন করো। নিঃসন্দেহে তুমি সরল পথে রয়েছো”। (সূরা জুখরুফ: 43)।
প্রকৃত ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর মুসলিম ব্যক্তি কোনো বিপদের সম্মুখীন হলে, দুঃখ কষ্ট প্রকাশ করা উচিত নয়। যেহেতু এই ধরণের বিপদ হলো মহান আল্লাহর জাগতিক নিয়ম। যাঁরা আমাদের চেয়ে ভালো ও উত্তম ছিলেন, তারাও এই ক্ষেত্রে কঠিন বিপদে পড়েছেন এবং তাঁরা ধৈর্য্যধারণ করেছেন আর জেহাদ করেছেন। অতএব মহান আল্লাহর নাবীদেরকে অনেক বড়ো বড়ো বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছে। দূরের লোকজনের আগে তাঁদের নিজের পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের দিক থেকে তাঁদের উপরে বিপদ এসেছে। আল্লাহর পথে তাদের উপরে যে সমস্ত বিপদ এসেছে, সেই সমস্ত বিপদের কারণে তাঁরা দুর্বল হননি এবং তাঁরা বিশেষ পরিবর্তন করেন নি আর কিছু ফিরিয়ে দেননি। বিভিন্ন প্রকারের বিপদও হলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ইমান ও আস্থা বা বিশ্বাসের একটি পরীক্ষা। তাই মুসলিম ব্যক্তিকে তার পরীক্ষা মোতাবেক ধৈর্য্যধারণের জন্য প্রস্তুত বা তৈরি থাকতে হবে এবং প্রকৃত ইসলাম ধর্মের উপরে অটল থাকতে হবে। আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে, যেমন:- আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর কাছে প্রচুর প্রার্থনা করতেন এবং বলতেন: "يا مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك" (الترمذي 2140). অর্থ: “হে আল্লাহ হৃদয়ের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার হৃদয়কে আপনার প্রকৃত ধর্ম ইসলামের উপরে দৃঢ়ভাবে অটল রাখুন" (তিরমিজি 2140)।