মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অথবা কোম্পানি বা কর্পোরেশন
কোনো অধিকার সাব্যস্ত করার জন্য বা কার্য সম্পাদনের জন্য দুই জন বা তার চেয়ে বেশি লোকের মিলিত হওয়া। প্রথমটির উদাহরণ হলো: দুই জন লোকের মিলিত হওয়া মিরাস বা ওয়ারিসি সম্পত্তির বিষয়ে অথবা কোনো উপহার বা দানের বিষয়ে। দ্বিতীয়টির উদাহরণ হলো: তারা ক্রয়বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অংশীদার হওয়া।
ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অথবা কোম্পানি বা কর্পোরেশনের বিধান
ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অথবা কোম্পানি বা কর্পোরেশনের মাধ্যমে ব্যবসা বা বাণিজ্য করা জায়েজ বা বৈধ। যেহেতু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অথবা কোম্পানি বা কর্পোরেশনের মাধ্যমে ব্যবসা বা বাণিজ্যের কাজকর্ম আসলে বৈধ। আর এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ মানব সমাজের জীবনযাত্রার পদ্ধতি ও জীবিকা অর্জনের পথ সহজ ও বৈধ করে দিয়েছেন। আর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অথবা কোম্পানি বা কর্পোরেশনের মাধ্যমে ব্যবসা বা বাণিজ্যের কাজকর্ম সম্পাদন করা মুসলিম ব্যক্তির সাথে এবং অমুসলিম ব্যক্তির সাথে বৈধ ও সঠিক বলে বিবেচিত হবে। সুতরাং অমুসলিম ব্যক্তির সাথে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অথবা কোম্পানি বা কর্পোরেশনের মাধ্যমে ব্যবসা বা বাণিজ্যের কাজকর্ম সম্পাদন করা বৈধ। তবে শর্ত হলো এই যে, অমুসলিম ব্যক্তি যেন মুসলিম ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে নিজেই সব কিছু সম্পাদন না করে।
মানুষের অর্থ বা ধনসম্পদের উন্নয়ন বা উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। আর সে কোনো কোনো সময় একাই সঙ্গীহীন অবস্থায় এই উন্নয়ন বা উন্নতির কাজ করতে অপারগ হয়ে যায়; তার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে অথবা তার যথেষ্ট পরিমাণে মূলধন না থাকার কারণে। সেই রূপ মানব সমাজের মধ্যে কোনো কোনো সময় এমন বড়ো বড়ো প্রকল্পের প্রয়োজন হয় যে, সেই বড়ো বড়ো প্রকল্পের কাজের জন্য এক জন মানুষ পাওয়া জটিল বিষয় হয়ে যায়। তাই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অথবা কোম্পানি বা কর্পোরেশনের মাধ্যমে এই ধরণের বড়ো বড়ো প্রকল্পের কাজ সহজ হয়ে যায়।
ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অথবা কোম্পানি বা কর্পোরেশনের বিভাগসমূহ
যৌথ মূলধনী কোম্পানি বা আমলাক কোম্পানিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
দুই অংশীদারের কর্মের মাধ্যমে এই কোম্পানির উৎপত্তি হয়। যেমন দুইজন অংশীদার হিসেবে কোনো একটি স্থাবর বা অস্থাবর জিনিস ক্রয় করে এবং দুইজন অংশীদার হিসেবে মালিক হবে।
দায়বদ্ধ কোম্পানি বা আল জাবর কোম্পানি
দুই বা ততোধিক লোকের জন্য দায়বদ্ধ কোম্পানি তাদের কর্ম ছাড়াই। যেমন দুইজন অংশীদার হিসেবে কোনো সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হওয়া। অতএব মিরাসের বা ওয়ারিসি সম্পত্তির দুইজন অংশীদার হিসেবে মালিক হওয়া।
যৌথ মূলধনী কোম্পানি বা আমলাক কোম্পানির অংশীদারদের সঙ্ঘবদ্ধ কর্মসাধন।
দুই অংশীদারের নির্দিষ্ট ভাগের মালিক হিসেবে দুই অংশীদার কাজ করবে। দুই জনের সম্পদ আলাদা অলাদা হবে। একজন অন্য জনের সম্পদে তার অনুমতি ছাড়া হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। তাই একজন অন্য জনের অনুমতি ছাড়া কোনো কর্ম করলে, সেই কর্ম তার নিজের ব্যক্তিগত কর্ম হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে দুই জনের অনুমতিক্রমে দুই অংশীদার কাজ করলে সেই কাজটি গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
প্রতিশ্রুতি দ্বারা সীমাবদ্ধ কোম্পানি
দুই বা ততোধিক অংশীদারের প্রতিশ্রুতি দ্বারা সীমাবদ্ধ দায়সম্পন্ন কোম্পানির মালে অংশ গ্রহণ করা এবং ফলস্বরূপ লাভ ভাগ করার জন্য একটি চুক্তি করা।
চুক্তি বা প্রতিশ্রুতি দ্বারা সীমাবদ্ধ কোম্পানির বিভাগসমূহ
শারেকা মুদারাবা বা ব্যাবসায়িক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি
দুই অংশীদারের মধ্যে থেকে একজন অন্য আরেকজনকে ব্যবসা করার জন্য মূলধন প্রদান করবে; সুতরাং সে সেই মূলধনের দ্বারা ব্যবসা করবে আর মুনাফা বা লভ্যাংশ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ নিবে, যেমন:- এক চতুর্থাংশ অথবা এক তৃতীয়াংশ এই নিয়মে। আর অবশিষ্ট সম্পদ মূলধন প্রদানকারী মালিক নিবে। আর ব্যবসা করার সময় যদি লোকসান হয়, তাহলে লভ্যাংশ থেকে খেসারত বা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এবং ব্যবসা সম্পাদনকারী বা শ্রমিককে খেসারত বা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। আর শ্রমিকের সীমালঙ্ঘন বা অবহেলা ছাড়া যদি মূলধন নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে ব্যবসা সম্পাদনকারী বা শ্রমিক দায়ী হবে না। আর ব্যবসা সম্পাদনকারী বা শ্রমিক হলো অর্থ গ্রহণের বিষয়ে নির্ভরযোগ্য ও আমানতদার ব্যক্তি, ব্যবসা সম্পাদনে মূলধন প্রদানকারীর প্রতিনিধি বা এজেন্ট, আর ব্যবসা সম্পাদনের কর্মে কর্মচারী এবং লাভের অংশীদার।
শারেকা ওজুহ/ মর্যাদাবান বা প্রভাবশালীদের ব্যবসায়ী কোম্পানি।
ব্যবসায়ের মূলধন বা পুঁজি ছাড়াই দুই অংশীদারের মধ্যে কোনো ব্যবসায়ে অংশ গ্রহণ করা। তারা দুইজন মর্যাদাবান ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পুঁজি ছাড়াই ব্যবসা করেন। সুতরাং তারা ঋণের উপর নির্ভরকরে পণ্য ক্রয় করেন এবং নগদে সেই পণ্য বিক্রয় করেন। এবং তাদের এই ধরণের ব্যবসায় বা বাণিজ্যে মহান ইচ্ছায় যা কিছু লাভ হয়, তা তাদের মধ্যে বন্টিত হয়। আর তাদের এই ব্যবসায় বা বাণিজ্যে যদি লোকসান হয়, তাহলে তা তাদেরকে বহন করতে হয় এবং খেসারত বা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। আর এই ব্যবসা সম্পাদনের ক্ষেত্রে ক্রয়বিক্রয়ের কাজে তাদের মধ্যে একজন অন্য জনের উপরে নির্ভরশীল এবং এক জন অন্য জনের প্রতিনিধি বা এজেন্ট ও দায়িত্বশীল। শারেকা ওজুহ/ মর্যাদাবান বা প্রভাবশালীদের ব্যবসায়ী কোম্পানি। এই ব্যবসার মূলধন বা পুঁজি ছাড়াই ব্যবসায়ের কোম্পানি চলে। তাই এই কোম্পানিকে মর্যাদাবান ও প্রভাবশালীদের কোম্পানি বলা হয়। আর এই কোম্পানিকে মর্যাদাবান ও প্রভাবশালী কোম্পানি এই জন্য বলা হয় যে, মর্যাদাবান ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কাছেই এই কোম্পানির পণ্য বিক্রয় করা হয়।
শারেকা ইনান কোম্পানি
দুই অংশীদারের মধ্যে কোনো ব্যবসায়ে অংশ গ্রহণ করা। তারা দুইজন সশরীরে এবং জ্ঞাত পরিমাণে নির্দিষ্ট অর্থ বা মূলধন দ্বারা তাদের কোম্পানির ব্যবসা সম্পাদনের কাজে নিয়োজিত থাকবে। যদিও তাদের অর্থের পরিমাণে তফাত বা পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু তারা দুইজনই সশরীরে কোম্পানির ব্যবসা সম্পাদনের ক্ষেত্রে তৎপর থাকবে। আর এই কোম্পানির ব্যবসা সম্পাদনের শর্ত হলো এই যে, তাদের দুইজনের অর্থ বা মূলধন যেন জ্ঞাত পরিমাণে থাকে। আর তাদের মধ্যে লাভ ও লোকসান বা তাদের লাভ ও ক্ষতি হবে তাদের পারস্পরিক সম্মতি ও শর্ত মোতাবেক।
শারেকা আবদান/কর্মীদের শারীরিক কাজের কোম্পানি:
এই সংস্থায় দুইজন অংশীদার কোনো শারীরিক কাজে অংশ গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং সেই দুইজন বিভিন্ন প্রকারের কারিগরির মাধ্যমে শারীরিক কাজের দ্বারা অর্থ বা সম্পদ উপার্জন করে থাকে, যেমন:- কামার, ছুতার এবং অন্যান্য কারিগরি পেশা। অথবা বিভিন্ন প্রকারের বৈধ কাজ যেমন:- প্রয়োজনীয় জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করা এবং সবুজ ঘাস সংগ্রহ করা। আর এই সব কাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাদেরকে যা প্রদান করবেন, তা তারা তাদের পারস্পরিক সম্মতি ও শর্ত মোতাবেক বন্টন করে নিবে।
শারেকা মুফাওয়াদা/ অংশীদারদের সমান অধিকারের কোম্পানি
এটি এমন একটি কোম্পানি যে, তাতে প্রতিটি অংশীদারের সমান অধিকার নিশ্চিত থাকে। যেহেতু তারা তাদের কোম্পানিতে একজন সদস্য অন্য আরেক জন সদস্যকে আর্থিক এবং শারীরিক কার্য সম্পাদনের অধিকার অর্পণ করে থাকে। তাই তাদের কোম্পানিতে তারা সবাই কার্য সম্পাদনের সম্পূর্ণরূপে অধিকার রাখে। অতএব তাদের কোম্পানির ব্যবসার খাতিরে তারা সবাই ক্রয়বিক্রয়, লেনদেন, জিম্মাদারি, দায়িত্ব অর্পণ, ঋণ আদানপ্রদান এবং দান প্রদান ইত্যাদির ক্ষমতা রাখে।
আর এই কোম্পানিতে একজন সদস্য যা করবে, তা সকল সদস্যকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে। আর এই কোম্পানিতে অংশীদারদের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তাদের সীমাবদ্ধ মূলধন থাকবে এবং তাদের পারস্পরিক চুক্তি ও শর্ত মোতাবেক তাদের মাঝে মুনাফা বা লভ্যাংশ বন্টন করা হবে। আর তাদের এই কোম্পানির ব্যবসায় বা বাণিজ্যে যদি লোকসান হয়, তাহলে তা তাদেরকে বহন করতে হবে এবং খেসারত বা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তাদের নির্ধারিত অংশ মোতাবেক। এই ধরণের কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করা বৈধ বা জায়েজ। এই শারেকা বা কোম্পানির মধ্যে উল্লিখিত চারটি কোম্পানি শামিল রয়েছে। আর এই সমস্ত শারেকা বা কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করা জায়েজ বা বৈধ। যেহেতু এই সব শারেকা বা কোম্পানির মাধ্যমে মানব সমাজের জীবিকা উপার্জন করা হয়, তাদের চাহিদা পূরণ করা হয় এবং তাদের মাঝে ন্যায়বিচার সুপ্রতিষ্ঠিত হয় আর অনেক প্রকারের কল্যাণময় কর্ম হয়।
১। শারেকা বা কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে সম্পদের উন্নতি সাধন হয়, শ্রমিক নিয়োগ করা হয়, মানব সমাজের কল্যাণ হয়, জীবিকা বৃদ্ধি পায় এবং ন্যায়বিচার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
২। হারাম বা অবৈধ জীবিকা উপার্জন হতে মুক্ত হওয়া যায়। যেমন:- সুদ, জুয়া ইত্যাদি।
৩। হালাল বা বৈধ জীবিকা উপার্জনের পথ প্রশস্ত করা হয়। প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে অথবা অন্যদের সাথে সঙ্গবদ্ধভাবে জীবিকা উপার্জন করার অনুমতি প্রদান করেছে।