শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় সন্তানদের অধিকার

এই অনুচ্ছেদে আমরা পিতার উপরে সন্তানদের অধিকারের জ্ঞান লাভ করতে পারবো। ‎

  • সন্তান সন্ততি বা পুত্রকন্যা হলো মাতাপিতার জন্য প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও নেয়ামত হওয়ার বিবরণ উপস্থাপন করা।
  • প্রকৃত ইসলাম ধর্ম সন্তান সন্ততি বা পুত্রকন্যাকে সযত্নে লালন পালন করা এবং তাদেরকে প্রকৃত ইসলামের আদবকায়দা শিক্ষা দেওয়ার গুরুত্ব উপস্থাপন করা।
  • মাতাপিতার উপরে সন্তান সন্ততি বা পুত্রকন্যার কতকগুলি অধিকারের বিবরণ পেশ করা।

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

মহান আল্লাহ পিতামাতার অন্তরে সৃষ্টি করেছেন সুস্থ সবল সন্তান লাভের কামনা ও ‎বাসনা। আর ‎এই কামনা ও বাসনা ছিলো মানব জাতির পিতা আদিম মানব আদমের ‎এবং তাঁর স্ত্রী হাওয়ার। ‎তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا فَلَمَّا تَغَشَّاهَا حَمَلَتْ حَمْلًا خَفِيفًا فَمَرَّتْ بِهِ ‏فَلَمَّا ‏أَثْقَلَتْ دَعَوَا اللَّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ آتَيْتَنَا صَالِحًا لَنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ)، سورة الأعراف، الآية189.‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে সকল জাতির মানব সমাজ, তোমরা জেনে রাখো! আল্লাহ ‎তিনি, যিনি ‎তোমাদেরকে তোমাদের প্রথম পিতা আদিম মানব আদম থেকে সৃষ্টি ‎করেছেন এবং যিনি সেই ‎আদিম মানব আদম থেকেই তার জীবনসঙ্গিনীকে সৃষ্টি ‎করেছেন। যাতে সে তার দ্বারা শান্তি ‎লাভ করে। সুতরাং পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে ‎আচ্ছন্ন করলো, তখন সে তার গর্ভে হালকা বোঝা ‎বহন করলো, যা নিয়ে সে ‎চলাফেরা করতে থাকলো। অতঃপর তার যখন সেই হালকা বোঝাটি ‎ভারী হয়ে ‎গেলো, তখন স্বামীস্ত্রী উভয়ে তাদের প্রতিপালক আল্লাহর কাছে দোয়া করলো: ‎আপনি ‎যদি আমাদেরকে সুস্থ সবল সন্তান প্রদান করেন, তাহলে আমরা অবশ্যই ‎আপনার কৃতজ্ঞতা ‎প্রকাশ করতে থাকবো”। (সূরা আল আরাফ, আয়াত নং ‎১৮৯)।‎ আর এই কামনা ও বাসনা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হওয়া প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য ‎উপাস্য এক ও ‎অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর কেবলমাত্র অনুগ্রহ ও করুণা। তাই ‎সদাসর্বদা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ‎করা হলো অপিরহার্য বিষয়। ‎

প্রকৃত ইসলাম ধর্ম সন্তানদের এবং তাদের সাথে জড়িয়ে থাকা সমস্ত বিষয়ের প্রতি ‎অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। আর পবিত্র কুরঅনের মধ্যে নিম্ন আয়াতে আকাশমণ্ডলী ও ‎পৃথিবীর রাজত্বের কথা উল্লেখ করে সন্তানদের দিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ ‎বলেছেন:‎ ‏(لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ (49) أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا ‏وَإِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيمًا إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ)، سورة الشورى، الآيات 49-50. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান, তাই ‎সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যা প্রদান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র প্রদান করেন। ‎অথবা যাকে ইচ্ছা পুত্র ও কন্যা প্রদান করেন। আবার যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। ‎নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী”। (সূরা আশ্শুরা, আয়াত নং ৪৯-৫০)। ‎ মহান আল্লাহ সন্তানদেরকে পার্থিব জীবনের একটি সৌন্দর্য বা শোভা হিসেবে গণ্য ‎করেছেন। সুতরাং তিনি পবিত্র কুরঅনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا)، سورة الكهف، الآية 46. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “ধনসম্পদ ও সন্তান সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা ও সৌন্দর্য”। ‎‎(সূরা আল কাহাফ, আয়াত নং ৪৬ এর অংশবিশেষ)। ‎

প্রকৃত ইসলাম ধর্ম শিশুদের এবং তাদের প্রতিপালনের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। ‎যেহেতু তারাই তো হবে ভবিষ্যতের ভিত্তি। এবং তাদের মধ্যে প্রকৃত ইসলাম ধর্ম ‎মেনে চলার প্রবণতা বা আগ্রহের মাধ্যমে পৃথিবীতে মহান আল্লাহর দাসত্ব ও বশ্যতা ‎এবং উপাসনা বা ইবাদত অব্যাহত ও অপ্রতিহত থাকবে। আর পৃথিবীকে এমনভাবে ‎পরিচালিত ও আবাদ করা হবে, যাতে মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকেন। তাই মহান ‎আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏(يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا قُوْا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ نَارًا وَقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ)، سورة التحريم، جزء من الآية 6. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজ! তোমরা নিজেদেরকে এবং ‎তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা করো সেই জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে, যার ‎ইন্ধন বা জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর”। (সূরা আত তাহরীম, আয়াত নং ৬ এর ‎অংশবিশেষ)। আলী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] বলেছেন: সন্তান সন্ততিকে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষায় ‎শিক্ষিত করো এবং তাদেরকে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের আদবকায়দার জ্ঞান দান করো। আর আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবি মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎বলেছেন: ‎‏ ‏‎ ‎ ‏"مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حتَّى تَبلُغَا جاء يَوْمَ القِيَامَة أَنَا وَهُوَ كَهَاتَيْنِ"، وضَمَّ أَصَابِعَه. ‏ ‏(صحيح مسلم, رقم الحديث 149 - (2631), ).‏ অর্থ: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে ব্যক্তি দুইটি ‎মেয়ের বা দুইটি বোনের‏ ‏একনিষ্ঠতার সহিত মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ‎যত্নসহকারে লালনপালন করবে এবং তাদের খুব ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করবে ‎তাদের প্রাপ্তবয়স্কা বা সাবালিকা হয়ে বিবাহ হওয়া পর্যন্ত, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি ‎আমার সাথে জান্নাতে বা স্বর্গে এইভাবে প্রবেশ করবে”। এই কথা বলে তিনি ‎নিজের দুইটি আঙ্গুলি একত্রিত করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ‎১৪৯ -(২৬৩১)]।

পিতামাতার উপর সন্তানদের অধিকার

١
বাহ্যিক অধিকার ‎
٢
আধ্যাত্মিক অধিকার

বাহ্যিক অধিকার: ‎

বাহ্যিক অধিকারের মধ্যে রয়েছে: প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক স্বাভাবিক অবস্থা ‎ও পদ্ধতি অনুসারে শিশুদের জন্য বাসস্থান, খাদ্য দ্রব্য, পানীয়দ্রব্য, পোশাক, স্বাস্থ্যসেবা ‎প্রদান করা এবং প্রেয়োজনীয় বিষয়ে তাদের জন্য ব্যয় করা। এই অধিকারগুলি পিতার ‎জন্য বাধ্যতামূলক যদি তিনি সক্ষম হন।

আধ্যাত্মিক অধিকার

পিতামাতার উপরে তাদের সন্তানদের সব চেয়ে বড়ো আধ্যাত্মিক অধিকারের বিষয় ‎হলো এই যে, তাদেরকে ভালোভাবে শিখিয়ে পড়িয়ে আদর করে সযত্নে এমনভাবে‏ ‏প্রতিপালিত‏ ‏করা যে, তারা যেন প্রকৃত ইসলাম ধর্মে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। অতএব ‎তাদেরকে পবিত্র কুরআন, নির্ভরযোগ্য হাদীস, আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবি ‎মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর জীবনচরিত এবং সমস্ত করণীয় ‎কাজ পালন করা এবং সমস্ত বর্জনীয় বিষয় পরিত্যাগ করার বিষয়গুলির শিক্ষা ‎দেওয়া আর চারিত্রিক আদবকায়দার রীতিনীতিগুলিরও শিক্ষা দেওয়া অপরিহার্য। ‎এবং তাদেরকে এই সমস্ত বিষয়ের শিক্ষা দেওয়ার সাথে সাথে মহান আল্লাহকে ‎সম্মান করা, তাঁকে ভালোবাসা ও তাঁর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবি মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু ‎আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে এবং প্রকৃত ইসলাম‏ ‏ধর্মকে ও তার বিধিবিধানকে ‎ভালোবাসা ও সম্মান করার নিয়ম পদ্ধতিও জানিয়ে দিতে হবে।‎

শিশুদের প্রতি সদয় হওয়া এবং তাদেরকে আদর ও যত্ন করে লালনপালন করার ‎কারণে তাদের উপরে ইতিবাচক গভীর প্রভাব পড়ে এবং তাদের মানসিক অবস্থা ‎ভালো থাকে আর তাদের বুদ্ধির বিকাশ হয়।‏ ‏তবে শর্ত হলো এই যে, তাদেরকে ‎অত্যধিক সমাদর করা বা অত্যন্ত যত্ন ও অতিশয় স্নেহ করা থেকে বিরত থাকতে ‎হবে। কেননা এর মাধ্যমে তাদের দৃঢ় চালচলন ও ইতিবাচক আচরণ প্রভাবিত হবে ‎এবং নেতিবাচক আচরণ তাদেরকে গ্রাস করবে। অন্য দিকে আবার পিতামাতার ‎কাছ থেকে শিশুরা যখন পাবে নির্দয়, নিষ্ঠুর এবং নির্মম আচরণ, তখন এই ধরণের ‎আচরণ তাদের জীবনকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিবে। আর তাদের ‎বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্য, সৌন্দর্য ও উজ্জ্বলতাকে নিভিয়ে দিবে এবং তাদেরকে অবাধ্যতা, ‎কদাচার এবং সম্ভবত জঘন্য আচরণ ও নোংরা ব্যবহার বা চালচলনে নিমজ্জিত ‎করবে। ‎

আধ্যাত্মিক অধিকারের মধ্যে রয়েছে: পরিবারের মধ্যে শিশুদেরকে ভালোবাসা, আদর, ‎সম্মান, শান্তভাব, প্রশান্তি এবং স্নেহের পরিবেশ প্রদান করা। সুতরাং পরিবারে ‎পিতামাতার মধ্যে বা বড়ো ভাইবোনদের মধ্যে যেন সর্বদা বা সচরাচর ঝগড়াঝাঁটি ‎বা ঝগড়াফসাদ কিংবা তর্কাতর্কি ও বাদানুবাদ না হয়। কেননা এর কারণে শিশুদের ‎আচরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং তাদের মধ্যে অশান্তি ও অস্বস্তির ভাব ‎বিরাজ করে। ‎ ‎

আধ্যাত্মিক অধিকারের মধ্যে এই বিষয়টিও রয়েছে: পিতামাতা তাদের সন্তানদেরকে ‎ভালো সঙ্গ প্রদান করার প্রতি তৎপর থাকবে। আর তাদেরকে খারাপ আচরণের ‎লোকজনের সহিত বা নিন্দনীয় অভ্যাসযুক্ত লোকজনের সহিত মেলামেশা করার অনুমতি ‎না দেওয়ার প্রতি তৎপর থাকবে। যেহেতু এর কারণে তাদের আচরণ প্রভাবিত হবে ‎এবং তাদের আচরণ ও চালচলন এবং ব্যবহার খারাপ হয়ে যাবে। ‎

পরামর্শ ‎দেওয়া, উপদেশ দেওয়া আর উৎসাহ প্রদান করা

পিতামাতাদের উচিত, তারা যেন তাদের ছেলেমেয়েদের অবস্থার প্রতি নজর রাখে এবং ‎‎তাদের আচরণ ও কাজকর্মের প্রতি দৃষ্টি রাখে। আর তারা যেন তাদেরকে প্রয়োজন ‎বোধে সৎ পরামর্শ ‎দেয়, মূল্যবান উপদেশ দেয় আর প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মেনে ‎চলার ‎প্রতি উৎসাহ দেয়। তবে এই সমস্ত পরামর্শ, উপদেশ ও উৎসাহ যেন কোনো ‎কোনো সময়ে অল্প কথায় ও সংক্ষেপে হয় এবং সদাসর্বদা যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়ে ‎এবং ছোটখাটো বিষয়ে বা সমস্ত ছোটো বড়ো বিষয়ে না হয়। আর একই কথাকে ‎একাধিকবার বা বারংবার উপস্থাপন না করা হয়। কেননা এই ধরণের পন্থায় ‎ছেলেমেয়েরা পরামর্শ, উপদেশ ও উৎসাহ শুনতে শুনতে অস্বস্তি বোধ করে এবং বিরক্ত ‎হয়ে যায়। তাই পিতামাতাগণ তাদের সন্তানদেরকে পরামর্শ, উপদেশ ও উৎসাহ ‎দেওয়ার জন্য তাদের সময়ের উপযোগী এবং উপযুক্ত পদ্ধতি আর ভাল স্থান বেছে ‎নিবে। ‎

পিতামাতার উপর সন্তানদের অধিকার

١
শিশুদের অধিকার তাদের জন্মের আগে থেকেই শুরু হয় ভালো স্বামী এবং ভালো স্ত্রী ‎চয়ন করার মাধ্যমে।
٢
শিশুদের অস্তিত্বের সংরক্ষণ ও তাদের বেঁচে থাকার অধিকার।
٣
বংশের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সন্তানদের অধিকার।
٤
শিশুদের দুধ খাওয়ানোর অধিকার।
٥
শিশুদের ভালো নাম রাখার অধিকার।
٦
আকীকায় সন্তানদের অধিকার।
٧
শিশুদের ন্যায্য আচরণে অধিকার।
٨
দোয়ায় শিশুদের অধিকার।

ভালো স্বামী এবং ভালো স্ত্রী চয়ন করা

পুরুষ ব্যক্তির কর্তব্য ও দায়িত্ব হলো এই যে, সে তার ধারণা মোতাবেক এমন নারী ‎চয়ন করবে যে, সে যেন একটি ভালো মা হতে পারে। আর নারীর কর্তব্য ও দায়িত্ব হলো এই যে, সে তার ধারণা মোতাবেক এমন পুরুষ ‎চয়ন করবে যে, সে যেন একটি ভালো পিতা হতে পারে।

শিশুদের অস্তিত্বের সংরক্ষণ ও তাদের বেঁচে থাকার অধিকার।

١
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা শিশুদেরকে হত্যা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। আর ‎প্রকৃত ইসলাম ধর্মের পূর্বে বা প্রাক-ইসলামি যুগের লোকেরা দারিদ্র্য বা লজ্জার ভয়ে ‎শিশুদেরকে হত্যা করতো, সেই জঘন্য প্রথা ও ঘৃণিত আচরণকেও প্রকৃত ইসলাম ধর্ম ‎হারাম বা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ‎
٢
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা সন্তান ধারণ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা নিষিদ্ধ করে ‎দিয়েছে।
٣
প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা গর্ভের ভ্রূণে প্রাণ বা আত্মার সঞ্চার ঘটার পরে গর্ভপাত ‎করা নিষিদ্ধ বা হারাম করে দিয়েছে।

বংশের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সন্তানদের অধিকার

আর এটি হলো শিশুর একটি অধিকার। সুতরাং শিশু তার পিতা ও তার বংশের সাথে ‎সম্পৃক্ত বা সংযুক্ত হওয়ার অধিকার রাখে। অতএব সন্তানদের সমস্ত বাহ্যিক অধিকার ‎ এবং আধ্যাত্মিক অধিকার বংশের অধিকারের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। ‎তাই অকাট্য প্রমাণ ছাড়া কোনো ব্যক্তির এই অধিকার নেই যে, সে তার কোনো ‎সন্তানকে নিজের সন্তান বলে অস্বীকার করবে এবং তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে ও ‎তাকে ত্যাজ্যপুত্র হিসেবে ঘোষণা করবে।

শিশুদের স্বাভাবিকভাবে দুধ খাওয়ানোর অধিকার

আধুনিক বিজ্ঞানে এই বিষয়টি সাব্যস্ত হয়েছে যে, স্বাভাবিক দুধ খাওয়ানোর মধ্যে শিশুর ‎স্বাস্থের দিক দিয়ে, মানসিক দিক দিয়ে এবং সামাজিক দিক দিয়ে অনেক উপকার হয়। ‎সুতরাং শিশুর জীবনের দরকার পূরণের জন্য এবং তার স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য তাকে ‎স্বাভাবিক দুধ খাওয়ানোই হলো সবচেয়ে উত্তম উপায় ও সম্পূর্ণ উপযোগী নিয়ম। আর ‎তাকে স্বাভাবিক দুধ খাওয়ানোর মধ্যেই রয়েছে তার মানসিক এবং আত্মিক গঠনের ‎সুন্দরতা। ‎ এরই মাধ্যমে সে তার জীবনের পরবর্তী সময়ে হবে তিক্ষ্ন বুদ্ধির অধিকারী এবং উন্নত ‎আচরণের অনুগামী আর যে কোনো পরিস্থিতি ও অনুভূতির বিষয়ে সে ভালো পদক্ষেপ ‎ও শান্তিদায়ক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে। ‎

শিশুদের ভালো নাম রাখার অধিকার

সন্তানদের এই অধিকারটিও হলো একটি মৌলিক অধিকার। অতএব তাদের এই ‎অধিকারটিকে কোনো একটি গৌণ অধিকার বলা যায় না। তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল ‎বিশ্বনাবি মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর সাহাবীগণ [রাদিয়াল্লাহু আনহুম] ‎কে তাদের সন্তানদের ভালো নাম রাখার প্রতি উৎসাহিত করতেন। তদ্রূপ তিনি তাদেরকে অমঙ্গলজনক ও নেতিবাচক নাম বর্জন করার আদেশ প্রদান ‎করতেন। আর আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবি মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] মঙ্গলজনক ও ভালো নাম রাখার প্রতি এতটাই আগ্রহী ছিলেন যে, ‎কতকগুলি সাহাবী যখন প্রকৃত ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করেছিলেন, তখন তিনি তাদের ‎নাম পরিবর্তন করেছিলেন। কেননা নামের প্রভাব ব্যক্তির উপরে এবং তার আচরণের ‎উপরে পড়ে থাকে। ‎

আকীকায় সন্তানদের অধিকার।

আকীকা হলো নবজাতকের পক্ষ থেকে নির্ধারিত শর্ত মোতাবেক মহান আল্লাহর নৈকট্য ‎লাভের উদ্দেশ্যে এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের ইচ্ছায় নির্দিষ্ট পশু বা প্রাণী জবাই করা। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবি মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: ‎ ‏«كل غلام رهينة بعقيقته، تذبح عنه يوم سابعه، ويُحلق ويُسمَّى»‏‎ ‎‏(أبو داود 2838)‏ অর্থ: “প্রত্যেক ছেলে তার আকীকায় বন্দী হয়ে থাকে। তাই তার পক্ষ থেকে তার ‎জন্মের সপ্তম দিনে আকীকা জবাই করতে হয় এবং তার মাথার চুল মুণ্ডন করতে হয় ‎আর তার ভালো নাম রাখতে হয়”। (আবু দাউদ 2838)‎ আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবি মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আরো ‎বলেছেন: ‎ ‏«عن الغلام شاتان مكافئتان، وعن الجارية شاة» (أبو داود 2834).‏ অর্থ: “ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে দুইটি সমবয়সের ছাগল আকীকা হিসেবে জবাই ‎করতে হয় এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল আকীকা হিসেবে জবাই ‎করতে হয়”। (আবু দাউদ 2834)।

শিশুদের ন্যায্য আচরণে অধিকার

সকল প্রকারের আধ্যাত্মিক ও বাহ্যিক আচরণে ন্যায়বিচারের সহিত ‎সমস্ত ছেলেমেয়েকে সমান দৃষ্টিতে দেখতে হবে। এবং তাদের মধ্যে ‎কোনোরূপ পার্থক্য ও বৈষম্য করা চলবে না। সুতরাং এই বিষয়ে হাদীস বর্ণিত ‎হয়েছে:‎ عن النعمان بن بشير رضي الله عنهما قال:‏‎ ‎تَصَدَّقَ عَلَيَّ أَبِي ببَعْضِ مَالِهِ، فَقالَتْ أُمِّي عَمْرَةُ بِنْتُ رَوَاحَةَ: لَا ‏أَرْضَى حَتَّى تُشْهِدَ رَسوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ؛ فَانْطَلَقَ أَبِي إلى النبيِّ صَلَّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ لِيُشْهِدَهُ علَى ‏صَدَقَتِي؛ فَقالَ له رَسوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ: "أَفَعَلْتَ هذا بوَلَدِكَ كُلِّهِمْ"؟ قالَ: لَا، قالَ: "اتَّقُوا اللَّهَ، ‏وَاعْدِلُوا فِي أَوْلَادِكُمْ"؛ فَرَجَعَ أَبِي؛ فَرَدَّ تِلكَ الصَّدَقَةَ.‏ ‏(صحيح مسلم، رقم الحديث 13- (1623)، واللفظ له، وصحيح البخاري، رقم الحديث 2587).‏ অর্থ: নুমান বিন বাশীর [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমাকে ‎আমার পিতা তার সম্পদ থেকে কিছু অংশ দান করেছিলেন। তাই আমার মা আমরা ‎বিনতু রাওয়াহা [রাদিয়াল্লাহু আনহুহা] বলেছিলেন: আমি সন্তুষ্ট হতে পারছি না, ‎যতক্ষন পর্যন্ত আপনি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবি মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু ‎আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে এই দানের বিষয়ে সাক্ষী না করবেন। সুতরাং এরপর ‎আমার পিতা আমাকে নিয়ে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবি মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু ‎আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকটে উপস্থিত হন আমার দানের বিষয়ে তাঁকে সাক্ষী ‎করার জন্য। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবি মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] তাকে বললেন: “এইরূপ কাজ কি আপনি আপনার সমস্ত সন্তানদের ‎জন্য করেছেন”? তিনি বললেন: না। তখন আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবি ‎মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন: “আল্লাহর বিধান মেনে চলুন এবং ‎তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করা হতে ভয় করুন। আর আপনার সমস্ত সন্তানের জন্য আপনি ‎ন্যায়বিচার বা ন্যায্যবিচার প্রতিষ্ঠিত করুন”। তখন আমার পিতা ফিরে আসেন এবং ‎সেই দান ফিরিয়ে নেন। ‎ ‎[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩-(1623) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং 2587, তবে ‎হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।

মঙ্গলদায়ক দোয়া করা হলো সন্তানদের অধিকার এবং তাদেরকে বদদোয়া ‎বা অভিশাপ দেওয়া নাজায়েজ

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবি মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: ‎ ‏"ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لاَ شَكَّ فِيْهِنَّ: دَعْوَةُ الْمَظْلُوْمِ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ ‏الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ ".‏ ‏ (جامع الترمذي، رقم الحديث 1905، وسنن أبي داود، رقم الحديث 1536، وسنن ابن ماجه، رقم الحديث ‏‏3862، واللفظ للترمذي، قَالَ الإمام الترمذي: هذا حديث حسن، وحسنه الألباني).‏ অর্থ: “তিন জনের দোয়া সন্দেহাতীতভাবে গৃহীত হয়: অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া, ‎মুসাফিরের দোয়া এবং সন্তানের জন্য পিতার বদদোয়া”।‏ ‏ ‎[জামে তিরমিযী, হাদীস নং 1905 এবং সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 1536 এবং ‎সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং 3862, তবে হাদীসের শব্দগুলি জামে তিরমিযী থেকে ‎নেওয়া হয়েছে। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। এবং আল্লামা নাসেরুদ্দিন ‎আল্ আলবাণীও হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবি মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আরো ‎বলেছেন:‎ ‏"لَا تَدْعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَوْلَادِكُمْ، وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَمْوَالِكُمْ، لَا تُوَافِقُوا مِنْ اللَّهِ سَاعَةً ‏يُسْأَلُ فِيهَا عَطَاءٌ؛ فَيَسْتَجِيبُ لَكُمْ"، (مسلم 3009).‏ অর্থ: “তোমরা নিজেদেরকে বদদোয়া বা অভিশাপ দিও না। এবং তোমরা ‎তোমাদের সন্তানদেরকে বদদোয়া বা অভিশাপ দিও না। আর তোমাদের ‎ধনসম্পদকেও বদদোয়া বা অভিশাপ দিও না। কেননা ওই সময়ে আল্লাহর ‎পক্ষ থেকে যে কোনো প্রার্থনা বা দোয়া কবুল হওয়ার সময় হতে পারে। ‎ফলে সেই বদদোয়া বা অভিশাপ তোমাদের কবুল হয়ে যেতে পারে”। ‎‎(মুসলিম 3009)।

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন