মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় মুসলিম মহিলার পবিত্রতা
প্রকৃত ইসলাম ধর্ম মুসলিম মহিলার প্রতি তার পবিত্রতার কতকগুলি বিধিবিধানের জ্ঞান লাভ করা ওয়াজিব বা অপরিহার্য করে দিয়েছে। যেমন:- মাসিক ঋতুস্রাব ও ইস্তিহাজা এবং সন্তান জন্মদানের পর নেফাস বা রক্তস্রাবের পর পবিত্রতা অর্জন করা।
মুসলিম মহিলার জন্য যে সমস্ত বিষয় জানা এবং সেই মোতাবেক কাজ করা ওয়াজিব বা অপরিহার্য, সে সমস্ত বিষয় হলো:
জুনুবি অবস্থায় বা বড়ো অপবিত্রতায় উপনীত হওয়ার গোসল।
জানাবাত এর আভিধানিক অর্থ হলো: দূরত্ব। জানাবাত এর পারিভাষিক অর্থ হলো: যে কোনো পন্থায় পুরুষের বা মহিলার যৌন উত্তেজনার সহিত বীর্যপাত হওয়া। অথবা স্বামী স্ত্রীর সহবাস হওয়া, তাতে বীর্যপাত হোক বা না হোক। জুনুবি অবস্থায় পুরুষ এবং নারী দুইজনই জুনুবি অবস্থায় উপনীত হয়। যে পুরুষের বা যে মহিলার যৌন উত্তেজনার সহিত বীর্যপাত হবে, তাকে জুনুবি ব্যক্তি বলা হবে। আর তাকে এই জন্য জুনুবি বলা হবে যে, সে পবিত্রতা অর্জন না করা পর্যন্ত মাসজিদের নিকটবর্তী হওয়া থেকে তাকে নিষেধ করা হয়েছে। আর যে ব্যক্তি জুনুবি অবস্থায় উপনীত হবে, তার প্রতি গোসল বা স্নান করা অপরিহার্য হয়ে যাবে। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলছেনে: (وإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا)، سورة المائدة، جزء من الآية 6. ভাবার্থের অনুবাদ: “আর তোমরা যদি জুনুবি আবস্থায় উপনীত হয়ে থাকো, তাহলে গোসল করে পবিত্র হয়ে যাবে”। (সূরা আল মায়দো, আয়াত নং ৬ এর অংশবিশেষ)।
নারীর মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার গোসল।
কোনো নারীর যখন মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাবে, তখন তার প্রতি গোসল করা ওযাজিব বা অপরিহার্য হয়ে যাবে। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলছেনে: (وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ)، سورة البقرة، الآية 222. فقوله: (فإذا تطهرن) أي: بالاغتسال. যৌন সংসর্গ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে আল্লাহর রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তোমাকে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজের লোকজন স্ত্রীলোকের রক্তস্রাব বা মাসিক রক্তস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে। তাই তুমি তাদেরকে বলে দাও! হে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজ! তোমরা মাসিক ঋতুস্রাব চলতে থাকা অবস্থায় তোমাদের স্ত্রীদের সাথে যৌন সংসর্গ বা যৌনসঙ্গম বর্জন করো। তারা পবিত্রতা অর্জন না করা পর্যন্ত তাদের সাথে যৌন সংসর্গ বা যৌনসঙ্গম হতে বিরত থাকো। অতঃপর তাদের রক্তস্রাব বা মাসিক রক্তস্রাব যখন বন্ধ হয়ে যাবে অতঃপর তারা গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করবে, তখন প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বিধান মোতাবেক তোমরা তাদের সাথে তাদের যোনিতে বা তাদের যৌনাঙ্গে যৌন সংসর্গ বা যৌনসঙ্গম করতে পারো। যারা সকল প্রকারের পাপ ও অপকর্ম হতে অনুশোচিত হয়ে তওবা আর পুনরায় পাপ কাজ না করার জন্য সংকল্প করে এবং সদাসর্বদা পবিত্র থাকে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ২২২)। পবিত্রতা অর্জন করার অর্থ হলো মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার গোসল করা।
নারীর ঋতুস্রাব ও অস্বাভাবিক রক্তস্রাব বা রক্ত ক্ষরণ ইস্তিহাজা
নির্দিষ্ট সময়ে নারীর জরায়ু থেকে কোনো অসুখ ও আঘাত ব্যতীত যে রক্ত প্রবাহিত হয়, সেই রক্তকে নারীর মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জ বলা হয়। নারীর মাসিক ঋতুস্রাব বা রক্তস্রাব এবং তার সন্তান জন্মদানের পর রক্তস্রাব ছাড়া কোনো সময় তার যৌনাঙ্গ থেকে অতিরিক্ত অস্বাভাবিক রক্তস্রাব বা রক্ত ক্ষরণকে ইস্তিহাজা বা অসুস্থতার রক্তস্রাব বলা হয়।
মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের নির্দিষ্ট সময়সীমা বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। আর আলেমদের বা বিদ্বানদের প্রাধান্য প্রাপ্ত কথা হলো এই যে, মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের সর্বনিম্ন সময় নির্ধারিত নেই। তবে জুমহূর বা অধিকাংশ আলেম বা বিদ্বানের অভিমত মোতাবেক মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের সর্বোচ্চ সময়সীমা হলো পনেরো দিন। এর চেয়ে বেশি মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জ হয় না। তবে এর চেয়ে বেশি অস্বাভাবিক রক্তস্রাব বা রক্ত ক্ষরণকে ইস্তিহাজা বা অসুস্থতার রক্তস্রাব বলে গণ্য করা হয়। আর বেশিরভাগ সময়ে মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের সময়সীমা হয় ছয় বা সাত দিন মাত্র।
জন্মদাত্রী নারীর সন্তান জন্মদানের পর নেফাস বা রক্তস্রাব বন্ধ হওয়ার গোসল।
সমস্ত আলেম বা বিদ্বানের সর্বসম্মতিক্রমে একটি গৃহীত হয়েছে। আর সেটি হলো এই যে, জন্মদাত্রী নারীর সন্তান জন্মদানের পর তার নেফাস বা রক্তস্রাব বন্ধ হওয়ার পর তাকে অবশ্যই গোসল করতে হবে।
জন্মদাত্রী নারীর সন্তান জন্মদানের সময় যে নিফাস হয় সেই নিফাসের সংজ্ঞা
নারীর জরায়ু থেকে সন্তান প্রসবের কারণে যে রক্ত বের হয় বা সন্তান প্রসবের দুই বা তিন দিন আগে থেকে সন্তান প্রসবের বিশেষ লক্ষণসহ যে রক্ত বের হয়, তাকে নিফাস বলা হয়। আর সন্তান জন্মদানের পর এই রক্তস্রাব বা নিফাস চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। সুতরাং সন্তান জন্মদানের পর রক্তস্রাব বা নিফাসের সর্বোচ্চ সময়সীমা হলো চল্লিশ দিন। তবে এর সর্বনিম্ন সময়সীমা নির্ধারিত নেই। তাই জন্মদাত্রী নারীর সন্তান জন্মদানের পর নিফাস বা রক্তস্রাব যখনই বন্ধ হয়ে যাবে, তখনই তাকে গোসল করতে হবে এবং নামাজ পড়া শুরু করতে হবে।
মহিলার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের কারণে এবং জন্মদাত্রী নারীর সন্তান জন্মদানের পর নিফাস বা রক্তস্রাবের কারণে কতকগুলি বিষয় উদ্ভূত হয়। সেই সমস্ত উদ্ভূত বিষয়ের মধ্যে রয়েছে:
মহিলার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের অবস্থায় তার সাথে যৌন সংসর্গ বা যৌন সহবাস করা হারাম।
কোনো মহিলার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের অবস্থায় তার সাথে তার স্বামীর জন্য যৌন সংসর্গ বা যৌন সহবাস করা হারাম। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলছেনে: (وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ)، سورة البقرة، الآية 222. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে আল্লাহর রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তোমাকে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজের লোকজন স্ত্রীলোকের রক্তস্রাব বা মাসিক রক্তস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে। তাই তুমি তাদেরকে বলে দাও! হে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজ! তোমরা মাসিক ঋতুস্রাব চলতে থাকা অবস্থায় তোমাদের স্ত্রীদের সাথে যৌন সংসর্গ বা যৌনসঙ্গম বর্জন করো। তারা পবিত্রতা অর্জন না করা পর্যন্ত তাদের সাথে যৌন সংসর্গ বা যৌনসঙ্গম হতে বিরত থাকো। অতঃপর তাদের রক্তস্রাব বা মাসিক রক্তস্রাব যখন বন্ধ হয়ে যাবে অতঃপর তারা গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করবে, তখন প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বিধান মোতাবেক তোমরা তাদের সাথে তাদের যোনিতে বা তাদের যৌনাঙ্গে যৌন সংসর্গ বা যৌনসঙ্গম করতে পারো। যারা সকল প্রকারের পাপ ও অপকর্ম হতে অনুশোচিত হয়ে তওবা আর পুনরায় পাপ কাজ না করার জন্য সংকল্প করে এবং সদাসর্বদা পবিত্র থাকে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ২২২)। তদ্রূপ এই ক্ষেত্রে সমস্ত আলেম বা বিদ্বানের সর্বসম্মতিক্রমে যে ফয়সালা রয়েছে তা হলো এই যে, জন্মদাত্রী নারীর সন্তান জন্মদানের পর তার নিফাস বা রক্তস্রাবের অবস্থায় তার সাথে যৌন সংসর্গ বা যৌন সহবাস করা হারাম।
কোনো মহিলার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের অবস্থায় তাকে তালাক দেওয়া হারাম। এবং জন্মদাত্রী নারীর সন্তান জন্মদানের পর তার নিফাস বা রক্তস্রাবের অবস্থায় তাকে তালাক দেওয়া হারাম।
কোনো মহিলার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের অবস্থায় তাকে তালাক দেওয়া হারাম। এবং জন্মদাত্রী নারীর সন্তান জন্মদানের পর তার নিফাস বা রক্তস্রাবের অবস্থায় তাকে তালাক দেওয়া হারাম। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলছেনে: (يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ)، سورة الطلاق، جزء من الآية 1. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তুমি মুসলিম সমাজকে জানিয়ে দাও! তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে যখন তালাক দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবে, তখন তোমরা তাদের নির্দিষ্ট সময়ের বা ইদ্দতের প্রতি লক্ষ রেখে তালাক দিবে”। (সূরা আত্তালাক, আয়াত নং ১ এর অংশবিশেষ)।)। সুতরাং এর অর্থ হলো এই যে, কোনো মহিলাকে তার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের অবস্থায় তালাক দেওয়া যাবে না। এবং কোনো জন্মদাত্রী নারীর সন্তান জন্মদানের পর তার নিফাস বা রক্তস্রাবের অবস্থায় তাকে তালাক দেওয়া যাবে না। সেই রূপ ওই নারীকেও তালাক দেওয়া যাবে না, যে নারীর সাথে তার পবিত্র অবস্থায় যৌন সংসর্গ বা যৌন সহবাস হয়েছে।
যে কোনো মহিলার জন্য তার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের অবস্থায় নামাজ পড়া এবং রোজা রাখা হারাম। তদ্রূপ জন্মদাত্রী নারীর সন্তান জন্মদানের পর তার নিফাস বা রক্তস্রাবের অবস্থায় তার জন্য নামাজ পড়া এবং রোজা রাখা হারাম।
যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ"؟ "فَذَلِكِ مِنْ نُقْصَانِ دِينِهَا". (صحيح البخاري، جزء من رقم الحديث 1951). অর্থ: “আর ঋতুবতী মহিলা ঋতুস্রাবের অবস্থায় কী নামাজ ও রোজা হতে বিরত থাকে না?" "এটারই অর্থ হলো: প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা ও বিধিবিধান পরিপালনের দায়িত্ব তার প্রতি কিছু কমিয়ে দেওয়া হয়েছে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯৫১]।
যে কোনো মহিলার জন্য তার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের অবস্থায় কাবা ঘরের তাওয়াফ করা হারাম। তদ্রূপ জন্মদাত্রী নারীর সন্তান জন্মদানের পর তার নিফাস বা রক্তস্রাবের অবস্থায় তার জন্য কাবা ঘরের তাওয়াফ করা রাখা হারাম।
যেহেতু উম্মুল মুমেনীন আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] এর যখন ঋতু হয় তাঁর হজ্জ পালনের সময়, তখন আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছিলেন: "فَإِنَّ ذَلِكَ شَىْءٌ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ، فَافْعَلِي مَا يَفْعَلُ الْحَاجُّ، غَيْرَ أَنْ لاَ تَطُوفِي بِالْبَيْتِ حَتَّى تَطْهُرِي". এটাতো আদম-কন্যাদের জন্যে আল্লাহ নির্ধারিত করেছেন। তুমি পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য হাজীদের মত সমস্ত কাজ করে যাও, কেবল কাবা ঘরের তাওয়াফ করবে না। (বুখারী 305, মুসলিম 1211)।
যে কোনো মহিলার জন্য তার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের অবস্থায় পবিত্র্র কুরআন বা মুসহাফ স্পর্শ করা হারাম। তদ্রূপ জন্মদাত্রী নারীর সন্তান জন্মদানের পর তার নিফাস বা রক্তস্রাবের অবস্থায় তার জন্য পবিত্র্র কুরআন বা মুসহাফ স্পর্শ করা হারাম।
যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (لَا يَمَسُّهُ إِلا الْمُطَهَّرُوْنَ)، سورة الواقعة، الآية 79. ভাবার্থের অনুবাদ: “আর বিশুদ্ধতা বা পবিত্রতা ছাড়া অন্য কোনো অবস্থায় কেউ পবিত্র কুরআন স্পর্শ করতে পারবে না”। (সূরা আল ওয়াকিয়া, আয়াত নং ৭৯)। তবে প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত মোতাবেক মহিলার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের অবস্থায় পবিত্র্র কুরআনের মুখস্থ অংশ সে পাঠ করতে পারবে। এবং জন্মদাত্রী নারীর সন্তান জন্মদানের পর নিফাস বা রক্তস্রাবের অবস্থায় পবিত্র্র কুরআনের মুখস্থ অংশ সে পাঠ করতে পারবে। তবে জুনুবি ব্যক্তি গোসল করে পবিত্রতা অর্জন না করে পবিত্র্র কুরআন পাঠ করতে পারবে না। আর যখন কোনো কারণে কোনো মহিলা তার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের অবস্থায় পবিত্র্র কুরআন স্পর্শ করার প্রয়োজন অনুভব করবে, তখন সে কোনো কাপড়ের আবরণের দ্বারা পবিত্র্র কুরআন স্পর্শ করবে, যেমন হাত মোজা ইত্যাদি। তদ্রূপ কোনো জন্মদাত্রী নারীর সন্তান জন্মদানের পর তার নিফাস বা রক্তস্রাবের অবস্থায় যখন কোনো প্রয়োজনের কারণে পবিত্র্র কুরআন স্পর্শ করার দরকার অনুভব করবে, তখন সে কোনো কাপড়ের আবরণের দ্বারা পবিত্র্র কুরআন স্পর্শ করবে, যেমন হাত মোজা ইত্যাদি।
যে কোনো মহিলার জন্য তার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের অবস্থায় মাসজিদে অবস্থান করা হারাম। তদ্রূপ জন্মদাত্রী নারীর সন্তান জন্মদানের পর তার নিফাস বা রক্তস্রাবের অবস্থায় তার জন্য মাসজিদে অবস্থান করা হারাম।
যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: «فإني لا أُحِلُّ المسجد لحائض ولا جنب» (أبو داود 232)، অর্থ: “আমি কোনো মহিলার জন্য তার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের অবস্থায় এবং কোনো জুনুবি ব্যক্তির জন্য বা অপবিত্রতায় উপনীত কোনো ব্যক্তির জন্য মাসজিদে অবস্থান করা বৈধ বলে ঘোষণা করি না”। (আবু দাউদ ২৩২)। তবে প্রয়োজনের খাতিরে মাসজিদের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করা বা তার ভিতরে প্রবেশ করা জায়েজ। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাকে বলেছিলেন: অর্থ: মসজিদ থেকে আমাকে আমার জায়নামাজটি দাও। তিনি বলেন: আমি বলেছিলাম: আমি তো মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের অবস্থায় আছি। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাকে বলেছিলেন: “তোমার ঋতুস্রাব বা হায়জ তোমার হাতে নেই”। (মুসলিম 298)।
মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের কারণে যে সমস্ত বিষয় সাব্যস্ত হয় তা হলো
সাবালিকা হওয়া
সাবালিকা হওয়ার কারণে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক কর্ম করা অপরিহার্য হয়ে যায়। আর মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জ হলো সাবালিকা হওয়ার একটি নিশ্চিত লক্ষণ।
তালাকপ্রাপ্তা মহিলার প্রতি নির্দিষ্ট কাল বা ইদ্দত পালন করা
অর্থাৎ: যে মহিলার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জ হয়, সে মহিলা তালাকপ্রাপ্তা হলে তার তিনবার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জ হয়ে গেলে তার ইদ্দতের মিয়াদ বা নির্দিষ্ট কাল শেষ হয়ে যাবে। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ( وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ)، سورة البقرة، جزء من الآية 228. ভাবার্থের অনুবাদ: “আর যে সমস্ত মহিলার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জ হয়, সে সমস্ত মহিলা তালাকপ্রাপ্তা হলে, তাদেরকে তাদের তিন ঋতু পর্যন্ত অপেক্ষা করবে হবে, তার পর তাদের ইচ্ছা হলে তারা আবার বিবাহ করতে পারবে”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ২২৮ এর অংশবিশেষ)।
যে মহিলার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জ হবে, সে মহিলার মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জ হতে পবিত্রতার লক্ষণ হলো:
কাস্সা বায়দা হলো
এটি এমন একটি সাদা সুতার মতো পদার্থ যা ঋতুস্রাব শেষে নারীর যোনি থেকে নির্গত হয়।
রক্তক্ষরণ বন্ধ হওয়া ও যোনি শুকিয়ে যাওয়া বা শুষ্ক হওয়া।
রক্তক্ষরণ বন্ধ হওয়া ও যোনি শুকিয়ে যাওয়া বা শুষ্ক হওয়ার নিশ্চিত লক্ষণ হলো এই যে, কোনো মহিলা তার যোনিতে একটি পরিষ্কার কাপড়ের টুকরো প্রবেশ করাবেন, তার পরে তিনি যখন তা বের করবেন, তখন তা দেখবেন যে তাতে কোনো রক্ত নেই বা মেটে রং বা ও হলুদ রংয়ের কোনো তরল পদার্থ নেই।
গোসলের দুটি ফরজ রয়েছে: নিয়ত করা, এবং চুল ও সারা শরীরের চামড়া পানি দ্বারা ধৌত করা। চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে দেওয়া ওয়াজিব বা অপরিহার্য। যাতে তা চুলের নিচের ত্বকে পানি পৌঁছে যায়, চুল হালকা হোক বা ঘন।
মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের রক্তক্ষরণ বন্ধ হওয়ার পর পবিত্রতা অর্জনের জন্য এবং জুনুবি অবস্থা থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য মহিলার গোসলের পদ্ধতি।
অর্থ: আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আসমা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছে হায়জের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলো। তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে কেউ পানি এবং বরই এর পাতা দিয়ে সুন্দরভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে। অতএব সে মাথায় পানি ঢেলে দিয়ে ভালভাবে নাড়াচাড়া করবে যাতে পানি সমস্ত চুলের গোড়ায় পৌঁছে যায়। তারপর তার সারা শরীরে পানি ঢেলে দিবে। তারপর সুগন্ধযুক্ত কাপড় দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে”। আসমা বলেছিলো: সেই সুগন্ধযুক্ত কাপড় দ্বারা কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করা হবে? আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন: “সুবহানাল্লাহ! সেই সুগন্ধযুক্ত কাপড় দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে”। অতঃপর আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] তাকে যেন চুপি চুপি বলে দিলেন: রক্ত বের হওয়ার জায়গায় তা বুলিয়ে নিবে। সে আবার আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে জুনুবি অবস্থা থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করার বিষয় সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করেছিলো। তাই তিনি তাকে বলেছিলেন: “পানি দ্বারা সুন্দরভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে। তারপর মাথায় পানি ঢেলে দিয়ে ভালভাবে নাড়াচাড়া করবে যাতে পানি সমস্ত চুলের গোড়ায় পৌঁছে যায়। তারপর সারা শরীরে পানি ঢেলে দিবে”। অতঃপর আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] বলেছিলেন: আনসারদের মহিলারা হলেন খুব ভালো; তাই লজ্জা তাদেরকে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা থেকে দূরীভূত করতে পারেনি। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 6১ -(৩৩২) এবং সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩১৪, তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ মুসলিম থেকে নেওয়া হয়েছে]।
পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসলের সময় শরীরের কোনো অংশে যদি এমন কোনো বস্তু থাকে, যে বস্তুটি সেই অংশে পানি পৌঁছাতে বাধা দিবে, তাহলে এই অবস্থায় গোসল নষ্ট হয়ে যাবে এবং গোসল সঠিক হবে না। যেমন, মহিলার নখ পালিশ লাগানোর কারণে যদি নখের নীচে পানি না পৌঁছে, তাহলে তার গোসল শুদ্ধ হবে না। এই ধরণের যে কোনো জিনিস শরীরের কোনো অংশে থাকার কারণে যদি সেই অংশে গোসল করার সময় পানি না পৌঁছে, তাহলে গোসল শুদ্ধ সঠিক হবে না।
মেটে রং ও হলুদ রংয়ের তরল পদার্থ
মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের রক্তক্ষরণের পূর্বে এবং পরে মহিলার যোনি থেকে কোনো কোনো সময় তরল পদার্থ বের হয়। অতএব যদি মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের সাথে সংযুক্ত থাকে এই ধরণের মেটে রং বা হলুদ রংয়ের তরল পদার্থ বের হয়, তাহলে তা মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের অন্তর্ভুক্ত বলেই বিবেচিত হবে। তাই এই ক্ষেত্রে মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের কারণে যে সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়, সে সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু যদি এই ধরণের মেটে রং বা হলুদ রংয়ের তরল পদার্থ মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের সাথে সংযুক্ত না থাকে, তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নেই; সুতরাং তা মাসিক ঋতুস্রাব বা হায়জের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে না। যেহেতু উম্মু আতিয়া [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: হায়জ থেকে পবিত্রতা অর্জনের পর মেটে এবং হলুদ রংয়ের তরল পদার্থ নির্গত হলে আমরা তা ঋতুস্রাব বা হায়জের রক্ত হিসেবে গণনা করতাম না। (বুখারী 326 এবং আবু দাউদ 307, এবং হাদীসের শব্দগুলি আবু দাউদের)।