মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় মুসলিম নারীর পোশাক
মানব জাতির প্রতি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর মহা উপহার ও কৃপা হলো পোশাকপরিচ্ছদ বা বস্ত্র। এই পোশাকপরিচ্ছদ বা বস্ত্রের দ্বারা মানব জাতি তাদের দেহ বা শরীরকে আবৃত করে ও ঢেকে রাখে, গরম এবং ঠাণ্ডা ইত্যাদি থেকে তারা নিজেদেরকে রক্ষা করে। আবার পোশাকপরিচ্ছদ বা বস্ত্রের দ্বারা তারা সাজসজ্জা করে এবং সৌন্দর্যবৃদ্ধি করে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ)، سورة الأعراف، الآية 26. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে আদমসন্তান তথা সকল জাতির মানব সমাজ! আমি তোমাদের লজ্জা নিবারণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যে পোশাকপরিচ্ছদ সৃষ্টি করেছি। এর সাথে সাথে জেনে রাখা দরকার যে, সৎকর্মের পোশাকের দ্বারা সুসজ্জিত হওয়ার বিষয়টি হলো সবচেয়ে উত্তম পোশাক। এর মধ্যেই রয়েছে আল্লাহর নিগূঢ় নিদর্শন। এই বিষয়টি আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে; যাতে সকল জাতির মানব সমাজ প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর দান ও অনুগ্রহের কথা স্মরণ করে এবং তাঁকে মেনে চলার প্রতি উৎসাহিত হওয়ার শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করে”। (সূরা আল আরাফ, আয়াত নং ২৬)।
প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার মাধ্যমে নারীর পোশাক দ্বারা কয়েকটি বড়ো বড়ো লক্ষ্য অর্জন করা যায়। সুতরাং সে তার পোশাকের দ্বারা একদিকে নিজের বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে আর অন্য দিকে সে নিজেকে দুষ্ট লোকের কুদৃষ্টি বা খারাপ নজর থেকে রক্ষা করে। এর সাথে সাথে অধিকাংশ অসৎলোকের আচরণ এবং কথা থেকেও নিজেকে রক্ষা করে। তদ্রূপ প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক পোষাক পরিধানে নারীর জীবনে সুখশান্তি, আরাম, সম্মান ও ভদ্রতা আসে। এর উপরে সব চেয়ে বড়ো বিষয় হলো: প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক পোষাক পরিধানের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নিকটে পূর্ণ বশ্যতা স্বীকার করার হয় এবং তাঁর আনুগত্য করা হয় তাঁর আদেশ মেনে চলার মাধ্যমে আর তাঁর বিনিবারিত বা নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে। অতএব এরই মাধ্যমে সে মহান আল্লাহর প্রদত্ত কল্যাণ, দান ও কৃপা লাভ করতে পারে।
আর সমাজের স্তরে বলা যেতে পারে যে, প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা সম্মত নারীর পোশাক বা পর্দা দ্বারা সমাজকে অমঙ্গল থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়। এবং সমাজের সমস্ত মানুষের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকে। আর সমাজের মধ্যে যখন অমঙ্গল সৃষ্টি হবে, তখন সমাজের সমস্ত পুরুষ এবং মহিলাকে ধ্বংস করে দিবে। তারপরে পারিবারিক বন্ধন, নিরাপত্তা ও শান্তি নষ্ট হয়ে যাবে এবং বিলীনও হয়ে যেতে পারে। আর এই বিষয়টি অনেক দেশে প্রকাশিত হয়েছে এবং দেখা যাচ্ছে।
মুসলিম নারীর হিজাব বা পর্দার শর্তাবলি
১। সারা শরীর ঢেকে রাখা
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا)، سورة الأحزاب، الآية 59. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তুমি তোমার স্ত্রী, কন্যা ও প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজের নারীদেরকে বলে দাও: তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ তাদের কপালের উপরে কষে বা শক্ত করে বেঁধে রাখে। এর দ্বারা সহজে তারা ভদ্রা ও শালীন মহিলা হিসেবে পরিগণিতা হতে পারবে এবং কেউ তাদেরকে বিরক্ত বা জ্বালাতন করবে না। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরমদয়ালু”। (সূরা আল আহযাব, আয়াত নং ৫৯)। আলেমদের বা বিদ্যাবানদের মধ্যে এই বিষয়ে মতভেদ আছে যে, নারীর মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি ঢেকে রাখা অপরিহার্য কিনা? কতকগুলি আলেম বা বিদ্যাবান ও পণ্ডিতের মতে নারীর মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি ঢেকে রাখা অপরিহার্য। এবং কতকগুলি আলেম বা বিদ্যাবান ও পণ্ডিতের মতে নারীর মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি ঢেকে রাখা অপরিহার্য নয়। তবে মোস্তাহাব বা পছন্দনীয় বিষয়। কিন্তু তাঁরা একবাক্যে বা একমত হয়ে বলেছেন যে, নারীর মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি ছাড়া তার সারা শরীর ঢেকে রাখা অপরিহার্য।
২। হিজাব বা পর্দা যেন বিশেষভাবে সাজসজ্জাযুক্ত বা সুসজ্জিত ও শোভাযুক্ত না হয়।
যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ)، سورة النور، جزء من الآية 31. ভাবার্থের অনুবাদ: “সাধারণভাবে তারা যেন তাদের সৌন্দর্য ও মাধুর্য যেন জনসমক্ষে প্রকাশ না করে”। (সূরা আন নূর, আয়াত নং ৩১ এর অংশবিশেষ)।
৩, ৪। হিজাব বা পর্দা যেন মোটা কাপড়ের হয় এবং ঢিলা ও সুপ্রশস্ত হয়।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "صِنْفانِ مِن أهْلِ النَّارِ لَمْ أرَهُما، قَوْمٌ معهُمْ سِياطٌ كَأَذْنابِ البَقَرِ يَضْرِبُوْنَ بها النَّاسَ، ونِساءٌ كاسِياتٌ عارِياتٌ مُمِيلاتٌ مائِلاتٌ، رُؤُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ البُخْتِ المائِلَةِ، لا يَدْخُلْنَ الجَنَّةَ، ولا يَجِدْنَ رِيحَها، وإنَّ رِيحَها لَيُوجَدُ مِن مَسِيرَةِ كَذا وكَذا". (صحيح مسلم، رقم الحديث 125 - (2128)،). অর্থ: “দুই শ্রেণির লোক জাহান্নামী হবে, যাদেরকে আমি আমার যুগে দেখতে পাইনি। এক শ্রেণির মানুষ এমন হবে যে, তাদের সাথে থাকবে গরুর লেজের মতো এক ধরণের দীর্ঘ চাবুক, যার দ্বারা তারা মানুষকে অন্যায়ভাবে প্রহার করবে। এবং দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ এমন হবে যে, তারা বস্ত্র পরিহিতা এমন কতকগুলি নারী হবে যে, তারা তাদের সতীত্ব ও শালীনতার পোশাক খুলে ফেলবে; কেননা তারা এমন পাতলা কাপড় পরিধান করবে যে, সেই কাপড়ের নীচ থেকে তাদের শরীরের চামড়া প্রদর্শিত হবে। অথবা তারা তাদের দেহের কিছু অংশ ঢেকে রাখবে এবং কিছু অংশ প্রকাশ করবে তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শিত করার জন্য। এর দ্বারা তারা পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করবে এবং তারাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের খোঁপা বাঁধার কারণে তাদের মাথা হবে উটের পিঠের কুঁজের মতো বড়ো ও উঁচু। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর তারা জান্নাতের সৌরভ বা সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সৌরভ বা সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৫ -(২১২৮) ]। وَعن أُسَامَةَ بن زيد، قَالَ: كَسَانِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُبْطِيَّةً كَثِيفَةً كَانَتْ مِمَّا أَهْدَاهَا دِحْيَةُ الْكَلْبِيُّ، فَكَسَوْتُهَا امْرَأَتِي، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "مَا لَكَ لَمْ تَلْبَسِ الْقُبْطِيَّةَ؟ " قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، كَسَوْتُهَا امْرَأَتِي. فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "مُرْهَا فَلْتَجْعَلْ تَحْتَهَا غِلَالَةً، إِنِّي أَخَافُ أَنْ تَصِفَ حَجْمَ عِظَامِهَا". (أحمد 21786). আর উসামা বিন য্যায়দ [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাকে একটি পুরু ও মোটা সূতার কাপড়ের পোশাক প্রদান করেছিলেন। আর সেই পোশাকটি আসলে দিহিয়া আলকালবি [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] এর উপহারের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। সেই পোশাকটি আমি আমার স্ত্রীকে প্রদান করেছিলাম। আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাকে বললেন: “তুমি সেই পোশাকটি কেন পরিধান করো নি?” আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার স্ত্রীকে সেই পোশাকটি পরিধান করার জন্য প্রদান করেছি। তাই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাকে বললেন: “তাকে তুমি বলবে: সে যেন তার সেই পোশাকটির নিচে একটি অন্তর্বাস পরিধান করে। যেহেতু আমি ভয় করছি যে সেই পোশাকটি তার হাড়ের আকার প্রকাশ করবে”। (আহমেদ 21786)।
৫। হিজাব বা পর্দা যেন আগরবাতির সুগন্ধিযুক্ত বা আতরযুক্ত না হয়।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ؛ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا؛ فَهِيَ زَانِيَةٌ". (النسائي: 5126). যখন কোনো নারী সুগন্ধি লাগিয়ে গায়ের মাহরাম জনসমাজের কাছ দিয়ে পথ অতিক্রম করবে, যাতে তারা তার সুগন্ধি অনুভব করে, তাহলে সে এর মাধ্য ব্যভিচারের কারণ হয়ে দাঁড়াবে”। [সুনান নাসায়ী, হাদীস নং ৫১২৬। আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী হাদীসটিকে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন]।
৬। হিজাব বা পর্দা যেন পুরুষদের পোশাকের মতো নয়।
সুতরাং আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] অভিশাপ দিয়েছেন ওই সমস্ত পুরুষকে, যে সমস্ত পুরুষ নারীদের চরিত্র, আচার, ব্যবহার, চালচলন এবং জীবন পদ্ধতি অবলম্বন করবে। আর আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] অভিশাপ দিয়েছেন ওই সমস্ত নারীকে যে সমস্ত নারী পুরুষদের চরিত্র, আচার, ব্যবহার, চালচলন এবং জীবন পদ্ধতি অবলম্বন করবে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৮৫]।
৭। হিজাব বা পর্দা যেন অমুসলিম নারীদের পোশাকের মতো নয়।
প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক মুসলিম কোনো নারীপুরুষের জন্য অমুসলিম সমাজের উপাসনা, উৎসব, চরিত্র, আচার, ব্যবহার, চালচলন ও বিশেষ পোশাক এবং জীবন পদ্ধতি অবলম্বন করা জায়েজ নয়। তাই আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]ও বলেছেন: "مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ"، (سنن أبي داود، رقم الحديث 4031، وهذا حديث حسن صحيح). অর্থ: “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের জীবন পদ্ধতি গ্রহণ করবে, সে ব্যক্তি সেই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে”। [সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং 4031 হাদীসটি হাসান সহীহ (সুন্দর সঠিক)]।
৮। হিজাব বা পর্দা যেন অসাধারণ ও অহংকারে পোশাক না হয়।
যেহেতু আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]ও বলেছেন: “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে খ্যাতি লাভ করার জন্য অসাধারণ ও অহংকারের পোশাক পরিধান করবে, মহান আল্লাহ তাকে পরকালে কিয়ামতের দিন অপমানের পোশাক পরিধান করাবেন”। (ইবনে মাজাহ ৩৬০৭)। খ্যাতি লাভ করার জন্য অসাধারণ ও অহংকারের পোশাক হলো সেই পোশাক যে পোশাকের দ্বারা নিজেকে অন্যের চেয়ে বড়ো করে তুলে ধরা হয়।
পূর্বোল্লিখিত শর্তাবলি মুসলিম নারীর পোশাকের প্রতি ওই সময়ে প্রযোজ্য, যে সময়ে সে তার ঘর থেকে বাইরে বের হবে অথবা যখন সে তার মাহরাম ছাড়া অন্য পুরুষদের কাছে উপস্থিত হবে। যেহেতু সে যখন তার মাহরামদের সামনে উপস্থিত হবে কিংব অন্যান্য মহিলাদের সাথে দেখা করবে, তখন তার জন্য এই শর্তাবলি মেনে চলার জরুরি বা অপরিহার্য নয়। কেননা এই ক্ষেত্রে তার জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা বৈধ এবং নির্দিষ্ট নিয়ম মোতাবেক তার কিছু সাজসজ্জা প্রদর্শন করাও বৈধ বা জায়েজ।
তাবার্রোজ
তাবার্রোজ হলো নারীর প্রতি তার শরীরের যে সমস্ত সৌন্দর্যের জিনিস গায়র মাহরামের সামনে ঢেকে রাখা দরকার, সে সমস্ত সৌন্দর্যের জিনিসকে গায়র মাহরামের সামনে প্রকাশ করা ও প্রদর্শন করা।
যে সমস্ত শ্রেণির মানুষ মুসলিম নারীর আশেপাশে থাকবে, সে সমস্ত শ্রেণির মানুষ হিসেবে মুসলিম নারীর পোশাক
মুসলিম নারীর পোশাক তার গায়র মাহরামের সামনে
তা হলো মহান আল্লাহ ও তদীয় রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর আদেশ মোতাবেক প্রকৃত ইসলামের আইন অনুসারে হিজাব বা পর্দা করা। আর এই হিজাব বা পর্দার শর্তাবলি পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।
মুসলিম নারীর পোশাক তার মাহরামের সামনে
মুসলিম নারীর প্রতি তার মাহরামের সামনেও তার নিজের শরীরকে আবৃত করে রাখা বা ঢেকে রাখা অপরিহার্য। তবে হ্যাঁ! সে তার মাহরামের সামনে নিজের দেহের ওই সমস্ত অঙ্গ প্রকাশ করতে পারবে, যে সমস্ত অঙ্গ সাধারণভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রায় প্রকাশ পেয়ে থাকে। যেমন:- ঘাড়, চুল, দুই পা এবং মুখমণ্ডল ও দুই হাতের কব্জি। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوْبِهِنَّ وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِيْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِيْ أَخَوَاتِهِنَّ)، سورة النور، الآية 31. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তুমি প্রকৃত ইমানদার মুসলিম নারী সমাজকে বলে দাও! তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে শালীন রাখার প্রতি তৎপর থাকে এবং তাদের লজ্জাস্থানের তারা সংরক্ষণ করে। সাধারণভাবেই যা প্রকাশ পায় যেমন:- মুখমণ্ডল ও দুই হাত, তা ছাড়া যেন তারা তাদের সৌন্দর্য ও মাধুর্য জনসমক্ষে প্রকাশ না করে। আর তাদের ঘাড় ও বুক যেন মাথার ওড়না দ্বারা ঢাকা থাকে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা ... ছাড়া অন্য কারো সামনে তাদের সৌন্দর্য ও মাধুর্য প্রকাশ না করে”। (সূরা আন নূর, আয়াত নং ৫৬)।
মুসলিম নারীর পোশাক মুসলিম নারীদের সামনে
মুসলিম নারীর প্রতি যেমন তার মাহরামের সামনেও তার নিজের শরীরকে আবৃত করে রাখা বা ঢেকে রাখা অপরিহার্য। তবে হ্যাঁ! সে মুসলিম নারীর সামনে নিজের দেহের ওই সমস্ত অঙ্গ প্রকাশ করতে পারবে, যে সমস্ত অঙ্গ সাধারণভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রায় প্রকাশ পেয়ে থাকে। যেমন:- ঘাড়, চুল, দুই পা এবং মুখমণ্ডল ও দুই হাতের কব্জি। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوْبِهِنَّ وَلَا يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُوْلَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِيْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِيْ أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ)، سورة النور، الآية 31. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তুমি প্রকৃত ইমানদার মুসলিম নারী সমাজকে বলে দাও! তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে শালীন রাখার প্রতি তৎপর থাকে এবং তাদের লজ্জাস্থানের তারা সংরক্ষণ করে। সাধারণভাবেই যা প্রকাশ পায় যেমন:- মুখমণ্ডল ও দুই হাত, তা ছাড়া যেন তারা তাদের সৌন্দর্য ও মাধুর্য জনসমক্ষে প্রকাশ না করে। আর তাদের ঘাড় ও বুক যেন মাথার ওড়না দ্বারা ঢাকা থাকে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা, মুসলিম নারী ... ছাড়া অন্য কারো সামনে তাদের সৌন্দর্য ও মাধুর্য প্রকাশ না করে”। (সূরা আন নূর, আয়াত নং ৫৬)।
মুসলিম নারীর পোশাক আহলে কিতাব বা ইহুদিনী নারী ও খৃষ্টান ধর্মের নারীর সামনে
মুসলিম নারীর প্রতি যেমন মুসলিম নারীর সামনে তার নিজের শরীরকে আবৃত করে রাখা বা ঢেকে রাখা অপরিহার্য। তবে হ্যাঁ! সে মুসলিম নারীর সামনে নিজের দেহের ওই সমস্ত অঙ্গ প্রকাশ করতে পারবে, যে সমস্ত অঙ্গ সাধারণভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রায় প্রকাশ পেয়ে থাকে। যেমন:- ঘাড়, চুল, দুই পা এবং মুখমণ্ডল ও দুই হাতের কব্জি। সেই রূপ মুসলিম নারী আহলে কিতাবের মহিলাদের সামনে নিজের দেহের ওই সমস্ত অঙ্গ প্রকাশ করতে পারবে, যে সমস্ত অঙ্গ সাধারণভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রায় প্রকাশ পেয়ে থাকে। যেমন:- ঘাড়, চুল, দুই পা এবং মুখমণ্ডল ও দুই হাতের কব্জি। আর এই বিষয়টির কারণ হলো এই যে, আহলে কিতাবের মহিলারা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর স্ত্রীদের কাছে প্রবেশ করতো। কিন্তু এটি বর্ণিত হয়নি যে, তিনি তাঁদেরকে সেই আহলে কিতাবের মহিলাদের সামনে হিজাব বা পর্দা করার আদেশ প্রদান করেছেন।
বৈধ ও অবৈধ হওয়ার দিক দিয়ে মুসলিম নারীর পোশাক ও তার সৌন্দর্যের প্রকারভেদ
নারীর বৈধ পোশাক ও সৌন্দর্য
প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক পোশাক এবং সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে আসল বিধান হলো এই যে, ওই সমস্ত জিনিসকে বৈধ বা হালাল বলেই গণ্য করতে হবে, যে সমস্ত জিনিসকে হারাম বা অবৈধ করা হয়নি। তাই এই ক্ষেত্রে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক যে সমস্ত জিনিসকে হারাম বা অবৈধ করা হয়েছে, সে সমস্ত জিনিসকে হারাম বা অবৈধ বলেই গণ্য করতে হবে। অতএব নারীর জন্য সকল প্রকারের বৈধ পোশাক, কাপড়, সৌন্দর্যের বা সাজসজ্জার জিনিস, গয়না, পারফিউম বা সুগন্ধি এবং সকল প্রকার প্রসাধনী দ্রব্য ব্যবহার করা বৈধ বা জায়েজ। তবে শর্ত হলো এই যে, সেই সমস্ত জিনিস বা দ্রব্য যেন অনিষ্টজনক বা ক্ষতিকর না হয় এবং অমুসলিম নারীদের আচার, ব্যবহার, চালচলনের মতো না হয়। আর সেই সমস্ত জিনিসে বা দ্রব্যে যেন নিষিদ্ধ উপকরণ বা হারাম জিনিসের কোনো পদার্থ না থাকে। যেমন:- দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে শূকরের চর্বি ইত্যাদি।
মোস্তাহাব বা পছন্দনীয় পোশাক ও সৌন্দর্য
এর দ্বারা যা বুঝানো হয়েছে, তা হলো এই যে, প্রকৃত ইসলামের শিক্ষায় যে সমস্ত সৌন্দর্যের বা সাজসজ্জার জিনিসকে মোস্তাহাব বা পছন্দনীয় জিনিস বলা হয়েছে, সে সমস্ত সৌন্দর্যের বা সাজসজ্জার জিনিসকে মোস্তাহাব বা পছন্দনীয় জিনিস বলা হয়। সেই রূপ নারী তার স্বামীকে খুশি করার জন্য এবং তার কাছে ভালবাসার পাত্রী হওয়ার জন্য যে সমস্ত সৌন্দর্যের বা সাজসজ্জার জিনিস ব্যবহার করে থাকে, সে সমস্ত সৌন্দর্যের বা সাজসজ্জার জিনিসকে মোস্তাহাব বা পছন্দনীয় জিনিস বলা হয়। তবে শর্ত হলো এই যে, সেই সমস্ত জিনিস বা দ্রব্য যেন হারাম না হয়।
হারাম বা অবৈধ পোশাক ও সৌন্দর্য
এর দ্বারা যা বুঝানো হয়েছে, তা হলো এই যে, প্রকৃত ইসলামের শিক্ষায় যে সমস্ত সৌন্দর্যের বা সাজসজ্জার জিনিসকে হারাম বা অবৈধ জিনিস বলে গণ্য করা হয়েছে এবং সেই সমস্ত সৌন্দর্যের বা সাজসজ্জার জিনিস থেকে সতর্ক বা সাবধানও করা হয়েছে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে। প্রকৃত ইসলামের শিক্ষায় সেই সমস্ত সৌন্দর্যের বা সাজসজ্জার জিনিসকে স্পষ্টভাবে হারাম বা অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে কিংবা প্রকৃত ইসলামের সাধারণ ও জরুরি বিধিবিধানের পরিপন্থী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যেমন ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিপরীত নিয়ম পদ্ধতি অবলম্বন করা এবং পুরুষদের চরিত্র, আচার, ব্যবহার ও চালচলন ইত্যাদি গ্রহণ না করা।