শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় নামাজের মধ্যে বিনম্রতা বজায় রাখার বিষয়।

নামাজের মধ্যে বিনম্রতা বজায় রাখা হলো নামাজের প্রাণ ও মূল বিষয়। এই পরিচ্ছেদে আমরা নামাজের মধ্যে বিনম্রতার অর্থ এবং নামাজের মধ্যে বিনম্রতা অর্জনের উপকরণ জানতে পারবো।

 

  • নামাজের মধ্যে বিনম্রতার অর্থ জানা।
  • নামাজের মধ্যে বিনম্রতা অর্জনের উপকরণ জানা।

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

নামাজের মধ্যে বিনম্রতা বজায় রাখার বিষয়।

নামাজের মধ্যে বিনম্রতা বজায় রাখাই হলো নামাজের আসল তাৎপর্য ও তার প্রকৃত মর্ম। আর এর অর্থ হলো এই যে, নামাজের মধ্যে সমগ্র সৃষ্টজগতের স্রষ্টা মহান আল্লাহর জন্য আত্মনিয়োগ করা, তাঁর বশ্যতা স্বীকার করার মাধ্যমে, তাঁর আজ্ঞাধীন হওয়া মাধ্যমে এবং পঠনীয় আয়াত, দোয়া ও জিকিরের অনুভুতির মাধ্যমে।

সমগ্র সৃষ্টজগতের স্রষ্টা মহান আল্লাহর জন্য নামাজের মধ্যে বিনম্রতা বজায় রাখা হলো সর্বোত্তম উপাসনার অন্তর্ভুক্ত একটি সৎকর্ম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ একটি পুণ্যের কাজ। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজের বিষয়ে বলেছেন: (قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ، الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ) سورة المؤمنون، الآياتان 1-2. ভাবার্থের অনুবাদ: প্রকৃতপক্ষে ইমানদার মুসলিম সমাজই সমস্ত অমঙ্গল হতে পরিত্রাণপ্রাপ্ত ও পরমানন্দ লাভে সফলকাম । যেহেতু তারা আপন আপন নামাজে অতি শান্তশিষ্ট বিনয়নম্র”। (সূরা আল মুমিনুন, আয়াত নং ১-২)।

যে ব্যক্তি নামাজের মধ্যে বিনম্রতা বজায় রাখতে পারবে, সে ব্যক্তি সমগ্র সৃষ্টজগতের স্রষ্টা মহান আল্লাহর উপাসনার এবং তাঁর প্রতি প্রকৃত ইমানের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে। তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "وَجُعِلَتْ قُرَّةُ عَيْنِيْ فِي الصَّلاةِ". (سنن النسائي, رقم الحديث 3940، وصححه الألباني). অর্থ: “নামাজের মধ্যে আমার জন্য রাখা হয়েছে পরমানন্দ ও পরমসুখ”। [সুনান নাসায়ী, হাদীস নং ৩৯৪০, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল আলবাণী হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]। সুতরাং নামজের মধ্যে রয়েছে অত্যন্ত আনন্দ, সুখ, শান্তি, প্রফুল্লতা ও তৃপ্তি।

নামাজের মধ্যে বিনম্রতা অর্জনের সহায়ক উপকরণ।

১। নামাজের জন্য প্রস্তুত হওয়া এবং এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া

পুরুষদের জন্য তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া, নামাজের পূর্বের ‎সুন্নতগুলি পড়া, উপযোগী ও সুন্দর পোশাক পরিধান করা এবং ‎নামাজের জন্য সম্মান ও প্রশান্তির সহিত যাওয়া। ‎

২। সমস্ত প্রকারের অসুবিধা এবং অস্বস্তিকর অবস্থাকে অপসারিত করা

প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি ওই অবস্থায় নামাজ পড়বে না, যে অবস্থায় তার ‎‎‎সামনে বিক্ষিপ্তকারী ছবি অথবা প্রতিমূর্তি এবং অস্বস্তিকর বস্তু থাকবে কিংবা ‎ ‎ঝঙ্কার ‎বা সুরলাপ ও বিভিন্ন প্রকারের ধ্বনি ইত্যাতি থাকবে। তদ্রূপ সে ওই অবস্থায় ‎‎নামাজ পড়বে না, যে অবস্থায় সে মলমূত্র ত্যাগের প্রয়োজন অনুভব করবে আর ‎‎যখন তার সামনে খাদ্য দ্রব্য এবং পানীয় দ্রব্য থাকবে আর সে ক্ষুধার্ত বা তৃষ্ণার্ত ‎‎থাকবে। আর এই সব হলো এই জন্য যে, নামাজ পড়ার অবস্থায় মুসল্লির মন ও ‎হৃদয় যেন পরিষ্কার অবস্থায় ‎থাকে এবং শান্তির সহিত মহা উপাসনা নামাজে ‎একাগ্রতার সহিত মগ্ন হতে পারে আর তার প্রতিপালক মহান আল্লাহর কাছে অতি ‎বিনয়ী হয়ে প্রার্থনা করতে পারে। ‎

৩। নামাজের মধ্যে প্রশান্তি বজায় রাখার বিষয়

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নামাজ ‎পড়ার অবস্থায় তাঁর রুকু ও সিজদায় প্রশান্তি বজায় রাখতেন এবং তাঁর দেহের প্রতিটি ‎হাড় তার নিজের স্থানে ফিরে আসতো ও স্থাপিত হতো। আর আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল ‎বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সেই ব্যক্তিকে ভালোভাবে নামাজ ‎পড়ার আদেশ প্রদান করেছিলেন আর নামাজের মধ্যে প্রশান্তি বজায় রাখতে ‎বলেছিলেন, যে ব্যক্তি ভালোভাবে নামাজ পড়তে পারেনি। তার তিনি তাকে অতিশয় ‎ব্যস্ততার সহিত তাড়াহুড়া করে কাকের ঠোকর দেওয়ার মতো করে নামাজ পড়তে ‎নিষেধ করেছিলেন। ‎

এবং আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎বলেছেন: ‎ ‏"أسوأ الناس سرقة الذي يسرق من صلاته"‏ অর্থ: “সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট চোর হলো সেই ব্যক্তি যে, নামজকে চুরি করে”। ‎সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন: হে আল্লাহর রাসূল! নামজকে আবার ‎কিভাবে চুরি করে? উত্তরে তিনি বলেছিলেন:‎ ‏"لا يتم ركوعها ولا سجودها" (أحمد 22642).‏ অর্থ: “সে নামাজের রুকু ও সিজদাগুলি সম্পূর্ণভাবে করেনা”। (আহমদ ‎‎22642)। আর যে ব্যক্তি নামাজের মধ্যে প্রশান্তি বজায় রাখবে না, তার নামাজের মধ্যে ‎বিনম্রতা আসবে না। যেহেতু নামাজের মধ্যে অতিশয় তাড়াহুড়া করে ‎নামাজ পড়লে তাড়াহুড়ার মাধ্যমে নামাজের বিনম্রতা অপসারিত হয়ে যায়। ‎আর কাকের ঠোকর দেওয়ার মতো করে নামাজ পড়লে, নামাজের পুণ্য বা ‎সওয়াব নষ্ট হয়ে যায়। ‎

৪। যে মহান সত্তার সামনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া হচ্ছে, সে মহান সত্তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব ‎মনের মধ্যে জাগিয়ে রাখা। ‎

তাই মুসল্লি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব নিজের ‎হৃদয়ে ‎জাগিয়ে রাখে এবং নিজের জীবনের দুর্বলতা ও অক্ষমতা স্মরণ করে। আর ‎তার ‎মনের মধ্যে জাগিয়ে রাখে যে, সে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান ‎প্রতিপালক ‎আল্লাহর সাননে দাঁড়িয়ে আছে, তাঁর সাথে বাক্যালাপ করছে, তাঁর কাছে ‎মঙ্গল পার্থনা ‎করছে, তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করছে, তাঁর নিকটে পূর্ণ বশ্যতা স্বীকার ‎করছে এবং ‎তাঁর কাছে নিজের দুর্বলতা ও অক্ষমতা প্রকাশ করছে। আর সে স্মরণ ‎করছে: প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজের ‎জন্য পরকালে কী সুন্দর ও কী চমৎকার পুরস্কার ও পুণ্য জান্নাত প্রস্তুত করে ‎রেখেছেন! এবং সে আরো স্মরণ করছে: প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ ‎অমুসলিম সমাজের জন্য পরকালে কত কষ্টদায়ক ও ক্লেশদায়ক শাস্তির স্থান জাহান্নাম ‎বা নরক প্রস্তুত করে রেখেছেন! অতঃপর সে এটাও স্মরণ করছে যে, পরকালে প্রকৃত ‎সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর সামনে তাকে উপস্থিত হতে হবে। ‎

সুতরাং মুসল্লি যখন নিজের মনের মধ্যে এই বিষয়টি জাগিয়ে রাখবে যে, প্রকৃত ‎সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তার কথা শ্রবণ করছেন, তার প্রয়োজন ‎পূরণ করছেন এবং তার প্রার্থনা কবুল করছেন, তখন তার হৃদয়ের মধ্যে সেই ‎পরিমাণে বিনম্রতা সৃষ্টি হবে, যে পরিমাণে সে মহান আল্লাহর স্মরণকে তার হৃদয়ে স্থান ‎দিবে। আর সে তাদের নিকটবর্তী হতে পারবে, যাদের প্রশংসা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য ‎উপাস্য মহান আল্লাহ করেছেন এবং বলেছেন:‎ ‏(وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ • الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُمْ مُلَاقُو رَبِّهِمْ وَأَنَّهُمْ إِلَيْهِ رَاجِعُونَ) ‏‏(البقرة: 45-46).‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “অবশ্য ধৈর্য্যধারণ করা এবং নামাজ প্রতিষ্ঠিত করা খুব কঠিন কাজ। ‎কিন্তু সেই সমস্ত কাজ ওই সমস্ত প্রকৃত ইমানদার বিনয়ী মুসলিমের পক্ষে কোনো কঠিন ‎কাজ যারা বিশ্বাস করে যে, তাদেরকে তাদের প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান ‎প্রতিপালক আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে এবং তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে”। ‎‎(সূরা বাকারা: 45-46)।

৫। অধীত আয়াত এবং পঠিত জিকিরগুলির প্রতি ঐকান্তিকভাবে গভীর মনোযোগের ‎সাথে গভীর চিন্তা করা এবং সেগুলির দাবি মোতাবেক নিজেকে পরিচালিত করা। ‎‎

পবিত্র‎‏‎ কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এই জন্য যে, ঐকান্তিকভাবে গভীর মনোযোগের সাথে ‎গভীর চিন্তা ও অনুধাবন করে ‎তার আয়াত ও ভাবার্থের যেন জ্ঞান লাভ করা হয়। তাই ‎মহান আল্লাহ পবিত্র‎‏‎ কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏ (كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوْا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُو الْأَلْبَابِ)، سورة ص، الآية 29. ‏‎ ‎‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ! আমি তোমার প্রতি ‎এই ‎কল্যাণময় গ্রন্থ পবিত্র‎‏‎ কুরআন অবতীর্ণ করেছি। যাতে সকল জাতির মানব ‎সমাজ ‎এই পবিত্র‎‏‎ কুরআনের উপদেশগুলির জ্ঞান লাভ করার জন্য ‎ঐকান্তিকভাবে গভীর ‎মনোযোগের সাথে গভীর চিন্তা ও অনুধাবন করে এবং তার শিক্ষার আলোকে ‎জীবন ‎পরিচালিত করে। আর বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা যেন এই পবিত্র‎‏‎ কুরআনের ‎উপদেশগুলি ‎সঠিকভাবে মেনে চলে”। (সূরা সদ, আয়াত নং ২৯)। ‎

কী করে ঐকান্তিকভাবে গভীর মনোযোগের সাথে গভীর চিন্তা ও গবেষণা করা যায়? ‎

মুসল্লি তার অধীত আয়াত এবং পঠিত জিকির ও দোয়ার অর্থ না জানলে সে ‎ঐকান্তিকভাবে গভীর মনোযোগের সাথে গভীর চিন্তা ও গবেষণা করতে পারবে না। ‎তাই সে যখন তার অধীত আয়াত এবং পঠিত জিকির ও দোয়ার অর্থ উপলব্ধি করতে ‎পারবে, তখন সে তার নিজের অবস্থায় ও বাস্তবতায় মননশীল হতে পারবে এবং তার ‎অধীত আয়াত এবং পঠিত জিকির ও দোয়ার প্রতি মনোযোগী ও চিন্তাশীল হতে ‎পারবে। আর তার মধ্যে বিনম্রতা ও স্থিরতা বিরাজ করবে এবং সেগুলির দ্বারা সে ‎প্রভাবিত হবে এবং তার চোখে পানি আসবে। সুতরাং তার সামনে যখনই কোনো ‎আয়াত আসবে, তখনই সে প্রভাবিত হবে আর সে যেন কিছু শুনতে বা দেখতে পায় ‎না। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন:‎ ‏(وَالَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّوا عَلَيْهَا صُمًّا وَعُمْيَانًا) (الفرقان: 73).‏‎ ‎ ভাবার্থের অনুবাদ: “প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান প্রতিপালক আল্লাহর বিধান ও ‎নিদর্শন যখন প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে, তখন তারা ‎সেগুলি থেকে বধির ও অন্ধদের মতো বিমুখ হবে না”। (সূরা ফুরকান : ৭৩)।

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন