মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় শিরোনাম: শীতকালের নামাজ এবং রোজার বিধান
শীতকালে আবহাওয়া প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হলে, বিবেচনা করে দেখতে হবে: প্রচণ্ড ঠাণ্ডা যদি নামাজের জন্য বের হওয়ার পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তাহলে নামাজের জন্য আজান স্বাভাবিক অবস্থার দেওয়া যাবে।
শীতকালে আবহাওয়া যদি প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হয় এবং জনসাধারণের জন্য মাসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার বিষয়টি অতি কষ্টদায়ক হয়, তাহলে আজানের বিধান পরিবর্তিত হবে। সুতরাং মুয়াজ্জিন তার আজানে বলবেন: "ألَا صَلُّوْا فِيْ رِحَالِكم". অর্থ: “তোমরা সবাই তোমাদের আপন আপন ঘরবাড়ীতেই নামাজ পড়ো”। কিংবা মুয়াজ্জিন তার আজানে বলবেন: "الصَّلاة في الرِّحال". অর্থ: “তোমরা সবাই ঘরবাড়ীতেই নামাজ পড়ো”। অথবা মুয়াজ্জিন তার আজানে বলবেন: "صَلُّوا فِي بُيُوتِكُمْ". অর্থ: “তোমরা তোমাদের আপন আপন বাসগৃহে নামাজ পড়ো”। অতএব অতি কষ্টদায়ক অবস্থায় মুয়াজ্জিন জনসাধারণকে মাসজিদে নামাজ না পড়ার অনুমতি দিবেন এবং তাদেরকে তাদের বাসস্থানে নামাজ পড়তে বলবেন।
নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক প্রচণ্ড শীতের রাতে বা বৃষ্টির রাতে ইবনু ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] দজনান নামক স্থানে আজান দিয়েছিলেন। তারপর তিনি ঘোষণা করেছিলেন: তোমরা তোমাদের আবাস স্থলে বা বাড়িতেই নামাজ পড়ে নাও। অতঃপর তিনি আমাদেরকে জানালেন যে, আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সফরের অবস্থায় বৃষ্টি অথবা প্রচণ্ড শীতের রাতে মুআজ্জিনকে আজান দিতে বলেছিলেন এবং একথাও ঘোষণা করতে বলেছিলেন: “তোমরা তোমাদের আবাস স্থলে বা বাড়িতেই নামাজ পড়ে নাও”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩২ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২ - (৬৯৭)]। টীকা: মক্কার উত্তরে আসফানের কাছে একটি স্থানের নাম। আসফান একটি শহর যা মক্কা আল-মুকাররামা থেকে 80 কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। এর বড়ো অংশ উত্তর-পূর্ব জিদ্দার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শীতকালে অনেক লোক আগুন জ্বালায়। তাই সেই আগুন কোনো কোনো সময় নামাজ পড়ার সময় মুসল্লির সামনের দিকে থাকে। তাই জেনে রাখা দরকার যে, নামাজ পড়ার সময় আগুনকে সামনের দিকে না রাখাই উত্তম। যাতে মাজুসীদের সাথে মুসলিম জাতির সাদৃশ্য না হয়। আর এই কারণেও আগুনকে সামনে রেখে নামাজ পড়া ভালো নয়। কেননা মুসল্লির সামনে আগুন থাকলে সে নামাজে মনোযোগী হতে পারবে না। তবে যদি উষ্ণতার প্রয়োজন হয় বা জায়গা পরিবর্তন করতে কোনো অসুবিধা হয়, তাহলে আগুনকে সামনে রেখে নামাজ পড়লে কোনো সমস্যা নেই।
যে সমস্ত হিটারে অগ্নিশিখা নেই, সে সমস্ত হিটারকে সামনে রেখে নামাজ পড়লে কোনো সমস্যা নেই এবং মকরুহও নয়।
দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়ার বিধান
দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়ার অর্থ হলো এই যে, জোহরের নামাজকে আসরের নামাজের সাথে একত্রিত করে পড়া। অথবা মাগরিবের নামাজকে ইশার নামাজের সাথে একত্রিত করে পড়া। সুতরাং দুই নামাজকে একত্রিত করে একটি নামাজের সময়ে পড়া। তাতে কোনো নামাজকে আগিয়ে দেওয়া হোক অথবা পিছিয়ে দেওয়া হোক, তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়ার জন্য কোনো কারণ থাকতে হবে।
শীতকালে দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়ার বৈধ কারণের মধ্যে রয়েছে বৃষ্টিপাত হওয়া। কতকগুলি আলেম দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়ার বৈধ কারণের মধ্যে রেখেছেন: প্রবল ঠাণ্ডা বাতাস, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আবহাওয়া, তুষারপাতের কারণে পথ বন্ধ হওয়া এবং পথে কাদা থাকা ইত্যাদি।
সুতরাং দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়ার বৈধ কারণের মূল উদ্দেশ্য হলো: আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি বা অবস্থা উপনীত হওয়া যে, তাতে সব মানুষের জন্য বারবার জামাআতের সহিত নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে উপস্থিত হওয়া কষ্টকর বিষয় হয়ে পড়ে। তাই দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়ার অনুমতি দেওয়া যাবে তাদেরকে। তবে হালকা বৃষ্টিতে মানুষ হাঁটার জন্য বাইরে যেতে পারে এবং তার জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য চলাফেরা করতে পারে এবং তাতে তার কোনো সমস্যা হয় না।
আসলে মুসলিম সমাজের প্রতি সময়মত নামাজ আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (فَإِذَا اطْمَأْنَنتُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ ۚ إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا)، سورة النساء، الآية 103. ভাবার্থের অনুবাদ: “যখন তোমরা পারিপার্শ্বিক নিরাপত্তা লাভ করবে, তখন যথাযথভাবে নামাজ প্রতিষ্ঠিত করবে। প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজের প্রতি নির্ধারিত সময়ে নামাজ প্রতিষ্ঠিত করা ও পড়া একটি অপরিহার্য ফরজ বিষয়”। (সূরা আন নসিা, আয়াত নং নং ১০৩ এর অংশবিশেষ)। সুতরাং দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়া বৈধ কারণ ছাড়া জায়েজ নয়। তাই ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এবং আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: অকারণে দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়া হলো একটি বড়ো পাপ।
যে ব্যক্তি জামাআতে নামাজ পড়ে না, যেমন:- মহিলা, অসুস্থ এবং যে ব্যক্তি জামাআতের খেয়াল করে না, সে দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়বে না। যেহেতু দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়ার তার কোনো প্রয়োজন নেই। আর সময়মত নামাজ সমস্ত আদায় করা দরকার। আর দ্বিতীয় নামাজ পড়ার আগে নামাজ একত্রিত করে পড়ার বৈধ কারণ শেষ হয়ে গেলে দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়া চলবে না।
মুসলিম ব্যক্তি যখন দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়বে, তখন তার জন্য একটি আজান দেওয়া যথেষ্ট হবে। আর প্রত্যেকটি নামাজের জন্য আলাদা আলাদা করে ইকামত দিবে। এবং দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়ে নেওয়ার পর সুন্নাতে মুআক্কাদার নামাজগুলি পড়বে তারপর নামাজের পরে পঠনীয় জিকিরগুলি পাঠ করবে।
কতকগুলি মাসজিদে দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়ার বৈধ কারণের বিষয়ে মতভেব দেখা দেয়। তবে এই বিষয়ে ইমাম হবেন দায়ী। তাই তিনি যদি জ্ঞানবান হন আর জ্ঞানীদের সাথে পরামর্শ করেন তারপর তিনি যদি দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়া বৈধ না মনে করেন, তাহলে তিনি দুই নামাজকে একত্রিত করে পড়বেন না। আর মাসজিদের জামাআতের লোকদের উচিত, তারা যেন বিতর্কে জড়িয়ে না পড়ে।
কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে: শীতকাল হলো প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির জন্য বসন্ত কাল। এতে তার দিন ছোটো হয়; তাই সে তাতে রোজা রাখে এবং তার রাত দীর্ঘ হয়; তাই সে তাতে উঠে নফল নামাজ পড়ে। (ইমাম বাইহাকীর সুনান কুবরা" (8456)। এবং শীতকালকে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির জন্য বসন্ত কাল বলা হয়েছে এই জন্য যে, সে তাতে উপাসনা বা ইবাদতের উদ্যানে বিচরণ করে। যেহেতু শীতকালে সে দিনের বেলায় ক্ষুধার্ত হয় না এবং তৃষ্ণার্ত হয় না; তাই সে বিনা কষ্টে ও অতি সহজে রোজা রাখতে পারে ছোটো দিন হওয়ার কারণে। আর দীর্ঘ রাত হওয়ার কারণে সে তাতে উঠে নফল নামাজ পড়তে পারে। সুতরাং সে তাতে ঘুমানোর সুযোগ পায় এবং নফল নামাজ পড়ারও সুযোগ পায় আর এই দুইটি কাজকে সে একত্রিত করতে সক্ষম হয়।
কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে: “শীতকালে রোজা রাখা হলো মঙ্গলদায়ক সহজ সুন্দর কাজ”। এটি ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেছেন (18959) । ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] বলেছেন: “শীতকাল হলো প্রকৃত ইমানদার মুসলিম উপাসকদের জন্য মঙ্গলদায়ক সহজ সুন্দর সুযোগ”। এটি আবু নাইম আল হিলিয়া গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন (1/51)।