মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস
পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাসের অর্থ।
এইভাবে দৃঢ় ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা যে, সেই দিবসে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ মানুষকে কবর থেকে পুনরুত্থিত করবেন। তারপর তাদের সৎ কর্মের ও কুকর্মের হিসাব নিবেন ও বিচার করবেন। অতঃপর তাদেরকে তাদের সৎ কর্মের ও কুকর্মের প্রতিদান বা প্রতিফল প্রদান করবেন। যাতে করে জান্নাতবাসীরা তাদের শান্তিদায়ক ও তৃপ্তিকর স্থানে অবস্থান করতে পারে এবং জাহান্নামবাসীরা তাদের অতিশয় ক্লেশদায়ক স্থানে বা কঠিন শাস্তি ভোগ করার স্থানে অবস্থান করতে পারে। আর পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা হলো ইমানের বা বিশ্বাসের পারমার্থিক ছয়টি মৌলিক নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই যে ব্যক্তি পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করবে না, আসলে তার কোনো ইমান বা বিশ্বাস সঠিক বলে বিবেচিত হবো। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَلَـكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ) (البقرة: 177). ভাবার্থের অনুবাদ: “যে ব্যক্তি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের শেষ দিবসের প্রতি দৃঢ়ভাবে ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করবে। সে ব্যক্তি অবশ্যই বহু পুণ্য অর্জনকারী মানুষ হিসেবে বিবেচিত হবে”। (সূরা বাকারা : ১৭৭)।
পরকালের শেষ দিবসের তাৎপর্য কী?
পরকালের শেষ দিবসের বিবরণ হলো এই যে, সেই দিবসে সমস্ত মানুষকে পুনরুত্থিত করা হবে এবং তাদের সৎ কর্মের ও কুকর্মের হিসাব নেওয়ার জন্য আর তাদেরকে তাদের সৎ কর্মের ও কুকর্মের প্রতিদান বা প্রতিফল দেওয়ার জন্য। অতঃপর মানুষ শান্তিদায়ক ও তৃপ্তিকর স্থান জান্নাতে অবস্থান করবে অথবা অতিশয় ক্লেশদায়ক স্থান বা কঠিন শাস্তি ভোগ করার স্থান জাহান্নামে অবস্থান করবে। পরকালের দিবসকে শেষ দিবস এই জন্য বলা হয়েছে যে, সেই দিবসের পরে আর অন্য কোনো দিবস নেই। পবিত্র কুরআন এবং নির্ভরযোগ্য হাদীসে পরকালের শেষ দিবসের অনেক নাম উল্লিখিত হয়েছে। সেই দিবসকে বলা হয়েছে: কিয়ামতের দিবস অর্থাৎ মহাপ্রলয়ের দিবস। এই দিবসকে কিয়ামতের দিবস এই জন্য বলা হয় যে, এই দিবসে অনেক বড়ো বড়ো ঘটনা সংঘটিত হবে। আর সেই সব বড়ো বড়ো ঘটনার মধ্যে রয়েছে সমস্ত মানুষ পুনরুত্থিত হয়ে সব জগতের প্রকৃত প্রতিপালক সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কাছে একত্রিত হবে। সেই দিবসকে শেষ ফয়সালার দিবস এবং শেষ বিচারের দিবস ইত্যাদিও বলা হয়।
পবিত্র কুরআন পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করার প্রতি কেন জোর দিয়েছে?
পবিত্র কুরআন পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করার প্রতি খুবই জোর দিয়েছে এবং প্রতিটি উপযোগী স্থানে ন্যায়সঙ্গতভাবে তাতে থেকে সতর্ক করেছে। তদ্রূপ পবিত্র কুরআন বিভিন্ন প্রকারের জোরদার আরবি পদ্ধতিতে ঘোষণা করে দিয়েছে যে, পরকালের শেষ দিবস অবশ্যই আসবে। আর পবিত্র কুরআনের মধ্যে পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করার বিষয়টি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করার সাথে একাধিক স্থানে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। এর দ্বারা পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করার গুরুত্বকে জোরদার করা হয়েছে। যাতে মানুষ পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা হতে কোনো সময় গাফেল বা বেখেয়াল না হয় আর সেই শেষ দিবসে সুখময় জীবন লাভের উদ্দেশ্যে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর প্রতি সঠিক ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাঁর প্রদত্ত বিধান মোতাবেক সৎ কর্ম করে।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর প্রতি ও তাঁর ন্যায় বিচারের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করার একটি সুফল হলো পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা। আর এর বিস্তারিত বিবরণ হলো:
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ অন্যায়কে স্বীকৃতি দেন না এবং অত্যাচারীকে শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দেন না। আর নির্যাতিতকে ন্যায়বিচারের দ্বারা সাহায্য না করে ছেড়ে দেন না, ন্যায়পরায়ণ ও সৎ ব্যক্তিকে তার পুরস্কার ও প্রতিদান না দিয়ে ছেড়ে দেন না। আর তিনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ন্যায্য পাওনা ও অধিকার প্রদান করেন। আর আমরা পার্থিব জীবনে অনেক মানুষকে দেখতে পাই, তারা অন্যায়ভাবে জীবনযাপন করে এবং অন্যায়ভাবে মারা যায় শাস্তি ভোগ করার আগেই। আবার অন্যদিকে আমরা পার্থিব জীবনে অনেক মানুষকে দেখতে পাই, তারা নির্যাতিত হয়ে জীবনযাপন করে এবং নির্যাতিত হয়ে মারা যায়, তারা তাদের অধিকার পাওয়ার আগেই। তাহলে এর অর্থ কী? অথচ প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ অন্যায়কে স্বীকৃতি দেন না! তাই জেনে নেওয়া দরকার যে, আমাদের পার্থিব জগতের জীবন ব্যতীত অন্য আরেকটি জীবনের প্রয়োজন রয়েছে এবং অন্য একটি সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। আর সেই জীবনে আর সেই সময়ে ন্যায়পরায়ণ ও সৎ ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করা হবে এবং অপরাধীকে তার শাস্তি দেওয়া হবে। এবং সেই সময়ে প্রতিটি মানুষ তার পার্থিব জীবনের কর্মফল অনুযায়ী ন্যায্য প্রতিদান বা প্রতিফল পেয়ে যাবে।
কিয়ামতের বা মহাপ্রলয়ের আলামত
পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করার বিষয়টি কিয়ামতের বা মহাপ্রলয়ের সমস্ত নিদর্শন ও আলামতের প্রতিও ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করার সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। আর এই সমস্ত নিদর্শন ও আলামত কিয়ামত বা মহাপ্রলয় সংঘটিত হওয়ার পূর্বে প্রকাশ পাবে। এবং তাতে ইঙ্গিত থাকবে যে, কিয়ামত বা মহাপ্রলয় সংঘটিত হওয়ার সময় অতি নিকটে আছে। কিয়ামতের বা মহাপ্রলয়ের সমস্ত নিদর্শন ও আলামত দুটি ভাগে বিভক্ত:
১। কিয়ামতের বা মহাপ্রলয়ের ছোটো আলামত
আর কিয়ামতের বা মহাপ্রলয়ের ছোটো আলামতগুলি কিয়ামত বা মহাপ্রলয় সংঘটিত হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হবে। আর সেই সব আলামতের মধ্যে রয়েছে: অভাবগ্রস্ত নগ্নদেহ, নগ্নপদ ছাগল চারকরা সুউচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ করবে অহংকারের সহিত। মহাফেরেশতা জিবরীল [আলাইহিস সালাম] আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন এবং বলেছিলেন: কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? তিনি উত্তরে বলেছিলেন: “এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে বেশি কিছু অবগত নয়”। আবার মহাফেরেশতা জিবরীল [আলাইহিস সালাম] আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন এবং বলেছিলেন: তবে আমাকে কিয়ামতের বা মহাপ্রলয়ের নিদর্শন পেশ করুন। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] উত্তরে বলেছিলেন: “যখন কৃতদাসী তার অভিভাবিকাকে জন্ম দিবে এবং নগ্নপদ, নগ্নদেহ এবং অভাবগ্রস্ত ছাগল চারকরা সুউচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ করবে অহংকারের সহিত”। (মুসলিম ৮)
২। কিয়ামতের বা মহাপ্রলয়ের বড়ো আলামত
আর কিয়ামতের বা মহাপ্রলয়ের বড়ো আলামতগুলি কিয়ামত বা মহাপ্রলয় সংঘটিত হওয়ার অতি নিকটবর্তী যুগে প্রকাশ পাবে। আর সেই আলামতগুলির মধ্যে দশটি আলামতের কথা হাদীসের মধ্যে এসেছে। সুতরাং হুজাইফা বিন আসীদ [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদিন আমরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করছিলাম। এই অবস্থায় আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাদের দিকে তাকালেন এবং তিনি বললেন: “তোমরা কী আলোচনা করছো”? উত্তরে তারা বললেন: আমরা কিয়ামতের ব্যাপারে আলোচনা করছি। এই কথা শুনে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন: “ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা দশটি বিশেষ আলামত না দেখবে। তারপর তিনি উল্লেখ করলেন: ধোঁয়া, দাজ্জাল, জন্তু, পশ্চিমাকাশ হতে সূর্যোদয় হওয়া, মারইয়াম পুত্র ঈসা [আলাইহিস সালাম] এর অবতরণ, ইয়াজুজ ও মাজুজ এবং মাটির তিনটি বড়ো বড়ো ধস নামা বা ভূখণ্ড ধসে পড়া। পূর্বে একটি ধস নামবে, পশ্চিমে একটি ধস নামবে এবং আরব উপদ্বীপে একটি ধস নামবে। আরো একটি আলামত হলো এই যে, ইয়েমেন থেকে একটি আগুন বের হবে। আর সেই আগুন মানুষকে তাদের সমাবেশের জন্য হাশরের মাঠ পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে যাবে”। (মুসলিম 2901)।
পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপনের অন্তর্ভুক্ত কী কী বিষয় রয়েছে?
পরকালের শেষ দিবসের প্রতি মুসলিম ব্যক্তির ইমান বা বিশ্বাস স্থাপনের অন্তর্ভুক্ত কতকগুলি বিষয় রয়েছে। সেই বিষয়গুলির মধ্যে পড়ছে:
১। পরকালের শেষ দিবসে সমস্ত মানুষকে পুনরুত্থিত ও একত্রিত হওয়ার প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা।
সমস্ত মৃত মানুষকে কবর থেকে জীবিত করে পুনরুত্থিত করা হবে এবং তাদের দেহে আত্মা প্রদান করা হবে। তাই সমস্ত মানুষকে সব জগতের প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান প্রতিপালক আল্লাহর কাছে উপস্থিত হতে হবে। তারপর তাদেরকে বিবস্ত্র অবস্থায় যেমনভাবে জন্ম গ্রহণ করেছে, সেই রকম ভাবে পুনরুত্থিত করা হবে এবং তাদেরকে এক জায়গায় একত্রিত করা হবে। পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করার বিষয়টি পবিত্র কুরআন এবং নির্ভরযোগ্য হাদীসের দ্বারা, সঠিক বুদ্ধির দ্বারা এবং নিছক স্বাভাবিক গুণাবলির দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। তাই আমরা নিশ্চিতভাবে ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করবো যে, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ সমস্ত মৃত মানুষকে কবর থেকে জীবিত করে পুনরুত্থিত করবেন আর তাদের দেহে আত্মা প্রদান করা হবে। তাই সমস্ত মানুষ সব জগতের প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান প্রতিপালক আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (ثُمَّ إِنَّكُمْ بَعْدَ ذَلِكَ لَمَيِّتُونَ • ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُون) (المؤمنون:15-16). ভাবার্থের অনুবাদ: “শেষ পর্যন্ত তোমাদের মৃত্যু হবে। অতঃপর পরকালের শেষ দিবসে পুনরায় তোমাদেরকে জীবিত করা হবে”। (সূরা মুমিনুন: 15-16)। সমস্ত আসমানী কিতাব এই বিষয়ে একমত হয়েছে। আর এটাই হলো প্রজ্ঞার দাবি যে, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ যেন সমস্ত মানুষকে জীবিত করেন এবং এক জায়গায় তাদেরকে একত্রিত করেন। আর তাদেরকে তাদের ওই সব কর্মের প্রতিদান বা প্রতিফল বুঝিয়ে দেন, যে সব কর্ম তাদেরকে সম্পাদন করার উপদেশ প্রদান করেছিলেন তাঁর বার্তাবহ রাসূলগণের মাধ্যমে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُون) (المؤمنون: 115). ভাবার্থের অনুবাদ: “তোমরা মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনা হবে না”। (সূরা মুমিনুন: ১১৫)।
২। পরকালের শেষ দিবসে সমস্ত মানুষের ভালোমন্দ কর্মের বিচারের জন্য হিসাব ও বিশেষ মিজান বা দাঁড়িপাল্লার প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা।
পরকালের শেষ দিবসে সমস্ত মানুষের পার্থিব জীবনের ভালোমন্দ কর্মের বিচারের জন্য হিসাব নিবেন। তাই যারা তাওহীদের উপরে অটল থেকে মহান আল্লাহ ও তাঁর বার্তাবহ রাসূলের আনুগত্য করেছে, তাদের হিসাব অতি সহজ হবে। আর যারা শিরক করেছে এবং পাপ করেছে তাদের হিসাব খুব কঠিন হবে।
মানুষের ভালোমন্দ কর্ম ওজন করা হবে বড়ো দাঁড়িপাল্লায়। সুতরাং এক পাল্লায় সৎ কর্ম আর অন্য পাল্লায় অসৎ কর্ম রাখা হবে। তাই যে ব্যক্তির অসৎ কর্মের চেয়ে সৎ কর্ম বেশি হবে, যে ব্যক্তি জান্নাতবাসী হবে। আর যে ব্যক্তির সৎ কর্মের চেয়ে অসৎ কর্ম বেশি হবে, যে ব্যক্তি জাহান্নামবাসী হবে। এবং তোমার পালনকর্তা কারো প্রতি জুলুম করেন না। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَإِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا وَكَفَى بِنَا حَاسِبِين) (الأنبياء: 47). ভাবার্থের অনুবাদ: “আমি কিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করবো। সুতরাং কারো প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না। যদি কোনো কর্ম বিন্দু পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করবো এবং হিসাব গ্রহণের জন্যে আমিই যথেষ্ট”। (সূরাআম্বিয়া: 47)।
৩। জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতি ঈমান
জান্নাত হলো পরকালে স্থায়ীভাবে পরমানন্দের সহিত বসবাস করার পবিত্র ধাম। এই পবিত্র ধাম প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ ও তদীয় বার্তাবহ রাসূলগণের আনুগত্যকারী ন্যায়পরায়ণ ইমানদার মুসলিম সমাজের জন্য মহান আল্লাহ প্রস্তুত করেছেন। সেখানে মনের মতো ও চোখ জুড়ানো সব ধরণের স্থায়ী সুখ ও পরমানন্দের সমস্ত প্রকারের উপাদান রয়েছে। তাই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ সেই জান্নাত লাভের জন্য মানুষকে সৎ কর্ম করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। আর সেই জান্নাতের পরিধি আকাশ ও পৃথিবীর প্রস্থের সমান হবে। সুতরাং মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِين) (آل عمران: 133). ভাবার্থের অনুবাদ: “তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাত লাভের জন্য সৎ কর্মে অক্লান্ত পরিশ্রম করে এগিয়ে যাও। আর সেই জান্নাতের পরিধি হবে মহাকাশ ও পৃথিবীর সমতুল্য। আর সেই জান্নাত তৈরী করা হয়েছে আল্লাহ ও তদীয় বার্তাবহ রাসূলগণের আনুগত্যকারী ন্যায়পরায়ণ ইমানদার মুসলিম সমাজের জন্য”। (সূরা আল ইমরান: ১৩৩)।
জাহান্নামের আগুন হলো পরকালে চিরস্থায়ী দুঃখকষ্ট ভোগের স্থায়ী স্থান। এই স্থানকে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ ও তদীয় বার্তাবহ রাসূলগণকে প্রত্যাখ্যানকারী সকল প্রকারের অমুসলিম সমাজের জন্য মহান আল্লাহ প্রস্তুত করেছেন। সেখানে সমস্ত প্রকারের এমন শাস্তি, দুঃখকষ্ট ও যন্ত্রণা হবে, যার ধারণা করা যায় না। তাই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ সেই জাহান্নামের আগুন থেকে সকল প্রকারের অমুসলিম সমাজকে সতর্ক করেছেন এবং বলেছেন: (فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِين) (البقرة: 24). ভাবার্থের অনুবাদ: “সুতরাং তোমরা সেই জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা লাভের জন্য প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মেনে চলো। সেই জাহান্নামের আগুনের জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত করা হয়েছে সকল প্রকারের অমুসলিম সমাজের জন্য”। (সূরা বাকারা: 24)।
হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করি এবং যে সমস্ত কথা ও কর্ম জান্নাতের নিকটবর্তী করে, সেই সমস্ত কথা ও কর্ম প্রার্থনা করি। আর হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি জাহান্নামের আগুন থেকে এবং যে সমস্ত কথা ও কর্ম জাহান্নামের আগুনের নিকটবর্তী করে, সে সমস্ত কথা ও কর্ম থেকেও আমরা আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।
৩। কবরের শাস্তি ও শান্তির প্রতি ঈমান
আমরা বিশ্বাস করি যে মৃত্যু সত্য। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (قُلْ يَتَوَفَّاكُمْ مَلَكُ الْمَوْتِ الَّذِي وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ إِلَى رَبِّكُمْ تُرْجَعُون) (السجدة: 11). ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! ওদেরকে বলো: নির্ধারিত সময়ে মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে আর তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে তোমাদের প্রতিপালকের কাছে”। (সূরা সাজদাহ: 11)। আর এই মৃত্যু হলো নিঃসন্দেহে একটি বাহ্যিক ও দৃশ্যমান বিষয়। এবং আমরা বিশ্বাস করি যে, যে ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করে বা হত্যাকাণ্ডে নিহত হয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে ব্যক্তি তার মরণের নির্দিষ্ট বয়সেই মৃত্যুবরণ করে। এবং তাতে থেকে কিছু কম করা হয় না। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلَا يَسْتَقْدِمُون) (الأعراف: 34). ভাবার্থের অনুবাদ: “যখন সৃষ্ট জীব জগতের মরণের মেয়াদ এসে যাবে, তখন তারা না এক মুহুর্ত পিছে যেতে পারে আর না তারা এগিয়ে আসতে পারবে”। (সূরা আরাফ : ৩৪)। আর যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করবে, তার কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে এবং পরকালের জীবনে সে গমন করবে।
অনেক আয়াত এবং অনেক হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত যে, অমুসলিম সমাজের জন্য এবং পাপীদের জন্য কবরের শাস্তির বিষয়টি সাব্যস্ত হয়েছে এবং নির্ধারিত রয়েছে। আর প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজের জন্য ও ন্যায়পরায়ণদের জন্য কবরের শান্তি ও আনন্দের বিষয়টি সাব্যস্ত এবং নির্ধারিত রয়েছে। সুতরাং আমরা কবরের শাস্তি ও শান্তির প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস রাখি। তবে এই শাস্তি ও শান্তির ধরণ বা পদ্ধতির বিষয়ে আমরা বিতর্ক করি না। যেহেতু এই বিষয়টি বাস্তব জগতের মতো নয় বরং অদৃশ্য জগতের বিষয় জান্নাত ও জাহান্নামের মতো। তাই বুদ্ধির দ্বারা এই বিষয়ের পদ্ধতি ও বাস্তবতা জানার কোনো পথ নেই। এবং বুদ্ধির দ্বারা বাস্তব জগতের বিষয়ে অনুমান এবং বিচার বা বিবেচনা করে কোনো বিষয়ের সমাধান বা মীমাংসা করা যায়, কিন্তু অদৃশ্য জগতের বিষয়ে কোনো কিছু মন্তব্য করা যায় না।
তদ্রূপ কবরের অবস্থা হলো অদৃশ্য জগতের বিষয়। তাই ইন্দ্রিয় দ্বারা এই জগতের জ্ঞান লাভ করা যায় না। আর যদি এই জগতের জ্ঞান ইন্দ্রিয়ের দ্বারা উপলব্ধি করা হতো, তাহলে অদৃশ্যের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করার বিষয়টি অকেজো হয়ে যেতো। এবং প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক কর্ম সম্পাদন করার কোনো দায়িত্ব থাকতো না বা প্রয়োজন হতো না। আর কোনো মানুষ কোনো মৃত মানুষকে দাফন করতো না। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "لولا أن لا تَدافَنوا لدعوت الله أن يسمعكم من عذاب القبر" (مسلم 2868، النسائي 2058). অর্থ: “তোমরা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা বর্জন করবে, এই আশংকা আমার না হলে আমি আল্লাহর নিকটে দোয়া করতাম: তিনি যেন তোমাদেরকেও কবরের শাস্তি শুনিয়ে দেন”। মুসলিম ২৮৬৮, আন-নাসাঈ ২০৫৮)। এবং যেহেতু পশুদের প্রতি এই বিষয়টি প্রযোজ্য নয়। তাই সমস্ত পশু কবরের শাস্তি শুনতে পায় এবং বুঝতে পারে। যেহেতু আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "إِنَّهُمْ يُعَذَّبُونَ عَذَابًا تَسْمَعُهُ الْبَهَائِمُ" (البخاري 6366، ومسلم 586). অর্থ: “তাদেরকে কবরে শাস্তি দেওয়া হয় এবং সেই কবরের শাস্তি সকল চতুষ্পদ জীবজন্তু শুনতে পায়”। (বুখারি 6366, মুসলিম 586) .
পরকালের শেষ দিবসে পুনরায় পুনরুত্থিত হওয়ার প্রমাণ কুরআন থেকে:
-মরণের পর পরকালের শেষ দিবসে পুনরায় পুনরুত্থিত হওয়ার প্রমাণ কুরআনের মধ্যে অনেক রয়েছে। সেই সমস্ত প্রমানের মধ্যে রয়েছে:
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ প্রথমে মানুষকে নতুনভাবে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যিনি প্রথমে মানুষকে নতুনভাবে সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখেন, তিনি পুনরায় তাকে পুনরুত্থিত করার জন্য জীবিত করতে অক্ষম বা অপারক নন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَهُوَ الَّذِي يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُه) (الروم: 27). ভাবার্থের অনুবাদ: “প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ প্রথমে শূন্য থেকে জীবন সৃষ্টি করেছেন। আবার মরণের পর তিনি পুনরায় সৃষ্টি করবেন পুনরুত্থিত করার জন্য”। ( সূরা রুম: 27)। এবং মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে ওই সমস্ত লোকের কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন, যারা মনে পোষণ করতো যে, যে হাড় পচে গিয়েছে বা গলে গিয়েছে, সেই হাড়কে আবার কে জীবিত করবে? তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন: (قُلْ يُحْيِيهَا الَّذِي أَنْشَأَهَا أَوَّلَ مَرَّةٍ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيمٌ) (يس: 79). ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বার্তাবহ রাসূল মুহাম্মাদ! তুমি বলে দাও! যিনি প্রথমবার সেই হাড়গুলিকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই পুনরায় জীবিত করবেন। তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত”। (সূরা ইয়াসীন: ৭৯)।
পৃথিবীর মধ্যে মৃত্তিকা হয় মৃত ও নিষ্প্রাণ। তাতে থাকে না কোনো সবুজ বৃক্ষ। তাই সেই মৃত্তিকার উপরে বৃষ্টিপাত হয় এবং তা সবুজ ও আনন্দময় হয় আর তাতে সব ধরণের অতি সুন্দর উদ্ভিদ উদ্ভূত হয়। সুতরাং যিনি পৃথিবীর মৃত ও নিষ্প্রাণ মৃত্তিকাকে জীবিত করতে পারেন, তিনি মৃত ব্যক্তিকে পুনরায় জীবিত করতে পারেন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَنَزَّلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً مُبَارَكًا فَأَنْبَتْنَا بِهِ جَنَّاتٍ وَحَبَّ الْحَصِيدِ • وَالنَّخْلَ بَاسِقَاتٍ لَهَا طَلْعٌ نَضِيدٌ • رِزْقًا لِلْعِبَادِ وَأَحْيَيْنَا بِهِ بَلْدَةً مَيْتًا كَذَلِكَ الْخُرُوجُ) (ق: 9-11). ভাবার্থের অনুবাদ: “আমি আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টি বর্ষণ করি। আর তা দিয়ে সৃজন করি বাগান, শস্যক্ষেত, উঁচু খেজুর গাছ, যাতে থাকে কাঁদি কাঁদি খেজুর। এই সমস্ত আমার বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ। এবং বৃষ্টি দ্বারা আমি মৃত জনপদকে সঞ্জীবিত করি। এমনিভাবে পরকালে মানুষের পুনরুত্থান ঘটবে”। (সূরা কাফ: 9-11)।
সমস্ত ন্যায়পরায়ণ ও বুদ্ধিমান মানুষ জানে যে, যে সত্তা বড়ো কাজ করতে পারে, সে সত্তা ছোটো কাজ আরো সহজে করতে পারে। আর প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ সমস্ত আসমান, জমিন এবং আশ্চার্যজনক চমৎকার বড়ো বড়ো কক্ষপথ সৃষ্টি করেছেন। অতএব তিনি ওই সমস্ত হাড়কে জীবিত করতে আরো অনেক বেশি ক্শমতা রাখেন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (أَوَلَيْسَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِقَادِرٍ عَلَى أَنْ يَخْلُقَ مِثْلَهُمْ بَلَى وَهُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيم) (يس: 81). ভাবার্থের অনুবাদ: “যিনি সমস্ত আসমান ও জমিনকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি কী মৃতদেরকে আবার নতুনভাবে জীবিত করে সৃষ্টি করতে পারবেন না? হাঁ! অবশ্যই পারবেন। তিনি মহান স্রষ্টা, সর্বজ্ঞ”। (সূরা ইয়াসীন: ৮১)।
পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপনের সুফল:
১। পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন মুসলিম ব্যক্তির জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং তার জীবনের সমস্ত আচরণ সুশৃঙ্খলভাবে সজ্জিত ও সুবিন্যস্ত হয়। আর সে সর্বদা সৎ কর্মে এবং আল্লাহকে মেনে চলার বিষয়ে সজাগ ও তৎপর থাকে এবং সে ঘৃণিত আচরণ ও অসৎ চরিত্র থেকে নিজেকে পবিত্র রাখে। তাই পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপনের সাথে এবং সৎ কর্মের সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ آَمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِر) (التوبة: 18) ভাবার্থের অনুবাদ: “নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মাসজিদ আবাদ করবে যারা ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করেছে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের শেষ দিবসের প্রতি”। (সূরা তওবা: 18)। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন: (وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْآَخِرَةِ يُؤْمِنُونَ بِهِ وَهُمْ عَلَى صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُون) (الأنعام: 92). ভাবার্থের অনুবাদ: “পরকালের শেষ দিবসের প্রতি যারা ইমান বা বিশ্বাস রাখে, তারাই পবিত্র কুরআনের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস রাখে এবং তারা তাদের নামাজ প্রতিষ্ঠিত করার প্রতি যত্নবান হয়”। (সূরা আনআম: 92)।
২। মহান আল্লাহর আনুগত্যের কাজে এবং সৎ কর্মে প্রতিযোগিতা ত্যাগ করে যারা পার্থিব জীবনের বিষয়ে এবং তার মোহে নিমজ্জিত হয়েছে, তাদেরকে অতি অল্পকাল বা ক্ষণস্থায়ী জীবনের বিষয়ে সতর্ক করা হয়। আর তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, পরকালের জীবন হলো চিরস্থায়ীর জীবন। আর প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে কতকগুলি বার্তাবহ রাসূলের সৎ কর্মের কথা উল্লেখ করেছেন এবং তাঁদের প্রশংসা করেছেন এই জন্য যে, তাঁরা পরকালের শেষ দিবসকে স্মরণ করতেন এবং সেই দিবসে সুখময় জীবন লাভের জন্য এবং সেই দিবসে উপস্থিত হওয়ার জন্য সৎ কর্ম করতেন। সুতরাং মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (إِنَّا أَخْلَصْنَاهُمْ بِخَالِصَةٍ ذِكْرَى الدَّار) (ص: 46) ভাবার্থের অনুবাদ: “আমি আমার বার্তাবহ রাসূলগণকে পরকালের শেষ দিবসের স্মরণে মগ্ন থাকার জন্য এবং সেই দিবসের মঙ্গল লাভের জন্য সৎ কর্মে নিয়োজিত থাকার নিমিত্তে মনোনীত করেছি”। (সূরা সদ: ৪৬)। তাঁরা পরকালের শেষ দিবসকে স্মরণ করতেন এবং সেই দিবসে সুখময় জীবন লাভের জন্য সৎ কর্ম করতেন। এটাই ছিলো তাদের বৈশিষ্ট্য।
আর যখন কতকগুলি মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ পালনে অলসতা করেছিলো, তখন মহান আল্লাহ তাদেরকে সতর্ক করে বলেছিলেন: (أَرَضِيتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآَخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآَخِرَةِ إِلَّا قَلِيل) (التوبة: 38). ভাবার্থের অনুবাদ: হে মুসলিম সমাজ! তোমরা কি পরকালের শেষ দিবসের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে সন্তুষ্ট ও আনন্দিত হয়েছো? অথচ পরকালের শেষ দিবসের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প”। (সূরা তওবা: ৩৮)। সুতরাং মানুষ যখন পরকালের শেষ দিবসের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করবে, তখন সে নিঃসন্দেহে ও নিশ্চিতভাবে জানতে পারবে যে, এই দুনিয়ার সুখ আখেরাতের সুখের তুলনায় কিছুই নয়। এবং জাহান্নামের শাস্তির একটি ঝলক বা একটি স্পর্শ এই দুনিয়ার সমস্ত সুখ ভোগের সাথেও তুলনা করা যায় না। আর আল্লাহর কারণে দুনিয়ার শাস্তি আখেরাতের শাস্তির সামনেও কিছু তুলনা করা যায় না। এবং দুনিয়ার সমস্ত শাস্তি আখেরাতের সুখের একটি ঝলক বা একটি স্পর্শের তুলনায় কিছুই নয়।
৩। অন্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়া। সুতরাং জেনে রাখতে হবে যে, ন্যায্য হক বা ন্যায্য অধিকার নষ্ট হওয়ার নয়। তাই কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে অন্যায়ভাবে বিন্দুমাত্র বা পরমাণু পরিমাণ কিছু নিলে, কিয়ামতের দিন জরুরি প্রয়োজনের সময় তার কাছ থেকে তা পাওয়া যাবে। অতএব যে ব্যক্তি জানে যে, তার ন্যায্য হক বা ন্যায্য অধিকার কিয়ামতের দিন জরুরি প্রয়োজনের সময় বিপজ্জনক মুহূর্তে অবশ্যই সে পাবে, তাহলে সে কীভাবে দুঃখিত হবে? আর যে ব্যক্তি জানে যে, তার মধ্যে এবং তার দুশমনের মধ্যে ফয়সালা করবেন প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ যিনি শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো মহিমান্বিত শাসক?