শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় হজ্জের অর্থ ও তার মর্যাদা।

হজ্জের অর্থ: আল্লাহর নৈকট্য লাভেরর উদ্দেশ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ে হজ্জের নির্ধারিত কর্ম সম্পাদন করার উদ্দেশ্যে মক্কায় গমন করা।

:

  • হজ্জের অর্থ জানা।
  • হজ্জ ওয়াজিব বা অপরিহার্য হওয়ার শর্তাবলির জ্ঞান লাভ করা।
  • হজ্জের মর্যাদার জ্ঞান লাভ করা।

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

হজ্জের অর্থ

হজ্জ হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবায় যাওয়া এবং বিশেষভাবে ‎সেখানে উপাসানা ‎করা। আর তা হলো এমন কতকগুলি কাজ এবং বাক্য যে, সেই সব ‎কাজ এবং বাক্য ‎আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] এর কাছ ‎থেকে এসেছে, যেমন:- ইহরাম বাঁধা, সাত চক্কর দেওয়ার মাধ্যমে ‎পুরো এক তাওয়াফ সম্পন্ন করা, সাফা ও মারওয়া দুই পাহারের মাঝে সাঈ করা, ‎আরাফায় অবস্থান করা এবং জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা ইত্যাদি। এই হজ্জ পালনের ‎মাধ্যমে মুসলিম সমাজের জন্য অনেক উপকার ও কল্যাণ হয়ে থাকে। আর সেই সব ‎উপকার ও কল্যাণের মধ্যে রয়েছে: মহান আল্লাহর একত্ব বা তাওহীদ প্রতিষ্ঠিত হয়, ‎হজ্জ পালনকারীদের মহা ক্ষমা লাভ হয়, মুসলিম সমাজের মানুষের মধ্যে পরিচয় হয় ‎এবং প্রকৃত ইসলাম ধর্মের বিধিবিধান জানা হয় ইত্যাদি। ‎

হজ্জের বিধান

হজ্জ হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভ। আর হজ্জ সক্ষম মুসলিম নারী ও পুরুষের ‎জীবনে একবার ফরজ বা অপরিহার্য কর্তব্য হিসেবে নির্ধারিত করা হয়েছে। যেহেতু ‎মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏(وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلًا)، سورة آل عمران، جزء من الآية 97. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “ওই সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহর জন্য কাবাঘরের হজ্জ পালন করা ‎একটি অপরিহার্য কর্তব্য হিসেবে নির্ধারিত করা হয়েছে, যারা সেই স্থানে যাওয়ার ‎সামর্থ্য রাখে”। ‎ ‎(সূরা আল ইমরান, আয়াত নং ৯৭ এর অংশবিশেষ)।

আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহ আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা আল্লাহর ‎বার্তাবহ ‎রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর প্রদত্ত ‎অভিভাষণের সময় ‎বা বক্তৃতা দেওয়ার সময় বলেছিলেন: “হে মুসলিম সমাজের মানব ‎সকল! মহান আল্লাহ ‎তোমাদের উপর হজ্জ ফরজ করে দিয়েছেন। তাই তোমরা হজ্জ ‎পালন করো”। তখন ‎একজন সাহাবী আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎কে এইভাবে প্রশ্ন ‎করেছিলেন: হে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল! হজ্জ কী প্রত্যেক বছর ‎করতে হবে? তিনি ‎চুপ ছিলেন। তাই প্রশ্নকারী প্রশ্নটি তিন বার করেছিলেন। তখন ‎আল্লাহর বার্তাবহ ‎রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার প্রশ্নের ‎উত্তরে ‎বলেছিলেন: “যদি আমি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা ফরজ হয়ে যেত। আর তোমরা ‎তা ‎পালন করতে পারতে না”। (মুসলিম) 1337)।

ক্ষমতা বা সামর্থ্য থাকলে মুসলিম ব্যক্তির প্রতি হজ্জ পালন করার জন্য তাড়াতাড়ি করা ‎ওয়জিব বা অপরিহার্য। ‎

হজ্জ পালন করার সময়

হজ্জ পালন করার সময় ও স্থান:‎

হজ্জ পালন করার সময়

হজ্জ পালনের জন্য নির্ধারিত কয়েকটি মাস রয়েছে। অতএব সেই সব মাসের সময় ‎ছাড়া অন্য সময়ে হজ্জ পালনের জন্য ইহরাম বাঁধা জায়েজ নয়। আর সেই সব মাস ‎হলো: শাওয়াল, জুলকাদা এবং জুলহিজ্জা। আর ইসলামী ক্যালেন্ডারের হিজরি সন ‎মোতাবেক জুলহিজ্জা মাসের অষ্টম তারিখ থেকে তেরো তারিখ পর্যন্ত হজ্জ পালনের ‎গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদিত হয়ে থাকে। ‎

হজ্জ পালন করার স্থানসমূহ:‎

হজ্জ পালন করার স্থানসমূহ হলো এমন নির্ধারিত জায়গা যে, যে হজ্জ পালনকারী বা ‎যে ওমরা পালনকারীর বাহির থেকে আসবে, তার জন্য ইহরামের ‎নিয়ত ছাড়া সেই ‎জায়গা অতিক্রম করা জায়েজ হবে না। সুতরাং মদীনার লোকদের জন্য মীকাত হলো ‎জুল হুলায়ফা। শাম দেশের লোকদের জন্য মীকাত হলো জুহফা। নজদ এলাকার ‎লোকদের জন্য মীকাত হলো কারনুল মানাজেল। ইয়েমেনের লোকদের জন্য মীকাত ‎হলো ইয়ালামলাম। এবং ইরাকের লোকদের জন্য মীকাত হলো জাতু ইরক। এই সব ‎মীকাত হলো এই সমস্ত মীকাতের এলাকার লোকদের হজ্জ পালন করার জন্য এবং ‎ওমরা পালন করার জন্য। আর অন্য এলাকা থেকে যারা হজ্জ বা ওমরা পালন করার ‎জন্য এই সব মীকাতকে অতিক্রম করবে, তাদেরও জন্য হলো ইহরাম বাঁধার এইগুলি ‎মীকাত। এই সব মীকাতের স্থানগুলি অভিজ্ঞ লোকের মাধ্য এবং আধুনিক মানচিত্র দ্বারা ‎জোনা যাবে।

হজ্জ অপরিহার্য হওয়ার শর্তাবলি

١
মুসলিম হওয়া।
٢
বুদ্ধিমান হওয়া।
٣
সাবালক বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।
٤
স্বাধীন মানুষ হওয়া।
٥
শারীরিক ও আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষমতাবান হওয়া। ‎
٦
মহিলাদের জন্য ‎মাহরাম থাকা।

প্রথম শর্ত হলো মুসলিম হওয়া:‎

মুসলিম ব্যক্তির প্রতি হজ্জ ওয়াজিব বা অপরিহার্য হয়। আর অমুসলিম ব্যক্তির প্রতি ‎হজ্জ ওয়াজিব বা অপরিহার্য হয় না এবং সে হজ্জ পালন করলে তার হজ্জ সঠিক বলে ‎বিবেচিত হবে না। যেহেতু প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক যে কোনো ইবাদত বা ‎উপাসনা সঠিক হওয়ার শর্ত হলো এই যে, সেই ইবাদত বা উপাসনা মুসলিম ব্যক্তির ‎দ্বারা সম্পাদিত হতে হবে। ‎

দ্বিতীয় শর্ত হলো বুদ্ধিমান বা জ্ঞানী ব্যক্তি হওয়া:‎

উন্মাদ বা পাগল মানুষের প্রতি হজ্জ ওয়াজিব বা অপরিহার্য হয় না এবং সে হজ্জ পালন ‎করলে তার হজ্জ সঠিক বলে বিবেচিত হবে না। যেহেতু প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা ‎মোতাবেক বুদ্ধিমান বা জ্ঞানী ব্যক্তির প্রতি হজ্জ ওয়াজিব বা অপরিহার্য হয় এবং ‎বুদ্ধিমান বা জ্ঞানী ব্যক্তির দ্বারা হজ্জ পালন করা হলে, সেই হজ্জ সঠিক বলে বিবেচিত ‎হবে। যেহেতু এই বিষয়ে আলী [রাদিয়াল্লাহ আনহু] থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি ‎বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: ‎ ‏« رفع القلم عن ثلاثة: عن النائم حتى يستيقظ، وعن الصبي حتى يحتلم، وعن المجنون حتى يعقل ‏‏» (أبو داود 4403).‏ অর্থ: “তিন প্রকারের মানুষ আল্লাহর বিধান পরিপালনে আদিষ্ট হয়নি: ঘুমন্ত মানুষ ‎যতক্ষণ পর্যন্ত সে জাগ্রত না হবে, অপ্রাপ্তবয়স্ক নাবালক শিশু যতক্ষণ পর্যন্ত সে ‎প্রাপ্তবয়স্ক বা সাবালক না হবে এবং পাগল মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত সে বুদ্ধিমান বা জ্ঞানী ‎না হবে”। (আবু দাউদ 4403)।

তৃতীয় শর্ত হলো প্রাপ্তবয়স্ক বা সাবালক ব্যক্তি হওয়া:‎

অপ্রাপ্তবয়স্ক নাবালক শিশুর প্রতি হজ্জ ওয়াজিব বা অপরিহার্য হয় না। যেহেতু এই ‎বিষয়ে আলী [রাদিয়াল্লাহ আনহু] থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন: আল্লাহর ‎রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: ‎ ‏« رفع القلم عن ثلاثة: عن النائم حتى يستيقظ، وعن الصبي حتى يحتلم، وعن المجنون حتى يعقل ‏‏» (أبو داود 4403).‏ অর্থ: “তিন প্রকারের মানুষ আল্লাহর বিধান পরিপালনে আদিষ্ট হয়নি: ঘুমন্ত মানুষ ‎যতক্ষণ পর্যন্ত সে জাগ্রত না হবে, অপ্রাপ্তবয়স্ক নাবালক শিশু যতক্ষণ পর্যন্ত সে ‎প্রাপ্তবয়স্ক বা সাবালক না হবে এবং পাগল মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত সে বুদ্ধিমান বা জ্ঞানী ‎না হবে”। (আবু দাউদ 4403)।

যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক নাবালক শিশু হজ্জ পালন করে, তাহলে তার হজ্জ সঠিক বলে ‎বিবেচিত হবে। তবে তার সেই হজ্জ প্রকৃত ইসলামের ওয়াজিব বা অপরিহার্য হজ্জ ‎বলে ধরা হবে না। যেহেতু আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎ ‏"إذا حج الصبي فهي له حجة حتى يعقل، وإذا عقل فعليه حجة أخرى" (مستدرك الحاكم 1769).‏ ‎“যখন কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক নাবালক শিশু হজ্জ পালন করবে, তখন তার সেই হজ্জ ‎সঠিক বলে পরিগণিত হবে প্রাপ্তবয়স্ক বা সাবালক ও বুদ্ধিমান অথবা জ্ঞানী হওয়া ‎পর্যন্ত। অতঃপর সে যখন প্রাপ্তবয়স্ক বা সাবালক ও বুদ্ধিমান অথবা জ্ঞানী হয়ে যাবে, ‎তখন সে হজ্জ পালন করার সামর্থ্য লাভ করলে তাকে অবশ্যই আরেকটি প্রকৃত ‎ইসলামের হজ্জ পালন করতে হবে”। (মুসতাদরাক আল-হাকিম 1769)।

চতুর্থ শর্ত হলো স্বাধীন ব্যক্তি হওয়া:‎

ক্রীতদাসের প্রতি হজ্জ ওয়াজিব বা অপরিহার্য হয় না। যেহেতু সে ক্ষমাপ্রাপ্ত ব্যক্তি তার ‎মালিক বা মনিবের সেবায় ব্যস্ত থাকার কারণে। তবে ক্রীতদাস যদি তার মনিবের ‎অনুমতিক্রমে হজ্জ পালন করে, তাহলে তার হজ্জ সঠিক বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু ‎তার সেই হজ্জ প্রকৃত ইসলামের ওয়াজিব বা অপরিহার্য হজ্জ বলে ধরা হবে না। ‎যেহেতু আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। ‎ তিনি বলেন: আল্লাহর ‎রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎ ‏"وَأَيُّمَا عَبْدٍ حَجَّ ثُمَّ أُعْتِقَ فَعَلَيْهِ حَجَّةٌ أُخْرَى" السنن الكبرى للبيهقي (8613).‏ অর্থ: “কোনো ক্রীতদাস হজ্জ পালন করার পর যখন যে স্বাধীন ব্যক্তি হয়ে যাবে, তখন ‎স্বাধীন ব্যক্তি হওয়ার পর সে হজ্জ পালন করার সামর্থ্য লাভ করলে তাকে অবশ্যই ‎আরেকটি প্রকৃত ইসলামের হজ্জ পালন করতে হবে”। ‎(আল-বায়হাকীর রচিত সুনান কুবরা (8613) ।

পঞ্চম শর্ত হলো শারীরিক ও আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষমতাবান হওয়া বা সামর্থ্য থাকা:‎

যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে বা ক্ষমতাবান ব্যক্তির প্রতি হজ্জ ওয়াজিব বা অপরিহার্য হয়। ‎ক্ষমতাবান ব্যক্তি হলো সেই ব্যক্তি যার শরীর সুস্থ ও সফর করতে সক্ষম এবং সে হজ্জ ‎পালন করার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ, সরঞ্জাম বা উপকরণ ও যানবাহনের মালিক ‎হবে। আর মহিলার হজ্জ পালন করার জন্য তার প্রয়োজনীয় সম্পদ, সরঞ্জাম বা ‎উপকরণ ও যানবাহনের সঙ্গে সঙ্গে তার সফরে তার মাহরাম থাকাও হলো হজ্জ পালন ‎করার সামর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। যেহেতু মহিলার জন্য মাহরাম ব্যতীত হজ্জ বা অন্য ‎কারণে সফর করা জায়েজ নয়। ‎

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏(وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلًا)، سورة آل ‏عمران، جزء من الآية 97. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “ওই সমস্ত মানুষের প্রতি ‎আল্লাহর জন্য কাবাঘরের হজ্জ পালন করা একটি ‎অপরিহার্য কর্তব্য হিসেবে নির্ধারিত করা হয়েছে, ‎যারা সেই স্থানে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে”। ‎ ‎(সূরা আল ইমরান, আয়াত নং ৯৭ এর ‎অংশবিশেষ)।

আর যে ব্যক্তির আর্থিক ক্ষমতা বা সামর্থ্য আছে কিন্তু স্থায়ী রোগের কারণে বা ‎বার্ধক্যের কারণে তার শারীরিক ক্ষমতা বা সামর্থ্য নেই। সে ব্যক্তি অন্য কোনো লোককে ‎তার নিজের পক্ষ থেকে হজ্জ পালন করার জন্য দায়িত্ব প্রদান করবেন। যেহেতু ‎আলফাদল বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: কোনো এক ‎ব্যক্তি আল্লাহর নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে জিজ্ঞাসা করেছিলো এবং ‎বলেছিলো: হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং তিনি ‎এমন একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি যে যানবাহনের উপরে দৃঢ়ভাবে তাঁর বসার সামর্থ্য বা ক্ষমতা ‎নেই। সুতরাং আমি কী তাঁর পক্ষ থেকে হজ্জ পালন করেতে পারবো? আল্লাহর ‎বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার উত্তরে বললেন:‎ ‏" أرأيت لو كان عليه دين، فقضيته عنه، أكان يجزيه؟ " قال: نعم، قال: " فاحجج عن أبيك " ‏‏(مسند أحمد 1812).‏ অর্থ: “তুমি আমাকে বলো! যদি তাঁর উপরে ঋণ থাকতো, আর তুমি সেই ঋণ ‎পরিশোধ করতে, তাহলে কী সেই ঋণ পরিশোধ করা হতো? সে বললো: হ্যাঁ! ‎পরিশোধ হতো। তিনি বললেন: “তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে তুমি হজ্জ পালন ‎করো”। ‎ ‎(মুসনাদ, আহমদ 1812)।

হজ্জ পালন করার জন্য মুসলিম ব্যক্তির ক্ষমতা বা সামর্থ্যের কতকগুলি অবস্থা: ‎

١
কোনো কোনো মুসলিম ব্যক্তি নিজেই হজ্জ পালন করার ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ ‎স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত কষ্ট ছাড়াই সে স্বয়ং পবিত্র কাবা ঘর পৌঁছাতে সক্ষম। ‎এবং তার জন্য তার কাছে প্রয়োজনীয় সম্পদ, সরঞ্জাম বা উপকরণ ও যানবাহনের ‎ব্যবস্থা রয়েছে। সুতরাং এই অবস্থায় তার জন্য স্বয়ং হজ্জ পালন করা অপরিহার্য।
٢
কোনো কোনো মুসলিম ব্যক্তি নিজে হজ্জ পালন করার ক্ষমতা রাখেনা। তবে অন্য ‎ব্যক্তির মাধ্যমে সে হজ্জ পালন করার ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ রোগের কারণে বা বার্ধক্যের ‎কারণে সে স্বয়ং হজ্জ পালন করার ক্ষমতা রাখেনা। তবে সে অন্য লোককে তার পক্ষ ‎থেকে হজ্জ পালন করার জন্য পেয়ে যাবে এবং তাকে তার পক্ষ থেকে হজ্জ পালন ‎করার জন্য অর্থ বা সম্পদ প্রদান করতে পারবে। এই অবস্থায় তার জন্য অন্য লোককে ‎তার পক্ষ থেকে হজ্জ পালন করার জন্য অর্থ বা সম্পদ প্রদান করা অপরিহার্য।
٣
কোনো কোনো মুসলিম ব্যক্তি নিজে হজ্জ পালন করার ক্ষমতা রাখেনা। এবং অন্য ‎ব্যক্তির মাধ্যমেও সে হজ্জ পালন করার ক্ষমতা রাখেনা। এই ধরণের লোকের প্রতি ‎হজ্জ পালন করা অপরিহার্য নয়। যেহেতু সে হজ্জ পালন করার কোনো ক্ষমতাই ‎রাখেনা। যেমন কোনো মুসলিম ব্যক্তির কাছে তার নিজের ও তার পরিবারের ‎প্রয়োজনের বেশি অর্থ বা সম্পদ নেই হজ্জ পালন করার জন্য। এই অবস্থায় হজ্জ ‎পালন করার উদ্দেশ্যে অর্থ বা সম্পদ সংগ্রহ করা জরুরি নয়। তবে সে যখন হজ্জ ‎পালন করার ক্ষমতা লাভ করতে পারবে, তখন তার প্রতি হজ্জ পালন করা অপরিহার্য ‎হয়ে যাবে। ‎

ষষ্ঠ শর্ত হলো সফরে মহিলার সাথে তার মাহরাম থাকা:‎

মহিলার প্রতি হজ্জ পালন করা অপরিহার্য হওয়ার একটি শর্ত হলো তার সাথে তার ‎মাহরাম থাকা। তাই মহিলার একজন মাহরাম না থাকলে তার প্রতি হজ্জ পালন করা ‎অপরিহার্য হবে না। ‎ মহিলার মাহরাম হলো তার নিজের স্বামী। অথবা যার সাথে তার বিবাহ চিরকাল অবৈধ ‎থাকে, যেমন:- পিতা, পিতামহ, পুত্র, পুত্রের পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র বা ভাইয়ের ছেলে, ‎বাপের ভাই বা চাচা কিংবা কাকা ও মামা।

তবে কোনো মহিলা যদি নিরাপদ অবস্থায় বা নিরাপত্তার সহিত মাহরাম ছাড়া হজ্জ ‎পালন করে থাকে, তাহলে তার হজ্জ সঠিক ও যথেষ্ট বলে বিবেচিত ও ‎পরিগণিত হবে। কিন্তু মাহরাম ছাড়া হজ্জ পালন করার জন্য অন্য দিকে তার গুনা ‎হবে। ‎

হজ্জ পালন করার কতকগুলি মর্যাদা

হজ্জ পালন করার অনেক মর্যাদা ও মঙ্গলময় পরিণতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আর ‎সেই মর্যাদা ও মঙ্গলময় পরিণতির মধ্যে রয়েছে:‎

১। সর্বোত্তম কর্মের মধ্যে একটি কর্ম হলো হজ্জ পালন করা

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: সর্বোত্তম কর্ম কোনটি? তিনি বলেছিলেন: ‎‎“আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা”। আবার ‎জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: তারপর কোনটি? তিনি বলেছিলেন: “আল্লাহর পথে ‎জিহাদ করা”। আবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: অতঃপর কোনটি? তিনি ‎বলেছিলেন: “গ্রহণযোগ্য হজ্জ”। (বুখারি 1519 মুসলিম 83)।

২। ক্ষমা লাভের একটি মহা মৌসুম

আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎ ‏"مَنْ حَجَّ لله؛ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ؛ رَجَعَ كيوَمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ".‏ ‏(صحيح البخاري، رقم الحديث 1521، واللفظ له، وصحيح مسلم, رقم الحديث 438- ‏‏(1350)، ). ‏ অর্থ: “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি‏ ‏লাভের উদ্দেশ্যে হজ্জ পালন করবে এবং তাতে ‎যৌনমিলন অথবা স্ত্রী-পুরুষের সংগমসম্বন্ধীয় ক্রীড়া ও অপকর্ম হতে নিজেকে রক্ষা ‎করবে, সে ব্যক্তি হজ্জ পালনের পর এমন পবিত্র অবস্থায় ফিরে আসবে যে, তার মাতা ‎যেন তাকে সেই দিনই নবজাত পবিত্র শিশুরূপে প্রসব করলো”। সুতরাং সে নবজাত ‎শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে গেলো। ‎(সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1521 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 438-(1350), তবে ‎হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে)। ‎ সে যেন এখনই তার সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়েছে আর নবজাত পবিত্র শিশুরূপে জন্ম ‎গ্রহণ করেছে।

৩। জাহান্নামের বা নরকের আগুন থেকে মুক্তি লাভের মহাসুযোগ

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎বলেছেন: “আরাফার দিনে যতো মানুষকে মহান আল্লাহ জাহান্নামের বা ‎নরকের আগুন থেকে মুক্ত করেন, ততো মানুষকে অন্য কোনো দিনে ‎জাহান্নামের বা নরকের আগুন থেকে তিনি মুক্ত করেন না”। (মুসলিম ‎‎1348)।

৪। হজ্জ পালনের পুরস্কার হলো জান্নাত লাভ

আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন:‎ ‏"وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ".‏ ‏(صحيح البخاري, رقم الحديث 1773, وأيضاً صحيح مسلم, رقم الحديث 437- (1349), ‏واللفظ للبخاري).‏ অর্থ: “এবং সঠিক ও বিশুদ্ধ হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয় ”। ‎[সহীহ বুখারী, হাদীস নং 1773 এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং 437 -(1349), তবে হাদীসের শব্দগুলি ‎সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]। হজ্জ পালনের এই সব পুরস্কার এবং অন্যান্য মর্যাদা কেবলমাত্র তার জন্য যার ‎নিয়ত ও উদ্দেশ্য সত্য ও ভালো হবে আর যার হৃদয় পরিশুদ্ধ হবে এবং ‎আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অনুসরণ ঠিক হবে।

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন