শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় শিরোনাম: পবিত্র কুরআনের সংজ্ঞা

বিবরণ: মানুষ যেন পবিত্র কুরআনের বিষয়ে সঠিক ধারণা পোষণ করতে পারে এবং তার শব্দগুলির সঠিক ব্যাখ্যা বা তাফসীর জানার পদ্ধতি বুঝতে পারে।

উদ্দেশ্য হলো: *পবিত্র কুরআনের মর্যাদার বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা।*পবিত্র কুরআনের অংশ এবং সূরার আলাদা আলাদা জ্ঞান লাভ করা।*পবিত্র কুরআনের মোজেজা বা অলৌকিক বিষয়গুলিরতথ্যানুসন্ধান করা।*পবিত্র কুরআনের মৌলিক বিষয়গুলির জ্ঞান লাভ করা।*পবিত্র কুরআনের যে কোনো শব্দের সঠিক ভাবার্থ জানার ক্ষমতা লাভ করা। 

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

পবিত্র কুরআন

প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তাঁর সর্বপ্রধান, সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নাবী ও বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছেন; সকল জাতির মানব সমাজকে অন্ধকার হতে জ্যোতির দিকে নিয়ে আসার জন্য। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ * يَهْدِي بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ)، سورة المائدة، الآية 15-16. ভাবার্থের অনুবাদ: “অবশ্যই তোমাদের কাছে আমার বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ ও প্রকৃত ইসলাম ধর্ম এসেছে এবং এসেছে প্রয়োজনীয় সমস্ত বিধিবিধানসহ ঐশীবাণীর পবিত্র গ্রন্থ উজ্জ্বল কুরআন। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ সেই পবিত্র গ্রন্থ উজ্জ্বল কুরআনের দ্বারা তাদেরকে শান্তি ও সাফল্যের পথে পরিচালিত করেন, যারা তাঁর সন্তুষ্টি লাভের পথ অবলম্বন করে। আর তিনি তাদেরকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক সুপথগামী করার জন্য পাপের অন্ধকার থেকে পুণ্যের উজ্জ্বল পথে পরিচালিত করেন এবং তাদেরকে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের প্রতি সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। সুতরাং তাদের জীবন হয় সুখশান্তিতে পূর্ণ”। (সূরা আল মায়েদা, আয়াত নং ১৫-১৬)।

পবিত্র কুরআনের সংজ্ঞা

পবিত্র কুরআনের সংজ্ঞা: পবিত্র কুরআন হলো প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পবিত্র বাণী। এই পবিত্র বাণী বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে। এই পবিত্র বাণী পাঠ করার মাধ্যমে সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর উপাসনা করা হয়।

পবিত্র কুরআনের অনেক নাম রয়েছে। সেই নামগুলির দ্বারা পবিত্র কুরআনের মহা মান ও মর্যাদা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়। সেই নামগুলির মধ্যে রয়েছে:

١
আল কুরআন: মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (إِنَّ هَٰذَا الْقُرْآنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ أَقْوَمُ)، سورة الإسراء، جزء من الآية 9. ভাবার্থের অনুবাদ: “নিশ্চয় এই পবিত্র কুরআন সকল জাতির মানব সমাজকে তাদের সর্ব প্রকারের কল্যাণময় জীবনযাপনের অধিকতর সাফল্যের সর্বশ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শন করে”। (সূরা আল ইসরা ( বানী ইসরাইল), আয়াত নং ৯ এর অংশবিশেষ)।
٢
আল কিতাব: মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيْهِ)، سورة البقرة، جزء من الآية 1. ভাবার্থের অনুবাদ: “এটি হলো সেই পবিত্র গ্রন্থ কুরআন, যা আল কিতাব নামে পরিচিত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ১ এর অংশবিশেষ)।
٣
আল ফুরকান: মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَىٰ عَبْدِهِ)، سورة الفرقان، جزء من الآية 1. ভাবার্থের অনুবাদ: “প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ এমন কল্যাণদায়ক যে, তিনিই পবিত্র গ্রন্থ কুরআনকে আল ফুরকান নামে তাঁর দাস বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি অবতীর্ণ করেছেন”। (সূরা আল ফুরকান, আয়াত নং ১ এর অংশবিশেষ)।
٤
আজ্জিকর: মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُوْنَ)، سورة الحجر، الآية 9. ভাবার্থের অনুবাদ: “নিশ্চয় আমি এই পবিত্র কুরআনকে আজ্জিকর নামে অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছি”। (সূরা আল হিজর, আয়াত নং ৯)।

পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার বিবরণ

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সর্বপ্রথমে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে রমাজান মাসের শবে কাদার বা লাইলাতুল কাদারের পবিত্র রজনীতে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ)، سورة القدر، الآية 1. ভাবার্থের অনুবাদ: “আমি এই পবিত্র কুরআনকে অবতীর্ণ করেছি পবিত্র রজনী লায়লাতুল কাদারে”। (সূরা আল কাদর, আয়াত নং ১)। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন: (شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدىً لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ)، سورة البقرة، جزء من الآية 185. ভাবার্থের অনুবাদ: “রমাজান মাস হলো সেই মাস, যেই মাসে সকল জাতির মানব সমাজের জন্য প্রকৃত ইসলাম ধর্মের দিক প্রদর্শনকারী পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। আর পবিত্র কুরআন হলো সুখময় ও আনন্দময় জীবন লাভের পথপ্রদর্শক এবং ন্যায়-অন্যায়, ভালোমন্দ ও সত্য মিথ্যা নির্ধারণের মুক্ত মানদণ্ড।”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ১৮৫ এর অংশবিশেষ)।

প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর কাছ থেকে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকটে যে মহাফেরেশতা পবিত্র কুরআন নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন, তিনি হলেন অতি সম্মানিত ফেরেশতা জিবরীল [আলাইহিস সালাম]। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَإِنَّهُ لَتَنْزِيْلُ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، نَزَلَ بِهِ الرُّوْحُ الْأَمِيْنُ، عَلَى قَلْبِكَ لِتَكُوْنَ مِنَ الْمُنذِرِيْنَ، بِلِسَانٍ عَرَبِيٍّ مُبِيْنٍ)، سورة الشعراء، الآيات 192- 195. ভাবার্থের অনুবাদ: “এই পবিত্র কুরআন সব জগতের প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য প্রভু মহান আল্লাহর কাছ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! জিবরীল [আলাইহিস সালাম] এর আবৃত্তি করার মাধ্যমে তোমার হৃদয়ে এই পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে পবিত্র পন্থায়। যাতে তুমি এর দ্বারা ওই সমস্ত মানুষকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে সতর্ক করতে পারো, যে সমস্ত মানুষ পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধাচরণ করবে”। এই পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করা সুস্পষ্ট আরবি ভাষায়। (সূরা আশ্শুআরা, আয়াত নং ১৯২- ১৯৫)।

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি সর্বপ্রথমে পবিত্র কুরআনের সূরা আল্ আলাক থেকে যে পাঁচটি আয়াত অবতীর্ণ করা হয়েছিলো, সেই পাঁচটি আয়াতের বিবরণ হলো নিম্নরূপে: (اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ، خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ، اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ، الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ، عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ)، سورة العلق، الآيات 1- 5. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে নাবী মুহাম্মাদ! তুমি পবিত্র কুরআন তোমার প্রতিপালকের নামে ও তাঁরই সাহায্যে পড়তে শুরু করো। যিনি সব জগতের ও সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তা। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সুক্ষরিত জমাট বাঁধা গাঢ় রক্ত থেকে। তুমি পবিত্র কুরআন তোমার এমন প্রতিপালকের নামে ও তাঁরই সাহায্যে পড়তে শুরু করো, যিনি হলেন মহান দয়ালু এবং যিনি মানুষকে কলমের দ্বারা লিখন পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন আর তাকে তার অজানা জ্ঞান প্রদান করেছেন”। (সূরা আল্ আলাক, আয়াত নং ১ - ৫)।

অতঃপর আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ও বিভিন্ন অবস্থায় পবিত্র কুরআন মক্কায় এবং মদিনায় বিভিন্ন সময়ে তেইশ বছর ধরে অবতীর্ণ হতে থাকে।

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: পবিত্র কুরআন সর্বপ্রথমে এক দফায় সম্পূর্ণরূপে সর্বনিম্ন আকাশে মর্যাদাপূর্ণ রজনীতে (লায়লাতুল কাদারে) অবতীর্ণ করা হয়েছে। অতঃপর সেখান থেকে অল্প অল্প করে বিশ বছরের মধ্যে পুরো কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। (আল বাইহাকী২/৪১৫)।

পবিত্র কুরআনের মোট সূরার সংখ্যা

পবিত্র কুরআনের মোট সূরা হলো (114) একশত চৌদ্দটি। সমস্ত সূরার এই সংখ্যাটি পবিত্র কুরআনের মুসহাফে নির্ধারিত রয়েছে। প্রথম সূরাটি হলো আলফাতিহা এবং শেষ সূরাটি হলো আন্নাস।

মাক্কী ও মাদানী সূরার বিবরণ

١
মাক্কী সূরার মোট সংখ্যা হলো ৮৬টি। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পূর্বে অবতীর্ণ হওয়া সমস্ত সূরাকে মাক্কী সূরা বলা হয়।
٢
মাদানী সূরার মোট সংখ্যা হলো ২৮টি। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পরে অবতীর্ণ হওয়া সমস্ত সূরাকে মাদানী সূরা বলা হয়।

পবিত্র কুরআনের মোট পারার সংখ্যা হলো ৩০টি এবং মোট খণ্ড বা হিজবের সংখ্যা হলো ৬০টি।

পবিত্র কুরআন লিপিবদ্ধ ও একত্রিত করার বিবরণ

পবিত্র কুরআন লিপিবদ্ধ ও একত্রিত করার তিনটি ধাপ রয়েছে:

প্রথম পর্যায়: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] এর যুগে

এই পর্যায়ে লিপিবদ্ধ করার চেয়ে বেশি নির্ভর করা হতো মুখস্থ করার প্রতি। যেহেতু ‎তাঁদের স্মৃতিশক্তি মজবুত ছিলো, তাঁরা দ্রুত মুখস্থ করার ক্ষমতা রাখতেন এবং ‎তাড়াতাড়ি মুখস্থ করতে পারতেন আর তাঁদের মাঝে লেখক ও লিপিবদ্ধ করার সুযোগ ‎ও সুবিধা কম ছিলো। তাই এই পর্যায়ে পবিত্র‎‏‎ কুরআনকে এক মুসহাফে একত্রিত‎‏‎ করা ‎হয়নি। সুতরাং যে ব্যক্তি পবিত্র‎‏‎ কুরআনের কোনো আয়াত শ্রবণ করতেন, সে ব্যক্তি তা ‎মুখস্থ করতেন অথবা তাঁর সাধ্যমতো কোনো খেজুরের সোজা ডালে বা চামড়ার টুকরায় ‎অথবা পাতলা চওড়া সাদা পাথরে কিংবা কাঁধের হাড়ে লিপিবদ্ধ করতেন। আর সেই ‎সময় পবিত্র‎‏‎ কুরআনের হাফিজ ও পাঠক বা ধারক, বাহক এবং রক্ষক সংখ্যায় অনেক ‎ছিলেন। ‎

দ্বিতীয় পর্যায়: আবু বাকার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর যুগে

দ্বাদশ হিজরীতে যখন আল ইয়ামামার যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক পবিত্র‎‏‎ কুরআনের হাফিজ ও ‎পাঠক বা ধারক, বাহক এবং রক্ষক নিহত হন, তখন আবু বাকার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ‎পবিত্র‎‏‎ কুরআন লিপিবদ্ধ ও একত্রিত‎‏‎ করার নির্দেশ দেন; যাতে পবিত্র‎‏‎ কুরআন ‎সংরক্ষিত হয় এবং নষ্ট না হয়ে যায়। ‎

عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَرْسَلَ إلَيَّ أبو بَكْرٍ مَقْتَلَ أهْلِ اليَمَامَةِ؛ فإذا عمر بن الخطاب عنده، ‏قالَ أبو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: إنَّ عُمَرَ أتَانِي؛ فَقالَ: إنَّ القَتْلَ قَدِ اسْتَحَرَّ يَومَ اليَمَامَةِ بقراء القُرْآنِ، ‏وإنِّي أخْشَى إنْ اسْتَحِرَّ القَتْلُ بالقُرَّاءِ بالمَوَاطِنِ؛ فَيَذْهَبَ كَثِيرٌ مِنَ القُرْآنِ وإني أرى أن تأمر بجمع ‏القرآن. ‏ قُلتُ لِعُمَرَ: كيفَ تفْعَلُ شَيئًا لَمْ يَفْعَلْهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قالَ عُمَرُ: هذا واللَّهِ خَيْرٌ؛ فَلَمْ ‏يَزَلْ عُمَرُ يُرَاجِعُنِي؛ حتَّى شَرَحَ اللَّهُ صَدْرِي لِذلكَ، ورَأَيْتُ في ذلك الذي رَأَى عُمَرُ.‏ ‏ قالَ زَيْدُ: قالَ أبو بَكْرٍ: إنَّكَ رَجُلٌ شَابٌّ عَاقِلٌ، ولَا نَتَّهِمُكَ، وقد كُنْتَ تَكْتُبُ الوَحْيَ لِرَسولِ اللَّهِ صَلَّى ‏اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَتَتَبَّعِ القُرْآنَ فَاجْمَعْهُ. ‏ ‏ فَوَاللَّهِ لو كلفوني نَقْلَ جَبَلٍ مِنَ الجِبَالِ ما كانَ أثْقَلَ عَلَيَّ ممَّا أمَرَنِي به مِن جَمْعِ القُرْآنِ، قُلتُ: كيفَ ‏تفعلون شيئًا لَمْ يَفْعَلْهُ النَّبيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قال: هو واللَّهِ خَيْرٌ؛ فلم يزل أبو بكر يراجعني حتَّى ‏شَرَحَ اللَّهُ صَدْرِي لِلَّذِي شَرَحَ اللَّهُ له صَدْرَ أبِي بَكْرٍ وعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا؛ فَتَتَبَّعْتُ القُرْآنَ أجْمَعُهُ ‏مِنَ العُسُبِ واللِّخاف وصُدُورِ الرِّجَالِ ... فكَانَتِ الصُّحُفُ عِنْدَ أبِي بَكْرٍ حتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ، ثُمَّ عِنْدَ عُمَرَ ‏حياته ثم ثُمَّ عِنْدَ حَفْصَةَ بنْتِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا.‏ ‏(صحيح البخاري، رقم الحديث 4986).‏ অর্থ: জ্যায়দ বিন সাবেত [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আবু বাকর ‎‎[রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁর খিলাফতের যুগে ইয়ামামার যুদ্ধের সময় এক ব্যাক্তিকে আমার ‎কাছে পাঠিয়েছিলেন। তাই আমি তাঁর কাছে উপস্থিত হয়েছিলাম। তখন তাঁর কাছে ‎ওমার ইবনুল খাত্তাব [রাদিয়াল্লাহু আনহু] বসে ছিলেন। আবু বাকর [রাদিয়াল্লাহু আনহু] ‎আমাকে বললেন: ওমার আমার কাছে এসেছেন এবং বলেছেন: ইয়ামামার যুদ্ধ তীব্র ‎গতিতে চলছে এবং তাতে পবিত্র কুরআনের অনেক হাফেজ বা ধারক, বাহক ও ‎রক্ষককে শহীদ করা হয়েছে। আমি ভয় করছি যে, পবিত্র কুরআনের অনেক হাফেজ ‎বা ধারক, বাহক ও রক্ষক বিভিন্ন স্থানে শহীদ হয়ে গেলে পবিত্র কুরআনের অনেক ‎অংশ বিলীন হয়ে যাবে। তাই আমি চাচ্ছি যে, আপনি পবিত্র কুরআনের সংরক্ষণের ‎জন্য পবিত্র কুরআনকে একত্রিত করার আদেশ প্রদান করুন। আবু বাকর [রাদিয়াল্লাহু ‎আনহু] বললেন: আমি ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] কে বললাম: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল ‎বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যে কাজটি করেননি, সেই কাজটি ‎আমি কিভাবে করবো? ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] বললেন: আল্লাহর কসম! এই কাজটি ‎সম্পাদন করাই হলো অতি কল্যাণকর বিষয়। ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁর এই ‎কথাটি আমাকে বারংবার বলতে থাকেন, শেষ পর্যন্ত প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য ‎মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সংরক্ষণের জন্য পবিত্র কুরআনকে একত্রিত করার ‎কাজটি সম্পাদন করার জন্য আমার হৃদয়কে উজ্জ্বল ও প্রশস্ত করে দিয়েছেন। তাই এই ‎কাজটির প্রয়োজনীয়তা আমি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছি এবং শেষ পর্যন্ত এই ‎বিষয়ে আমার অভিমত ওমারের মতই হয়ে গেছে। জ্যায়দ বিন সাবেত [রাদিয়াল্লাহু আনহু] বলেন: আবু বাকর [রাদিয়াল্লাহু আনহু] আমাকে ‎বললেন: তুমি একজন জ্ঞানবান ও বুদ্ধিমান তরুণ। আমরা তোমার বিষয়ে কোনো সময় ‎খারাপ ধারণা পোষণ করিনা। আর তুমি তো আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ ‎‎[সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর জীবদ্দশায় মহান আল্লাহর প্রেরিত বাণী বা অহী ‎লিপিবদ্ধ করতে। সুতরাং তুমি পবিত্র কুরআনের সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরআনের ‎সমস্ত আয়াত সংগ্রহ করে একত্রিত করো। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর শপথ! তাঁরা পবিত্র কুরআন একত্রিত ‎করার যে নির্দেশ আমাকে দিয়েছিলেন, সেটি আমার কাছে এত ভারি মনে হয়েছিলো ‎যে, তাঁরা যদি আমাকে কোনো একটি পাহাড় স্থানান্তরিত করতে বলতেন, তাহলে সেটা ‎আমার কাছে এত ভারি মনে হতো না। ‎ আমি বললাম: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] যে কাজটি করেননি, সেই কাজটি আপনারা কিভাবে করবেন?‎ এরপর আবু বাকর [রাদিয়াল্লাহু আনহু] বললেন: আল্লাহর কসম! এই কাজটি সম্পাদন ‎করাই হলো অতি কল্যাণকর বিষয়। অতঃপর আবু বাকর [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাঁর এই ‎কথাটি আমাকে বারংবার বলতে থাকেন, শেষ পর্যন্ত প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য ‎মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সংরক্ষণের জন্য পবিত্র কুরআনকে একত্রিত করার ‎কাজটি সম্পাদন করার জন্য আমার হৃদয়কে এমনভাবে উজ্জ্বল ও প্রশস্ত করে ‎দিয়েছিলেন, যেমনভাবে তিনি এই কাজটি সম্পাদন করার জন্য আবু বাকর এবং ওমার ‎‎[রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] এর হৃদয়কে উজ্জ্বল ও প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন। আর এই ‎কাজটির প্রয়োজনীয়তা তাঁদের ন্যায় আমিও অনুভব করতে পারলাম। ‎ এরপর আমি পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলি সংগ্রহ করার কাজে নিয়োজিত হয়েছিলাম। ‎অতএব আমি খেজুরের ডাল হতে, পাতলা চওড়া সাদা পাথর হতে এবং পবিত্র‎‏‎ ‎কুরআনের হাফিজ ও পাঠক বা ধারক, বাহক এবং রক্ষকদের মুখ থেকে শুনে পবিত্র ‎কুরআনকে একত্রিত করার কাজ সম্পাদন করেছিলাম। ..... এরপর জমাকৃত পবিত্র ‎কুরআন আবু বাকর [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর জীবিতাবস্থায় তাঁর নিকটেই সংরক্ষিত ‎ছিলো। অতঃপর জমাকৃত পবিত্র কুরআন ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর জীবিতাবস্থায় ‎তাঁর নিকটেই সংরক্ষিত ছিলো। তারপর এই জমাকৃত পবিত্র কুরআন হাফসা বিনত ‎ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] এর নিকটে সুরক্ষিত ছিলো। ‎[সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৮৬] ।

তৃতীয় পর্যায়: ওসমান বিন আফ্ফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর যুগে

ওসমান বিন আফ্ফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর খিলাফতের আমলে ইসলামী রাষ্ট্র অনেক ‎বড়ো ও অনেক প্রশস্ত হয়েছিলো। এবং প্রতিটি রাজ্যের বা স্টেটের মানুষ তাদের ‎শিক্ষাদানকারী সাহাবীদের কাছ থেকে পবিত্র‎‏‎ কুরআন তিলাওয়াতের বা তার ‎পঠনপাঠনের আদবকায়দা ও পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলো। আর পবিত্র‎‏‎ কুরআন ‎তিলাওয়াতের বা তার পঠনপাঠনের আদবকায়দা ও পদ্ধতি একাধিক হওয়ার কারণে ‎কতকগুলি সমস্যা ও জটিলতা ওই সমস্ত লোকের মাঝে বিশেষভাবে প্রকাশ হওয়ার ‎আশঙ্কা করা হয়েছিলো, যে সমস্ত লোক আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ ‎‎[সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছ থেকে পবিত্র‎‏‎ কুরআন তিলাওয়াতের বা তার ‎পঠনপাঠনের আদবকায়দা ও পদ্ধতির জ্ঞান লাভ করেনি। তাই ওসমান বিন আফ্ফান ‎‎[রাদিয়াল্লাহু আনহু] পবিত্র‎‏‎ কুরআনকে এক মুসহাফে একত্রিত‎‏‎ করার আদেশ প্রদান ‎করেন। যাতে মুসলিম সমাজের মধ্যে মহান আল্লাহর গ্রন্থ পবিত্র‎‏‎ কুরআন নিয়ে কোনো ‎মতভেদ বা বিরোধ অথবা দ্বন্দ্ব এবং অনৈক্য সৃষ্টি না হয়। ‎

অর্থ: আনাস বিন মালিক [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: ‎হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] একদা শাম বা সিরিয়া দেশ ‎থেকে ওসমান বিন আফ্ফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর কাছে উপস্থিত হন। ‎আর সেই সময় তিনি ইরাকের সৈন্যদের সাথে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান ‎বিজয়ের অভিযানে শাম বা সিরিয়া দেশে ছিলেন। সেখান থেকে তিনি ‎ওসমান বিন আফ্ফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর কাছে ফিরে আসেন। পবিত্র‎‏‎ ‎কুরআন তিলাওয়াতের বিষয়ে বা তার পঠনপাঠনের বিষয়ে সেখানে তাঁদের ‎মতবিরোধ হোজাইফাকে ভীষণভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও উদ্বিগ্ন করেছিলো। তাই ‎তিনি মুসলিম জাহানের তৃতীয় খলিফা ওসমান বিন আফ্ফান [রাদিয়াল্লাহু ‎আনহু] কে বললেন: হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি পবিত্র গ্রন্থ কুরআন ‎সম্পর্কে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিরোধ বা দ্বন্দ্বের মতো মুসলিম জাতিকে ‎বিরোধে বা দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়ার পূর্বে তাদেরকে রক্ষা করুন। তারপর ওসমান ‎বিন আফ্ফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হাফসা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] এর কাছে ‎জনৈক ব্যাক্তিকে এই বলে প্রেরণ করলেন যে, আপনার কাছে পবিত্র ‎কুরআনের যে সমস্ত সহীফাসমূহ সংরক্ষিত আছে, তা আমাদের কাছে ‎পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা সেগুলিকে পূর্ণরূপে কতকগুলি মুসহাফে লিপিবদ্ধ ‎করতে পারি। এরপর আমরা সেগুলি আপনাকে ফিরিয়ে দিবো। তাই হাফসা ‎‎[রাদিয়াল্লাহু আনহা] সেগুলি ওসমান বিন আফ্ফান [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর ‎কাছে পাঠিয়ে দিলেন। এরপর খলিফা ওসমান বিন আফ্ফান [রাদিয়াল্লাহু ‎আনহু] জ্যায়দ বিন সাবেত, আবদুল্লাহ বিন জুবাইর, সাঈদ ইবনুল আস ‎এবং আব্দুর রহমান ইবনুল হারিস বিন হিশাম [রাদিয়াল্লাহু আনহুম] কে ‎নির্দেশ দিলেন, তাঁরা যেন পবিত্র কুরআনকে কতকগুলি মুসহাফে লিপিবদ্ধ ‎করেন। তাই তাঁরা তা লিপিবদ্ধ করেছিলেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৮৭] ‎।

পবিত্র কুরআনকে সেই সময় যেভাবে মুসহাফে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, ঠিক সেই ভাবে ‎পবিত্র কুরআন এখন পর্যন্ত মুসলিম জাতির মধ্যে একমতে, একবাক্যে নিঃসন্দেহে ও ‎নিশ্চিতভাবে সর্বযুগে সংরক্ষিত আছে। ‎

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন