শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বার্তা।

প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ অনেক রাসূল প্রেরণ করেছেন কতকগুলি উদ্দেশ্যের ‎কারণে। আর তিনি রাসূল প্রেরণের বিষয়টি শেষ করেছেন তাঁর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী ‎মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে প্রেরণ করার মাধ্যমে এবং তিনি তাঁকে সমস্ত নাবী ‎ও রাসূলের উপরে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। এই অনুচ্ছেদে আপনি রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য ‎জানতে পারবেন। আর আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] এর উম্মতের উপরে তাঁর অধিকারের জ্ঞান লাভ করতে পারবেন। ‎

 

  • মহান আল্লাহ নাবীগণ বা বার্তাবহ রাসূলগণ [আলাইহিমুস সালাম] কে প্রেরণ করার রহস্যের জ্ঞানলাভ করা।
  • সমস্ত নাবী ও রাসূলের উপরে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের জ্ঞান উপলব্ধি করা।
  • আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর উম্মতের উপরে তাঁর কতকগুলি অধিকারের জ্ঞান লাভ করা। 

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

মহান আল্লাহর নাবী বা বার্তাবহ রাসূলগণের প্রতি মানবতার প্রয়োজন

প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য প্রজ্ঞাবান মহান আল্লাহর হিকমত বা প্রকৌশলের দাবি মোতাবেক তিনি প্রত্যেক জাতির কাছে নরক বা জাহান্নামের শাস্তি হতে সতর্ককারী হিসেবে নাবী বা বার্তাবহ রাসূল প্রেরণ করছেন। তাই প্রত্যেক নাবী বা বার্তাবহ রাসূল নিজের সম্প্রদায়কে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর মনোনীত ধর্ম প্রকৃত ইসলামের প্রতি ও তার বিধানের প্রতি স্পষ্ট ও পরিষ্কার ভাষায় আহ্বান করেছেন। যাতে তারা ইহকালে ও পরকালে সুখময় ও আনন্দময় জীবন লাভ করতে পারে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَإِن مِّنْ أُمَّةٍ إِلَّا خَلَا فِيْهَا نَذِيْرٌ)، سورة فاطر، جزء من الآية 24. ভাবার্থের অনুবাদ: “আর যতো ধর্মের সম্প্রদায় আছে, সমস্ত সম্প্রদায়ের প্রতি আমি নরক বা জাহান্নামের শাস্তি হতে সতর্ককারী হিসেবে নাবী বা বার্তাবহ রাসূল প্রেরণ করেছি”। (সূরা ফাতির, আয়াত নং ২৪ এর অংশবিশেষ।)

মহান আল্লাহর নাবী বা বার্তাবহ রাসূলগণের মাধ্যম ছাড়া এই পৃথিবীতে এবং পরকালে সুখশান্তি ও পরমানন্দের জীবন লাভ করার কোনো পথ নেই। এবং তাঁদের মাধ্যম ছাড়া বিস্তারিতভাবে কল্যাণ ও অকল্যাণের জ্ঞান লাভ করার কোনো উপায় নেই। আর তাঁরাই হলেন প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপকরণ। এবং তাঁদের রীতিনীতিই হলো ভালো কর্ম, ভালো কথা এবং সচ্চরিত্রের অতুলনীয় আদর্শ।

বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর নাবী ও বার্তাবহ রাসূল হিসেবে দৃঢ়ভাবে ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা।

আমরা দৃঢ়ভাবে ঈমান রাখি ও বিশ্বাস করি যে, বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তি ও বার্তাবহ রাসূল। এবং বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মানবজাতির মধ্যে শিরোমণি সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। আর তিনিই হলেন শেষ নাবী ও বার্তাবহ রাসূল। তাঁর পরে পৃথিবীর বুকে আর কোনো নাবী বা বার্তাবহ রাসূলের আগমন বা আবির্ভাব ঘটবে না। তিনি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন ও প্রচার করেছেন, তাঁর আমানতের সংরক্ষণ করেছেন, সকল জাতির মানব সমাজের কল্যাণদায়ক কর্ম সম্পাদন করেছেন ও তাদেরকে মঙ্গলদায়ক শিক্ষা প্রদান করেছেন। আর আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] পৃথিবীর সকল জাতির মানব সমাজকে তাদের প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর একত্বের প্রতি বা তাওহীদের প্রতি আহ্বানের কাজে নিরলস প্রচেষ্টা করেছেন এবং সংগ্রাম করে প্রবল বিরোধিতার মুখে টিকে থেকেছেন ও ধৈর্য ধারণের প্রতিযোগিতা করেছেন এবং ধৈর্যশীল হয়েছেন।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (مُّحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللَّهِ)، سورة الفتح، جزء من الآية29. ভাবার্থের অনুবাদ: “বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল”। (সূরা আল ফাতহ, আয়াত নং ২৯ এর অংশবিশেষ)।

বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রদত্ত সমস্ত সংবাদ বিশ্বাস করা, তাঁর উপদেশ মেনে চলা, তাঁর বিনিবারিত বিষয়াদি হতে বা তাঁর নিষেধকৃত বিষয়াদি হতে বিরত থাকা, তাঁর প্রদত্ত নিয়ম মোতাবেক প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনা করা এবং তাঁর অনুকরণ করা অনিবার্য ও অবশ্য কর্তব্য।

বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মহান আল্লাহর সর্বশেষ বার্তাবহ রাসূল ও সর্বশেষ নাবী।

বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মহান আল্লাহর সর্বশেষ বার্তাবহ রাসূল ও সর্বশেষ নাবী। সুতরাং তাঁর পরে পৃথিবীর বুকে আর কোনো নাবী বা বার্তাবহ রাসূলের আগমন বা আবির্ভাব ঘটবে না। তাঁর দ্বারা মহান আল্লাহ নাবী বা বার্তাবহ রাসূল আবির্ভাবের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। এবং তাঁর প্রকৃত ধর্ম ইসলামের দ্বারা সমস্ত ধর্মের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। সুতরাং প্রকৃত ইসলাম ধর্ম ছাড়া প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর নিকটে অন্য কোনো ধর্ম স্বীকৃত বা গৃহীত নয়।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِّجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَّسُوْلَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّيْنَ)، سورة الأحزاب، جزء من الآية 40. ভাবার্থের অনুবাদ: “বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ যে সমস্ত পুরুষকে জন্ম দেননি, তিনি তাদের প্রকৃতপক্ষে পিতা নন। কিন্তু তিনি হলেন আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল এবং সর্বশেষ নাবী বা দূত”। (সূরা আল আহযাব, আয়াত নং ৪০ এর অংশবিশেষ)।

عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: "إِنَّ مَثَلِيْ وَمَثَلَ الأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِيْ، كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى بَيْتًا؛ فَأَحْسَنَهُ وَأَجْمَلَهُ إِلَّا مَوْضِعَ لَبِنَةٍ مِنْ زَاوِيَةٍ؛ فَجَعَلَ النَّاسُ يَطُوْفُوْنَ بِهِ، وَيَعْجَبُوْنَ لَهُ، وَيَقُوْلُوْنَ: هَلَّا وُضِعَتْ هَذِهِ اللَّبِنَةُ؟ قَالَ: فَأَنَا اللَّبِنَةُ وَأَنَا خَاتِمُ النَّبِيِّيْنَ". (صحيح البخاري, رقم الحديث 3535, واللفظ له، وصحيح مسلم, رقم الحديث 22- (2286),). অর্থ: অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: নিশ্চয় আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: আমার দৃষ্টান্ত এবং আমার পূর্ববর্তী নাবীগণের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির দৃষ্টান্তের ন্যায়, যে ব্যক্তি অতি সুন্দর ও চমৎকার একটি অট্টালিকা নির্মাণ করেছে। তবে সেই অতি সুন্দর ও চমৎকার অট্টালিকাটির এক কোণে একটি ইটের জায়গা খালি বা ফাঁকা রেখেছিলো। মানুষ জন তার চারিদিকে ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলো আর তা দেখে বিস্মিত হতে লাগলো এবং পরস্পর বলতে লাগলো: ওই ইটখানি কেন স্থাপিত করা হয়নি?! আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছিলেন: “আর আমিই হলাম সেই ইটখানি। আর আমিই হলাম নাবীগণের মধ্যে সর্বশেষ নাবী বা দূত ও বার্তাবহ রাসূল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৫৩৫ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২ - (২২৮৬), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে]।

সমস্ত নাবী ও বার্তাবহ রাসূলের মধ্যে হলেন বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সর্বশ্রেষ্ঠ নাবী ও বার্তাবহ রাসূল।

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হলেন আমাদের নাবী। তিনি সমস্ত নাবী ও বার্তাবহ রাসূলের মধ্যে হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। বরং তিনি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর নিকটে সৃষ্টি জগতের মধ্যে হলেন সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট। যেহেতু প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর মর্যাদা ও সম্মান অতি উচ্চ করে দিয়েছেন। তাই তিনি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ কাছে সৃষ্টি জগতের মধ্যে হলেন অতি উৎকৃষ্ট, অতি সম্মানিত এবং সবচেয়ে বড়ো মর্যাদার অধিকারী। তাই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ পবিত্র কুরঅনের মধ্যে বলেছেন: (وَأَنْزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيْمًا)، سورة النساء، الآية 113. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তোমার প্রতি ঐশীবাণীর গ্রন্থ পবিত্র কুরআন ও তার ব্যাখ্যা ও বিবরণসহ পবিত্র হাদীস অবতীর্ণ করেছেন। আর তোমাকে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের নিয়মকানুন ও বিধিবিধানের এমন জ্ঞান প্রদান করেছেন, যে সেই জ্ঞানের বিষয়ে তুমি কিছু জানতে না। এবং নিশ্চিতভাবে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তোমাকে সবচেয়ে বড়ো মর্যাদার অধিকারী করেছেন”। (সূরা আন্ নিসা, আয়াত, নং ১১৩ এর অংশবিশেষ)।

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সকল জাতির মানব সমাজের মধ্যে হলেন সর্বপ্রধান ও সর্বশ্রেষ্ঠ শিরোমণি। আর পরকালে পুনরুত্থানের নিমিত্তে সর্বপ্রথমে তাঁরই জন্য মাটি বিদীর্ণ হবে। আর পরকালে সকল জাতির মানব সমাজের শান্তির জন্য প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কাছে সর্বপ্রথমে তিনিই সুপারিশ করবেন। এবং তাঁরই সুপারিশ সর্বপ্রথমে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে। আর পরকালে কিয়ামতের দিন তাঁরই হাতেই থাকবে প্রশংসা বা হামদের পতাকা। এবং পারলৌকিক সেতু বা পুলসিরাত তিনিই সর্বপ্রথমে পার হবেন এবং তিনিই সর্বপ্রথমে জান্নাতের দরজার কড়া নাড়বেন আর তিনিই সর্বপ্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।

প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তাঁর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বিশ্ববাসীর জন্য দয়া এবং কৃপা হিসেবে পৃথিবীর বুকে প্রেরণ করেছেন। সুতরাং বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বার্তা সমস্ত জিন জাতির জন্য এবং সমস্ত মানব জাতির জন্য নির্ধারিত রয়েছে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِيْنَ)، سورة الأنبياء الآية 107. ভাবার্থের অনুবাদ: “আর হে বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য কৃপা হিসেবে প্রেরণ করেছি”। (সূরা আল আম্বিয়া, আয়াত নং ১০৭)।

বিশ্ববাসীর জন্য দয়া

তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ)، سورة سبأ، جزء من الآية 28. ভাবার্থের অনুবাদ: “আর হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে সকল জাতির মানব সমাজের জন্য বার্তাবহ রাসূল বা পয়গম্বর হিসেবে প্রেরণ করেছি”। (সূরা সাবা, আয়াত নং ২৮ এর অংশবিশেষ)। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন: (قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّيْ رَسُوْلُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيْعًا)، سورة الأعراف، جزء من الآية 158. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তুমি বলে দাও: হে সকল জাতির মানব সমাজ! আমি অবশ্যই তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি”। (সূরা আল আরাফ, আয়াত নং ১৫৮ এর অংশবিশেষ)।

-প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎কে বিশ্ববাসীর প্রতি কেবলমাত্র করুণা রূপেই প্রেরণ করেছেন। তাদেরকে শিরক, কুফর ও ‎অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে বের করে জ্ঞান, ঈমান ও একত্বের বা তাওহীদের জ্যোতির দিকে। ‎যাতে তারা তারা আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে এবং তাঁর শাস্তি ও ক্রোধ থেকে ‎রক্ষা পায়। ‎‏ ‏‎ ‎

বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করা অপরিহার্য এবং তাঁর অনুসরণ করাও অপরিহার্য

প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যে বার্তা লাভ করেছেন, সেই বার্তা পূর্বের সমস্ত নাবী অথবা পয়গম্বর বা বার্তাবহ রাসুলের বার্তাকে রহিত করে দিয়েছে। সুতরাং বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অনুসরণ ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ গ্রহণ করবেন না। এবং বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর অনুসরণ ছাড়া কোনো ব্যক্তি পরমানন্দের পবিত্র স্থান জান্নাত বা স্বর্গ লাভ করতে পারবে না। অতএব বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর সমস্ত বার্তাবহ রাসূলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বার্তাবহ রাসূল। তাঁর অনুসরণকারী জাতি হলো সর্বোত্তম জাতি। এবং প্রকৃত ইসলাম ধর্মের মাধ্যমে তাঁর প্রদত্ত নিয়মকানুন ও বিধিবিধান হলো সর্বোৎকৃষ্ট এবং সবচেয়ে বেশি পরিপূর্ণ।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন: (وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ)، سورة آل عمران، الآية 85 . ভাবার্থের অনুবাদ: “আর যে ব্যক্তি প্রকৃত ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করতে চাইবে, সে জেনে রাখবে যে, তার কাছ থেকে তা কখনোই পরিগৃহীত হবে না এবং সে পরকালে সর্বহারা হয়ে চিরস্থায়ী নরক বা জাহান্নামবাসী হয়েই থাকবে”। (সূরা আল ইমরান, আয়াত নং ৮৫)।

عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، عَن رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: "وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ! لَا يَسْمَعُ بِيْ أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَّلَا نَصْرَانِيٌّ، ثُمَّ يَمُوْتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِيْ أُرْسِلْتُ بِهِ، إِلَّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ". (صحيح مسلم، رقم الحديث 240 - (153)، ومسند أحمد، رقم الحديث8609). অর্থ: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে বর্ণনা করেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “যে সত্তার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ, আমি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সকল জাতির মানব সমাজের প্রতি সত্য ধর্ম প্রকৃত ইসলামসহ প্রেরিত হওয়ার পর বিশ্ববাসীর মধ্যে থেকে ইহুদি ও খ্রিস্টান ব্যক্তি হোক (অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি হোক), সে যদি আমার কথা সঠিক পন্থায় শুনতে পায়, অতঃপর আমি যে সত্য ধর্ম প্রকৃত ইসলাম নিয়ে এসেছি, সেই ধর্মের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করেই মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সে পরকালে জাহান্নামবাসী হয়ে ভীষণ কষ্ট ভোগ করবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪০- (১৫৩) এবং মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ৮৬০৯]।

অতি উজ্জ্বল ও সুন্দর অনেক মোজেজা বা অলৌকিক বিষয়ের দ্বারা বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিতভাবে এবং স্পষ্টভাবে স্বীকৃতি পায়।

বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ বিভিন্ন প্রকারের অতি উজ্জ্বল ও সুন্দর অনেক মোজেজা বা অলৌকিক বিষয় এবং প্রকাশ্য নিদর্শন প্রদান করেছিলেন। সেই সমস্ত মোজেজা বা অলৌকিক বিষয় এবং প্রকাশ্য নিদর্শনের মাধ্যমে মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নাবী ও বার্তাবহ রাসূল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিতভাবে নির্ধারিত ও সাব্যস্ত হয়।

পবিত্র কুরআন

বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে সব চেয়ে বড়ো ও সর্বশ্রেষ্ঠ মোজেজা বা অলৌকিক বিষয় দেওয়া হয়েছে পবিত্র কুরআন। পবিত্র কুরআন মানুষের আত্মা ও মনকে সম্বোধন করে ও আহ্বান করে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহকে মেনে চলার জন্য। পবিত্র কুরআন কিয়ামত বা মহাপ্রলয়ের দিন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে টিকে থাকবে। তাতে কোনো প্রকারের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন সংঘটিত হবে না। পবিত্র কুরআনের ভাষা, ভঙ্গিমা, বিধিবিধান এবং সমস্ত বার্তা ও সংবাদ হলো অলৌকিক।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَّأْتُوْا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآنِ لَا يَأْتُوْنَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيْرًا)، سورة الإسراء، الآية 88. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তুমি তাদেরকে বলো, যারা দাবি করে যে, এই ধরণের কুরআন আমরা প্রস্তুত করতে পারবো: সারা পৃথিবীর সমস্ত মানুষ ও জিন যদি একত্রিত হয়ে একযোগে সকল শক্তি প্রয়োগ করে, তবুও এই পবিত্র কুরআনের মতো অন্য আরেকটি পবিত্র কুরআন প্রস্তুত করতে পারবে না”। (সূরা আল ইসরা (বানী ইসরাইল), আয়াত নং ৮৮ এর অংশবিশেষ)।

চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার ঘটনা

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলেছেন: (اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ * وَإِنْ يَّرَوْا آيَةً يُّعْرِضُوْا وَيَقُوْلُوْا سِحْرٌ مُسْتَمِرٌّ)، سورة القمر، الآية 1-2. وقد حدث هذا الانشقاق في حياته ﷺ ورأته قريش وغيرها. )، سورة الإسراء، الآية 88. ভাবার্থের অনুবাদ: “পৃথিবীর সময় শেষ হয়ে মহাপ্রলয় সংঘটিত হওয়ার দিন অথবা কিয়ামতের দিন নিকটবর্তী হয়েছে এবং চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। আর প্রকৃত ইসলাম ধর্ম প্রত্যাখ্যানকারী অমুসলিম সমাজের কতকগুলি মানুষ প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কোনো নিদর্শন পরিদর্শন করলেও তা থেকে বিমুখ হয়ে যায় এবং প্রকৃত ইসলাম ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করে আর বলে: এটা তো চিরাচরিত জাদু”। (সূরা আল কামার, আয়াত নং ১-২)। চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার ঘটনাটি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বেচেঁ থাকার সময় তাঁর জীবদ্দশায় সংঘটিত হয়েছে এবং মক্কা শহরের কুরাইশ বংশের মানুষ ও অন্যান্য বংশের মানুষ তা পরিদর্শন করেছেন।

অর্থ: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিজের সামনে অলৌকিকভাবে অনেক বেশি খাদ্য সরবরাহ করতেন; যাতে তাঁর সঙ্গের সমস্ত সাহাবী তৃপ্তি সহকারে ভক্ষণ করেন ও ক্ষুধা নিবারিত করেন এবং তাতে থেকে অবশিষ্ট অনেক খাদ্যদ্রব্য খাওয়া দাওয়ার পর বেঁচে থাকে। এই ধরণের অনেক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। সেই সব ঘটনার মধ্যে থেকে একটি ঘটনা হলো এই যে, সামুরা বিন জুন্দুব হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। ইতিমধ্যে তাঁর কাছে খাদ্যদ্রব্যের একটি পাত্র উপস্থিত করা হলো। তাতে ছিলো সারিদ নামক খাদ্যদ্রব্য বা মাংস ও ঝোলে ভিজা রুটির ছোটো ছোটো টুকরো। সেই খাদ্যদ্রব্য থেকে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিজে খেয়েছিলেন এবং তাঁর সাথে আরো একদল লোক খেয়েছিলেন। তারপর প্রচুর সংখ্যায় দলে দলে লোক আসতে থাকেন এবং খাওয়া দাওয়া করতে থাকেন। এক দল ভোজনকার্য বা খাওয়া দাওয়ার কাজ যখন শেষ করেন তখন আবার অন্য একটি দল ভোজনকার্য বা খাওয়া দাওয়ার কাজ শুরু করেন। এইভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষ সকাল থেকে দুপুরের কাছাকাছি সময় পর্যন্ত পরস্পর ভোজনকার্য বা খাওয়া দাওয়ার কাজ করতে থাকেন। [মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং 20135]।

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিজের সামনে অলৌকিকভাবে খাদ্য সরবরাহ করতেন।

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর গায়েবি বিষয়ে বা অদৃশ্যের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করা।

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যে সমস্ত বিষয়ে অদৃশ্যের সংবাদ প্রদান করেছেন বা ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করেছেন, সে সমস্ত বিষয়ে তাঁর সংবাদ সত্য বলে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এবং তিনি যে সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করেছেন, সে সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। আর আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যে সমস্ত বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করেছেন, সে সমস্ত বিষয়ের মধ্যে থেকে আমরা এখন পর্যন্ত অনেক বিষয় স্বচক্ষে দর্শন করছি।

আনাস [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ওমার বিন খাত্তাব [রাদিয়াল্লাহু আনহু] তাদেরকে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অমুসলিমদের ঘটনা বর্ণনা করতে শুরু করেন। সুতরাং তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাদেরকে ওই সমস্ত স্থান নির্দিষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন: “ইনশাআল্লাহ আগামীকাল যুদ্ধের এই স্থানে অমুকের ধরাশায়ী হবে এবং এই স্থানে অমুকের ধরাশায়ী হবে”। ওমার [রাদিয়াল্লাহু আনহু] বলেন: সেই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর শপথ, যিনি প্রকৃত ইসলাম ধর্ম ও তার শিক্ষাসহ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বিশ্ববাসীর জন্য তাঁর বার্তাবহ রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন, যাদের জন্য যে সমস্ত স্থান আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন, সেই সমস্ত স্থানেই তারা ধরাশায়ী হয়েছিলো। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩ -(২৮৭৩)]।

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর উম্মতের উপর তাঁর অধিকার।

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর উম্মতের উপর তাঁর অনেক অধিকার রয়েছে। সেই অধিকারগুলির মধ্যে রয়েছে নিম্নের বিষয়গুলি:

১। মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল ও পয়গম্বর বা নাবী হিসেবে ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা।

মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল ও পয়গম্বর বা নাবী হিসেবে ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য এবং এটার প্রত্রিও ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য যে, তিনি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বার্তা নিয়ে এসেছেন, সেই বার্তার দ্বারা তাঁর পূর্বের সমস্ত বার্তাবহ রাসূল ও পয়গম্বর বা নাবীর বার্তাকে রহিত করা হয়েছে।

২। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বার্তা এবং সংবাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যে সমস্ত সংবাদ প্রদান করেছেন, সে সমস্ত সংবাদকে সত্য বলে বিশ্বাস করা, তাঁর উপদেশ মোতাবেক কর্ম সম্পাদন করা, তাঁর নিষিদ্ধ করা ও অবিহিত করা বিষয় থেকে বিরত থাকা এবং তাঁর প্রদত্ত নিয়ম পদ্ধতি ছাড়া প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর উপাসনা না করা। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا)، سورة الحشر، جزء من الآية 7. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজ! আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর আদেশ মোতাবেক তোমরা কর্ম করো এবং তাঁর নিষিদ্ধ করা ও অবিহিত করা বিষয় হতে বিরত থাকো”। (সূরা আল হাশার, আয়াত নং ৭ এর অংশবিশেষ)।

৩। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করা।

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করা আমাদের প্রতি ওয়াজিব বা অপরিহার্য। সুতরাং তাঁর শিক্ষা মেনে চলা এবং তাঁর আদর্শের শ্রদ্ধা ও সম্মান করা আমাদের প্রতি ওয়াজিব বা অপরিহার্য। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُوْنَ حَتَّى يُحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوْا فِيْ أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا)، سورة النساء، الآية 65. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তোমার প্রতিপালকের শপথ! যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের বিরোধ নিষ্পত্তির ভার তোমার উপর ন্যস্ত না করবে এবং তোমার সিদ্ধান্ত দ্বিধাহীনভাবে সর্বান্তকরণে মেনে না নিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা প্রকৃত ইমানদার মুসলিম জাতি বলে পরিগণিত হবে না”। (সূরা আন্নিসা, আয়াত নং 65)।

৪। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করা হতে সাবধান ও সতর্ক থাকা ওয়াজিব বা অপরিহার্য।

সুতরাং আমরা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করা হতে সদাসর্বদা সাবধান ও সতর্ক থাকবো। কেননা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করার অর্থ হলো অমঙ্গলের পথ অবলম্বন করা এবং বিপথগামী হওয়া আর মহা শাস্তি লাভের আয়োজন করা। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيم) سورة النور، جزء من الآية 63. ভাবার্থের অনুবাদ: “অতএব যারা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদের আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করবে, তারা এখনই সতর্ক হয়ে যাক। নচেৎ তাদেরকে গ্রাস করবে সর্ব প্রকারের অমঙ্গল এবং তাদেরকে গ্রেফতার করবে কঠিন শাস্তি”। (সূরা আন্ নূর, আয়াত নং ৬৩ এর অংশবিশেষ)।

৫। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ভালোবাসাকে সমস্ত মানুষের ভালোবাসার উপরে প্রাধান্য দেওয়া অপরিহার্য।

অতএব আমাদের প্রতি এটা ওয়াজিব বা অপরিহার্য যে, আমরা যেন আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ভালোবাসাকে আমাদের জীবন, পিতামাতা, সন্তানসন্ততি এবং সকল মানুষের ভালোবাসার উপরে প্রাধান্য দেই। যেহেতু আনাস [রাদিয়াল্লাহ আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: "لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ؛ حَتَّى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِن وَّالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ". (صحيح البخاري، رقم الحديث 15، واللفظ له، وصحيح مسلم، رقم الحديث 70- (44)، ). অর্থ: “তোমাদের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তি হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকটে তার পিতামাতা, সন্তানসন্ততি এবং অন্য সকল মানুষ অপেক্ষা অধিক সুপ্রিয় না হবো”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭০ -(৪৪), তবে হাদীসের শব্দগুলি সহীহ বুখারী থেকে নেওয়া হয়েছে] ।

৬। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি এইভাবে ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা যে, তিনি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন ও প্রচার করেছেন।

আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রতি এইভাবে ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা ওয়জিব বা অপরিহার্য যে, তিনি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন ও প্রচার করেছেন, তাঁর আমানতের সংরক্ষণ করেছেন, সকল জাতির মানব সমাজের জন্য কল্যাণদায়ক কর্ম করেছেন ও তাদেরকে মঙ্গলদায়ক শিক্ষা প্রদান করেছেন। সুতরাং তিনি সকল জাতির মানব সমাজের জন্য কল্যাণের পথ প্রদর্শন করেছেন এবং সেই পথ অবলম্বন করার প্রতি উতসাহিত করেছেন। আর সমস্ত প্রকারের অমঙ্গল হতে সকল জাতির মানব সমাজকে বিরত থাকতে বলেছেন এবং সতর্ক করেছেন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِيْنًا)، سورة المائدة، جزء من الآية 3. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে সকল জাতির মানব সমাজ! আমি এখন তোমাদের জন্য তোমাদের সত্য সঠিক ধর্ম প্রকৃত ইসলামকে পরিপূর্ণ করেদিলাম আর আমি আমার সমস্ত প্রকারের অনুগ্রহ পুর্ণরূপে তোমাদেরকে প্রদান করলাম এবং আমি প্রকৃত ইসলামকেই তোমাদের জন্য সত্য সঠিক ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম”। (সূরা আল মায়িদা, আয়াত নং 3 এর অংশবিশেষ)।

বিদায়ী হজ্জযাত্রার সময় একটি বিরাট জনসভায় সাহাবীগণ এই বলে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে, আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন ও প্রচার করেছেন। সুতরাং জাবের [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সেই হাদীসে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সাহাবীগণকে সম্বোধিত করে বলেছিলেন: “আমার বিষয়ে তোমরা পরকালে আল্লাহর পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসিত হলে, তোমরা কী বলবে?” তারা সবাই বলেছিলেন: আমরা সাক্ষ্য দিবো যে, আপনি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন ও প্রচার করেছেন, তাঁর আমানতের সংরক্ষণ করেছেন, সকল জাতির মানব সমাজের জন্য কল্যাণদায়ক কর্ম করেছেন ও তাদেরকে মঙ্গলদায়ক শিক্ষা প্রদান করেছেন। অতঃপর আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিজের হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমার মধ্যবর্তী আঙ্গুল তর্জনী আকাশের দিকে তুলে লোকদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছিলেন: “হে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন! আপনি সাক্ষী থাকুন”! [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৭ - (১২১৮)]।

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন