মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় মহামারী হলো বিভিন্ন প্রকারের শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের উপকরণ।
মহামারীতে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি হলো প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্যের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই মহামারীতে মুসলিম ও অমুসলিম সবাই আক্রান্ত হয়। তবে মুসলিম ব্যক্তি দুর্যোগে বা বিপদে আক্রান্ত হলে তার অবস্থা অমুসলিম ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার অবস্থার মতো হয় না। যেহেতু সে তার প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান প্রতিপালক আল্লাহর প্রদত্ত শিক্ষা ও আদেশ মোতাবেক যে কোনো দুর্যোগের বা বিপদের শক্তিশালী হয়ে মোকাবিলা করে ও ধৈর্যধারণ করে। এবং দুর্যোগ বা বিপদ আসার আগে বৈধ পন্থায় তাকে প্রতিহত করে আর দুর্যোগ বা বিপদ আসার পর তাতে থেকে মুক্তি ও আরোগ্য লাভেরও বৈধ পন্থা অবলম্বন করে।
সৃষ্টি জগতের মধ্যে একটি এমন দুর্বল বস্তু রয়েছে যে, সেই দুর্বল বস্তুটিকে অণুবীক্ষণযন্ত্রের সাহায্য ছাড়া দেখা যায় না। আর এই দুর্বল বস্তুর কারণে মানব সমাজের মধ্যে আতঙ্ক ও ভয় ছড়িয়ে পড়েছে, যেমন:- করোনা ভাইরাস মহামারী রোগ। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর অসীম ক্ষমতা রয়েছে। এবং এর দ্বারা এটিও প্রমাণিত হয় যে, মানব জাতি যতোই উন্নতি করুক না কেন এবং যতোই তারা প্রযুক্তির অধিকারী হোক না কেন, আসলে তারা দুর্বল। তাই তারা এই দুর্বলতার গণ্ডির বাইরে যেতে পারে না। এর দ্বারা আরো প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ মহাশক্তিধর পরাক্রমশালী। তাই তাঁকে আসমান ও জমিনের মধ্যে কোনোকিছুই অক্ষম বা অপারক করতে পারে না।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর ফয়সালা ও ভাগ্য লিপিবদ্ধ করার বিষয়টি সত্য।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন, তাই হয়েছে। আর যা ইচ্ছা করেননি, তা হয়নি। আর এরই মধ্যে রয়েছে: সমস্ত দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং মহামারী রোগ। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে আরো বলছেনে: (مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيْبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِيْ أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِيْ كِتَابٍ مِّنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا)، سورة الحديد، جزء من الآية 22. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে সকল জাতির মানব সমাজ! তোমরা জনে রাখো! পৃথিবীর মধ্যে এবং তোমাদের জীবনের মধ্যে যে সমস্ত বিপদাপদ বা সঙ্কট আসে, সে সমস্ত বিপদাপদ বা সঙ্কটের বিস্তরিত বিবরণ সুরক্ষতি ফলকে বা লাওহে মাহফুজে সযত্নে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, কোনো কিছু সৃষ্টি করার অনেক পূর্বেই”। (সূরা আল হাদীদ, আয়াত নং ২২ এর অংশবিশেষ)।
প্রকৃত ইমানদার মুসলিম জাতি বিশ্বাস করে যে, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তুর ভাগ্য বা অদৃষ্ট নির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন কোনো কিছু সৃষ্টি করার পূর্বেই। আর এই বিশ্বাসটি বা মতবাদটি তাদেরকে আতঙ্ক থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে। তাই তারা সদাসর্বদা স্বস্তিতে শ্বাস নিতে পারে। আর তারা প্রশান্তচিত্তে প্রশান্ত হৃদয়ে খোলা মনে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর ফয়সালা গ্রহণ করে থাকে।
শিক্ষামূলক চিন্তাভাবনা করে উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণের বিষয়:
দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং বিপদ আপতিত হওয়ার সময় মানুষের সাহায্য ও সহযোগিতা না করে শিক্ষামূলক বিষয়ে চিন্তাভাবনা না করে শুধু সংবাদ প্রচারে ব্যস্ত থাকা সহায়তার বিষয় নয়। আর দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং বিপদ আপতিত হওয়ার সময় উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে অথচ এটি একটি সুন্নাত ও বড়ো ইবাদত বা উপাসনা। তাই হিলিয়াতুল আউলিয়া গ্রন্থে এসেছে: আবু দারদা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: “রাতের নামাজ পড়ার চেয়ে এক ঘণ্টা শিক্ষামূলক চিন্তাভাবনা করা উত্তম”।
যে সমস্ত দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং বিপদ মুসলিম ব্যক্তির প্রতি আপতিত হয়, সে সমস্ত দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং বিপদের কয়েকটি অবস্থা আছে:
দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং বিপদ আপতিত হওয়ার সময়ের একটি মহা ইবাদত বা উপাসনা হলো: কেবলমাত্র প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর প্রতি বিনম্রতার সহিত প্রত্যাবর্তন করা, তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করা, তাঁর পূর্ণ বশ্যতা স্বীকার করা, তাঁরই কাছে সাহায্য, সহযোগিতা, পরিত্রাণ ও মুক্তি প্রার্থনা করা। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলছেনে: (فَلَوْلَا إِذْ جَاءَهُم بَأْسُنَا تَضَرَّعُوا وَلَٰكِن قَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ)، سورة الأنعام، الآية 43. ভাবার্থের অনুবাদ: “তবে এই শাস্তি আপতিত হওয়ার পরও তারা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কাছে বিনম্রতার সহিত প্রার্থনা বা দোয়া করেনি। তাদের হৃদয় নিশ্চেতন ও কঠিন হওয়ার কারণে। আর শয়তান তাদের অপকর্মকে সুন্দর বা শোভনীয় কর্ম হিসেবে তাদের সামনে উপস্থাপন করেছে”। (সূরা আল আন্আম, আয়াত নং ৪৩)। এবং মহান আল্লাহর কাছে আন্তরিকতার সাথে দোয়া করার মাধ্যমে আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়, আড় দূরীভূত করা হয়, দূরত্ব কমে যায় এবং অনন্ত করুণাময় পরম দয়ালু আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া যায়। অতএব মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলছেনে: (وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ)، سورة البقرة، جزء من الآية 186. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! আমার সৃষ্ট মানব সমাজ যখন আমার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবে: আমি কোথায় আছি? তখন তুমি তাদেরকে জানিয়ে দিবে: আমি তো আমার অনুগত মানব সমাজের খুব নিকটেই আছি। তাই যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সহিত দোয়া বা প্রার্থনার মাধ্যমে আমাকে ডাকবে, আমি তার দোয়া বা প্রার্থনা শুনবো ও গ্রহণ করবো”। (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ১৮৬ এর অংশবিশেষ)। ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন: “দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং বিপদ আপতিত হয় দোয়া বা প্রার্থনাকে বাস্তবরূপে রূপান্তরিত করার জন্য”।
ইমাম ইবনে কাসির [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন: মহান আল্লাহ বলছেনে: আমি যখন তাদেরকে দুর্যোগ এবং বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেছিলাম, তখন তারা বিনম্রতার সহিত এবং পূর্ণ বশ্যতা স্বীকার করে আমার কাছে প্রার্থনা বা দোয়া করেনি। যেহেতু তাদের অন্তর কঠিন ও শক্ত হয়ে পড়েছিলো। তাদের অন্তরে বিনম্রতা ও কোমলতা আসেনি। আর শয়তান তাদের অপকর্মকে এবং আল্লাহর অংশীদার স্থাপন করাকে সুন্দর ও শোভনীয় কর্ম হিসেবে তাদের সামনে পেশ করেছে।
সব চেয়ে বড়ো ক্ষতি সাধনের জন্য অহংকার করা আর মহান আল্লাহর শাস্তি থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করা। আর তা হলো: আমরা ধারণা করি যে, সকল প্রকারের দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং বিপদ থেকে আমরা নিরাপদ। আর সর্বশেষে আমরা চিন্তা করি যে, দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং বিপদের সম্পর্ক আছে আমাদের পাপের সাথে। অথচ পবিত্র কুরআনের মধ্যে স্পষ্টভাবে এই বিষয়টিকে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, অনেক সময় পাপের পরিণাম হিসেবে দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং বিপদ আপতিত হয়। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ﴿ أَوَلَمَّا أَصَابَتْكُم مُّصِيبَةٌ قَدْ أَصَبْتُم مِّثْلَيْهَا قُلْتُمْ أَنَّىٰ هَٰذَا ۖ قُلْ هُوَ مِنْ عِندِ أَنفُسِكُمْ ۗ ﴾ (آل عمران: 165) ভাবার্থের অনুবাদ: “কী ব্যাপার! তোমাদের উপরে যখন ওহুদের বিপদ এলো তখন তোমরা জিজ্ঞাসা করছো: কেন এমন হলো? অথচ বদরে তোমরা প্রতিপক্ষের উপরে এর চেয়ে দ্বিগুণ বিপদ ঘটিয়েছিলে। আর যে বিপদ এখন তোমাদের উপরে এসেছে তা হলো তোমাদের পাপের কারণে; যেহেতু তোমরা আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদের শিক্ষার বিপরীত কর্ম করেছো”। (সূরা আল ইমরান : ১৬৫)। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: {وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ} (الشورى: 30). ভাবার্থের অনুবাদ: “তোমাদের উপরে দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং বিপদ নেমে আসে, তোমাদের পাপের পরিণাম হিসেবে। যদিও তিনি অনেক কিছু এমনিই ক্ষমা করে থাকেন”। (সূরা শুরা: 30)।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্ট মানব সমাজের প্রতি সদয়:
যখন দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয়, বিপদ এবং সঙ্কট আসে, তখন প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর কৃপা প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজের প্রতি উন্মুক্ত হয় এবং প্রকাশ পায়। সুতরাং তিনি তাদের সঙ্কট দূরীভুত করেন এবং তাদেরকে সমস্ত প্রকারের অমঙ্গল হতে রক্ষা করেন আর অন্যদের প্রতি যে দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয়, বিপদ এবং সঙ্কট নেমে আসে, তাতে থেকে তিনি তাদেরকে সুরক্ষিত করেন। আর তাদেরকে তিনি সমস্ত বিপর্যয় ও বিপদের সময়ে ধৈর্যধারণ করার এবং তাদের ভাগ্যের প্রতি তাদেকে সন্তুষ্ট থাকার শক্তি প্রদান করেন। আর তাদের প্রতি মহান আল্লাহর কৃপা না থাকলে, তাদের হৃদয় দুঃখকষ্টে, যন্ত্রণায় এবং ভয়ে পরিপূর্ণ হয়ে থাকতো।
শাইখ আল্লামা সাদি [রাহিমাহুল্লাহ] এই আয়াতটির তাফসীরে বা ব্যাখ্যায় বলেছেন: ﴿ إِنَّ رَبِّي لَطِيفٌ لِمَا يَشَاءُ ﴾: ভাবার্থের অনুবাদ: “নিশ্চয় আমার প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান প্রতিপালক আল্লাহ যা করার ইচ্ছা করেন, তাতে তিনি সদয় হন”। সুতরাং তিনি এমন পন্থায় মানুষের মঙ্গল করেন এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করেন যে, মানুষ তা অনুভব করতে পারে না। আর প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান প্রতিপালক আল্লাহ মানুষকে এমন উপাদানের মাধ্যমে উচ্চ মর্যাদা প্রদন করেন যে, মানুষ সেই উপাদান পছন্দ করে না”।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর উপর আস্থা রাখা এবং তাঁর উপর উত্তম পন্থায় ভরসা রাখা হলো সকল প্রকারের দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং বিপদ থেকে পরিত্রাণ লাভের মহা উপাদান। তাই আমরা যেন পূর্ণ বিশ্বাস রাখি যে, অতি সত্বর দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং বিপদ দূর হয়ে যাবে। আর আপনি শান্তির বার্তা প্রচার করুন। দুর্ভাবনা, দুশ্চিন্তা এবং হতাশা বর্জন করুন। একটি সঙ্কট দুইটি সুখশান্তিকে পরাজিত করতে পারবে না। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ﴿ فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا * إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا ﴾ (الشرح: 5، 6). ভাবার্থের অনুবাদ: “অতএব অবশ্যই প্রতিটি সঙ্কটের সাথেই রয়েছে সুখশান্তি! অবশ্যই প্রতিটি সঙ্কটের সাথেই রয়েছে সুখশান্তি”। (সূরা শারহ: 5, 6)।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর জগৎ পরিচালনা সংক্রান্ত বিধিবিধানের অর্ন্তভুক্ত বিষয় হলো: সঙ্কট নিরসনের জন্য সম্ভবপর বৈধ বাস্তব ও বাহ্যিক উপাদান এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আর এই নিয়ম মোতাবেক আল্লাহর সমস্ত বার্তাবহ নাবী রাসূল এবং সমস্ত ন্যায়পরায়ণ মানুষ জীবন পরিচালিত করেছেন এবং সঙ্কট নিরসনের জন্য সম্ভবপর বৈধ বাস্তব ও বাহ্যিক উপাদান এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। আর এটাই হলো মহান আল্লাহর প্রতি সঠিক বিশ্বাস এবং তাঁর উপর পূর্ণ ভরসা রাখার প্রকৃত অর্থ ও আনুগত্য এবং দাসত্ব।
মহান আল্লাহর প্রতি সঠিকভাবে পূর্ণ ভরসা রাখার প্রকৃত তাৎপর্য হলো: প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর প্রতি হৃদয়ের নির্ভর করা ও ভরসা রাখা এবং এর সাথে সাথে জীবনকে সুরক্ষিত করার জন্য সঠিক উপকরণ গ্রহণ করা। সুতরাং মহান আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা আর জীবনকে সুরক্ষিত করার জন্য সঠিক উপকরণ গ্রহণ না করা হলো আসলে প্রকৃত ইসলাম ধর্মকে কলুষিত করার নাম এবং বুদ্ধিকে দূষিত করার নাম। আর প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর প্রতি ভরসা না রেখে জীবনকে সুরক্ষিত করার জন্য কেবলমাত্র বাস্তব ও বাহ্যিক উপাদান ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো একত্বের বা একত্ববাদের বিপরীত আকীদা অথবা মতবাদ। তাই এর মাধ্যমে বাস্তব ও বাহ্যিক উপাদানকে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর অংশীদার স্থাপন করা হয়।
একটি অদৃশ্য গুপ্ত প্রাণী ভাইরাস দুনিয়ার সমস্ত মানুষের জীবনের মাধুর্য, সৌন্দর্য, স্বাদ, শান্তি, নিরাপত্তা ও জীবিকাকে ঘোলা ও পঙ্কিল করেছে এবং কেড়ে নিয়েছে। সুতরাং প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির কথা বাদে শুধু বুদ্ধিমান মানুষের জন্য কি এটা শোভা পায় যে, সে এই অস্থায়ী বা ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াকে নিজের জন্য স্থায়ী বাসস্থান বানিয়ে নিবে। এবং এতে নিশ্চিতভাবে আস্থা রাখবে ও আশ্রয় নিবে আর এর জন্য লড়াই করবে এবং এর ধ্বংসাবশেষের জন্য প্রতিযোগিতা করবে?!
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এই সমস্ত অদৃশ্য গুপ্ত ভাইরাস প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর জগৎ পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ের নিদর্শন। এই নিদর্শনের দ্বারা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সতর্ক করার জন্য ভয় প্রদর্শন করেন এবং তাদেরকে এর মাধ্যমে প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করার প্রতি উৎসাহিত করেন। আর মানব জাতি যেন প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করা হতে বিরত থাকার মাধ্যমে তাঁকে ভয় করে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ﴿ وَمَا نُرْسِلُ بِالآيَاتِ إِلا تَخْوِيفًا ﴾ (الإسراء: 59). ভাবার্থের অনুবাদ: “আর আমি আমার নিদর্শনগুলি প্রেরণ করি আমার বিরুদ্ধাচরণ করা হতে মানব জাতিকে ভয় প্রদর্শন করার জন্য”। (আল-ইসরা: 59)।
প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর নিদর্শনগুলি দেখার মাধ্যমে তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করা হতে বিরত থাকার মাধ্যমে তাঁকে ভয় করার প্রতি উৎসাহ প্রদান।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর জীবন বিধানের মধ্যে এই বিষয়টি ছিলো যে, প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর নিদর্শনগুলি দেখে তিনি ভয় করতেন। আনাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: যখন প্রবল গতিতে বায়ু প্রবাহিত হত তখন আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর চেহারায় অস্থিরতার প্রক্রিয়া বা ভাব ফুটে উঠতো। (বুখারী 1034)।
সময় হলো এই পৃথিবীতে মুসলিম ব্যক্তির মূলধন। আর এই সময় হলো তার সব চেয়ে মূল্যবান মাল এবং সব চেয়ে সুন্দর বা ভালো রত্ন। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “মানব সমাজে দুইটি এমন নিয়ামত আছে যে, সেই দুইটি নিয়ামতের বিষয়ে বহু লোক ধোঁকায় নিপতিত হয়েছে: স্বাস্থ্য এবং অবসর”। (বুখারী 6412)।
সুতরাং বুদ্ধিমান লোক সদাসর্বদা তার সময়ের দ্বারা উপকৃত হবে এবং সময়কে কাজে লাগাবে। আর বিশেষ করে দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং বিপদ আপতিত হওয়ার সময়। সুতরাং সে দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং বিপদ আপতিত হওয়ার সময় নিজের সময়কে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের কাজে ব্যবহার করবে। ইবনুল কাইয়েম [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন: সময় নষ্ট করা হলো মৃত্যুর চেয়েও খারাপ; যেহেতু সময় নষ্ট করার অর্থ হলো মহান আল্লাহ ও পরকাল থেকে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করা এবং মৃত্যু হলো আপনাকে দুনিয়া ও দুনিয়ার লোকদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা।
আল্লামা শানকিতী [রাহিমাহুল্লাহ] এই আয়াতের বিষয়ে: ﴿فَإِذَا فَرَغْتَ فَانصَبْ﴾، ভাবার্থের অনুবাদ: “অতএব তুমি যখনই দুনিয়ার কাজ শেষ করে কিছু সময় পাবে, তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে একান্তভাবে উপাসনা ও দোয়ায় মগ্ন হবে। (সূরা ইনশিরাহ: ৭) বলেছেন: এই আয়াতের মধ্যে অবসৃত বা অবসরপ্রাপ্ত মানুষের সমস্যার সমাধান রয়েছে। অবসৃত বা অবসরপ্রাপ্ত মানুষের সমস্যার জন্য সারা বিশ্ব অস্থির রয়েছে। তবে অবসৃত বা অবসরপ্রাপ্ত মুসলিম ব্যক্তির কোনো সমস্যা নেই। যেহেতু যখনই তার দুনিয়ার কাজ শেষ হবে, তখনই সে তার পরকালের কল্যাণ লাভের কাজে একান্তভাবে মগ্ন হবে।