মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় প্রত্যর্পণের আশায় বিনিময় ছাড়াই কোনো জিনিসের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার অনুমতি প্রদান করার বিষয়।
প্রত্যর্পণের আশায় বিনিময় ছাড়াই কোনো জিনিসের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার অনুমতি বা আরিয়া প্রদান করার ভাবার্থ।
বিনিময় ছাড়াই কোনো জিনিসের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার অনুমতি প্রদান করাকে আরিয়া বলা হয়। একে আরিয়া বলা হয় এই জন্য যে, একে বিনিময় থেকে খালি করা হয়েছে।
প্রত্যর্পণের আশায় বিনিময় ছাড়াই কোনো জিনিসের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার অনুমতি নেওয়ার বা আরিয়ার বিধান
প্রত্যর্পণের আশায় বিনিময় ছাড়াই কোনো জিনিসের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার অনুমতি বা আরিয়া হলো একটি কল্যাণদায়ক কর্ম এবং হিতসাধন। পবিত্র কুরআন, হাদীস, ইজমা এবং কেয়াস বা যুক্তিসঙ্গত পন্থায় এই কাজটি হলো প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক একটি মঙ্গলদায়ক বৈধ কাজ। তাই প্রত্যর্পণের আশায় বিনিময় ছাড়াই কোনো জিনিসের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার অনুমতি বা আরিয়ার চুক্তি করা হলো একটি বৈধ চুক্তি। তবে এই চুক্তি কোনো জরুরি অথবা অপরিহার্য চুক্তি নয়। অতএব যে দুই পক্ষের মধ্যে এই চুক্তি সম্পাদিত হবে, সেই দুই পক্ষের মধ্যে থেকে যে কোনো এক পক্ষ এই চুক্তি ভঙ্গ করতে পারবে। আর এই প্রত্যর্পণের আশায় বিনিময় ছাড়াই কোনো জিনিসের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার অনুমতি প্রদান করা বা আরিয়া হলো একটি মোস্তাহাব বা পছন্দনীয় কল্যাণদায়ক কাজ। এই কাজের মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হয়, তার প্রয়োজন পূরণ করা হয়, তার হৃদয়ে আনন্দ ও ভালোবাসা সৃষ্টি করা হয়। আর প্রত্যর্পণের আশায় বিনিময় ছাড়াই কোনো জিনিসের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার অনুমতি বা আরিয়া দেওয়ার গুরুত্ব ওই সময়ে বেশি হয়, যে সময়ে মালিক সেই জিনিসের অমুখাপেক্ষী হয় আর আরিয়ার গ্রহীতা মুখাপেক্ষী হয়। প্রত্যর্পণের আশায় বিনিময় ছাড়াই কোনো জিনিসের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার অনুমতি বা আরিয়া গ্রহণের চুক্তি যে কোনো স্পষ্ট কথা বা শব্দের দ্বারা সম্পাদিত হয়।
প্রত্যর্পণের আশায় বিনিময় ছাড়াই কোনো জিনিসের মাধ্যমে উপকৃত হওয়া ও উপকৃত করা বা আরিয়া বৈধ হওয়ার তাৎপর্য ও রহস্য।
কোনো ব্যক্তি কোনো জিনিষের দ্বারা উপকৃত হওয়ার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। কিন্তু সে সেই জিনিষটির মালিক হতে পারে না এবং তার কাছে এমন কোনো অর্থ বা মাল নেই যে, সেই জিনিষটির সে ভাড়া প্রদান করবে। আবার অন্যদিকে এমন মানুও আছে যে, সে উক্ত জিনিসটি উপহার বা দান খয়রাত হিসাবে মুখাপেক্ষী ব্যক্তিকে দিতে সক্ষম হয়না। তবে সে কোনো ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে উপকৃত হওয়ার জন্য উক্ত জিনিসটি দিতে পারবে এবং পরে ফেরত নিতে পারবে। আরিয়া আদানপ্রদানের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে সাময়িকভাবে উপকৃত হওয়া ও উপকৃত করার সুযোগ রয়েছে।
মহান আল্লাহর এটি একটি করুণা যে, তিনি মানুষের জন্য প্রত্যর্পণের আশায় বিনিময় ছাড়াই কোনো জিনিসের মাধ্যমে উপকৃত হওয়া ও উপকৃত করা বা আরিয়া আদানপ্রদান করা বৈধ করে দিয়েছেন। যাতে আরিয়া গ্রহণকারী মুখাপেক্ষী ব্যক্তির প্রয়োজন পূরণ নিশ্চিত হয় এবং আরিয়া প্রদানকারী ব্যক্তির পুণ্য লাভ হয়; যেহেতু সে তার ভায়ের উপকার করেছে এবং নিজের জিনিস নিজের জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছে।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ)، سورة المائدة، جزء من الآية2. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে সকল জাতির মানব সমাজ! তোমরা প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক সৎকর্মে এবং প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহকে মেনে চলার বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করতে থাকো। আর প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহকে অমান্য করার কাজে এবং অন্যায় বা জুলুম ও পাপের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করা হতে সদাসর্বদা বিরত থাকো”। (সূরা আল মায়িদা, আয়াত নং 2 এর অংশবিশেষ)।
আর আনাস বিন মালিক [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: মদীনায় একবার শত্রুর আক্রমণের ভয় ছড়িয়ে পড়েছিলো। তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আবু তালহা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] এর নিকট থেকে প্রত্যর্পণের আশায় বিনিময় ছাড়াই উপকৃত হওয়ার জন্য আরিয়া হিসেবে একটি ঘোড়া নিয়েছিলেন। সেই ঘোড়াটির নাম ছিলো মানদুব। অতঃপর তাতে তিনি আরোহণ করেছিলেন। তারপরে তিনি ঘোড়াটিতে টহল দিয়ে ফিরে এসে বললেন: “কিছুই তো দেখতে পেলাম না। তবে এই ঘোড়াটিকে আমি সমুদ্রের মতো আরামদায়ক পেয়েছি”। (বুখারি 2627, মুসলিম 2307)।
প্রত্যর্পণের আশায় বিনিময় ছাড়াই কোনো জিনিসের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার জন্য আরিয়া হিসেবে কোনো জিনিস নেওয়া সঠিক হওয়ার শর্তাবলি
প্রত্যর্পণের আশায় বিনিময় ছাড়াই কোনো জিনিসের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার জন্য আরিয়া হিসেবে কোনো জিনিস নেওয়ার স্তম্ভসমূহ:
আরিয়া গ্রহণকারীকে অবশ্যই আরিয়ার জিনিসটির সংরক্ষণ ও যত্ন করতে হবে এবং ভালো পন্থায় সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। আর সেই জিনিসটি মালিককে অক্ষত ও নিখুঁত অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। আর আরিয়া গ্রহণকারীর হাতে জিনিসটি যদি ব্যবহার না করেই খারাপ হয়ে যায়, তাহলে তার জন্য সম্পূর্ণরূপে আরিয়া গ্রহণকারী দায়ী হবে এবং তার ক্ষতিপূরণ তাকে দিতে হবে। তাতে সে কোনো প্রকারের অবহেলা করুক বা না করুক। কিন্তু আরিয়ার জিনিসটি অনুমোদিত কাজের জন্য ব্যবহারের সময় যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তাতে কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। তবে সেই জিনিসটি আরিয়া গ্রহণকারী যদি ঠিকভাবে ব্যবহার না করে থাকে বা জিনিসটির ব্যবহারে অবহেলা করে থাকে, তাহলে সে দায়ী হবে এবং তার ক্ষতিপূরণ সম্পূর্ণরূপে তাকে দিতে হবে।
আরিয়া গ্রহণকারীর প্রয়োজন পূরণ হলেই তার প্রতি আরিয়ার জিনিসটি আরিয়া প্রদানকারীকে ফেরত দেওয়া ওয়াজিব বা অপরিহার্য। আর সে আরিয়ার জিনিসটি যে অক্ষত ও নিখুঁত অবস্থায় নিয়েছে, ঠিক সেই অক্ষত ও নিখুঁত অবস্থায় ফেরত দিবে। আর তার জন্য এটা জায়েজ নয় যে, সে আরিয়ার জিনিসটিকে নিজের কাছ আটকে রাখবে বা অস্বীকার করবে। আর সে যদি এই কাজ করে, তাহলে গুনাগার বা পাপী ও বিশ্বাসঘাতক বলে বিবেচিত হবে।
আরিয়া প্রদানকারীকে যখনই ইচ্ছা করবে, তখনই সে তার আরিয়ার জিনিসটি ফেরত নিতে পারবে যদি তাতে আরিয়া গ্রহণকারীর কোনো ক্ষতি না হয়। তবে যদি তাতে আরিয়া গ্রহণকারীর কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে আরিয়া প্রদানকারী তার আরিয়ার জিনিসটি তার কাছ থেকে ফেরত নিতে বিলম্ব করবে। যেমন:- দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, কোনো ব্যক্তি আরিয়া হিসেবে একটি জমি নিয়েছে এবং তাতে সে কিছু চাষ করেছে এবং বীজ বপন করেছে। এই ক্ষেত্রে আরিয়া প্রদানকারী তার জমি ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরত নিতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে উক্ত জমির ফসল না কাটবে।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا)، سورة النساء، جزء من الآية 58. ভাবার্থের অনুবাদ: “হে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজ! প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ প্রদান করছেন যে, তোমাদের নিকটে যাদের আমানত ও প্রাপ্য অধিকার রয়েছে, তাদেরকে তোমরা তাদের আমানত ও প্রাপ্য অধিকার সঠিকভাবে চুকিয়ে দাও”। (সূরা আন্নিসা, আয়াত নং 58 এর অংশবিশেষ)।