মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় শিরোনাম: জাকাত: এর তথ্য ও উদ্দেশ্য
জাকাত হলো একটি আর্থিক অপরিহার্য ইবাদত বা উপাসনা। ধনীদের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ গরিব মিসকিন ও অভাবগ্রস্ত এবং অন্যান্য হকদারদের মধ্যে বণ্টন করা হয় তাদের কষ্ট দূর করার জন্য।
১। ধনসম্পত্তির প্রতি ভালবাসা হলো একটি মানবিক প্রবৃত্তি ও চাহিদা। তাই মানুষ সম্পদ ও অর্থের সংরক্ষণ করতে এবং উপার্জন করার কাজে লেগে থাকার জন্য আগ্রহী হয়। সুতরাং প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা কৃপণতা এবং লোভ লালসা থেকে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে এবং দুনিয়ার ভালবাসা ও তার মালামাল জিনিসপত্রের আকর্ষণ থেকে পবিত্র রাখার জন্য জাকাত প্রদান করা অপরিহার্য করে দিয়েছে। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا) (التوبة: 103). ভাবার্থের অনুবাদ: “হে বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ! তুমি তাদের ধনসম্পত্তি থেকে জাকাত গ্রহণ করো! এর দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে”। (সূরা তাওবাহ: 103)।
২। জাকাত প্রদানের মাধ্যমে ভালোবাস ও সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়। যেহেতু যে ব্যক্তি মানুষের উপকার করে, সে ব্যক্তিকে লোকের আত্মা ভালোবাসে। এর মাধ্যমে মুসলিম সমাজের সদস্যরা ভালোবাসার সহিত জীবন পরিচালিত করবে। এবং তারা একত্রিত হয়ে বসবাস করবে একটি শক্ত বিল্ডিংয়ের মতো। একে অপরকে শক্তিশালী করবে। আর চুরি, লুটপাট ও আত্মসাতের ঘটনা হ্রাস পাবে।
৩। জাকাত প্রদানের দ্বারা সব জগতের সত্য প্রভু মহান আল্লাহর জন্য আনুগত্য, দাসত্ব, পূর্ণ আত্মসমর্পণ হয়। ধনী লোক জাকাত প্রদানের মাধ্যমে মহান আল্লাহর বিধিবিধান বাস্তবায়িত করে এবং তাঁর নেয়মতের শুকরিয়া আদায় করে। এবং মহান আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করেন। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ) (إبراهيم: 7). ভাবার্থের অনুবাদ: “নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে অনেক নেয়ামত দান করবো, যদি তোমরা আমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো”। (সূরা ইবরাহিম : ৭)।
৪। জাকাত প্রদানের মাধ্যমে, সামাজিক নিরাপত্তার অর্থ প্রকাশ পায় এবং সমাজের লোকের মধ্যে অনেক ভারসাম্য অর্জিত হয়। জাকাতের হকদারদেরকে জাকাতের সম্পদ প্রদান করার মাধ্যমে সমাজের ধনীদের হাতে সম্পদ সীমাবদ্ধ হবে না এবং একচেটিয়া হবে না। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنْكُمْ) (الحشر: 7). ভাবার্থের অনুবাদ: “যাতে করে তোমাদের বিত্তবানদের মধ্যেই ধনসম্পত্তি আবর্তিত না হয়”। (সূরা হাশর: 7)।
প্রকৃত ইসলাম ধর্ম জাকাতের হকদারদেরকে নির্ধারিত করে দিয়েছে। সুতরাং মুসলিম ব্যক্তি তার জাকাত এক বা একাধিক শ্রেণীর মানুষকে তার জাকাত প্রদান করতে পারবে। কিংবা মুসলিম ব্যক্তি তার জাকাত ওই সমস্ত দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে দিতে পারবে, যে সমস্ত দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা জাকাতের হকদার মুসলিমদের মধ্যে জাকাতের মাল বিতরণ করে। জাকাত প্রদানকারীর জন্য উত্তম হলো এই যে, সে যে দেশে বসবাস করবে, সেই দেশেই তার জাকাত বিতরণ করবে।