শিখতে থাকুন

আপনি তো নিবন্ধিত হননি।
শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি এখনই নিবন্ধন করুন, এর দ্বারা আপনার অগ্রগতিকে অঅপনি ধরে রাখতে পারবেন, আপনার সাংকেতিক চিহ্ন বা পয়েন্টগুলির সংখ্যা একত্রিত করতে পারবেন এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রতিযোগিতায় আপনার প্রবেশের সুযোগ হবে। তাই এই শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট “তা প্ল্যাটফর্ম” টিতে আপনি নিবন্ধিত হন, আপনি সেই পাঠ্য বিষয়গুলিতে একটি বৈদ্যুতিন সার্টিফিকেট পাবেন, যে পাঠ্য বিষয়গুলির আপনি জ্ঞান লাভ করবেন।

মডেল: বর্তমান বিভাগ

পাঠ্য বিষয় হজ্জ পালনের পদ্ধতি ‎

‎ আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎তাঁর উম্মতকে বা তাঁর অনুসরণকারীদেরকে হজ্জ পালনের পদ্ধতি শিখিয়ে ‎দিয়েছেন। এই অনুচ্ছেদে আপনি হজ্জ পালনের পদ্ধতি জানতে পারবেন। ‎যাতে আপনার হজ্জ প্রকৃত ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মোতাবেক আল্লাহর রাসূল ‎‎[সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] প্রদত্ত নিয়ম অনুযায়ী হয়। ‎

 

  • তিন প্রকার হজ্জের বিভাগসমূহ জানা।
  • হজ্জ পালনের পদ্ধতির জ্ঞান লাভ করা।

অন্য একজন ছাত্রকে গণনা করুন। এই পাঠ্য বিষয়টি সম্পূর্ণ করুন

হজ্জের বিভাগসমূহ ‎

হজ্জ হলো তিন প্রকার, আর তা হলো: তামাত্তু, কিরান এবং ইফরাদ। আর যে ব্যক্তি ‎হজ্জ পালন করার ইচ্ছা পোষণ করবে, সে যেন এই তিন প্রকার হজ্জের মধ্যে থেকে ‎এক প্রকার হজ্জ পালন করার বিষয়টি চয়ন করে। ‎

আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা আল্লাহর রাসূল ‎‎[সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সঙ্গে হজ্জ পালন করার জন্য যাত্রা করেছিলাম। ‎তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লাম] বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি একত্রে হজ্জ ও ওমরার ‎পালন করার জন্য ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করেছে, সে যেন তাই করে। আর যে ‎ব্যাক্তি শুধু হজ্জ পালন করার জন্য ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করেছে, সেও যেন ‎তাই করে। আর যে ব্যাক্তি শুধু ওমরা পালন করার জন্য ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা ‎করেছে, সেও যেন তাই করে”। (মুসলিম ১২১১)।

তামাত্তু হজ্জ

তামাত্তু হজ্জের পদ্ধতি: হজ্জের মাস বা সময় শুরু হয় শাওয়াল মাস থেকে জুলকাদা ‎ও জুলহিজ্জা মাসের দশ তারিখ পর্যন্ত। সুতরাং হজ্জের মাসে বা সময়ে মীকাত থেকে ‎শুধুমাত্র ওমরা পালন করার জন্য ওমরার ইহরাম বাঁধা এবং ওমরা পালন করার দৃঢ় ‎সংকল্প মনের মধ্যে স্থির করা ও মৌখিক এইভাবে তালবিয়া পাঠ করা: হে মহান ‎আল্লাহ! আমি ওমরা পালন করে উপকৃত হয়ে হজ্জ পালন করার দৃঢ় সংকল্প স্থির ‎করছি। অতঃপর পবিত্র মক্কা আগমন‏ ‏করে কাবা ঘরের তাওয়াফ‏ ‏শেষ করার পরে ‎সাফা ও মারওয়ার সাঈ করে নেওয়ার পর মাথার কেশ মুণ্ডিত করে বা ছোটো করে ‎ওমরা পালন করার কাজ শেষ করবে এবং হালাল হয়ে যাবে। তাই তার ইহরাম বাঁধার ‎কারণে তার প্রতি যা নিষিদ্ধ হয়েছিলো তা তার জন্য হালাল হয়ে যাবে। অতঃপর ‎জুলহিজ্জা মাসের আট তারিখে স্বীয় অবস্থানস্থল হতে হজ্জের ইহরাম বেঁধে হজ্জ ‎পালনের সমস্ত কর্মে রত থাকবে। আর ঈদের দিন জামরাতুল আকাবার কঙ্কর নিক্ষেপ ‎না করা পর্যন্ত সে ইহরাম অবস্থায় থাকবে। এবং তাকে তামাত্তু হজ্জের হাদয়ী বা ‎কুরবানী জবাই করতে হবে। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: ‎ ‏﴿فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ﴾ [البقرة: 196].‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “যে ব্যক্তি হজ্জ পালনের আগে ওমরা পালন করে উপকৃত হবে সে ‎সহজলভ্য হজ্জের হাদয়ী বা কুরবানী জবাই করবে”। ‎[সূরা বাকারা: 196]।

কিরান হজ্জ

কিরান হজ্জের পদ্ধতি: হজ্জ পালনকারী কই সাথে ওমরা ও হজ্জের ইহরাম বাঁধবে ‎এবং ইহরাম বাঁধার সময় বলবে:‎ ‏(لبيك اللهمّ عمرة وحجاً)‏ অর্থ: “হে মহান আল্লাহ! আমি আমার মনের মধ্যে ওমরা ও হজ্জ পালন করার দৃঢ় ‎সংকল্প স্থির করেছি তাই আমি আপনার আনুগত্যের জন্য উপস্থিত হয়েছি”। অতঃপর পবিত্র মক্কায় আগমন‏ ‏করবে এবং কাবা ঘরের আগমন তাওয়াফ‏ ‏শেষ করার ‎পরে সাফা ও মারওয়ার সাঈ করে নিবে। অথবা ইফাদা তাওয়াফ শেষ করার পরে ‎সাফা ও মারওয়ার সাঈ করবে। এর পর মাথার কেশ মুণ্ডিত করবে না আর হালালও ‎হবে না। বরং ইহরামের অবস্থায় থাকবে ঈদের দিন জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর ‎নিক্ষেপ করা পর্যন্ত। তারপর মাথার কেশ মুণ্ডিত করবে। আর কিরান হজ্জ ‎পালনকারীকে হজ্জের হাদয়ী বা কুরবানী জবাই করতে হবে।

ইফরাদ হজ্জ

ইফরাদ হজ্জের পদ্ধতি: হজ্জ পালনকারী কেবলমাত্র হজ্জের ইহরাম বাঁধবে এবং ‎ইহরাম বাঁধার সময় বলবে:‎ ‏(لبيك حجاً)‏ লাব্বাইকা হাজ্জা অর্থ: “হে মহান আল্লাহ! আমি আমার মনের মধ্যে হজ্জ পালন করার দৃঢ় সংকল্প স্থির ‎করেছি তাই আমি আপনার আনুগত্যের জন্য উপস্থিত হয়েছি”। অতঃপর পবিত্র মক্কায় আগমন‏ ‏করবে এবং কাবা ঘরের আগমন তাওয়াফ‏ ‏শেষ করার ‎পরে সাফা ও মারওয়ার সাঈ করে নিবে। অথবা ইফাদা তাওয়াফ শেষ করার পরে ‎সাফা ও মারওয়ার সাঈ করবে। যেহেতু তাকে একবার সাফা ও মারওয়ার সাঈ করতে ‎হবে। এর পর মাথার কেশ মুণ্ডিত করবে না আর হালালও হবে না। বরং ইহরামের ‎অবস্থায় থাকবে ঈদের দিন জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত। তারপর ‎মাথার কেশ মুণ্ডিত করবে। আর ইফরাদ হজ্জ পালনকারীকে হজ্জের হাদয়ী বা কুরবানী ‎জবাই করতে হবে না।

হজ্জ পালন করার পদ্ধতি:‎

মুসলিম ব্যক্তির অপরিহার্য কর্তব্য হলো এই যে, সে যেন ওই নিয়মে হজ্জ পালন করে, ‎যে নিয়মে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ‎হজ্জ পালন করেছেন এবং তাঁর সাহাবীগণ [রাদিয়াল্লাহু আনহুম] কে হজ্জ পালন করা ‎আদেশ প্রদান করেছেন। সুতরাং জাবের [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি ‎বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে ‎কুরবানির ঈদের দিন দেখেছি তিনি তাঁর উটের উপরে আরোহিত অবস্থায় জামরাতুল ‎আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করছেন আর তিনি বলছেন: ‎ ‏«لتأخذوا مناسككم، فإني لا أدري لعلي لا أحج بعد حجتي هذه» (مسلم 1297).‏ অর্থ: “তোমরা আমার কাছ থেকে হজ্জ পালনের নিয়মনীতি ও আদর্শ এবং বাক্য ও ‎কর্মগুলি শিখে বাস্তবায়ন করো আর সেগুলি অন্য লোকদেরকে শিখিয়ে দাও। যেহেতু ‎আমি জানি না! আমার এই হজ্জের পর আমি হয়তো আর কোনো দিন হজ্জ পালন ‎করতে পারবো না”। (মুসলিম ১২৯৭)।

১। ইহরাম বাঁধার বিষয়

হজ্জ পালনকারী ব্যক্তি যখন হজ্জ পালন করার নিয়তে মীকাতে উপনীত হবে এবং ‎ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করবে, তখন তার জন্য তার কাপড় খুলে দিয়ে গোসল করবে, ‎তার মাথায় ও দাড়িতে সুগন্ধি লাগাবে এবং ইহরামের কাপড় পরিধান করবে। অতঃপর ‎ফরজ নামাজের যদি সময় হয়ে থাকে, তাহলে সে ফরজ নামাজ পড়ে নিবে। আর যদি ‎ফরজ নামাজের সময় না হয়ে থাকে, তাহলে ইচ্ছা হলে ওজু করার পর দুই রাকাআত ‎সুন্নাত নামাজ পড়বে।

নামাজ পড়ার পরে হজ্জ পালনের কাজে প্রবেশ করার জন্য ইহরাম বেঁধে যে হজ্জ ‎পালন করার ইচ্ছা থাকবে সেই হজ্জের নিয়ত করবে এবং বলবে:‎

١
তামাত্তু হজ্জ পালনকারী হলে বলবে: ‎ لبيك اللهمّ عمرة‎.‎ লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা ওমরা ‎ অর্থ: “হে মহান আল্লাহ! আমি আমার মনের মধ্যে ওমরা পালন করার দৃঢ় সংকল্প স্থির ‎করেছি তাই আমি আপনার আনুগত্যের জন্য উপস্থিত হয়েছি”।
٢
ইফরাদ হজ্জ পালন করার ইচ্ছা থাকলে বলবে: ‎ لبيك اللهمّ حجاً‎.‎ লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা হাজ্জা অর্থ: “হে মহান আল্লাহ! আমি আমার মনের মধ্যে শুধু হজ্জ পালন করার দৃঢ় সংকল্প ‎স্থির করেছি তাই আমি আপনার আনুগত্যের জন্য উপস্থিত হয়েছি”।
٣
কিরান হজ্জ পালন করার ইচ্ছা থাকলে বলবে:‎ لبيك اللهمّ حجاً وعمرةً‎. ‎ অর্থ: “হে মহান আল্লাহ! আমি আমার মনের মধ্যে হজ্জ ও ওমরা পালন করার দৃঢ় ‎সংকল্প স্থির করেছি তাই আমি আপনার আনুগত্যের জন্য উপস্থিত হয়েছি”।

অতঃপর বেশি বেশি তালবিয়া পাঠ করতে থাকবে। সুতরাং বারবার উচ্চারণ করবে:‎ ‏"لَبَّيْكَ اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الـحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالـمُلْكَ، لَا شَرِيْكَ ‏لَكَ".‏ অর্থ: “আমি নিষ্ঠাবান হয়ে হাজির হয়েছি আপনার আনুগত্যের কাজে হে আল্লাহ! আমি ‎নিষ্ঠাবান হয়ে হাজির হয়েছি আপনার আনুগত্যের কাজে, আমি নিষ্ঠাবান হয়ে হাজির ‎হয়েছি আপনার আনুগত্যের কাজে, আপনার কোনো অংশীদার নেই, আমি নিষ্ঠাবান ‎হয়ে হাজির হয়েছি আপনার আনুগত্যের কাজে, নিশ্চয় সমস্ত প্রশংসা আপনার প্রাপ্য ‎এবং সমস্ত প্রকারের অনুগ্রহ আপনারই পক্ষ থেকে এবং সব জগতের প্রকৃত রাজত্ব ‎আপনারই, আপনার কোনো অংশীদার নেই”। পুরুষ লোক এই তালবিয়াটি উচ্চস্বরে পাঠ করতে থাকবে। তবে মহিলারা এই ‎তালবিয়াটি এমনভাবে পাঠ করবে, তার পাশের মহিলারা যেন শুনতে পায় এবং ‎পুরুষরা শুনতে না পায়। তারপর সমস্ত হজ্জ পালনকারীগণ ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ ‎কাজসমূহ থেকে বিরত থাকবে। ‎

২। মক্কায় প্রবেশ

হজ্জ পালনকারীর জন্য মক্কায় প্রবেশের জন্য গোসল করা মোস্তাহাব, তারপর ‎তামাত্তু হজ্জ পালনকারী হলে ওমরা পালন করার জন্য পবিত্র মাসজিদুল হারামে ‎প্রবেশ করবে। কিরান হজ্জ পালনকারীর জন্য এবং ইফরাদ হজ্জ পালনকারীর জন্য ‎পবিত্র মক্কা আগমন‏ ‏করে কাবা ঘরের আগমন তাওয়াফ‏ ‏করা মোস্তাহাব।

৩। তাওয়াফের ‍বিষয়

হজ্জ পালনকারীর যখন মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে, তখন সে তার ডান পা ‎সামনে রাখবে এবং মাসজিদে প্রবেশের দোয়া পাঠ করবে। এবং সে কাবা ঘরের কাছে ‎যখন পৌঁছাবে, তখন তাওয়াফ শুরু কারার পূর্বে তালবিয়া পাঠ করা ছেড়ে দিবে। ‎পুরুষদের তাওয়াফ করার সময় ইজতিবা করা অর্থাৎ তাওয়াফের সময় গায়ের চাদরকে ‎ডান বগলের নিচে দিয়ে চাদরের উভয় মাথাকে বাম কাঁধের উপর দিয়ে এক মাথা ‎সামনে আর অন্য মাথা পেছনে ফেলে তাওয়াফ করা। তাওয়াফের সময় এই ভাবে ‎চাদর পরিধান করাই হলো ইজতিবা।

তারপর তাওয়াফ শুরু করার জন্য হাজরে আসওয়াদের দিকে যাবে এবং ডান হাত ‎দিয়ে হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করবে এবং চুম্বন করবে। আর হাজরে আসওয়াদকে ‎চুম্বন করা সম্ভব না হলে, তাকে সামনে রাখবে এবং তার দিকে হাত দিয়ে ইশারা ‎করবে আর তাকে বাম দিকে রাখবে। আর কাবা ঘরের সাত চক্কর দেওয়ার মাধ্যমে ‎তাওয়াফ পূর্ণ করবে। তাওয়াফের সময় প্রথম তিন চক্করে রমল করবে অর্থাৎ বীর ‎দর্পে শৌর্যের সঙ্গে চলবে। এই নিয়মে চলার সময় কদম কাছাকাছি রাখবে আর ‎দ্রুতবেগে চলবে।

অতঃপর তাওয়াফ করতে করতে যখন রুকনে ইয়ামেনির কাছে পৌঁছাবে‏, ‏তখন তা ‎চুম্বন না করে ইসতিলাম বা স্পর্শ করবে। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে সেই ‎দিকে হাত দিয়ে ইশারা করবে না। আর রুকনে ইয়ামেনির মাঝে এবং হাজরে ‎আসওয়াদের মাঝে বলবে:‎ ‏(رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ).‏ سورة البقرة الآية ٢٠١.‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে ‎দুনিয়াতে সর্ব প্রকারের কল্যাণ প্রদান করুন এবং পরকালেও সর্ব প্রকারের কল্যাণ ‎প্রদান করুন। আর আমাদেরকে জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ড হতে পরিত্রাণ দান করুন”। ‎‎(সূরা আল বাকারাহ, আয়াত নং ২০১)। ‎

এবং তাওয়াফ করতে করতে যখনই সে কালো পাথর বা হাজরে আসওয়াদের পাশ ‎দিয়ে অতিক্রম করবে, তখনই সে তাকবীর বা আল্লাহু আকবার বলবে। আর সে তার ‎বাকি তাওয়াফের অংশে ইচ্ছা মোতাবেক মহান আল্লাহর জিকিরে এবং দোয়ায় অথবা ‎কুরআন তিলাওয়াতে লিপ্ত থাকবে।

ওমরা পালনকারী কাবা ঘরের যখন সাত চক্কর দিয়ে তাওয়াফ শেষ করবে তখন সে ‎তার চাদরকে কাঁধের উপরে রাখবে এবং সেই চাদরের দুই দিক বুকের উপরে ‎রাখবে। অতঃপর মাকামে ইবরাহিম এর দিকে চলে যাবে এবং সম্ভব হলে সেখানে দুই ‎রাকাআত নামাজ পড়বে অথবা মাসজিদুল হারামের যে কোনো স্থানে সেই দুই ‎রাকাআত নামাজ পড়বে। সূরা আল ফাতিহার পর প্রথম রাকাআতে সূরা আল ‎কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা আল ইখলাস পাঠ করবে। ‎

৪। সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাতবার সাঈ করার বিবরণ

তারপর সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সাঈ করার জন্য সাফার দিকে ‎যাবে। সাফার নিকটবর্তী হলে বলবে:‎‏ ‏‎ ‎ ‏(إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ)، سورة البقرة، جزء من الآية 158. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “অবশ্যই সাফা ও মারওয়ার নিকটে আল্লাহর উপাসনা করার ‎নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত”। ‎ (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ১৫৮ এর অংশবিশেষ)। তারপর বলবে: মহান আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন তা দিয়েই আমি শুরু করবো।

সাঈ করবে সাফা থেকে অতঃপর সাফায় পৌঁছাবে এবং কাবা ঘরকে নিজের সামনে ‎রেখে দুই হাত তুলে মহান আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং দোয়া করবে। আর আল্লাহর ‎বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর পঠিত দোয়ার ‎মধ্যে ছিলো:‎ ‏"لَا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَشَرِيْكَ لَهُ؛ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ،‎ ‎لَا إِلَهَ ‏إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ، أَنْجَزَ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ،‎ ‎ অর্থ: “এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক ও ‎শরীকবিহীন, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই জন্য, সমস্ত প্রশংসা তাঁরই জন্য, তিনি সর্ব ‎বিষয়ে ক্ষমতাবান। এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সত্য উপাস্য ‎নেই। তিনি নিজের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং তাঁর সুপ্রিয় দাস বিশ্বনাবী‎‏‎ মুহাম্মাদ ‎‎[সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে সাহায্য করেছেন ও শত্রু বাহিনীকে একাই পরাস্ত ‎করেছেন”। তারপর নিজের ইচ্ছা মোতাবেক অন্য দোয়াও করবে এবং তা তিনবার করে পুনরাবৃত্তি ‎করবে। ‎

তারপর সাফা থেকে মারওয়ার অভিমুখে রওয়ানা দিবে। সুতরাং মারওয়ার অভিমুখে ‎সোজাসুজি যেতে থাকবে। এবং পুরুষ ব্যক্তি সবুজ বাতির জায়গায় উপস্থিত হলে যতটা ‎সম্ভব দ্রুত বেগে ধাবিত হবে ও দৌড় দিবে আর এটা হলো মোস্তাহাব। তবে কোনো ‎মহিলা সেই স্থানে দ্রুত বেগে ধাবিত হবে না এবং দৌড়ও দিবে না। অতএব সাফা ও ‎মারওয়ার মধ্যে যে কোনো মহিলা সাতবার সাধারণভাবে সাঈ করবে এবং দৌড় দিবে ‎না

তারপর সে হাঁটতে থাকবে এবং হাঁটতে হাঁটতে মারওয়ায় পৌঁছাবে। সুতরাং সে ‎মারওয়ায় পৌঁছানোর পর সেখানে সে কাবা ঘরকে সামনে রেখে দুই হাত তুলে সেই ‎দোয়া পাঠ করবে, যে দোয়া সাফায় পাঠ করেছিলো। তবে মারওয়ায় পৌঁছানোর পর ‎সেখানে এই আয়াতটি পাঠ করবে না:‎‏ ‏‎ ‎ ‏(إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ)، سورة البقرة، جزء من الآية 158. ‏ ভাবার্থের অনুবাদ: “অবশ্যই সাফা ও মারওয়ার নিকটে আল্লাহর উপাসনা করার ‎নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। ‎ ‎(সূরা আল বাকারা, আয়াত নং ১৫৮ এর অংশবিশেষ)। আর এই কথাটিও বলবে না: মহান আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন তা দিয়েই আমি ‎শুরু করছি।‏ ‏

তারপর আবার মারওয়া থেকে সাফার অভিমুখে রওয়ানা দিবে। সুতরাং সাফার ‎অভিমুখে যেতে থাকবে। এবং পুরুষ ব্যক্তি সবুজ বাতির জায়গায় উপস্থিত হলে যতটা ‎সম্ভব দ্রুত বেগে ধাবিত হবে ও দৌড় দিবে। এবং মারওয়াতে যা করেছিলো, তা ‎সাফাতেও করবে। আর এই ভাবে সাফা এবং মারওয়ার মাঝে সাত চক্কর দিয়ে ‎সাতবার সাঈ করবে। আর জেনে রাখতে হবে যে, সাফা থেকে মারওয়া গেলে একটি ‎সাঈ হয়ে যায় এবং মারওয়া থেকে সাফা গেলে আবার অন্য আরেকটি সাঈ হয়ে যায়। ‎আর সাঈ করার অবস্থায় মহান আল্লাহর সহজসাধ্য জিকির ও দোয়ায় মগ্ন থাকা উত্তম ‎বা মোস্তহাব। এবং সাঈ করার অবস্থায় সকল প্রকারের ছোটো বড়ো অপবিত্রতা থেকে ‎পবিত্র থাকাও উত্তম বা মোস্তাহাব। ‎

তামাত্তু হজ্জ পালনকারীর জন্য দুইটি সাঈ রয়েছে। একটি সাঈ হলো তার ওমরা ‎পালনের জন্য আবার অন্য আরেকটি সাঈ হলো তার হজ্জ পালন করার জন্য। আর ‎কিরান হজ্জ পালনকারীর জন্য এবং ইফরাদ হজ্জ পালনকারীর জন্য মাত্র একটি সাঈ ‎রয়েছে। এই সাঈটি আগমন তাওয়াফ‏ ‏শেষ করার পরে করতে পারা যায় অথবা অথবা ‎ইফাদা তাওয়াফ শেষ করার পরে করতে পারা যায়।

৪। মাথার কেশ মুণ্ডন করা অথবা ছোটো করা

যখন হজ্জ পালনকারী সাফা ও মারওয়ার সাঈ সম্পন্ন করার পর সাঈ করার স্থান ‎থেকে বেরিয়ে যাবে তখন মাথার কেশ মুণ্ডন করবে অথবা ছোটো করবে, যদি সে ‎তামাত্তু হজ্জ পালনকারী হয়। তবে মাথার কেশ মুণ্ডন করাই হলো পুরুষের জন্য ‎উত্তম। কিন্তু হজ্জ পালন করার জন্য ওমরা পালনের পর মাথার কেশ মুণ্ডন না করাই ‎হলো উত্তম। কিন্তু মহিলার ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা। তাই মহিলা মাথার কেশ আঙ্গুলের ‎অগ্রভাগ পরিমাণ ছোটো করবে। তামাত্তু হজ্জ পালনকারী যখন এই সমস্ত কাজ শেষ ‎করবে, তখন তার ওমরা পালনের কাজ সম্পন্ন হবে। আর তার ওমরা পালনের কাজ ‎সম্পন্ন হয়ে গেলে তার ইহরাম বাঁধার কারণে তার প্রতি যা নিষিদ্ধ হয়েছিলো তা তার ‎জন্য সব হালাল হয়ে যাবে। তবে ইফরাদ হজ্জ পালনকারী এবং কিরান হজ্জ ‎পালনকারীর সাফা ও মারওয়ার সাঈ সম্পন্ন করার পর ইহরামের অবস্থায় থাকবে এবং ‎মাথার কেশ মুণ্ডন করবে না এবং ছোটোও করবে না। ‎

৬। - ইয়াওমুত তারবিয়া (তারবিয়ার দিন)। ‎

ইয়াওমুত তারবিয়া বা তারবিয়ার দিন হলো জুলহিজ্জা মাসের আট তারিখের দিন। সেই ‎দিনে হজ্জের কাজ শুরু হয়। সুতরাং তামাত্তু হজ্জ পালনকারী ব্যক্তি সেই দিনের প্রথম ‎ভাগে বা পূর্বাহ্নে নিজের অবস্থানস্থল হতে হজ্জের ইহরাম বাঁধবে। অতএব সে গোসল ‎করবে, সুগন্ধি ব্যবহার করবে, ইহরামের কাপড় পরিধান করবে, নামাজ পড়বে এবং ‎হজ্জের ইহরাম বাঁধবে ও হজ্জে প্রবেশ করার নিয়ত করবে আর বলবে: ‎ لبيك اللهمّ حجاً‎.‎ লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা হাজ্জা অর্থ: “হে মহান আল্লাহ! আমি আমার মনের মধ্যে হজ্জ পালন করার দৃঢ় সংকল্প স্থির ‎করেছি তাই আমি আপনার আনুগত্যের জন্য উপস্থিত হয়েছি”। তবে ইফরাদ হজ্জ পালনকারী এবং কিরান হজ্জ পালনকারীরা অগে থেকেই তারা ‎তাদের ইহরামের অবস্থায় রয়েছে। ‎ অতঃপর হজ্জ পালনকারী ব্যক্তি জোহরের পূর্বেই মিনায় গমন করবে। এবং সেখানে ‎অবস্থান করবে আর রাত্রি যাপন করবে। সেখানে জোহর, আসর, মাগরিব এবং ইশার ‎নামাজ পড়বে। চার রাকাআত বিশিষ্ট নামাজকে একত্র না করে কসর বা সংক্ষিপ্তভাবে ‎দুই রাকাআত করে পড়বে। আবার সেখানে জুলহিজ্জা মাসের নয় তারিখের ফজরের ‎নামাজ পড়বে। এর পর সেখানে বেশি বেশি তালবিয়া পাঠ, জিকির এবং কুরআন ‎পাঠের মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করবে। ‎

৭। আরাফার দিন

জুলহিজ্জা মাসের নয় তারিখের দিন হলো আরাফার দিন। এই দিনে যখন সূর্যোদয় ‎হবে, তখন হজ্জ পালনকারী ব্যক্তি মিনা থেকে শান্তির সহিত ধীরস্থিরে আল্লাহর ‎জিকিরের সহিত তালবিয়া পাঠ করতে করতে আরাফায় গমন করবে। তার পক্ষে সম্ভব ‎হলে তারজন্য নামেরা নামক স্থানে জোহরের পূর্বে অবস্থান করা হলো মোস্তাহাব। আর ‎তা সম্ভব না হলে সরাসরি আরাফায় প্রবেশ করবে এবং এতে কোনো দোষ ‎নেই। দুপুরের সময় সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়বে, তখন জোহর এবং ‎আসরের নামাজ একত্র করে কসর বা সংক্ষিপ্তভাবে দুই দুই রাকাআত করে জোহরের ‎সময়ে পড়বে। অতঃপর আল্লাহর জিকিরে এবং দোয়াতে মগ্ন হয়ে যাবে। আর ‎কিবলার ‎দিকে মুখ করে হাত উঠিয়ে নিজের পছন্দনীয় বা আকাঙ্ক্ষিত দোয়া করবে। ‎

অর্থ: আয়েশা [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল ‎‎[সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “আরাফার দিন হলো এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ ‎দিন যে, সেই দিনে মহান আল্লাহ এত বেশি সংখ্যায় মানুষকে জাহান্নামের বা নরকের ‎আগুন থেকে পরিত্রাণ ও মুক্তি প্রদান করেন যে, সেই সংখ্যায় তিনি অন্য কোনো দিন ‎এত বেশি সংখ্যায় মানুষকে জাহান্নামের বা নরকের আগুন থেকে পরিত্রাণ ও মুক্তি ‎প্রদান করেন না। সেই দিন মহান আল্লাহ তাঁর মহিমার উপযোগী পদ্ধতিতে অতি ‎নিকটবর্তী হন এবং তাদেরকে নিয়ে ফিরেশতাদের সামনে গর্ব করেন এবং বলেন: ‎এরা কি চায় বল? (মুসলিম 1348)।

আরাফায় অবস্থান করার সময় সূর্য‎ আকাশ থেকে হেলে পড়া বা ঢলে যাওয়ার পর শুরু ‎হয়। অতঃপর সূর্য যখন অস্ত যাবে, তখন হজ্জ পালনকারীগণ মুজদালিফার প্রতি ‎রওয়ানা দিবে বা যাত্রা করবে। তবে যে ব্যক্তির জন্য এই সময়টি ছুটে যাবে, আর ‎জুলহিজ্জা মাসের দশ তারিখের ফজরের পূর্বে আরাফায় অবস্থান করতে পারবে যদিও ‎তা অতি অল্প সময়ের জন্য হয়। তাহলে সে হজ্জ পেয়ে যাবে এবং তার হজ্জ সঠিক ‎বলে পরিগণিত হবে। আর জুলহিজ্জা মাসের দশ তারিখের ফজরের পূর্বে যে ব্যক্তি ‎আরাফায় অবস্থান করতে পারবে না, তার হজ্জ ছুটে যাবে। ‎

৮। মুজদালিফায় গমন

হজ্জ পালনকারী যখন মুজদালিফায় গমন করবে, তখন সেখানে এক আজানে এবং দুই ‎ইকামাতে মাগরিব ও ইশার নামাজ একসঙ্গে পড়বে আর ইশার নামাজ কসর করে দুই ‎রাকাআত পড়বে। এবং সেখানে ফজরের সময় হয়ে গেলে ফজরের নামাজ পড়বে। ‎তারপর সেখানে আল্লাহর জিকিরে এবং দোয়াতে মগ্ন হয়ে যাবে। আর ‎কিবলার দিকে ‎মুখ করে হাত উঠিয়ে ভোরের আলো খুব বেশি ছড়িয়ে পড়া পর্যন্ত দোয়া করবে।

৯। ইয়াওমুন্নাহার বা কুরবানির দিন

যখন ভোরের আলো খুব বেশি ছড়িয়ে পড়বে জুলহিজ্জা মাসের দশ তারিখে, তখন ‎হজ্জ পালনকারী সূর্যোদয়ের পূর্বে মিনা অভিমুখে যাত্রা শুরু করবে। মিনা অভিমুখে ‎চলতে চলতে সাতটি কঙ্কর কুড়িয়ে নিবে। কঙ্করগুলি হবে ছোলা বা বুটের চেয়ে একটু ‎বড়ো। মিনায় যখন গমন করবে, তখন জামরাতুল আকাবায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ ‎করবে। জামরাতুল আকাবা হলো মক্কার দিকে। জামরাতুল আকাবায় প্রতিটি কঙ্কর ‎নিক্ষেপ করার সময় তাকবীর বা আল্লাহু আকবার বলবে। জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর ‎নিক্ষেপ করার পর হাদয়ী জবাই করবে তারপর মাথার চুল মুণ্ডন করবে অথবা ছোটো ‎করবে। তবে মহিলা তার মাথার কেশ আঙ্গুলের অগ্রভাগ পরিমাণ ছোটো করবে। ‎তারপর হজ্জ পালনকারীর জন্য মোস্তাহাব হলো এই যে, সে সুগন্ধি ব্যবহার করবে। ‎এবং তাওয়াফে ইফাদা করার জন্য মক্কায় গমন করবে এবং তাওয়াফে ইফাদা করবে। ‎তাওয়াফে ইফাদা করা হলো হজ্জের একটি রুকন বা স্তম্ভ। অতঃপর হজ্জের সাঈ ‎করবে। তারপর হজ্জ পালনকারী ব্যক্তিকে আবার মিনায় ফিরে আসবে। এবং জুলহিজ্জা ‎মাসের এগারো তারিখের রাত মিনাতেই অতিবাহিত করতে হবে।

১০। আইয়ামুত্তাশরীক বা কুরবানির পরবর্তী তিন দিন। অর্থাৎ জুলহিজ্জা মাসের ‎এগারো, বারো ও তেরো তারিখকে আইয়ামুত্তাশরীক বলা হয়। ‎

আইয়ামুত্তাশরীকে হজ্জ পালনকারী ব্যক্তির প্রতি ওয়াজিব বা অপরিহার্য হলো এই যে, ‎সে জুলহিজ্জা মাসের এগারো ও বারো তারিখের রাত মিনাতেই অতিবাহিত করবে। ‎আর যে হজ্জ পালনকারী জুলহিজ্জা মাসের তেরো তারিখ পর্যন্ত মিনায় থাকার ইচ্ছা ‎করবে, সেও জুলহিজ্জা মাসের তেরো তারিখের রাত মিনায় অতিবাহিত করবে। এবং ‎তিনটি জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করবে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঝুঁকে পড়ার পর। ‎

জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করার পদ্ধতি

হজ্জ পালনকারী প্রথম জামরাটিতে সাতটি কঙ্কর পরস্পর ধারানুযায়ী একটির পর ‎আরেকটি নিক্ষেপ করবে। প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপ করার সময় আল্লাহু আকবার বলবে। ‎তারপর সে একটু সামনে যাবে এবং নিজের পছন্দ মোতাবেক দীর্ঘ সময় ধরে দোয়া ‎করবে। এরপর দ্বিতীয় জামরা অভিমুখে রওয়ানা দিবে এবং সাতটি কঙ্কর সেখানে ‎পরস্পর ধারানুযায়ী একটির পর আরেকটি নিক্ষেপ করবে। প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপ ‎করার সময় আল্লাহু আকবার বলবে। তারপর সে ডান দিকে যাবে এবং দাঁড়িয়ে ‎‎কিবলার দিকে মুখ করে হাত উঠিয়ে নিজের পছন্দ মোতাবেক দোয়া করবে। অতঃপর ‎জামরাতুল আকাবায় সাতটি কঙ্কর পরস্পর ধারানুযায়ী একটির পর আরেকটি নিক্ষেপ ‎করবে। প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপ করার সময় আল্লাহু আকবার বলবে। তারপর সেখান ‎থেকে সে চলে যাবে আর সেখানে কোনো দোয়া করবে না। ‎

অতঃপর যখন হজ্জ পালনকারী ব্যক্তি জুলহিজ্জা মাসের বারো তারিখের কঙ্কর নিক্ষেপ ‎করার কাজ শেষ করবে, তখন তার ইচ্ছা মোতাবেক সে মিনা থেকে তাড়াতাড়ি করে ‎শীঘ্রই বের হতে পারবে। আর যদি সে জুলহিজ্জা মাসের বারো তারিখের কঙ্কর নিক্ষেপ ‎করার পর মিনায় থাকার ইচ্ছা করে, তাহলে সে জুলহিজ্জা মাসের তেরো তারিখের ‎রাত মিনায় অতিবাহিত করবে। তারপর সেই তেরো তারিখের দিনে দুপুরের সূর্য ‎পশ্চিম আকাশে ঝুঁকে পড়ার পর তিনটি জামারাতের কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। আর ‎জুলহিজ্জা মাসের তেরো তারিখ পর্যন্ত বিলম্ব করে মিনায় থাকা হলো উত্তম। ‎

বিদায়ী তাওয়াফ

হজ্জ পালনকারী ব্যক্তি যখন মক্কা ছেড়ে তার নিজের দেশে যাওয়ার ইচ্ছা করবে, তখন ‎সে বিদায়ী তাওয়াফ না করে মক্কার বাইরে যেতে পারবে না। আর যখন সে তার ‎দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার ইচ্ছা করবে, তখন কাবা ঘরের বিদায়ী তাওয়াফ হবে ‎তার সর্বশেষ কাজ। যেহেতু আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে ‎বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: ‎ ‏«لا ينفرن أحد حتى يكون آخر عهده بالبيت». (مسلم 1327).‏ অর্থ: “কোনো হজ্জ পালনকারী ব্যক্তি যেন শেষে কাবা ঘরের বিদায়ী তাওয়াফ না করা ‎পর্যন্ত মক্কা ছেড়ে কোথাও না যায়”। (মুসলিম 1327)। নারীর মাসিক ঋতুস্রাব বা রক্তস্রাব হলে তার জন্য কাবা ঘরের বিদায়ী তাওয়াফ করার ‎প্রয়োজন নেই।

আপনি পাঠ্য বিষয়টি সফলভাবে শেষ করেছেন।


পরীক্ষা শুরু করুন