মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় শিরোনাম: হাদীস লিপিবদ্ধ করণ এবং হাদীসের গুরুত্বপূর্ণ বই।
প্রকৃত ইসলামের বড়ো বড়ো আলেম ও পণ্ডিতগণ হাদীস লিপিবদ্ধ করার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এবং তাঁরা হাদীসের নিখুঁতভাবে সংরক্ষণের জন্য নিজেদের জীবনকে ক্ষয় করে দিয়েছেন। এর সাথে সাথে তাঁরা সত্য হাদীস ও মিথ্যা হাদীসের মধ্যে এবং ভুল ও নির্ভুল হাদীসের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। এবং হাদীস বর্ণনাকারীদের অবস্থাও এমন গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছেন ও গভীরভাবে পরীক্ষা করে দেখেছেন, যার দৃষ্টান্ত মানবজাতির ইতিহাসে নেই।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীস লিপিবদ্ধ করণের অর্থ।
হাদীস লিপিবদ্ধ করণ এর অর্থ হলো: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কথা, কর্ম অথবা অনুমোদিত বাক্য বা কার্য সযত্নে লিখে রাখা এবং গ্রন্থ ও বই আকারে সংকলিত করা।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীস লিপিবদ্ধ করণের কতকগুলি পর্যায় বা স্তর রয়েছে নিম্নরূপে:
প্রথম পর্যায়:
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ও তাঁর সাহাবীগণের যুগে হাদীস লিপিবদ্ধ করণ। হিজরী সনের প্রথম শতাব্দীতে ইসলামের প্রাথমিক যুগে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হাদীস লিপিবদ্ধ করতে নিষেধ করেছিলেন; হাদীস পবিত্র কুরআনের সাথে সংমিশ্রিত হওয়ার ভয়ে।
অর্থ: আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: নিশ্চয় আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: “পবিত্র কুরআন ছাড়া আমার মুখ নিঃসৃত কোনো হাদীসের বাণী তোমরা লিপিবদ্ধ করো না। আর কেউ যদি আমার কোনো হাদীসের বাণী লিপিবদ্ধ করে থাকে, তাহলে সে যেন তা মুছে ফেলে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২ -(৩০০৪) ]।
সুতরাং আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীসের সংরক্ষণ করা হতো মুখস্ত করে মানুষের অন্তরে এবং মৌখিকভাবে তা বর্ণনা করা হতো। অতঃপর আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাঁর হাদীস কতিপয় সাহাবীকে লিপিবদ্ধ করার অনুমতি প্রদান করেছিলেন।
অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছ থেকে যা কিছু শুনতাম, সবই লিখে রাখতাম। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীসের সংরক্ষণ করার জন্যই আমি এই কাজটি করতাম। কুরাইশ বংশের লোকেরা আমাকে বললেন: তুমি কি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছ থেকে যা কিছু শ্রবণ করছো, সবই লিখে রাখছো? তিনি তো একজন মানুষ। তাই তিনি রাগের অবস্থায় এবং সন্তুষ্ট থাকার অবস্থায় কথা বলে থাকেন! সুতরাং আমি তাদের কথা শুনে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীস লিপিবদ্ধ করা স্থগিত করলাম। তারপর আমি এই বিষয়টি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর কাছে উপস্থাপন করলাম। তিনি আঙ্গুল দিয়ে তাঁর মুখের দিকে ইশারা করে বললেন: “তুমি আমার সমস্ত বাণী লিখে রাখো, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, এই মুখ থেকে সর্বাবস্থায় সত্য ব্যতীত অন্য কিছু উচ্চারিত হয় না”। [সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৬৪৬, আল্লামা নাসেরুদ্দিন আল্ আলবাণী এই হাদীসটিকে সহীহ (সঠিক) বলেছেন]।
আলওয়ালিদ বিন মুসলিমের হাদিসে আলআওজায়ী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] বলেছেন: মহান আল্লাহ যখন তাঁর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে মক্কা জয় করালেন, তখন আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] লোকেদের মধ্যে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর সুখ্যাতি উপস্থাপন করলেন। [আবু হুরায়রা [রাদিয়াল্লাহু আনহু] খুতবাটি উল্লেখ করেন তারপর বলেন:] এই অবস্থায় আবু শাহ-ইয়েমেনের একজন লোক- দাঁড়িয়ে বললেন: হে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল! আমার জন্য লিখে দিন! আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন: “আবু শাহের জন্য তোমরা লিখে দাও।” আলওয়ালিদ বলেন: আমি আলআওজায়ীকে বললাম: আবু শাহের কথা হলো: হে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল! আমার জন্য লিখে দিন! এর অর্থ কী? এর অর্থ সেই খুতবাটি যে খুতবাটি তিনি আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কাছ থেকে শুনেছিলেন”। আল-বুখারী (2434) এবং মুসলিম (1355)।
দ্বিতীয় পর্যায়:
দ্বিতীয় হিজরী শতাব্দীতে তাবেয়ীদের যুগের শেষের দিকে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীস লিপিবদ্ধ করা হয়। এই স্তরে হাদীস লিপিবদ্ধ করার বিষয়টি সাধারণ পদ্ধতিতে। এই স্তরে হাদীস লিপিবদ্ধ করার বিশেষ কোনো নিয়ম নির্দিষ্ট করা ছিলো না। সেই যুগের মুসলিম জাহানের শ্রেষ্ঠ নৃপতি খলিফা ওমার বিন আব্দুল আজিজ [রাহিমাহুল্লাহ] সর্বপ্রথমে এই পর্যায়ে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীস লিপিবদ্ধ করার প্রতি যত্ন নিয়েছিলেন। সুতরাং তিনি দুই ইমাম: ইবনে শিহাব আজ্জুহরি এবং আবু বাকর ইবনু হাজমকে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীস সংগ্রহ ও সংকলিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তিনি দিকে দিগন্তে লিখেছিলেন: “আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীসের অনুসন্ধান করুন এবং সংকলিত ও সংরক্ষণ করুন; যেহেতু আমি জ্ঞান বিলীন হওয়ার এবং অনেক আলেম বা বিদ্যাবান ও পণ্ডিত দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার ভয় করছি”।
অতএব সর্বপ্রথমে ইমাম ইবনে শিহাব আজ্জুহরি [রাহিমাহুল্লাহ] মুসলিম জাহানের শ্রেষ্ঠ নৃপতি খলিফা ওমার বিন আব্দুল আজিজ [রাহিমাহুল্লাহ] এর নির্দেশে হাদীস সংকলিত ও লিপিবদ্ধ করেছিলেন। আর এটিই ছিলো সাধারণভাবে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীস সংকলিত ও লিপিবদ্ধ করার প্রথম সূচনা।
এই পর্যায়ে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীসকে কতকগুলি বই বা গ্রন্থ আকারে সংকলন ও লিপিবদ্ধ করা হয় এবং সেই বই বা গ্রন্থগুলির হাদীসকে কতকগুলি নির্দিষ্ট অধ্যায়ের মাধ্যমে সাজানো হয়, যেমন:- ইমানের অধ্যায়, জ্ঞানের অধ্যায়, বিশুদ্ধতা বা পবিত্রতার অধ্যায় এবং নামাজের অধ্যায় ইত্যাদি। আবার আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীসকে কতকগুলি মুসনাদ বই বা গ্রন্থ আকারে সংকলন ও লিপিবদ্ধ করা হয় এবং সেই বই বা গ্রন্থগুলির হাদীসকে কতকগুলি নির্দিষ্ট সাহাবীর মুসনাদ হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যেমন:- মুসনাদ আবু বাকর অতঃপর মুসনাদ ওমার ইত্যাদি।
এই পর্যায়ে সংকলন ও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে: ইমাম মালিক বিন আনাস [রাহিমাহুল্লাহ] এর মুওয়াত্তা গ্রন্থ। এবং এই পর্যায়ের বৈশিষ্ট্য ছিলো এই যে, আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বাণী বা হাদীসের সাথে সাহাবীদের উক্তি এবং তাবেয়ীদের বক্তব্য এবং তাঁদের ফতুয়া সংমিশ্রিত করা হয়েছে।
এই পর্যায়ে আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীস বিশেষভাবে এমন পদ্ধতিতে সংকলিত ও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, যে, তাতে সাহাবীদের উক্তি এবং তাবেয়ীদের বক্তব্য অতি প্রয়োজনে খুব অল্প সংমিশ্রিত করা হয়েছে। এই পর্যায়টি শুরু হয়েছে তৃতীয় হিজরী শতাব্দীতে। এই পর্যায়ের বিখ্যাত গ্রন্থ হলো: ইমাম আহমাদ [রাহিমাহুল্লাহ] এর মুসনাদ গ্রন্থ এবং মুসনাদুল হুমাইদী ইত্যাদি।
অতঃপর আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীস সংকলিত ও লিপিবদ্ধ করার বিষয়টি হিজরি সনের তৃতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝিতে শেষ পর্যায়ের প্রধান লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। সুতরাং ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থ সহীহুল বুখারী এবং ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থ সহীহ মুসলিম সংকলিত ও লিপিবদ্ধ করেন। এর সাথে সাথে কতকগুলি সুনান গ্রন্থ সংকলিত ও লিপিবদ্ধ হয়। অতএব হাদীস শাস্ত্রে সুপ্রসিদ্ধ সুনান আবু দাউদ, সুনান তিরমিযী, সুনান নাসায়ী, সুনান ইবনু মাজাহ এবং সুনান দারমী ইত্যাদি গ্রন্থগুলি অতি সুক্ষ্ম ধারায় ও সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত করা হয়।
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীস শাস্ত্রের অনেক গ্রন্থ রয়েছে, সেই গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে ছয়টি গ্রন্থ সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত ও পরিচিত: সহীহুল বুখারি এবং সহিহ মুসলিম। সেই রূপ সুনান আবু দাউদ, সুনান ইবনু মাজাহ, সুনান নাসায়ী এবং সুনান তিরমিযী।
তদ্রূপ হাদীস শাস্ত্রের মধ্যে প্রখ্যাত গ্রন্থ হলো: সুনান আদ্দারমী, ইমাম আহমদের মুসনাদ এবং ইমাম মালিকের মুওয়াত্তা।
হাদীস শাস্ত্রের মধ্যে সুপ্রসিদ্ধ ছয়টি গ্রন্থের পরিচয়:
হাদীস শাস্ত্রের মধ্যে যে সমস্ত গ্রন্থকে মুসলিম জাতি গ্রহণ করেছে, সে সমস্ত গ্রন্থের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত হলো ছয়টি গ্রন্থ, আর সেই ছয়টি গ্রন্থ হলো:
১। সহীহুল বুখারী (মৃত্যু 256 হিজরী)
এটি হাদীস শাস্ত্রের এমন একটি মহা গ্রন্থ যে, আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীস থেকে প্রণয়নকারীর কাছে যা কিছু পৌঁছেছে, তা তিনি এই মহা গ্রন্থে সংকলিত ও লিপিবদ্ধ করেছেন। সুতরাং এই মহা গ্রন্থে প্রণয়নকারী প্রকৃত ইসলাম ধর্মের আকীদা বা মতবাদ, ইবাদত বা উপাসনা, লেনদেন ও যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়, তাফসীর এবং বিভিন্ন বিষয়ের মর্যাদা সম্পর্কে হাদীস উল্লেখ করেছেন। এই মহা গ্রন্থে প্রণয়নকারী কেবল নির্ভরযোগ্য সত্য সঠিক হাদীস উপস্থাপন করারই দায়িত্ব বহন করেছেন। তাই এই মহা গ্রন্থটির স্থান হলো পবিত্র কুরআনের পরেই।
২। সহীহ মুসলিম (মৃত্যু 261 হিজরি)
এটিও হাদীস শাস্ত্রের একটি মহা গ্রন্থ। প্রণয়নকারী এই মহা গ্রন্থে কেবল নির্ভরযোগ্য সত্য সঠিক হাদীস উপস্থাপন করারই দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু এতে সহীহুল বুখারীর শর্তগুলির তুলনায় কিছু শর্ত হালকা আছে। তাই সহীহুল বুখারীর পরে এই মহা গ্রন্থের স্থান রয়েছে।
৩। সুনান আবু দাউদ (মৃত্যু 275 হিজরি)
এটি হাদীস শাস্ত্রের একটি সুনান গ্রন্থ। সমস্ত সুনানের প্রণয়নকারীগণ তাঁদের সুনান গ্রন্থগুলিকে আইনশাস্ত্রের অধ্যায় মোতাবেক সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন। ইমাম আবু দাউদ তাঁর এই সুনান গ্রন্থে সহীহ এবং হাসান হাদীস সংকলিত ও লিপিবদ্ধ করেছেন। আর এই গ্রন্থে তিনি দুর্বল হাদীস খুব কমই উল্লেখ করেছেন।
৪। সুনান আত্তিরমিযী (মৃত্যু 279 হিজরি)
এটি হাদীস শাস্ত্রের এমন একটি গ্রন্থ যে, এই গ্রন্থ প্রচুর পরিমাণে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীস থেকে প্রণয়নকারীর কাছে যা কিছু পৌঁছেছে, তা তিনি এই গ্রন্থে সংকলিত ও লিপিবদ্ধ করেছেন। সুতরাং এই গ্রন্থে প্রণয়নকারী প্রকৃত ইসলাম ধর্মের আকীদা বা মতবাদ, ইবাদত বা উপাসনা, লেনদেন ও যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়, তাফসীর এবং বিভিন্ন বিষয়ের মর্যাদা সম্পর্কে হাদীস উল্লেখ করেছেন। এই গ্রন্থে প্রণয়নকারী কেবল নির্ভরযোগ্য সত্য সঠিক হাদীস উপস্থাপন করারই দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। তাই এই গ্রন্থে তিনি সহীহ, হাসান এবং দুর্বল হাদীস সংকলিত ও লিপিবদ্ধ করেছেন।
৫। সুনান আন্নাসায়ী (মৃত্যু 303 হিজরি)
সুনান আত্তিরমিযীর মতোই সুনান নাসায়ী একটি হাদীস শাস্ত্রের গ্রন্থ। এই গ্রন্থে প্রণয়নকারী সমস্ত হাদীসকে আইনশাস্ত্রের অধ্যায় মোতাবেক সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন। এই গ্রন্থে প্রণয়নকারী সহীহ, হাসান এবং দুর্বল হাদীস উপস্থাপন করেছেন।
৬। সুনান ইবনু মাজাহ (মৃত্যু 273 হিজরি)
এই হাদীস শাস্ত্রের গ্রন্থটিতেও সমস্ত হাদীসকে আইনশাস্ত্রের অধ্যায় মোতাবেক সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। এই গ্রন্থে সহীহ, হাসান, দুর্বল এবং প্রত্যাখ্যাত হাদীস রয়েছে।
ইমাম হাফিজ আবুল হাজ্জাজ আলমিজ্জি (মৃত্যু 742 হিজরি) বলেছেন:
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীসের বিষয়টি হলো এই যে, মহান আল্লাহ তাঁর হাদীসের সংরক্ষণের জন্য সুনিপুণ বিচক্ষণ বিশেষজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ প্রতিভাশালী বিদ্বান ও জ্ঞানী গুণী সুবিবেচক পণ্ডিত প্রস্তুত করেছেন। তাঁরা জ্ঞানহীনদের বা অজ্ঞানদের অপব্যাখ্যা নিরাকরণ করেছেন, বাতিলপন্থিদের ও বিপথগামীদের চক্রান্তের খণ্ডন করেছেন এবং নির্বোধদের কুমন্ত্রনার নিরসন করেছেন। আর তাঁরা হাদীস শাস্ত্রে বিভিন্ন প্রকারের গ্রন্থ রচনা করেছেন। এবং যাতে হাদীস শাস্ত্রের কিছু নষ্ট না হয়ে যায়; তার জন্য তাঁরা হাদীসের রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে অনেক পন্থায় হাদীস সংকলিত ও লিপিবদ্ধ করেছেন। আর হাদীসের গ্রন্থগুলির মধ্যে সর্বোত্তম রচনা, সর্বশ্রেষ্ঠ সংকলন, সব চেয়ে বিশুদ্ধ, সব চেয়ে কম ভুলের, সবচেয়ে উপকারী, সবচেয়ে উপযোগী, সবচেয়ে মঙ্গলজনক বা কল্যাণকর, সবচেয়ে সহজ, সকলের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এবং সকলের কাছে সর্বাধিক সম্মানিত গ্রন্থ হলো: আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন ইসমাইল আলবুখারীর সহীহ বুখারী গ্রন্থ। তারপর সহীহ আবুল হুসাইন মুসলিম বিন হাজ্জাজ আন্নাইসাবুরীর সহীহ মুসলিম গ্রন্থ। অতঃপর আবু দাউদ সুলাইমান ইবনুল আশআস আস্সিজিস্তানির সুনান আবু দাউদ গ্রন্থ। তারপর আবু ঈসা মুহাম্মাদ বিন ঈসা আত্তিরমিযীর আলজামে বা সুনান তিরমিযী গ্রন্থ। এর পর আবু আব্দুর রহমান আহমাদ বিন শুয়াইব আন্নাসায়ীর সুনান গ্রন্থ। তারপর আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন ইয়াজিদ কাজভিনীর সুনান গ্রন্থ, সুনান ইবনু মাজাহ নামে এই গ্রন্থটি পরিচিত, যদিও এই গ্রন্থটি ঊর্ধ্বে উল্লিখিত গ্রন্থগুলির স্তরের নয়।
আর আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর হাদীসের এই ছয়টি গ্রন্থের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলির বিষয়ে হাদীস শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ অবগত আছেন। সুতরাং এই গন্থগুলি মুসলিম জাহানে মানব সমাজে সর্বজনপ্রিয় ও মর্যাদাপ্রাপ্ত হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। এবং এই গন্থগুলির মাধ্যমে মানব সমাজের অনেক উপকার হয়েছে ও হচ্ছে। আর এই গন্থগুলির মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের জন্য ছাত্রদের মধ্যে আগ্রহ বিরাজ করছে। তাহজীবুল কামাল (1/147)।
মুসলিম ব্যক্তির জন্য হাদীসের মান জানা সম্ভব। সুতরাং সে জানতে পারবে যে, এই হাদীসটি সহীহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য নাকি দুর্বল ও প্রত্যাখ্যাত? তাই সে হাদীস শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণের মাধ্যমে হাদীসের মান জানতে পারবে। যেহেতু হাদীস শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ হাদিস বর্ণনাকারীর বিভিন্ন অবস্থা এবং হাদিসের মূল বার্তার অধ্যয়ন গভীরভাবে করেছেন এবং কোন্ হাদীসটি গ্রহণযোগ্য আর কোন্ হাদীসটি প্রত্যাখ্যাত, এই সমস্ত বিষয়ও তাঁরা তদন্ত করে দেখেছেন এবং ফয়সলা করেছেন।
সহীহ সঠিক হাদীস এবং দুর্বল হাদীস জানার জন্য অনেক নির্ভরযোগ্য বই পুস্তক আছে। সেই সমস্ত বই পুস্তকের দ্বারা সহীহ সঠিক হাদীস এবং দুর্বল হাদীস জানা যাবে। আবার এই বিষয়ে ইন্টারনেটেও নির্ভরযোগ্য অনেক প্ল্যাটফর্ম এবং ওয়েবসাইট রয়েছে, সেই সব প্ল্যাটফর্ম এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও সহীহ সঠিক হাদীস এবং দুর্বল হাদীস জানার ক্ষেত্রে সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যাবে।
ইন্টারনেটের কতকগুলি এমন প্ল্যাটফর্ম এবং ওয়েবসাইট রয়েছে, যে সেই প্ল্যাটফর্মগুলিতে এবং ওয়েবসাইটগুলিতে হাদীসের অবস্থা ও মান জানার বিষয়ে অনেক সাহায্য বা সহযোগিতা পাওয়া যায়।
আদ্দুরার আস্সানিয়া ওয়েবসাইটে হাদিস এনসাইক্লোপিডিয়া রয়েছে। এই ওয়েবসাইটে হাজার হাজার হাদীস রয়েছে এবং যেখানে হাদীস শাস্ত্রের অনেক নবীন প্রবীণ বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ বিদ্যাবান এবং পণ্ডিতের দ্বারা হাদীসের মান নির্ণয় করা হয়েছে। সুতরাং বলা হয়েছে: এই হাদীসটি সহীহ বা সঠিক, এই হাদীসটি হাসান বা সুন্দর এবং এই হাদীসটি দুর্বল ইত্যাদি। আদ্দুরার আস্সানিয়া ওয়েবসাইটের হাদিস এনসাইক্লোপিডিয়ায় প্রবেশ করার এটি হলো লিঙ্ক: https://dorar.net/hadith