মডেল: বর্তমান বিভাগ
পাঠ্য বিষয় শিরোনাম: মহামারীর সাথে মুসলিম ব্যক্তির মোকাবেলা।
আমরা ভাগ্যের মঙ্গল ও অমঙ্গলের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস রাখি। যেহেতু ভাগ্যের মঙ্গল ও অমঙ্গলের প্রতি ইমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা হলো ইমান বা বিশ্বাসের একটি স্তম্ভ। আর মানব সমাজের প্রতি যে সমস্ত দুর্যোগ, রোগ, বিপর্যয় এবং বিপদ আপতিত হয়, সব কিছুই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর নির্ধারিত ফয়সালা ও ভাগ্যের প্রক্রিয়ার কারণে হয়। অতএব আমরা প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর নির্ধারিত ফয়সালা ও ভাগ্যের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবো অসন্তুষ্ট বা ধৈর্যহারা কিংবা আতঙ্কিত ও অস্থির হবো না। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ وَمَن يُؤْمِن بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ ۚ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ)، سورة التغابن، الآية 11. ভাবার্থের অনুবাদ: “আল্লাহর ফয়সালা ও ভাগ্যের প্রক্রিয়া ছাড়া মানুষের উপরে কোনো বিপদ আসে না। তাই যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর জন্য ধৈর্যধারণ করবে, মহান আল্লাহ তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করবেন। আর মহান আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবগত”। (সূরা আত্তাগাবুন, আয়াত নং ১১)।
প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তি ইমান রাখে ও বিশ্বাস করে যে, কোনো রোগ নিজের শক্তির দ্বারা কোনো সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা রাখে না। বরং সে প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা সত্য উপাস্য মহান আল্লাহর আদেশে ও তাঁর নির্ধারিত ভাগ্যের কারণে সংক্রমণ ঘটায়। তবুও, তিনি আমাদেরকে স্বাস্থ্য রক্ষার বাস্তব ও বাহ্যিক উপাদান গ্রহণ করার এবং রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার আদেশ প্রদান করেছেন। সেই রূপ তিনি আমাদেরকে সমস্ত রোগের কারণ ও স্থান হতে দূরে থাকার জন্য সতর্ক থাকার শিক্ষা প্রদান করেছেন আর রোগীদের সংস্পর্শে না থাকার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: কোনো রোগ নিজের শক্তির দ্বারা কোনো সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা রাখে না। কুলক্ষণ বলতেও কিছু নেই, পেঁচা পাখির অশুভ হওয়ার কোনো বিষয় নেই, সফর মাসেও কোনো অশুভ বস্তু নেই। আর কুষ্ঠ রোগীর কাছ থেকে তুমি সদাসর্বদা দূরে থাকবে, যেমন তুমি সদাসর্বদা দূরে থাকো প্রাণহারক ভয়ঙ্কর হিংস্র প্রাণী সিংহ থেকে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭০৭ এবং সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১ - (২২২০)]।
বিভিন্ন প্রকারের সংক্রামক ব্যাধি ও মহামারী রোগ অমুসলিম জাতির প্রতি এবং মুনাফিকদের প্রতি মহান আল্লাহর অগ্রিম শাস্তি হিসেবে আসে। তবে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজের প্রতি বিভিন্ন প্রকারের সংক্রামক ব্যাধি ও মহামারী রোগ মহান আল্লাহর করুণা হিসেবে আর তাদের মর্যাদা উচ্চ করার উপাদান হিসেবে এবং তাদের পাপের ক্ষমা হিসেবে আসে। আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর প্রিয়তমা আয়েশা উম্মুলমুমেনীন [রাদিয়াল্লাহু আনহা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি একবার আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে সংক্রামক ব্যাধি ও মহামারী রোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তাই তিনি জবাবে আমাকে বলেছিলেন: “বিভিন্ন প্রকারের সংক্রামক ব্যাধি ও মহামারী রোগ আল্লাহর শাস্তি হিসেবে আসে। সুতরাং তিনি যার প্রতি ইচ্ছা করেন, তার প্রতি এই শাস্তি প্রেরণ করেন। কিন্তু প্রকৃত ইমানদার মুসলিম সমাজের জন্য বিভিন্ন প্রকারের সংক্রামক ব্যাধি ও মহামারী রোগকে মহান আল্লাহ করুণা হিসেবে প্রেরণ করেন। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যখন কোনো সংক্রামক ব্যাধি ও মহামারী রোগে আক্রান্ত জায়গায় পুণ্যের আশায় ধৈর্য ধরে অবস্থান করবে এবং তার অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস থাকবে যে, মহান আল্লাহ তার জন্য তার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তাই হবে, তাহলে সে একজন শহীদের সমান পুণ্য লাভ করবে। (বুখারি ৩৪৭৪)।
বিভিন্ন প্রকারের সংক্রামক ব্যাধি ও মহামারী রোগের এই পরিস্থিতিতে এবং স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে প্রকৃত ইমানদার মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য হলো সরকারী উপদেশ মেনে চলা উচিত। এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে জনসাধারণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে নিজের দায়িত্ব বহন করা দরকার। আর স্থিরভাবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করার বিষয়ে সহযোগিতা করা দরকার। যেহেতু মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেছেন: (وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ)، (المائدة: 2). ভাবার্থের অনুবাদ: “সৎকর্মে ও মহান আল্লাহকে মেনে চলার বিষয়ে তোমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করো। আর অন্যায় ও শত্রুতার কাজে সাহায্য করা হতে তোমরা সবসময় বিরত থাকো”। (সূরা মায়িদাহ : ২)।
বিভিন্ন প্রকারের সংক্রামক ব্যাধি ও মহামারী রোগের সময় নিষিদ্ধ আচরণ
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ভুয়ো ও ভিত্তিহীন খবর প্রচার করা ও গুজব ছড়িয়ে দেওয়া একটি নিষিদ্ধ মিথ্যা ও অন্যায় বা হারাম কাজ। এই কাজের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো হয়। তাই ভিত্তিহীন খবর বা ভুয়ো খবর প্রচার করা হতে বিরত থাকা অপরিহার্য। তাই মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মধ্যে মুনাফিকদের বিষয়ে বলেছেন: (وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنْبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ )، النساء: 83. ভাবার্থের অনুবাদ: “তাদের কাছে যখন শান্তি বা যুদ্ধসংক্রান্ত কোনো বিষয়ের ইঙ্গিত আসে, তখন তারা তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়। অথচ তারা যদি বিষয়টি আল্লাহর রাসূলের কাছে বা দায়িত্বশীলদের কাছে উপস্থাপন করতো, তাহলে তাদের মধ্যে যারা তথ্যাভিজ্ঞ ছিলো, তারা বিষয়টির যথার্থতা নির্ণয় করে দিতো”। (সূরা নিসা: 83)।
প্রকৃত ইসলাম ধর্মে প্রয়োজনীয় পণ্য একচেটিয়া করা এবং প্রতারণা করা বা ধোঁকা দেওয়া এবং মূল্যবৃদ্ধি করা ও মানুষের জীবিকা বা প্রয়োজনীয় পণ্যে হেরফের করা নিষিদ্ধ। বিশেষ করে সংকটের সময়ে। এই ধরণের পন্থা অবলম্বন করে মাল উপার্জন করাই হলো হারাম খাওয়া, খেয়ানত করা, বিশ্বাসঘাতকতা করা, আমানত নষ্ট করা এবং অমানবিকতা ও জঘন্য আচরণ। তাই আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রয়োজনীয় পণ্য সম্পূর্ণরূপে ক্রয় করে নিয়ে সংরক্ষণ করবে এবং তার দাম যখন বেশি হবে, তখন তা মুসলিমদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করবে, সেই হলো ভুল পথের পথিক”। (মুসনাদ ৮৬১৭)।
ইচ্ছাকৃতভাবে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য সুস্থ ব্যক্তির মাঝে যে কোনো পন্থায় রোগের সংক্রমণ ছড়ানো একটি নিষিদ্ধ ও হারাম কাজ। এবং এটি হলো একটি বড়ো পাপ ও জঘন্য অপরাধ। তাই সে এই দুনিয়ায় শাস্তির অধিকারী হবে। আর তার এই শাস্তি তার সংক্রমণ ছড়ানোর কারণে সাধারণ মানুষের ও সমাজের ক্ষতি মোতাবেক হবে।
যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য ব্যক্তির শরীরে মহামারী রোগ ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সংক্রমণ ঘটাবে তার শাস্তি:
৪। বিভিন্ন প্রকারের ব্যাধি ও মহামারীকে গালি দেওয়া:
আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] জ্বরকে গালি দিতে নিষেধ করেছেন। জাবের বিন আব্দুল্লাহ [রাদিয়াল্লাহু আনহুমা] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আল্লাহর বার্তাবহ রাসূল বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] উম্মু সায়েবকে বলেছেন: “তুমি জ্বরকে গালি দিও না। জ্বর মুসলিম ব্যক্তির পাপ মোচন করে, যেমন হাঁপর লোহার জং দূর করে”। (মুসলিম 2575)।